পার্বত্য ভূমি বিরোধ-একতরফা নিষ্পত্তির চেষ্টা কেন? by মোহাম্মদ আরজু
খসড়ায় বলা হয়েছে, তিন পার্বত্য জেলায় ভূমি প্রশাসন-ব্যবস্থাপনা বিরোধ নিষ্পত্তির এখতিয়ার ভূমি মন্ত্রণালয়ের থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে চলে যাবে। ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের সিদ্ধান্ত গ্রহণে কমিশন চেয়ারম্যানের একচ্ছত্র ক্ষমতার বিধান বাদ দেওয়া হবে।
চেয়ারম্যানের অনুমোদনে নয়, বরং হয় সর্বসম্মতভাবে নয় সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে কমিশনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে
পার্বত্যাঞ্চলে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তিতে এখন চালু থাকা আইনটি নিয়ে এ অঞ্চলের বাঙালি ভিন্ন অন্যান্য জাতির লোকজনের আপত্তি আছে। সেই আপত্তি সরকার কবুলও করেছে। চালু থাকা আইনটা_ পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন, ২০০১ সংশোধন হওয়ার আগে এর আওতায় যাতে আর কোনো নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেওয়া না হয়, সে লক্ষ্যে পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের সব কার্যক্রম স্থগিত করেছে সরকার। অথচ এ সপ্তাহে দেখা গেল, কমিশন কাজ করছে। এর মানে কী?
পার্বত্যাঞ্চলের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে সরকার আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। সংশোধনীর খসড়া গ্রহণ করেছে জাতীয় কমিটি। কমিটি জানিয়েছে, খসড়াটি মন্ত্রিসভায় পাঠানো হবে। মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়ে সংসদে আইনটি গৃহীত হওয়ার অপেক্ষা মাত্র এখন।
এই যখন অবস্থা, তখন সরকারেরই একটা অংশ থেকে আবার উল্টো যাত্রা হচ্ছে। যাদের কাজ বিরোধ নিষ্পত্তি করা, তারাই বিরোধ উস্কে দিতে সক্রিয় হয়েছেন বলে দেখা যাচ্ছে। সরকারের তরফে স্থগিতাদেশ থাকা সত্ত্বেও পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের চেয়ারম্যান খাদেমুল ইসলাম চৌধুরী কমিশনে বিরোধ শুনানি চালানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। গত ২৮ ও ২৯ ফেব্রুয়ারি খাগড়াছড়ি জেলায় শুনানি ডেকেছিলেন তিনি।
বাঙালি ছাড়া পার্বত্যাঞ্চলের অন্যান্য জাতির লোকেরা কমিশনের এমন উদ্যোগের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। নিজেদের বিরোধ নিষ্পত্তির দাবি নিয়েও শুনানিতে আসেননি এসব জাতির লোকেরা। এসব জাতি থেকে আসা কমিশনের তিন সদস্য শুনানি বর্জন করেছেন। এ তিন সদস্য না আসায় কোরাম সংকটে '১ এপ্রিল পর্যন্ত শুনানি মুলতবি'র ঘোষণা দিয়েছে কমিশন। কিন্তু শুনানি চালুর অনুমতি কমিশনকে কে দিল?
অবশ্য এ ক্ষেত্রে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ভূমিকাও গোলমেলে, বিভ্রান্তিকর। সরকারের 'পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটি' ২০১০ সালের ২৬ ডিসেম্বর এ কমিশনের সব ধরনের কাজ স্থগিত করে। চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটি এরপর এ স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করেনি। তবে কমিশন আবার শুনানি আহ্বান করল কীভাবে?
সরকারের শীর্ষ পদ প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হয় পার্বত্য চুক্তি অনুযায়ী। চুক্তির প্রথম খণ্ডের তিন ধারা অনুযায়ী বর্তমান কমিটির সভাপতি হিসেবে জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীকে মনোনীত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের প্রধান ও জনসংহতি সমিতির সভাপতি সন্তু লারমা এবং চুক্তির আওতায় গঠিত টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান ও খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য যতীন্দ্রলাল ত্রিপুরাও এ কমিটির সদস্য আছেন। সরকারের এ উচ্চ পর্যায়ের কমিটির দেওয়া স্থগিতাদেশ কী করে উপেক্ষা করছে কমিশন?
আর কমিশনের এ উপেক্ষাকে যেভাবে উপেক্ষা করছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, তা সরকারের সাম্প্রতিক ভূমিকার সঙ্গে মেলে না। একদিকে পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন সংশোধনে সরকারের সম্প্রতি নেওয়া উদ্যোগ, অন্যদিকে স্থগিতাদেশ থাকা সত্ত্বেও বিদ্যমান আইনে বিরোধ শুনানি করতে কমিশন চেয়ারম্যানের একতরফা উদ্যোগ; এ দুইকে ঠিক মেলাতে পারছেন না পার্বত্য অঞ্চলের ক্ষুদ্র জাতিগুলোর লোকেরাও। ১ মার্চ সকালে কথা হচ্ছিল জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় নেতা মঙ্গল কুমার চাকমার সঙ্গে। তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলছিলেন, 'আমরা বুঝতে পারছি না যে স্থগিতাদেশ আছে একদিকে, অন্যদিকে আইন সংশোধনের প্রস্তাব গেছে মন্ত্রিসভায়_ তারপরও কমিশনের চেয়ারম্যান সাহেব একতরফা শুনানি ডাকেন কী করে!'
পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন, ২০০১ সংশোধনের লক্ষ্যে গত ২২ জানুয়ারি সংসদ ভবনে এক বৈঠকে সংশোধনী খসড়া গ্রহণ করেছে জাতীয় কমিটি। ভূমি মন্ত্রণালয় এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ যৌথভাবে খসড়াটি তৈরি করেছে।
খসড়ায় বলা হয়েছে, তিন পার্বত্য জেলায় ভূমি প্রশাসন-ব্যবস্থাপনা বিরোধ নিষ্পত্তির এখতিয়ার ভূমি মন্ত্রণালয়ের থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে চলে যাবে। ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের সিদ্ধান্ত গ্রহণে কমিশন চেয়ারম্যানের একচ্ছত্র ক্ষমতার বিধান বাদ দেওয়া হবে। চেয়ারম্যানের অনুমোদনে নয়, বরং হয় সর্বসম্মতভাবে নয় সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে কমিশনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে। ভারত প্রত্যাগত পার্বত্য শরণার্থী ও অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুদের ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি ছাড়াও ভূমি সংক্রান্ত অন্যান্য বিরোধও নিষ্পত্তি করবে ভূমি কমিশন। পার্বত্য চট্টগ্রামের জলে ভাসা জমি (ফ্রিঞ্জল্যান্ড) ব্যবহারের বিষয়েও ভূমি কমিশনের সিদ্ধান্তই হবে চূড়ান্ত। এসবই ছিল পার্বত্যাঞ্চলের ক্ষুদ্র জাতির লোকদের দীর্ঘদিনের দাবি।
কমিটি জানিয়েছে, সংশোধনী প্রস্তাবটির খসড়া মন্ত্রিসভায় পাঠানো হবে। সেখান থেকে জাতীয় সংসদে আইন হিসেবে পাসের জন্য উঠানো হবে। ওই বৈঠকটিতে কমিটির সভাপতি ও দুই সদস্য ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী অংশ নিয়েছিলেন। লোকেরা আশা করছে, মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়ে সংসদের বর্তমান অধিবেশনেই আইনটি উত্থাপন করা হবে।
নানা কারিগরি দিক বিবেচনাসহ আইনটি মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হওয়ার পুরো প্রক্রিয়ায় হয়তো আরেকটি অধিবেশন দেরিও হতে পারে। সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু এখন যা হচ্ছে, সরকারি স্থগিতাদেশ থাকা সত্ত্বেও কমিশনের শুনানি, একতরফা শুনানি, এর ব্যাখ্যা কী?
গত মঙ্গল ও বুধবার খাগড়াছড়িতে ডাকা শুনানিতে দু'দিনে ৪৩টি ভূমি বিরোধের শুনানি করার কথা ছিল। যে শুনানি স্থানীয় ক্ষুদ্র জাতির লোকেরা প্রত্যাখ্যান করেছে। এ নিয়ে প্রচুর বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ, অবস্থান কর্মসূচিও করেছে তারা। তাদের দাবি পূরণে সরকারের গঠিত জাতীয় কমিটি যখন আইন সংশোধনের প্রক্রিয়া চালাচ্ছে, আইন সংশোধন হওয়ার আগ পর্যন্ত কমিশনের সব কাজ স্থগিত করেছে, তখন সরকারেরই একটি কমিশন ওই আদেশ অমান্য করে কাজ করছে এবং তার প্রতিক্রিয়ায় পার্বত্যাঞ্চলের ক্ষুদ্র জাতিগুলোর লোকদের মধ্যে বিক্ষোভ তৈরি হচ্ছে। এর ব্যাখ্যা কী?
মোহাম্মদ আরজু : সাংবাদিক
mohammadarju@gmail.com
পার্বত্যাঞ্চলে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তিতে এখন চালু থাকা আইনটি নিয়ে এ অঞ্চলের বাঙালি ভিন্ন অন্যান্য জাতির লোকজনের আপত্তি আছে। সেই আপত্তি সরকার কবুলও করেছে। চালু থাকা আইনটা_ পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন, ২০০১ সংশোধন হওয়ার আগে এর আওতায় যাতে আর কোনো নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেওয়া না হয়, সে লক্ষ্যে পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের সব কার্যক্রম স্থগিত করেছে সরকার। অথচ এ সপ্তাহে দেখা গেল, কমিশন কাজ করছে। এর মানে কী?
পার্বত্যাঞ্চলের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে সরকার আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। সংশোধনীর খসড়া গ্রহণ করেছে জাতীয় কমিটি। কমিটি জানিয়েছে, খসড়াটি মন্ত্রিসভায় পাঠানো হবে। মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়ে সংসদে আইনটি গৃহীত হওয়ার অপেক্ষা মাত্র এখন।
এই যখন অবস্থা, তখন সরকারেরই একটা অংশ থেকে আবার উল্টো যাত্রা হচ্ছে। যাদের কাজ বিরোধ নিষ্পত্তি করা, তারাই বিরোধ উস্কে দিতে সক্রিয় হয়েছেন বলে দেখা যাচ্ছে। সরকারের তরফে স্থগিতাদেশ থাকা সত্ত্বেও পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের চেয়ারম্যান খাদেমুল ইসলাম চৌধুরী কমিশনে বিরোধ শুনানি চালানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। গত ২৮ ও ২৯ ফেব্রুয়ারি খাগড়াছড়ি জেলায় শুনানি ডেকেছিলেন তিনি।
বাঙালি ছাড়া পার্বত্যাঞ্চলের অন্যান্য জাতির লোকেরা কমিশনের এমন উদ্যোগের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। নিজেদের বিরোধ নিষ্পত্তির দাবি নিয়েও শুনানিতে আসেননি এসব জাতির লোকেরা। এসব জাতি থেকে আসা কমিশনের তিন সদস্য শুনানি বর্জন করেছেন। এ তিন সদস্য না আসায় কোরাম সংকটে '১ এপ্রিল পর্যন্ত শুনানি মুলতবি'র ঘোষণা দিয়েছে কমিশন। কিন্তু শুনানি চালুর অনুমতি কমিশনকে কে দিল?
অবশ্য এ ক্ষেত্রে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ভূমিকাও গোলমেলে, বিভ্রান্তিকর। সরকারের 'পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটি' ২০১০ সালের ২৬ ডিসেম্বর এ কমিশনের সব ধরনের কাজ স্থগিত করে। চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটি এরপর এ স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করেনি। তবে কমিশন আবার শুনানি আহ্বান করল কীভাবে?
সরকারের শীর্ষ পদ প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হয় পার্বত্য চুক্তি অনুযায়ী। চুক্তির প্রথম খণ্ডের তিন ধারা অনুযায়ী বর্তমান কমিটির সভাপতি হিসেবে জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীকে মনোনীত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের প্রধান ও জনসংহতি সমিতির সভাপতি সন্তু লারমা এবং চুক্তির আওতায় গঠিত টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান ও খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য যতীন্দ্রলাল ত্রিপুরাও এ কমিটির সদস্য আছেন। সরকারের এ উচ্চ পর্যায়ের কমিটির দেওয়া স্থগিতাদেশ কী করে উপেক্ষা করছে কমিশন?
আর কমিশনের এ উপেক্ষাকে যেভাবে উপেক্ষা করছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, তা সরকারের সাম্প্রতিক ভূমিকার সঙ্গে মেলে না। একদিকে পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন সংশোধনে সরকারের সম্প্রতি নেওয়া উদ্যোগ, অন্যদিকে স্থগিতাদেশ থাকা সত্ত্বেও বিদ্যমান আইনে বিরোধ শুনানি করতে কমিশন চেয়ারম্যানের একতরফা উদ্যোগ; এ দুইকে ঠিক মেলাতে পারছেন না পার্বত্য অঞ্চলের ক্ষুদ্র জাতিগুলোর লোকেরাও। ১ মার্চ সকালে কথা হচ্ছিল জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় নেতা মঙ্গল কুমার চাকমার সঙ্গে। তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলছিলেন, 'আমরা বুঝতে পারছি না যে স্থগিতাদেশ আছে একদিকে, অন্যদিকে আইন সংশোধনের প্রস্তাব গেছে মন্ত্রিসভায়_ তারপরও কমিশনের চেয়ারম্যান সাহেব একতরফা শুনানি ডাকেন কী করে!'
পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন, ২০০১ সংশোধনের লক্ষ্যে গত ২২ জানুয়ারি সংসদ ভবনে এক বৈঠকে সংশোধনী খসড়া গ্রহণ করেছে জাতীয় কমিটি। ভূমি মন্ত্রণালয় এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ যৌথভাবে খসড়াটি তৈরি করেছে।
খসড়ায় বলা হয়েছে, তিন পার্বত্য জেলায় ভূমি প্রশাসন-ব্যবস্থাপনা বিরোধ নিষ্পত্তির এখতিয়ার ভূমি মন্ত্রণালয়ের থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে চলে যাবে। ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের সিদ্ধান্ত গ্রহণে কমিশন চেয়ারম্যানের একচ্ছত্র ক্ষমতার বিধান বাদ দেওয়া হবে। চেয়ারম্যানের অনুমোদনে নয়, বরং হয় সর্বসম্মতভাবে নয় সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে কমিশনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে। ভারত প্রত্যাগত পার্বত্য শরণার্থী ও অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুদের ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি ছাড়াও ভূমি সংক্রান্ত অন্যান্য বিরোধও নিষ্পত্তি করবে ভূমি কমিশন। পার্বত্য চট্টগ্রামের জলে ভাসা জমি (ফ্রিঞ্জল্যান্ড) ব্যবহারের বিষয়েও ভূমি কমিশনের সিদ্ধান্তই হবে চূড়ান্ত। এসবই ছিল পার্বত্যাঞ্চলের ক্ষুদ্র জাতির লোকদের দীর্ঘদিনের দাবি।
কমিটি জানিয়েছে, সংশোধনী প্রস্তাবটির খসড়া মন্ত্রিসভায় পাঠানো হবে। সেখান থেকে জাতীয় সংসদে আইন হিসেবে পাসের জন্য উঠানো হবে। ওই বৈঠকটিতে কমিটির সভাপতি ও দুই সদস্য ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী অংশ নিয়েছিলেন। লোকেরা আশা করছে, মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়ে সংসদের বর্তমান অধিবেশনেই আইনটি উত্থাপন করা হবে।
নানা কারিগরি দিক বিবেচনাসহ আইনটি মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হওয়ার পুরো প্রক্রিয়ায় হয়তো আরেকটি অধিবেশন দেরিও হতে পারে। সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু এখন যা হচ্ছে, সরকারি স্থগিতাদেশ থাকা সত্ত্বেও কমিশনের শুনানি, একতরফা শুনানি, এর ব্যাখ্যা কী?
গত মঙ্গল ও বুধবার খাগড়াছড়িতে ডাকা শুনানিতে দু'দিনে ৪৩টি ভূমি বিরোধের শুনানি করার কথা ছিল। যে শুনানি স্থানীয় ক্ষুদ্র জাতির লোকেরা প্রত্যাখ্যান করেছে। এ নিয়ে প্রচুর বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ, অবস্থান কর্মসূচিও করেছে তারা। তাদের দাবি পূরণে সরকারের গঠিত জাতীয় কমিটি যখন আইন সংশোধনের প্রক্রিয়া চালাচ্ছে, আইন সংশোধন হওয়ার আগ পর্যন্ত কমিশনের সব কাজ স্থগিত করেছে, তখন সরকারেরই একটি কমিশন ওই আদেশ অমান্য করে কাজ করছে এবং তার প্রতিক্রিয়ায় পার্বত্যাঞ্চলের ক্ষুদ্র জাতিগুলোর লোকদের মধ্যে বিক্ষোভ তৈরি হচ্ছে। এর ব্যাখ্যা কী?
মোহাম্মদ আরজু : সাংবাদিক
mohammadarju@gmail.com
No comments