পবিত্র কোরআনের আলো-পথভ্রষ্টরা তোমাদের বিপথগামী করতে পারবে না, যদি তোমরা ঠিক থাকো
১০১. ইয়া আইয়্যুহাল্লাযীনা আমানূ লা-তাস্আলূ 'আন আশ্ইয়াআ ইন তুব্দা লাকুম তাছূকুম; ওয়া ইন তাস্আলূ 'আনহা, হীনা ইউনায্যালুল ক্বুরআনু তুব্দা লাকুম; 'আফাল্লাহু 'আন্হা ওয়াল্লাহু গাফূরুন হালীম। ১০২. ক্বাদ সাআলাহা ক্বাওমুম মিন ক্বাব্লিকুম ছুম্মা আস্বাহূ বিহা কাফিরীন।
১০৩. মা জা'আলাল্লাহু মিম বাহীরাতিন ওয়া লা-সায়িবাতিন ওয়া লা-ওয়াসীলাতি ওয়া লা-হামি ওয়া লা-কিন্নাল্লাযীনা কাফারূ ইয়াফ্তারূনা 'আলাল্লাহিল কাযিবা; ওয়া আক্ছারুহুম লা-ইয়া'কি্বলূন।
১০৪. ওয়া ইযা ক্বীলা লাহুম তা'আলাও ইলা মা আন্যালাল্লাহু ওয়া ইলার রাসূলি ক্বালূ হাস্বুনা মা ওয়াজাদনা 'আলাইহি আবাআনা; আ-ওয়ালাও কানা আবাউহুম লা-ইয়া'লামূনা শাইয়্যান ওয়া লা-ইয়াহ্তাদূন।
১০৫. ইয়া আইয়্যুহাল্লাযীনা আমানূ 'আলাইকুম আন্ফুসাকুম; লা-ইয়াদুর্রুকুম মান দ্বাল্লা ইযাহ্তাদাইতুম; ইলাল্লাহি মারজি'উকুম জামী'আন ফা-ইউনাবি্বউকুম বিমা কুন্তুম তা'লামূন। [সুরা : আল-মায়িদা, আয়াত : ১০১-১০৫]
অনুবাদ : ১০১. হে ইমানদারগণ! তোমরা রাসুল (স.)-এর কাছে এমনসব বিষয়ে প্রশ্ন করো না, যেগুলোর জবাব প্রকাশ করা হলে তোমাদের জন্য বিরক্তির কারণ হবে। তবে কোরআন নাজিল হওয়ার মুহূর্তে যদি প্রশ্ন করো, তাহলে তা তোমাদের কাছে প্রকাশ করা হবে। এ ব্যাপারে আগে যা কিছু হয়ে গেছে, তা আল্লাহ তায়ালা মাফ করে দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা ও ধৈর্যের আধার।
১০২. তোমাদের আগেও কোনো কোনো জাতি তাদের নবীদের এ ধরনের প্রশ্ন করত। কিন্তু এরপর তারা সেগুলো অমান্য করে চলে।
১০৩. এগুলো তো আল্লাহ তায়ালা প্রচলন করেননি, যেমন_'বাহিরা', 'সায়িবা', 'ওয়াসিলা', 'হামি' ইত্যাদি। বরং যারা অবাধ্য, তারাই আল্লাহর ওপর এসব মিথ্যা আরোপ করেছে। আর অধিকাংশ লোকই তো বোঝে না (অর্থাৎ সত্য-মিথ্যার পার্থক্য নিরূপণ করতে পারে না।)
১০৪. এদের যখন বলা হয়, আল্লাহ যা নাজিল করেছেন, তার দিকে (অর্থাৎ কোরআনের দিকে) এবং রাসুলের দিকে এসো, তখন তারা বলে, আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদের যে ধর্মের ওপর পেয়েছি, সেটাই ভালো। অথচ এদের পিতৃপুরুষরা সত্য সম্পর্কে কিছুই জানত না; এবং সুপথেও ছিল না।
১০৫. হে ইমানদারগণ! তোমাদের নিজেদের দায়িত্ব তোমাদের নিজেদের ওপর। অন্য কেউ যদি পথভ্রষ্ট হয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে সে তোমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমরা নিজেরা সঠিক পথের ওপর চলতে থাকবে। তোমরা সবাই ফিরে গিয়ে একত্রিত হবে আল্লাহর কাছে। অতঃপর তিনি বলে দেবেন, জীবনে তোমরা কে কী করেছিলে।
ব্যাখ্যা : ১০১ ও ১০২ নম্বর আয়াতের শানে নুজুল এ রকম : কখনো কখনো নির্বোধ লোকেরা রাসুল (সা.)-কে এমন কিছু অপ্রয়োজনীয় খুঁটিনাটি প্রশ্ন করত, যা বিরক্তিকর এবং বিব্রতকর। এ রকম প্রশ্নের সবচেয়ে বড় ক্ষতিকর দিক হলো, এর জবাব দেওয়া হলে প্রশ্নকারীর ওপর কর্তব্য আরোপ হয়, পক্ষান্তরে কাজটি কঠিনও হয়ে পড়ে। অতীতে কোনো কোনো জাতি তাদের নবীদের কাছে এ রকম প্রশ্ন করে দায়িত্ব বাড়িয়ে নিয়েছে। পরে তারা সেই দায়িত্ব পালন থেকে সরে গেছে। এ সম্পর্কেই এই দুটি আয়াত নাজিল হয়। এখানে মানব জাতিকে এ কথা বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে_খুঁটিনাটি বিষয়ে নিজেদের বিবেক-বুদ্ধি খাটিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল (সা.) মানুষকে জীবনপথের মৌলিক দিকনির্দেশনা দিয়েছেন মাত্র।
১০৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা আরব সমাজে প্রচলিত কতকগুলো কুসংস্কার খণ্ডন করেছেন। কুসংস্কারগুলো হচ্ছে 'বাহিরা', 'সায়িবা', 'ওয়াসিলা', 'হামি' ইত্যাদি। যে পশুর দুধ স্থায়ীভাবে দেবতার নামে নিবেদিত থাকত, সেটা 'বাহিরা'। যে পশু দেবতার নামে উৎসর্গীকৃত থাকত, সেটা 'সায়িবা'। যে উটনীকে উপর্যুপরি মাদি বাচ্চা প্রসবান্তে দেবতার নামে ছেড়ে দেওয়া হতো, সেটা 'ওয়াসিলা'। আর দেবতার উদ্দেশ্যে ছেড়ে দেওয়া ১০টি বাচ্চা প্রসবকারী উটনী 'হামি'। এই আয়াতে বলা হয়েছে, এসব কুসংস্কার আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে প্রচলন করা হয়নি। এগুলো কুফরি ও শির্কি কর্ম। এসব কুসংস্কার উচ্ছেদের জন্যই এ আয়াত নাজিল হয়েছে। ১০৪ নম্বর আয়াতে মুশরিক গোত্রগুলোর মূর্খ লোকদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যটা এভাবে তুলে ধরা হয়েছে_এদের যখন বলা হতো কোরআনের পথে এবং রাসুলের পথে এসো, তখন তারা বলত, আমাদের পিতৃপুরুষদের ধর্মই ভালো। অথচ এদের পূর্বপুরুষরা ছিল পথভ্রষ্ট। ১০৫ নম্বর আয়াতে একটি উপসংহারমূলক বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। মুমিনদের বলা হয়েছে, তোমাদের নিজেদের দায়িত্ব তোমাদেরই। অন্য কেউ পথভ্রষ্ট হয়ে তোমাদের পথভ্রষ্ট করতে পারবে না, যদি তোমরা নিজেরা সঠিক পথে থাকতে চাও। এ আয়াতে অন্যের ওপর দোষ চাপানো এবং অজুহাত খোঁজার প্রবণতাকে নাকচ করে দেওয়া হয়েছে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
১০৪. ওয়া ইযা ক্বীলা লাহুম তা'আলাও ইলা মা আন্যালাল্লাহু ওয়া ইলার রাসূলি ক্বালূ হাস্বুনা মা ওয়াজাদনা 'আলাইহি আবাআনা; আ-ওয়ালাও কানা আবাউহুম লা-ইয়া'লামূনা শাইয়্যান ওয়া লা-ইয়াহ্তাদূন।
১০৫. ইয়া আইয়্যুহাল্লাযীনা আমানূ 'আলাইকুম আন্ফুসাকুম; লা-ইয়াদুর্রুকুম মান দ্বাল্লা ইযাহ্তাদাইতুম; ইলাল্লাহি মারজি'উকুম জামী'আন ফা-ইউনাবি্বউকুম বিমা কুন্তুম তা'লামূন। [সুরা : আল-মায়িদা, আয়াত : ১০১-১০৫]
অনুবাদ : ১০১. হে ইমানদারগণ! তোমরা রাসুল (স.)-এর কাছে এমনসব বিষয়ে প্রশ্ন করো না, যেগুলোর জবাব প্রকাশ করা হলে তোমাদের জন্য বিরক্তির কারণ হবে। তবে কোরআন নাজিল হওয়ার মুহূর্তে যদি প্রশ্ন করো, তাহলে তা তোমাদের কাছে প্রকাশ করা হবে। এ ব্যাপারে আগে যা কিছু হয়ে গেছে, তা আল্লাহ তায়ালা মাফ করে দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা ও ধৈর্যের আধার।
১০২. তোমাদের আগেও কোনো কোনো জাতি তাদের নবীদের এ ধরনের প্রশ্ন করত। কিন্তু এরপর তারা সেগুলো অমান্য করে চলে।
১০৩. এগুলো তো আল্লাহ তায়ালা প্রচলন করেননি, যেমন_'বাহিরা', 'সায়িবা', 'ওয়াসিলা', 'হামি' ইত্যাদি। বরং যারা অবাধ্য, তারাই আল্লাহর ওপর এসব মিথ্যা আরোপ করেছে। আর অধিকাংশ লোকই তো বোঝে না (অর্থাৎ সত্য-মিথ্যার পার্থক্য নিরূপণ করতে পারে না।)
১০৪. এদের যখন বলা হয়, আল্লাহ যা নাজিল করেছেন, তার দিকে (অর্থাৎ কোরআনের দিকে) এবং রাসুলের দিকে এসো, তখন তারা বলে, আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদের যে ধর্মের ওপর পেয়েছি, সেটাই ভালো। অথচ এদের পিতৃপুরুষরা সত্য সম্পর্কে কিছুই জানত না; এবং সুপথেও ছিল না।
১০৫. হে ইমানদারগণ! তোমাদের নিজেদের দায়িত্ব তোমাদের নিজেদের ওপর। অন্য কেউ যদি পথভ্রষ্ট হয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে সে তোমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমরা নিজেরা সঠিক পথের ওপর চলতে থাকবে। তোমরা সবাই ফিরে গিয়ে একত্রিত হবে আল্লাহর কাছে। অতঃপর তিনি বলে দেবেন, জীবনে তোমরা কে কী করেছিলে।
ব্যাখ্যা : ১০১ ও ১০২ নম্বর আয়াতের শানে নুজুল এ রকম : কখনো কখনো নির্বোধ লোকেরা রাসুল (সা.)-কে এমন কিছু অপ্রয়োজনীয় খুঁটিনাটি প্রশ্ন করত, যা বিরক্তিকর এবং বিব্রতকর। এ রকম প্রশ্নের সবচেয়ে বড় ক্ষতিকর দিক হলো, এর জবাব দেওয়া হলে প্রশ্নকারীর ওপর কর্তব্য আরোপ হয়, পক্ষান্তরে কাজটি কঠিনও হয়ে পড়ে। অতীতে কোনো কোনো জাতি তাদের নবীদের কাছে এ রকম প্রশ্ন করে দায়িত্ব বাড়িয়ে নিয়েছে। পরে তারা সেই দায়িত্ব পালন থেকে সরে গেছে। এ সম্পর্কেই এই দুটি আয়াত নাজিল হয়। এখানে মানব জাতিকে এ কথা বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে_খুঁটিনাটি বিষয়ে নিজেদের বিবেক-বুদ্ধি খাটিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল (সা.) মানুষকে জীবনপথের মৌলিক দিকনির্দেশনা দিয়েছেন মাত্র।
১০৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা আরব সমাজে প্রচলিত কতকগুলো কুসংস্কার খণ্ডন করেছেন। কুসংস্কারগুলো হচ্ছে 'বাহিরা', 'সায়িবা', 'ওয়াসিলা', 'হামি' ইত্যাদি। যে পশুর দুধ স্থায়ীভাবে দেবতার নামে নিবেদিত থাকত, সেটা 'বাহিরা'। যে পশু দেবতার নামে উৎসর্গীকৃত থাকত, সেটা 'সায়িবা'। যে উটনীকে উপর্যুপরি মাদি বাচ্চা প্রসবান্তে দেবতার নামে ছেড়ে দেওয়া হতো, সেটা 'ওয়াসিলা'। আর দেবতার উদ্দেশ্যে ছেড়ে দেওয়া ১০টি বাচ্চা প্রসবকারী উটনী 'হামি'। এই আয়াতে বলা হয়েছে, এসব কুসংস্কার আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে প্রচলন করা হয়নি। এগুলো কুফরি ও শির্কি কর্ম। এসব কুসংস্কার উচ্ছেদের জন্যই এ আয়াত নাজিল হয়েছে। ১০৪ নম্বর আয়াতে মুশরিক গোত্রগুলোর মূর্খ লোকদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যটা এভাবে তুলে ধরা হয়েছে_এদের যখন বলা হতো কোরআনের পথে এবং রাসুলের পথে এসো, তখন তারা বলত, আমাদের পিতৃপুরুষদের ধর্মই ভালো। অথচ এদের পূর্বপুরুষরা ছিল পথভ্রষ্ট। ১০৫ নম্বর আয়াতে একটি উপসংহারমূলক বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। মুমিনদের বলা হয়েছে, তোমাদের নিজেদের দায়িত্ব তোমাদেরই। অন্য কেউ পথভ্রষ্ট হয়ে তোমাদের পথভ্রষ্ট করতে পারবে না, যদি তোমরা নিজেরা সঠিক পথে থাকতে চাও। এ আয়াতে অন্যের ওপর দোষ চাপানো এবং অজুহাত খোঁজার প্রবণতাকে নাকচ করে দেওয়া হয়েছে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
No comments