ছাত্রলীগের শান্তি ও প্রগতি উধাও! by শরিফুল হাসান
২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে শিক্ষাঙ্গনকে সন্ত্রাসমুক্ত রাখার ঘোষণা দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। আর ছাত্রলীগের ঘোষণাপত্রে ও গঠনতন্ত্রে বলা আছে শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতির কথা। তবে গত তিন বছরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ, খুনোখুনি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি এমনকি ধর্ষণের মতো ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে এসব ঘোষণাকে রীতিমতো প্রশ্নবিদ্ধ করে দিয়েছে ছাত্রলীগ। এখন প্রশ্ন উঠেছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের নৈতিকতা নিয়েও। শিক্ষাবিদেরা বলছেন, ছাত্রলীগের
চরম নৈতিক অবক্ষয় হয়েছে। নেতারা সব টাকা আর ক্ষমতার পেছনে ছোটার কারণেই এ সমস্যা বলে মনে করছেন তাঁরা।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় অনেক নেতা-কর্মীও বিষয়টি স্বীকার করছেন। তাঁদের অভিযোগ, সারা দেশে ছাত্রলীগের ৮৭টি জেলা কমিটি রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে আদর্শ, ছাত্রত্ব ও মেধার বদলে এসব কমিটি গঠনে প্রাধান্য পাচ্ছে অর্থ। টাকার বিনিময়ে পদ কিনে ‘নেতারা’ হয়ে উঠছেন বেপরোয়া। ফলে স্থানীয় প্রশাসন, দল কিংবা কেন্দ্রীয় নেতারা—কাউকেই তারা পরোয়া করছে না। অভিযোগ আছে, ছাত্রলীগের অনেক কেন্দ্রীয় নেতাও এখন টাকা আয় করতে ব্যস্ত। ফলে তাঁরাও কর্মীদের নিজেদের স্বার্থেই ব্যবহার করছেন।
ছাত্রলীগের সাতক্ষীরা জেলা কমিটির সভাপতি শেখ জুয়েল ও সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হুদা তৎকালীন কেন্দ্রীয় নেতাদের ছয় লাখ টাকা দিয়ে পদ কিনেছিলেন বলে অভিযোগ সংগঠনেরই নেতা-কর্মীদের। এই দুই নেতা ৪ জানুয়ারি এক নৃত্যশিল্পীকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। পুলিশ এঁদের একজনকে গ্রেপ্তার করে। এই ঘটনার কয়েক দিন আগে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সাধারণ ছাত্রকে পিটিয়ে আহত করে ছাত্রলীগের নেতারা। ছাত্রলীগের সংঘর্ষের কারণে বন্ধ হয়ে যায় খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়। ছাত্ররাজনীতিহীন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় এক মাস ধরে বন্ধ আছে ছাত্রলীগের সংঘর্ষের কারণে। সর্বশেষ গতকাল সোমবার ছাত্রলীগের হামলায় প্রাণ হারালেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র জুবায়ের আহমেদ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও গতকাল সংঘর্ষ হয়েছে ছাত্রলীগের দুই পক্ষে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তি-বাণিজ্য, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দখলসহ নানা কারণে মহাজোট সরকারের গত তিন বছরজুড়েই আলোচনায় ছিল ছাত্রলীগ। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত তিন বছরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সারা দেশে অন্তত ৩০০ বার সংঘর্ষে জড়িয়েছে ছাত্রলীগ। এসব ঘটনায় মারা গেছেন ছয়জন। আহত হয়েছেন হাজার খানেক নেতা-কর্মী। বন্ধ হয়েছে একের পর এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাত্রলীগের যে ঐতিহ্য বা আদর্শ ছিল, সেখান থেকে ছাত্রলীগ এখন অনেক দূরে। নৈতিকতা, আদর্শ এসবের জায়গা এখন দখল করে নিয়েছে ক্ষমতা, অর্থবিত্ত। এখন পদ কেনাবেচা হয়। একজন যখন টাকা দিয়ে পদ কেনেন, এরপর সেই টাকা তুলতে গিয়েই তিনি চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি করেন। নিজেরাই নিজেদের প্রতিপক্ষ হয়ে যান। বিন্দুমাত্র আদর্শ ও নৈতিকতার চর্চা থাকলে একজন ছাত্রনেতার বিরুদ্ধে ধর্ষণ কিংবা খুন-সন্ত্রাসের মতো অভিযোগ উঠতে পারে না।’
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, অপরাধ করার পরেও এই ছাত্রনেতারাই জেল থেকে যখন বেরিয়ে আসবেন, তখন তাঁদের ফুলের মালা দেওয়া হবে। তরুণ যে কর্মী এসব দেখবে, সেও একই ধারায় যাবে। কেবল ছাত্রলীগ নয়, ছাত্রদলেও একই চর্চা। তিনি আরও বলেন, ‘আমার মনে হয়, কলুষিত এই ছাত্ররাজনীতি থাকবে কি থাকবে না, সেটি নিয়ে প্রশ্ন তোলার সময় হয়েছে।’
ছাত্রলীগের এই দুরবস্থার জন্য বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির অধিকাংশ নেতা দায়ী করছেন আগের কমিটিকে। ২০০৬ সালের ৪ এপ্রিল মাহমুদ হাসানকে সভাপতি এবং মাহফুজুল হায়দার চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রলীগের একটি কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়েছিল। দুই বছরের এই কমিটি পাঁচ বছর নেতৃত্বে ছিল। অভিযোগ আছে, এই কমিটি মেধা ও ত্যাগী নেতা-কর্মীদের বদলে টাকার বিনিময়ে সারা দেশের জেলা কমিটি গঠন করেছে। ফলে সারা দেশে ছাত্রলীগে চরম বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে। গত বছরের জুলাইয়ে ছাত্রলীগের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হলেও সেই কমিটি এখনো সংগঠনে কোনো শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পারেনি।
জানতে চাইলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এই কমিটি যখন যার বিরুদ্ধে অভিযোগ পাচ্ছি, সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং কমিটি বাতিল করে দিচ্ছি। আমরা সারা দেশের পুলিশ ও প্রশাসনকে অনুরোধ জানাচ্ছি, ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে কেউ কিছু করলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিন। আমরা কোনো অপরাধীর জন্য কখনো সুপারিশ করছি, এ কথা বলতে পারবে না।’
ছাত্রলীগে নৈতিকতার অবক্ষয় হয়েছে কি না জানতে চাইলে সভাপতি বলেন, ‘সাতক্ষীরায় যা ঘটেছে তাতে তো বলা যায়, তাদের নৈতিকতার অবক্ষয় হয়েছে। তবে সবাইকে তো একভাবে বিচার করা যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা শিগগিরই সারা দেশে সাংগঠনিক সফর শুরু করব। আমরা নেতা-কর্মীদের মধ্যে আদর্শের চর্চা বাড়াব।’
ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা জুলাইয়ে দায়িত্ব নেওয়ার পর যখন যেখানে অভিযোগ পেয়েছি, সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছি। সাতক্ষীরা, পিরোজপুর ও কবি নজরুল কলেজের কমিটি বাতিল করে দিয়েছি। অনেককে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করেছি। আমরা আমাদের কাজ করেছি। কিন্তু প্রশাসনের উচিত তাদের মতো করে ব্যবস্থা নেওয়া। ছাত্রলীগের কেউ অপরাধে জড়িয়ে পড়লেই তার বিরুদ্ধেই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করছি।’ ছাত্রলীগের নেতারা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেও বাস্তবতা ভিন্ন। এক জাহাঙ্গীরনগরেই গত তিন বছরে ২৫ থেকে ৩০ বার সংঘর্ষে জড়িয়েছে ছাত্রলীগ।
২০১০ সালের ৫ এপ্রিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় প্রতিপক্ষের নেতা-কর্মীরা পায়ে গুলি করে ও কুপিয়ে আল-বেরুনী হলের চারতলা থেকে ফেলে দিয়েছিলেন এনায়েত কবিরকে। নয় মাস তাঁকে পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান সিআরপিতে হুইলচেয়ারে কাটাতে হয়েছে। বাসায় ফিরলেও এখনো ক্রাচে ভর দিয়ে হাঁটতে হয় তাঁকে।
জাহাঙ্গীগনগরে আরেক ছাত্রের মৃত্যুর খবর শুনে কবির গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘যে ছাত্ররাজনীতি মানুষকে পঙ্গু করে, জীবন কেড়ে নেয়, সেই ছাত্ররাজনীতির দরকার আছে কি না এখন ভাবা দরকার। আমার ঘটনায় কারও বিচার হয়নি। এবারও কারও বিচার হবে কি না জানি না। আমার মাঝে মাঝে এত কষ্ট হয় যে মনে হয়, মরে গেলেই হয়তো বেঁচে যেতাম।’
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় অনেক নেতা-কর্মীও বিষয়টি স্বীকার করছেন। তাঁদের অভিযোগ, সারা দেশে ছাত্রলীগের ৮৭টি জেলা কমিটি রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে আদর্শ, ছাত্রত্ব ও মেধার বদলে এসব কমিটি গঠনে প্রাধান্য পাচ্ছে অর্থ। টাকার বিনিময়ে পদ কিনে ‘নেতারা’ হয়ে উঠছেন বেপরোয়া। ফলে স্থানীয় প্রশাসন, দল কিংবা কেন্দ্রীয় নেতারা—কাউকেই তারা পরোয়া করছে না। অভিযোগ আছে, ছাত্রলীগের অনেক কেন্দ্রীয় নেতাও এখন টাকা আয় করতে ব্যস্ত। ফলে তাঁরাও কর্মীদের নিজেদের স্বার্থেই ব্যবহার করছেন।
ছাত্রলীগের সাতক্ষীরা জেলা কমিটির সভাপতি শেখ জুয়েল ও সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হুদা তৎকালীন কেন্দ্রীয় নেতাদের ছয় লাখ টাকা দিয়ে পদ কিনেছিলেন বলে অভিযোগ সংগঠনেরই নেতা-কর্মীদের। এই দুই নেতা ৪ জানুয়ারি এক নৃত্যশিল্পীকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। পুলিশ এঁদের একজনকে গ্রেপ্তার করে। এই ঘটনার কয়েক দিন আগে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সাধারণ ছাত্রকে পিটিয়ে আহত করে ছাত্রলীগের নেতারা। ছাত্রলীগের সংঘর্ষের কারণে বন্ধ হয়ে যায় খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়। ছাত্ররাজনীতিহীন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় এক মাস ধরে বন্ধ আছে ছাত্রলীগের সংঘর্ষের কারণে। সর্বশেষ গতকাল সোমবার ছাত্রলীগের হামলায় প্রাণ হারালেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র জুবায়ের আহমেদ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও গতকাল সংঘর্ষ হয়েছে ছাত্রলীগের দুই পক্ষে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তি-বাণিজ্য, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দখলসহ নানা কারণে মহাজোট সরকারের গত তিন বছরজুড়েই আলোচনায় ছিল ছাত্রলীগ। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত তিন বছরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সারা দেশে অন্তত ৩০০ বার সংঘর্ষে জড়িয়েছে ছাত্রলীগ। এসব ঘটনায় মারা গেছেন ছয়জন। আহত হয়েছেন হাজার খানেক নেতা-কর্মী। বন্ধ হয়েছে একের পর এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাত্রলীগের যে ঐতিহ্য বা আদর্শ ছিল, সেখান থেকে ছাত্রলীগ এখন অনেক দূরে। নৈতিকতা, আদর্শ এসবের জায়গা এখন দখল করে নিয়েছে ক্ষমতা, অর্থবিত্ত। এখন পদ কেনাবেচা হয়। একজন যখন টাকা দিয়ে পদ কেনেন, এরপর সেই টাকা তুলতে গিয়েই তিনি চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি করেন। নিজেরাই নিজেদের প্রতিপক্ষ হয়ে যান। বিন্দুমাত্র আদর্শ ও নৈতিকতার চর্চা থাকলে একজন ছাত্রনেতার বিরুদ্ধে ধর্ষণ কিংবা খুন-সন্ত্রাসের মতো অভিযোগ উঠতে পারে না।’
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, অপরাধ করার পরেও এই ছাত্রনেতারাই জেল থেকে যখন বেরিয়ে আসবেন, তখন তাঁদের ফুলের মালা দেওয়া হবে। তরুণ যে কর্মী এসব দেখবে, সেও একই ধারায় যাবে। কেবল ছাত্রলীগ নয়, ছাত্রদলেও একই চর্চা। তিনি আরও বলেন, ‘আমার মনে হয়, কলুষিত এই ছাত্ররাজনীতি থাকবে কি থাকবে না, সেটি নিয়ে প্রশ্ন তোলার সময় হয়েছে।’
ছাত্রলীগের এই দুরবস্থার জন্য বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির অধিকাংশ নেতা দায়ী করছেন আগের কমিটিকে। ২০০৬ সালের ৪ এপ্রিল মাহমুদ হাসানকে সভাপতি এবং মাহফুজুল হায়দার চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রলীগের একটি কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়েছিল। দুই বছরের এই কমিটি পাঁচ বছর নেতৃত্বে ছিল। অভিযোগ আছে, এই কমিটি মেধা ও ত্যাগী নেতা-কর্মীদের বদলে টাকার বিনিময়ে সারা দেশের জেলা কমিটি গঠন করেছে। ফলে সারা দেশে ছাত্রলীগে চরম বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে। গত বছরের জুলাইয়ে ছাত্রলীগের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হলেও সেই কমিটি এখনো সংগঠনে কোনো শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পারেনি।
জানতে চাইলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এই কমিটি যখন যার বিরুদ্ধে অভিযোগ পাচ্ছি, সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং কমিটি বাতিল করে দিচ্ছি। আমরা সারা দেশের পুলিশ ও প্রশাসনকে অনুরোধ জানাচ্ছি, ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে কেউ কিছু করলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিন। আমরা কোনো অপরাধীর জন্য কখনো সুপারিশ করছি, এ কথা বলতে পারবে না।’
ছাত্রলীগে নৈতিকতার অবক্ষয় হয়েছে কি না জানতে চাইলে সভাপতি বলেন, ‘সাতক্ষীরায় যা ঘটেছে তাতে তো বলা যায়, তাদের নৈতিকতার অবক্ষয় হয়েছে। তবে সবাইকে তো একভাবে বিচার করা যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা শিগগিরই সারা দেশে সাংগঠনিক সফর শুরু করব। আমরা নেতা-কর্মীদের মধ্যে আদর্শের চর্চা বাড়াব।’
ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা জুলাইয়ে দায়িত্ব নেওয়ার পর যখন যেখানে অভিযোগ পেয়েছি, সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছি। সাতক্ষীরা, পিরোজপুর ও কবি নজরুল কলেজের কমিটি বাতিল করে দিয়েছি। অনেককে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করেছি। আমরা আমাদের কাজ করেছি। কিন্তু প্রশাসনের উচিত তাদের মতো করে ব্যবস্থা নেওয়া। ছাত্রলীগের কেউ অপরাধে জড়িয়ে পড়লেই তার বিরুদ্ধেই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করছি।’ ছাত্রলীগের নেতারা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেও বাস্তবতা ভিন্ন। এক জাহাঙ্গীরনগরেই গত তিন বছরে ২৫ থেকে ৩০ বার সংঘর্ষে জড়িয়েছে ছাত্রলীগ।
২০১০ সালের ৫ এপ্রিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় প্রতিপক্ষের নেতা-কর্মীরা পায়ে গুলি করে ও কুপিয়ে আল-বেরুনী হলের চারতলা থেকে ফেলে দিয়েছিলেন এনায়েত কবিরকে। নয় মাস তাঁকে পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান সিআরপিতে হুইলচেয়ারে কাটাতে হয়েছে। বাসায় ফিরলেও এখনো ক্রাচে ভর দিয়ে হাঁটতে হয় তাঁকে।
জাহাঙ্গীগনগরে আরেক ছাত্রের মৃত্যুর খবর শুনে কবির গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘যে ছাত্ররাজনীতি মানুষকে পঙ্গু করে, জীবন কেড়ে নেয়, সেই ছাত্ররাজনীতির দরকার আছে কি না এখন ভাবা দরকার। আমার ঘটনায় কারও বিচার হয়নি। এবারও কারও বিচার হবে কি না জানি না। আমার মাঝে মাঝে এত কষ্ট হয় যে মনে হয়, মরে গেলেই হয়তো বেঁচে যেতাম।’
No comments