বাংলাদেশের পাকিস্তান সফর-বিসিবির সতর্ক পদক্ষেপ

যেহেতু আমরা বিসিবির চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটার, সেহেতু বিসিবির সব সিদ্ধান্ত মেনে নিতেই হবে। তারপরও যদি এই সফর নিয়ে আমাদের মতটা শোনে বিসিবি তাহলে বলব এটা আরব আমিরাতের কোনো শহরে আয়োজন করলে ভালো হয়। তাছাড়া যে দেশে অন্য কোনো দেশ যাচ্ছে না সেখানে আমাদের কেন যেতে হবে? প্রতিদিনই পাকিস্তানের মিডিয়ায় নতুন নতুন খবর আসছে বাংলাদেশকে ঘিরে। এপ্রিলে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল পাকিস্তান সফরে যাবে_ এটা ধরে নিয়েই


কিছুদিন আগে সে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রেহমান মালিক মুশফিকদের জন্য বুলেট ও বোমাপ্রুফ বাস কেনার অর্ডার দিয়েছেন। রোববার হায়দ্রাবাদে নিয়াজ স্টেডিয়ামে এক অনুষ্ঠানে পিসিবি চেয়ারম্যান জাকা আশরাফ ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশের সফর ঘিরে তিনি আশাবাদী। 'পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফিরিয়ে আনবে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আবারও দর্শক সমাগম ঘটাবে আমাদের বাংলাদেশি বন্ধুরা। তাদের জন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বেষ্টনীর ব্যবস্থা করেছি আমরা। যদিও পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক ভালো।' জাকা আশরাফ তার দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতির কথা শোনালেও বিসিবি পুরো ব্যাপারটিতে বেশ সতর্কতার সঙ্গে পা ফেলছে। গতকাল বিসিবি থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। যেখানে এ মাসের শেষ দিকে বাংলাদেশ থেকে একটি নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ দল পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। মন্ত্রণালয় থেকে সবুজ সংকেত পাওয়ার পরই পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বিসিবি। 'পাকিস্তান সফর নিয়ে আমরা ধাপে ধাপে এগোনোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যার প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ' বিসিবির প্রধান নির্বাহী মঞ্জুর আহমেদ জানান, মন্ত্রণালয় থেকে সবুজ সংকেত না পাওয়া পর্যন্ত পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে পারছে না বিসিবি।
সরকারের অনুমতি নেওয়ার মতোই জরুরি হয়ে পড়েছে ক্রিকেটারদের মতামত নেওয়া। কেননা পাকিস্তান সফরে যাওয়ার ব্যাপারে ক্রিকেটারদের মধ্যেই একটা চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেক ক্রিকেটারই ২০০৭ সালে লাহোরে শ্রীলংকা টিম বাসের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা মন থেকে মুছে ফেলতে পারছেন না। অনেকের পরিবার থেকেই মৃদু আপত্তি জানাচ্ছে এই সফরে না যাওয়ার জন্য। ' যেহেতু আমরা বিসিবির চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটার, সেহেতু বিসিবির সব সিদ্ধান্ত মেনে নিতেই হবে। তারপরও যদি এই সফর নিয়ে আমাদের মতটা শোনে বিসিবি তাহলে বলব এটা আরব আমিরাতের কোনো শহরে আয়োজন করলে ভালো হয়। তাছাড়া যে দেশে অন্য কোনো দেশ যাচ্ছে না সেখানে আমাদের কেন যেতে হবে?' নাম বললে সমস্যা হবে সে কারণে ওই ক্রিকেটার তার নামটি বলেননি; কিন্তু শুধু ক্রিকেটারই নন দলের বিদেশি কোচিং স্টাফরাও পাকিস্তান সফরে যেতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছেন ক্রিকেটারদেরই কাছে। তাদের এই ব্যাপারটি আমলে নেবে না বিসিবি ? 'এখনও সফরে চূড়ান্ত কিছু হয়নি। ক্রিকেটারদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে কি-না তা বলতে পারছি না। তবে এটুকু বলতে পারি, ধাপে ধাপে এগোব আমরা।' বিসিবির প্রধান নির্বাহী মঞ্জুর আহমেদ স্পর্শকাতর এই সিরিজ নিয়ে এর বেশি কিছু বলতে আগ্রহ দেখাননি। তবে ক্রিকেটারদের নিরাপত্তাই যে বোর্ডের কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেটি জানিয়ে দেন পরিচালক ও মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস। 'ক্রিকেটারদের নিরাপত্তা অবশ্যই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর সে কারণেই আমরা পাকিস্তানে আগে নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ পাঠানোর সিদ্বান্ত নিয়েছি।'
সিরিজটি এমনিতেই বেশ স্পর্শকাতর। কেননা বাংলাদেশের এপ্রিলে পাকিস্তান সফরে যাওয়ার অর্থই হলো, বিশ্ব ক্রিকেটের অনান্য দেশগুলোকেও এরপর সেখানে যেতে বাধ্য করবে আইসিসি। যেটা ভারত, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার মতো শক্তিধর দেশগুলো চাইবে না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সবুজ সংকেত না পেলে অবশ্য এই সফরে যাওয়া হবে না পাকিস্তানের। তবে সেটা হলে নিশ্চিত প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ হবে বিসিবির। কেননা আইসিসির ভাইস প্রেসিডেন্টের পদটি বাংলাদেশকে ছেড়ে দেওয়ার মূল্যে পাকিস্তান চেয়েছে সেদেশ সফর করুক মুশফিকরা।

No comments

Powered by Blogger.