ছয় মাসে ১৯ বার সংঘর্ষ, আহত শতাধিক-জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার বেপরোয়া ছাত্রলীগ by মুসা আহমেদ

গন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ আবার বেপরোয়া হয়ে উঠছে। গত ছয় মাসে সাধারণ ছাত্র, ছাত্রদল, প্রগতিশীল ছাত্রজোট, কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীদের ওপর অন্তত ১০ বার হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ। আর নিজেদের মধ্যে মারামারি করেছে ১৯ বার। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত শতাধিক শিক্ষার্থী। ছয় মাসে এতগুলো ঘটনা ঘটলেও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের কারও বিচার হয়নি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন লোক দেখানো তদন্ত


কমিটি করলেও প্রতিবেদন জমা দেয় না শিক্ষক-কর্মকর্তারা। সর্বশেষ ৩ জানুয়ারি উন্নয়ন ফি বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত প্রগতিশীল ছাত্রজোটের ওপর হামলা চালান ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এ ঘটনার তদন্তে ৫ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।
ক্যাম্পাস সূত্র জানায়, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেই মূলত ছাত্রলীগ নিজেরা সংঘর্ষে জড়াচ্ছে। এমনকি নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে উপাচার্যকে হুমকি, চার কর্মকর্তাকে মারধর, শিক্ষক লাঞ্ছিত, সাংবাদিক ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপরও হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ।
২০১০ সালের ২১ ডিসেম্বর দুই পক্ষের সংঘর্ষের পর ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করে কেন্দ্রীয় কমিটি। সাড়ে ছয় মাস পর গত ১০ জুন আট সদস্যের নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে সাইফুল ইসলাম আকন্দকে আহ্বায়ক ও সাতজনকে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়। এই কমিটি গঠনের পর থেকে আবার নতুন করে অন্তঃকোন্দল শুরু হয়।
ছাত্রলীগের দুই পক্ষের ১৯টি সংঘর্ষের ১১টিই ঘটেছে আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম আকন্দের পক্ষের কর্মীদের সঙ্গে অন্যদের। মারামারিতে আহত হয়েছেন প্রায় ৩০ জন। অভিযোগ অস্বীকার করে আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম আকন্দ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়নি। বিরোধীরা আমার নামে ক্যাম্পাসে অরাজকতা তৈরি করছে।’
নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, এখানে পড়ালেখার পরিবেশ নেই; আছে উচ্ছৃঙ্খল ছাত্ররাজনীতি। এই ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়প্রায়ই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিরও ব্যবস্থা নেয়না।
গত ২০ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের পছন্দের প্রার্থীর চাকরি না হওয়ায় উপাচার্য মেসবাহউদ্দিন আহমদকে হুমকি এবং ডেপুটি রেজিস্ট্রার শেখ রেজাউল করিমসহ চার কর্মকর্তা-কর্মচারীকে মারধর করেন ছাত্রলীগের কর্মীরা। মারধরের ঘটনায় বিজ্ঞান অনুষদের ডিন হাসনা হেনা বেগমকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করার কথা থাকলেও এখনো হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য মেসবাহউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিছু কারণে কমিটি তাদের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করতে সময় নিচ্ছে।’ উপাচার্য অভিযোগ করেন, ‘সরকার-সমর্থক হওয়ায় প্রায়ই ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে ছাত্রলীগের কর্মীরা। তাঁদের উচ্ছৃঙ্খল রাজনীতি বন্ধ করতে অচিরেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
অভিযোগ উঠেছে, পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় লুটপাটসহ চাঁদাবাজি করেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কর্মীরা। লুটপাটে কেউ বাধা দিলে তাঁকে হামলার শিকার হতে হয়। গত ১৫ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন নগর সিদ্দিক প্লাজায় ৮০০ টাকার টি-শার্ট ২০০ টাকায় না দেওয়ায় ব্যবসায়ীদের ওপর হামলা ও ভাঙচুর করেছেন ছাত্রলীগের কর্মীরা। এতে প্রায় পাঁচ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন প্লাজার মালিকের ছেলে নেওয়াজ আহমেদ সিদ্দিক।

No comments

Powered by Blogger.