‘আমার মেয়েকে কোরবানি দিয়েছি’



কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: ‘আমি আমার মেয়েকে কোরবানি দিয়েছি’। মেয়েকে কেন খুন করেছেন- জানতে চাইলে এভাবেই উত্তর দেন তিনি। পুরো নাম আহাকমিউল আলম রিমু। যিনি তার ছয় বছরের শিশুকন্যাকে হত্যার দায়ে পুলিশের হাতে বন্দি। মেয়েকে কেন কোরবানি  দিলেন পাল্টা প্রশ্ন করলে তিনি কোন উত্তর না দিয়ে তার আত্মীয়-স্বজনদের উদ্দেশে বলেন, ‘মেয়েকে দাফন করার ব্যবস্থা করো।’ এরপরই নিশ্চুপ কুষ্টিয়া মডেল থানায় আটক ঘাতক পিতা আহাকমিউল আলম। মানসিক বিকারগ্রস্ত পিতার হাতে খুন হওয়া হতভাগী শিশুটির নাম তানজিদা আলম (৬)। গতকাল সকাল ৮টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের থানাপাড়ার একটি বাসায় এই নিষ্ঠুর ঘটনা ঘটে। এরপরই আহাকমিউল আলম রিমুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পুলিশ ও পারিবারিক সূত্র জানায়, কুষ্টিয়া শহরের থানাপাড়ার রাম গোপাল মজুমদার লেনের বাসিন্দা আহাকমিউল আলম রিমু  গতকাল সকালে পুতুল খেলারত শিশুকন্যা তানজিদা আলমকে গলা টিপে হত্যা করে। পরে খবর পেয়ে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। নিহত তানজিদার মা রাকিমা জানান, সকালে ঘুম থেকে উঠে ঘরের মেঝেতে বসে পুতুল নিয়ে খেলছিল সে। তার বাবা আহাকমিউল আলম তখন ঘুমাচ্ছিল। রান্নাঘরে সকালের খাবার  তৈরিতে ব্যস্ত ছিলেন তিনি। হঠাৎ করে মেয়ের চিৎকারে তড়িঘড়ি করে রান্নাঘর থেকে এসে দেখেন তানজিদার গলা টিপে ধরে আছে তার বাবা। বাবার হাত থেকে  মেয়েকে ছাড়িয়ে নেয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করেও সফল হননি তিনি। নিষ্ঠুর বাবা যখন গলা ছেড়ে দিলেন, তানজিদার দেহে তখন কোন স্পন্দন নেই। পরে তানজিদাকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি আরও জানান, ‘তার স্বামীর মাথায় সমস্যার কারণে কিছুদিন আগে পাবনার মানসিক হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা করিয়ে আনা হয়েছে। ঘাতক আহাকমিউলের ভাই আহসানুল আলম বলেন, তার ভাই স্থানীয় একটি মানবাধিকার সংস্থা ‘পালক’-এর প্রোগ্রাম অফিসার হিসেবে চাকরি করতো। এর আগে সে ব্যবসা করতো। ব্যবসায় লোকসান দিয়ে সে পাগল হয়ে যায়। এ কারণে তার চিকিৎসাও করানো হচ্ছে। মাঝে মধ্যে ভালো থাকে, আবার মাঝেমধ্যে খারাপ হয়ে যায়। তানজিদার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সোনারতরী কিন্ডারগার্টেনের অধ্যক্ষ জানান, তানজিদা আমার স্কুলের কেজি শ্রেণীর ছাত্রী। সে লেখাপড়ায় মোটামুটি এবং খুবই শান্ত স্বভাবের মেয়ে ছিল। তানজিদা এবার কেজি-টুতে উঠেছে। আমি ভাবতেও পারছি না তারমতো লক্ষ্মী মেয়েকে কেউ খুন করতে পারে। কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী জালাল উদ্দিন বলেন, লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। তানজিদার বাবাকে আটক করে থানায় নেয়া হয়েছে। সে নিজ হাতে মেয়েকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘাতক আহাকমিউল আলম কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ছত্রগাছা গ্রামের মৃত জহুরুল আলমের ছেলে।

No comments

Powered by Blogger.