প্রবাসীদের নিরাপদে বিনিয়োগের সুযোগ করে দেওয়ার সুপারিশ
প্রবাসীরা দেশের জাতীয় সম্পদ। তাই তাঁদের উন্নয়নে কাজ করতে হবে। বৈধ উপায়ে টাকা পাঠানো, নিরাপদ বিনিয়োগের ব্যবস্থা ও বিদেশে নতুন বাজার সৃষ্টিতে সরকারকে মনোযোগ দিতে হবে। তাহলেই দেশ শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত্তির ওপর দাঁড়াবে। স্বাবলম্বী হবে। ‘স্বাধীনতার ৪০ বছর: প্রবাসীদের অবদান, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবদান’ শীর্ষক গোলটেবিলে বক্তারা এসব কথা বলেছেন। রাজধানীর একটি হোটেলে গতকাল সোমবার সেন্টার ফর নন
রেসিডেন্ট বাংলাদেশি (সেন্টার ফর এনআরবি) এই গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন সেন্টার ফর এনআরবির চেয়ারপারসন এম এস সেকিল চৌধুরী।
গোলটেবিলে বক্তারা বলেন, প্রবাসীদের পাঠানো প্রবাসী আয় বিদেশি সাহায্যের ৯ গুণ। বর্তমানে দেশের অর্থনীতির এই সংকটকালে প্রবাসীদের টাকা কাজে লাগছে। কিন্তু বিদেশি সাহায্যে পাওয়ার জন্য সরকার এত দৌড়ঝাঁপ করলেও প্রবাসীদের জন্য তেমন কিছুই করেনি।
বক্তারা আরও বলেন, গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নের ৪০-৪৫ শতাংশই প্রবাসীদের অবদান। তাঁরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। কিন্তু সরকার নিরাপদ বিনিয়োগের ব্যবস্থা করতে না পারায় দেশ সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
গোলটেবিল আলোচনায় একাধিক বক্তা অভিযোগ করে বলেন, বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাস ও মিশনগুলো প্রবাসীবান্ধব নয়। এগুলোর কর্মকর্তারা বাণিজ্য প্রসার কিংবা প্রবাসীদের কল্যাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। বরং নিজেদের ভোগবিলাসেই বেশি ব্যস্ত থাকছেন। গত ৪০ বছরে সরকারপ্রধানেরা প্রবাসীদের দ্বিধাবিভক্ত করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু প্রবাসীরা বিশেষ কোনো রাজনৈতিক দল নয় বরং দেশের জন্য কাজ করতে চান বলে মন্তব্য করেন বক্তারা।
বক্তারা আরও বলেন, অর্থনৈতিক মন্দার কারণে অনেক বাজার বন্ধ হয়ে গেছে। সে জন্য এখনই নতুন বাজার সৃষ্টি করতে হবে। এ ছাড়া মোট জনশক্তি রপ্তানির ৪ শতাংশের কম হচ্ছে নারী। সে ক্ষেত্রে নারী জনশক্তি রপ্তানিতে এখন জোর দিতে হবে। একই সঙ্গে তাঁদের মানবাধিকার নিশ্চিত করতে দূতাবাসগুলোকে শক্তিশালী পদক্ষেপ নিতে হবে।
প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থ বেশির ভাগই অনুৎপাদনশীল খাতে বিশেষ করে ভোগবিলাসেই ব্যয় হয়। উৎপাদনশীল খাতে ব্যয় করতে প্রবাসীর স্বজনদের উদ্বুদ্ধ করার পরামর্শ দেন বক্তারা। প্রবাসীরা বৈধ উপায়ে টাকা পাঠাতে চান। এটি নিশ্চিত করা গেলে বিদেশ থেকে যত ‘কালো টাকা’ আসে তা কমে আসবে বলে মনে করেন তাঁরা।
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব জাফর আহমদ খান বলেন, প্রবাসীদের পাঠানো আয় প্রতিবছরই বাড়ছে। এভাবে চললে দেশকে স্বাবলম্বী করতে অন্য কোনো খাতের কথা চিন্তা করতে হবে না।
গোলটেবিল আলোচনায় বক্তব্য দেন নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ, ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আসিফ ইব্রাহীম, সাবেক মন্ত্রী শেখ শহীদুল ইসলাম ও কাজী ফিরোজ রশীদ, বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি জাহিদ হোসেন, বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের মোক্তাদির চৌধুরী, ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল মান্নান, পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেলাল আহমদ চৌধুরী, মানবজমিন-এর প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, আমেরিকাপ্রবাসী জিল্লুর রহমান খান ও আহসান মঞ্জুর, সৌদিপ্রবাসী কাপ্তান হোসেন প্রমুখ।
No comments