বছরে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি by আবু কাওসার ও আলতাব হোসেন
সিটি করপোরেশন ও বিভাগীয় শহর থেকে শুরু করে দেশের জেলা পর্যায়ের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন কৌশলে বছরে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার ভ্যাট বা মূসক (মূল্য সংযোজন কর) ফাঁকি দিচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, অনৈতিক এ সুযোগ করে দিয়ে ভ্যাট পরিদর্শকসহ রাজস্ব বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের মাসোয়ারা নিচ্ছেন। ক্রেতা বা গ্রাহক পর্যায়ে ভ্যাট ফাঁকিরোধে এনবিআরের পক্ষ থেকে নির্ধারিত বড় ও মাঝারি আকারের
হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও দোকানে ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্টার (ইসিআর) বা ফিসক্যাল প্রিন্টারের মাধ্যমে ক্যাশমেমো দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে। ভ্যাট পরিদর্শকদের সঙ্গে যোগসাজশে সিংহভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই ফিসক্যাল বা ইসিআরের মাধ্যমে ক্যাশমেমো দিচ্ছে না। তারা হাতে লিখে কিংবা নিজেদের প্রিন্টারে প্রিন্ট করে ক্রেতাদের ক্যাশমেমো দেওয়ায় কত টাকা বিক্রি হচ্ছে এবং কত টাকা ভ্যাট আদায় হচ্ছে তার সঠিক হিসাব রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে নেই।
বেসরকারি বেশ কয়েকটি সংস্থার হিসাবে, সারাদেশে গ্রাহক পর্যায়ে ভ্যাট আদায়যোগ্য দুই হাজার আসবাবপত্রের বিপণনকেন্দ্র রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৫০ হাজার টাকা বিক্রি হয়, এ হিসাবে বছরে ৭০ কোটি টাকা, ৫০ হাজার ফ্যাশন হাউসে প্রতিদিন গড়ে ১০ হাজার টাকা বিক্রি হলে বছরে ৩৭৫ কোটি টাকা, পাঁচ হাজার মিষ্টির দোকানে প্রতিদিন গড়ে ২০ হাজার টাকা বিক্রি হলে বছরে ৪৫০ কোটি টাকা, কম্পিউটার সফটওয়্যার বিক্রয়কারী এক হাজার প্রতিষ্ঠানে গড়ে ৫ লাখ টাকা বিক্রি হলে বছরে ৩৭০ কোটি টাকা, ১০০ বারে প্রতিদিন এক লাখ টাকা বিক্রি হলে বছরে ৭৫ কোটি টাকা, ১০ হাজার রেস্টুরেন্টে গড়ে প্রতিদিন ২০ হাজার টাকা বিক্রি হলে বছরে ৯০০ কোটি টাকা, তিন হাজার আবাসিক হোটেলে গড়ে এক লাখ টাকা বিক্রি হলে বছরে ১ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা, দুই হাজার স্বর্ণের দোকানে
প্রতিদিন গড়ে পাঁচ লাখ টাকা বিক্রি হলে বছরে ৭৫০ কোটি টাকা এবং ৫০ হাজার জেনারেল স্টোরে গড়ে ১০ হাজার টাকা বিক্রি হলে বছরে ৩৭৫ কোটি টাকা ভ্যাট আদায় হওয়ার কথা। এ হিসাবে বছরে ৪ হাজার ৭২০ কোটি টাকা ভ্যাট আদায় হওয়ার কথা। রাজস্ব বোর্ডের হিসাবমতে, ২০০৯-১০ অর্থবছরে ৫০৭ কোটি ৯১ লাখ টাকা ভ্যাট আদায় করা হয়েছে। রেজিস্ট্রেশন নেওয়া সব ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে ইসিআর বা ফিসক্যাল প্রিন্টার স্থাপন করে ক্রয়-বিক্রয়ের প্রকৃত হিসাব নিতে পারলে ভ্যাট আদায়ের পরিমাণ চার থেকে সাড়ে চার হাজার কোটিতে গিয়ে দাঁড়াত বলে রাজস্ব বোর্ডের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা জানান।
ফিসক্যাল প্রিন্টার বা ইসিআরের মেমোরিতে কত টাকা বিক্রি হয়েছে এবং কত টাকা ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক আদায় করা হয়েছে তার সঠিক হিসাবে থাকত। নিয়ম অনুযায়ী মূসক বিভাগের কর্মকর্তাদের দেওয়া নিরাপত্তা সিল দিয়ে ফিসক্যাল প্রিন্টার বা ইসিআর লক করে রাখা সম্ভব। যে কারণে ভ্যাট ফাঁকি দেওয়া সম্ভব হতো না বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। বর্তমানে অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিজেদের ইচ্ছামতো হাতে লিখে রসিদ তৈরি করে ক্যাশমেমোতে ভ্যাটের পরিমাণ লিখে দিচ্ছে। সফটওয়্যার বিক্রয়কারীরা নিজেদের প্রিন্টারে প্রিন্ট করে ভ্যাট নিচ্ছেন, যা ইচ্ছা করলে নিজেরাই মুছে ফেলতে পারছেন।
জানা গেছে, ক্রেতা পর্যায়ে ভ্যাট ফাঁকিরোধে ২০০৮ সালে হোটেল, রেস্তোরাঁ, ফাস্ট ফুড শপ, মিষ্টির দোকান, আসবাবপত্রের বিপণনকেন্দ্র, বিউটি পার্লার, কমিউনিটি সেন্টার, মেট্রোপলিটন এলাকায় অভিজাত শপিং সেন্টার, ডিপার্টমেন্ট স্টোর, জেনারেল সেন্টার, বড়-মাঝারি পাইকারি এবং খুচরা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ও স্বর্ণের দোকানে ক্রয়-বিক্রয়ের হিসাব স্বচ্ছতা রাখার জন্য ইসিআর ও ফিসক্যাল প্রিন্টারের মাধ্যমে ক্রেতাদের ক্যাশমেমো দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এনবিআর। ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে সব সিটি করপোরেশন এলাকায় এবং ১ জুলাই থেকে সব জেলা শহরে ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন নেওয়া প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে ফিসক্যাল প্রিন্টার বা ইসিআর স্থাপনের নির্দেশ দেয় এনবিআর।
ফিসক্যাল প্রিন্টার বা ইসিআর স্থাপন করে ক্যাশমেমো দেওয়া হলে ভ্যাট ফাঁকি বন্ধ হয়ে যাবে। ভ্যাট ফাঁকি বন্ধ হয়ে গেলে মূসক পরিদর্শকদেরও ঘুষ বন্ধ হয়ে যাবে। তাই আজ পর্যন্ত ফিসক্যাল প্রিন্টার বা ইসিআর স্থাপন করা সম্ভব হয়নি বলে রাজস্ব বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।
বেসরকারি হিসাবমতে, দেশে বর্তমানে ভ্যাট রেজিস্ট্রেশনের উপযুক্ত ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দেড় লাখ। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এনবিআরের মূসক বিভাগের প্রথম সচিব মোহাম্মদ আহ্সানুল হক বলেন, সারাদেশের গ্রাহক বা ক্রেতা পর্যায়ে ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন নেওয়া ব্যবসায়ীর সংখ্যা এনবিআরের কাছে নেই। শিগগির ঢাকার চারটি সার্কেলের কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠক করে এর একটি তালিকা করা হবে। পর্যায়ক্রমে সারাদেশের তালিকাও করা হবে বলে তিনি জানান।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (ভ্যাট) মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন সমকালকে বলেন, ভ্যাটসহ রাজস্ব আদায় নিশ্চিত করার জন্য রাজস্ব বোর্ডে চারজন সদস্য ছিলেন। বর্তমানে সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে সাতজন করা হয়েছে।
বেসরকারি বেশ কয়েকটি সংস্থার হিসাবে, সারাদেশে গ্রাহক পর্যায়ে ভ্যাট আদায়যোগ্য দুই হাজার আসবাবপত্রের বিপণনকেন্দ্র রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৫০ হাজার টাকা বিক্রি হয়, এ হিসাবে বছরে ৭০ কোটি টাকা, ৫০ হাজার ফ্যাশন হাউসে প্রতিদিন গড়ে ১০ হাজার টাকা বিক্রি হলে বছরে ৩৭৫ কোটি টাকা, পাঁচ হাজার মিষ্টির দোকানে প্রতিদিন গড়ে ২০ হাজার টাকা বিক্রি হলে বছরে ৪৫০ কোটি টাকা, কম্পিউটার সফটওয়্যার বিক্রয়কারী এক হাজার প্রতিষ্ঠানে গড়ে ৫ লাখ টাকা বিক্রি হলে বছরে ৩৭০ কোটি টাকা, ১০০ বারে প্রতিদিন এক লাখ টাকা বিক্রি হলে বছরে ৭৫ কোটি টাকা, ১০ হাজার রেস্টুরেন্টে গড়ে প্রতিদিন ২০ হাজার টাকা বিক্রি হলে বছরে ৯০০ কোটি টাকা, তিন হাজার আবাসিক হোটেলে গড়ে এক লাখ টাকা বিক্রি হলে বছরে ১ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা, দুই হাজার স্বর্ণের দোকানে
প্রতিদিন গড়ে পাঁচ লাখ টাকা বিক্রি হলে বছরে ৭৫০ কোটি টাকা এবং ৫০ হাজার জেনারেল স্টোরে গড়ে ১০ হাজার টাকা বিক্রি হলে বছরে ৩৭৫ কোটি টাকা ভ্যাট আদায় হওয়ার কথা। এ হিসাবে বছরে ৪ হাজার ৭২০ কোটি টাকা ভ্যাট আদায় হওয়ার কথা। রাজস্ব বোর্ডের হিসাবমতে, ২০০৯-১০ অর্থবছরে ৫০৭ কোটি ৯১ লাখ টাকা ভ্যাট আদায় করা হয়েছে। রেজিস্ট্রেশন নেওয়া সব ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে ইসিআর বা ফিসক্যাল প্রিন্টার স্থাপন করে ক্রয়-বিক্রয়ের প্রকৃত হিসাব নিতে পারলে ভ্যাট আদায়ের পরিমাণ চার থেকে সাড়ে চার হাজার কোটিতে গিয়ে দাঁড়াত বলে রাজস্ব বোর্ডের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা জানান।
ফিসক্যাল প্রিন্টার বা ইসিআরের মেমোরিতে কত টাকা বিক্রি হয়েছে এবং কত টাকা ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক আদায় করা হয়েছে তার সঠিক হিসাবে থাকত। নিয়ম অনুযায়ী মূসক বিভাগের কর্মকর্তাদের দেওয়া নিরাপত্তা সিল দিয়ে ফিসক্যাল প্রিন্টার বা ইসিআর লক করে রাখা সম্ভব। যে কারণে ভ্যাট ফাঁকি দেওয়া সম্ভব হতো না বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। বর্তমানে অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিজেদের ইচ্ছামতো হাতে লিখে রসিদ তৈরি করে ক্যাশমেমোতে ভ্যাটের পরিমাণ লিখে দিচ্ছে। সফটওয়্যার বিক্রয়কারীরা নিজেদের প্রিন্টারে প্রিন্ট করে ভ্যাট নিচ্ছেন, যা ইচ্ছা করলে নিজেরাই মুছে ফেলতে পারছেন।
জানা গেছে, ক্রেতা পর্যায়ে ভ্যাট ফাঁকিরোধে ২০০৮ সালে হোটেল, রেস্তোরাঁ, ফাস্ট ফুড শপ, মিষ্টির দোকান, আসবাবপত্রের বিপণনকেন্দ্র, বিউটি পার্লার, কমিউনিটি সেন্টার, মেট্রোপলিটন এলাকায় অভিজাত শপিং সেন্টার, ডিপার্টমেন্ট স্টোর, জেনারেল সেন্টার, বড়-মাঝারি পাইকারি এবং খুচরা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ও স্বর্ণের দোকানে ক্রয়-বিক্রয়ের হিসাব স্বচ্ছতা রাখার জন্য ইসিআর ও ফিসক্যাল প্রিন্টারের মাধ্যমে ক্রেতাদের ক্যাশমেমো দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এনবিআর। ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে সব সিটি করপোরেশন এলাকায় এবং ১ জুলাই থেকে সব জেলা শহরে ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন নেওয়া প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে ফিসক্যাল প্রিন্টার বা ইসিআর স্থাপনের নির্দেশ দেয় এনবিআর।
ফিসক্যাল প্রিন্টার বা ইসিআর স্থাপন করে ক্যাশমেমো দেওয়া হলে ভ্যাট ফাঁকি বন্ধ হয়ে যাবে। ভ্যাট ফাঁকি বন্ধ হয়ে গেলে মূসক পরিদর্শকদেরও ঘুষ বন্ধ হয়ে যাবে। তাই আজ পর্যন্ত ফিসক্যাল প্রিন্টার বা ইসিআর স্থাপন করা সম্ভব হয়নি বলে রাজস্ব বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।
বেসরকারি হিসাবমতে, দেশে বর্তমানে ভ্যাট রেজিস্ট্রেশনের উপযুক্ত ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দেড় লাখ। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এনবিআরের মূসক বিভাগের প্রথম সচিব মোহাম্মদ আহ্সানুল হক বলেন, সারাদেশের গ্রাহক বা ক্রেতা পর্যায়ে ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন নেওয়া ব্যবসায়ীর সংখ্যা এনবিআরের কাছে নেই। শিগগির ঢাকার চারটি সার্কেলের কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠক করে এর একটি তালিকা করা হবে। পর্যায়ক্রমে সারাদেশের তালিকাও করা হবে বলে তিনি জানান।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (ভ্যাট) মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন সমকালকে বলেন, ভ্যাটসহ রাজস্ব আদায় নিশ্চিত করার জন্য রাজস্ব বোর্ডে চারজন সদস্য ছিলেন। বর্তমানে সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে সাতজন করা হয়েছে।
No comments