পাহাড় কাটার মহোৎসব-পরিবেশবিধ্বংসী কাজ বন্ধ করা হোক
যে যেভাবে পারছে, পরিবেশ ধ্বংস করে চলেছে। পাহাড় কেটে সমতল করে দিচ্ছে। মাটি নিয়ে নিচু জমি ও জলাশয় ভরাট করছে। নির্বিচারে বনজঙ্গল ধ্বংস করা হচ্ছে। 'বোমা মেশিন', 'সিলিন্ডার মেশিন' ইত্যাদি দিয়ে মাটির ৬০-৭০ ফুট গভীর থেকে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। বনাঞ্চলের পাশেই গড়ে উঠছে ইটভাটা, বসছে করাত কল। এ সবই আইনে নিষিদ্ধ। কিন্তু সেই আইন কেবল কেতাবেই আছে। বাস্তবে এসব আইনের কোনো প্রয়োগ নেই বললেই চলে। পরিবেশ
অধিদপ্তর নামে একটি অধিদপ্তর আছে। পরিবেশবিদদের মতে, কিছু অসাধু কর্মকর্তার কারণে এই অধিদপ্তরটিই এখন পরিবেশের প্রধান শত্রু। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও বিশেষ কারণে এসব দেখেও না দেখার ভান করে। আর সরকারও ক্ষমতায় বসার পর এসব ক্ষেত্রে দেওয়া তাদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বেমালুম ভুলে গেছে।
দেশের পাহাড় অধ্যুষিত এলাকাগুলোর মধ্যে চট্টগ্রামেই সবচেয়ে বেশি পাহাড় কাটা হচ্ছে। বৃহত্তর সিলেট ও কঙ্বাজারেও চলছে পাহাড় কাটার মহোৎসব। গণমাধ্যমে এ নিয়ে প্রতিনিয়ত খবর পরিবেশিত হচ্ছে। পাহাড় কাটার পরিণাম নিয়ে আলোচনা ও লেখালেখি চলছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা! দুর্বৃত্তরা তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে যথারীতি। চট্টগ্রামে প্রতিবছর পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটছে। বহু মানুষ হতাহত হচ্ছে। শোকাবহ একেকটি পাহাড়ধসের পর দেশব্যাপী পাহাড় কাটা বন্ধের দাবি ওঠে। গণমাধ্যম সরব হয়। সরকারি ও বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ পাহাড় কাটা বন্ধের প্রতিশ্রুতি দেয়। কয়েক দিন বন্ধ থাকলেও অচিরেই আবার পাহাড় কাটা শুরু হয়ে যায়। ব্যক্তিপর্যায়ের পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি পর্যায়েও চলে পাহাড় কাটার এই মহোৎসব।
১৯৯৫ সাল থেকে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী দেশে পাহাড় হোক, আর টিলা হোক_সেগুলো কাটা নিষিদ্ধ রয়েছে। ২০১০ সালে আইনটি সংশোধন করা হয়েছে। ২০০৮ সাল থেকে পরিবেশ অধিদপ্তরের জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, 'অনিবার্য প্রয়োজনে' পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে পাহাড় ও টিলা কাটার বিধান রাখা হয়। যদিও সেই 'অনিবার্য প্রয়োজন' নিয়ে বহু প্রশ্ন রয়েছে। কিন্তু সেই অনুমতিটুকুও না নিয়ে সরকারি-বেসরকারিভাবে পাহাড় কাটা চলছে পুরো দেশে। ২০০৭ সাল থেকে যন্ত্র দিয়ে পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ রয়েছে। অথচ সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় ব্যাপকভাবে যন্ত্র দিয়ে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে বলে সংবাদপত্রে খবর প্রকাশিত হয়েছে। ফেঞ্চুগঞ্জে ব্যাপকভাবে পাহাড় কাটা হচ্ছে বলেও খবর বেরিয়েছে। অথচ উভয় ক্ষেত্রেই প্রশাসন নির্বিকার। ইট পোড়ানো আইন ১৯৮৯ (সংশোধিত ২০০১) অনুযায়ী, সংরক্ষিত বনাঞ্চলের সীমানা থেকে তিন কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ইটভাটা গড়ে তোলা যাবে না। অথচ এসব বনের সীমানা ঘেঁষেই রয়েছে বহু ইটভাটা। এরা পাহাড় থেকে মাটি কেটে এবং বন থেকে কাঠ কেটে ইট বানায় ও পোড়ায়।
এই যদি অবস্থা হয়, তাহলে আইনগুলো থাকার প্রয়োজন কী? বর্তমান সরকারের প্রতি আমাদের অনুরোধ, হয় আইনগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিন অথবা আইনগুলো বাতিল করে দিন।
No comments