পবিত্র কোরআনের আলো-যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ, তবে সন্ধির সুযোগ হাতছাড়া করা নয়
৫৯. ওয়া লা ইয়াহসাবান্নাল্লাযিনা কাফারূ সাবাকূ, ইন্নাহুম লা উয়ু'জিযূন। ৬০. ওয়া আয়িদ্দূ লাহুম মা-সতাতোয়া'তুম মিন কুওয়াতিন ওয়া মিঁররিবাতিল খাইলি তুরহাবূনা বিহি আ'দুওয়াল্লাহি ওয়া আ'দুওয়াকুম ওয়া আখারীনা মিন দূনিহিম লা তা'লামূনাহুম, আল্লাহু ইয়া'লামুহুম, ওয়া মা তুনফিক্বূ মিন শাইয়িন ফী সাবিলিল্লাহি ইউওয়াফ্ফা ইলাইকুম ওয়া আনতুম লা তুঝলামূন। ৬১. ওয়া ইন জানাহূ লিসসালমি, ফাআজনাহা লাহা ওয়া তাওয়াক্কাল আ'লাল্লাহি, ইন্নাহূ হুয়াস সামি'উল
আ'লিম। ৬২. ওয়া ইন ইউরীদূ আঁইয়্যাখদাঊকা, ফাইন্না হাসবাকাল্লাহু, হুয়াল্লাজি আইয়্যাদাকা বিনাসরিহি ওয়া বিলমু'মিনীনা। (সুরা আনফাল, আয়াত-৫৯-৬২) অনুবাদ : ৫৯. কাফিররা যেন কখনো এমন ধারণা পোষণ না করে যে ওরা রেহাই পেয়ে গেছে। কোনো অবস্থায়ই তারা তোমাদের ব্যর্থ করে দিতে পারবে না।
৬০. (হে মুসলমানরা!) তোমরা তাদের মোকাবিলা করার জন্য যথাসাধ্য শক্তি, সাজ-সরঞ্জাম ও ঘোড়া প্রস্তুত করো, যাতে তোমরা আল্লাহর দুশমন ও তোমাদের দুশমনদের সন্ত্রস্ত করে রাখবে এবং সেই সঙ্গে এমন সব লোকদেরও, যাদের তোমরা চেনো না, তবে আল্লাহ জানেন। তোমরা আল্লাহর পথে যা কিছু ব্যয় করবে, এর প্রতিফল তোমাদের পরিপূর্ণভাবে দেওয়া হবে এবং এ ক্ষেত্রে কোনো অবিচার করা হবে না।
৬১. আর তারা যদি সন্ধি করতে আগ্রহী হয়, তবে তোমরাও আগ্রহী হবে এবং আল্লাহর ওপর নির্ভর করবে। নিশ্চয়ই তিনি সব কিছু শোনেন এবং জানেন।
৬২. (হে নবী!) তারা যদি আপনাকে ধোঁকা দিতে চায়, তবে আল্লাহই আপনার জন্য যথেষ্ট। তিনি নিজ সাহায্যে মুমিনদের মাধ্যমে আপনাকে শক্তিশালী করেছেন।
ব্যাখ্যা : ৫৯ নম্বর আয়াতের বক্তব্যে সেসব কাফিরের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে, যারা বদর যুদ্ধ থেকে প্রাণ রক্ষা করে পালাতে সক্ষম হয়েছিল। তারা পালাতে পেরেছে মানে এই নয় যে তারা পরিত্রাণ পেয়ে গেছে। যুদ্ধের ময়দান থেকে তারা প্রাণভয়ে পালিয়ে যেতে পারলেও আল্লাহর হাতে তারা ধরা পড়বেই। ৬০ নম্বর আয়াতে মুসলিম উম্মাহর প্রতিরক্ষাব্যবস্থা জোরদার করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। সত্য বনাম মিথ্যার দ্বন্দ্বে লিপ্ত এই পৃথিবীতে সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করা এবং টিকিয়ে রাখার জন্য নিরাপত্তাব্যবস্থা গড়ে তোলা ও সমরশক্তি জোরদার করার গুরুত্ব অপরিসীম। ইসলামের আবির্ভাব প্রকৃত অর্থে কোনো সাম্রাজ্য বিস্তারের সূত্রপাত নয়। ইসলাম হচ্ছে মিথ্যা ও জরাজীর্ণতার বিরুদ্ধে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে, জাগরণের পক্ষে এক যুগান্তকারী মাইলফলক। বদরের যুদ্ধের মধ্য দিয়ে মুসলমানরা আরবের বুকে একটা সামরিক শক্তি হিসেবে উঠে এসেছে। এরপর এই আয়াত যখন নাজিল হয়েছে, তখন এই সামরিক শক্তিকে স্থায়ী ও সুসংহতভাবে দাঁড় করানোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। কোরআন মজিদের এই আয়াতে সাধারণভাবে 'শক্তি' শব্দটি ব্যবহার করে সমরশক্তির কথাই বোঝানো হয়েছে। যখন যে ধরনের প্রতিরক্ষা শক্তি কাজে আসে, তখন সে ধরনের শক্তি অর্জন করা মুসলমানদের জন্য কর্তব্য। সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে কাদের মোকাবিলা করতে হবে, সে ব্যাপারেও এই আয়াতে একটি রূপরেখা দেওয়া হয়েছে। প্রথমে বলা হয়েছে, আল্লাহর দুশমন ও মুসলমানদের দুশমনের কথা। অর্থাৎ যারা আল্লাহর হুকুমের অবাধ্য, সত্য ও ন্যায়ের পথ থেকে বিচ্যুত এবং মুসলমানদের উত্থান ঠেকাতে তৎপর, তাদের মোকাবিলা করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে সেসব দুশমনের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে, যারা তখনো পর্যন্ত প্রকাশ্যে আসেনি। অর্থাৎ রোমান সাম্রাজ্য, পারস্য সাম্রাজ্যসহ অন্যান্য অত্যাচারী শাসকবর্গ যারা ইসলামের বিজয় ঠেকাতে তৎপর হয়ে উঠেছিল, তাদের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। মহানবী (সা.)-এর শেষ জীবনে এবং খোলাফায়ে রাশেদিনের আমলে এসব শক্তির সঙ্গে মুসলমানদের মোকাবিলা হয়েছিল। ৬১ নম্বর আয়াতে মুসলমানদের শত্রুর সঙ্গে সন্ধি স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এমনকি উৎসাহীও করা হয়েছে, যদি সে রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ যদি তারা সন্ধি স্থাপনে এগিয়ে আসে। বোদ্ধা ঐতিহাসিকদের অভিমত, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে বিচক্ষণতার সঙ্গে সন্ধি বা শান্তিচুক্তি স্থাপনের মধ্য দিয়েই ইসলাম অতি দ্রুত বিশ্ববিজয়ী শক্তিতে পরিণত হয়েছে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
৬০. (হে মুসলমানরা!) তোমরা তাদের মোকাবিলা করার জন্য যথাসাধ্য শক্তি, সাজ-সরঞ্জাম ও ঘোড়া প্রস্তুত করো, যাতে তোমরা আল্লাহর দুশমন ও তোমাদের দুশমনদের সন্ত্রস্ত করে রাখবে এবং সেই সঙ্গে এমন সব লোকদেরও, যাদের তোমরা চেনো না, তবে আল্লাহ জানেন। তোমরা আল্লাহর পথে যা কিছু ব্যয় করবে, এর প্রতিফল তোমাদের পরিপূর্ণভাবে দেওয়া হবে এবং এ ক্ষেত্রে কোনো অবিচার করা হবে না।
৬১. আর তারা যদি সন্ধি করতে আগ্রহী হয়, তবে তোমরাও আগ্রহী হবে এবং আল্লাহর ওপর নির্ভর করবে। নিশ্চয়ই তিনি সব কিছু শোনেন এবং জানেন।
৬২. (হে নবী!) তারা যদি আপনাকে ধোঁকা দিতে চায়, তবে আল্লাহই আপনার জন্য যথেষ্ট। তিনি নিজ সাহায্যে মুমিনদের মাধ্যমে আপনাকে শক্তিশালী করেছেন।
ব্যাখ্যা : ৫৯ নম্বর আয়াতের বক্তব্যে সেসব কাফিরের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে, যারা বদর যুদ্ধ থেকে প্রাণ রক্ষা করে পালাতে সক্ষম হয়েছিল। তারা পালাতে পেরেছে মানে এই নয় যে তারা পরিত্রাণ পেয়ে গেছে। যুদ্ধের ময়দান থেকে তারা প্রাণভয়ে পালিয়ে যেতে পারলেও আল্লাহর হাতে তারা ধরা পড়বেই। ৬০ নম্বর আয়াতে মুসলিম উম্মাহর প্রতিরক্ষাব্যবস্থা জোরদার করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। সত্য বনাম মিথ্যার দ্বন্দ্বে লিপ্ত এই পৃথিবীতে সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করা এবং টিকিয়ে রাখার জন্য নিরাপত্তাব্যবস্থা গড়ে তোলা ও সমরশক্তি জোরদার করার গুরুত্ব অপরিসীম। ইসলামের আবির্ভাব প্রকৃত অর্থে কোনো সাম্রাজ্য বিস্তারের সূত্রপাত নয়। ইসলাম হচ্ছে মিথ্যা ও জরাজীর্ণতার বিরুদ্ধে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে, জাগরণের পক্ষে এক যুগান্তকারী মাইলফলক। বদরের যুদ্ধের মধ্য দিয়ে মুসলমানরা আরবের বুকে একটা সামরিক শক্তি হিসেবে উঠে এসেছে। এরপর এই আয়াত যখন নাজিল হয়েছে, তখন এই সামরিক শক্তিকে স্থায়ী ও সুসংহতভাবে দাঁড় করানোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। কোরআন মজিদের এই আয়াতে সাধারণভাবে 'শক্তি' শব্দটি ব্যবহার করে সমরশক্তির কথাই বোঝানো হয়েছে। যখন যে ধরনের প্রতিরক্ষা শক্তি কাজে আসে, তখন সে ধরনের শক্তি অর্জন করা মুসলমানদের জন্য কর্তব্য। সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে কাদের মোকাবিলা করতে হবে, সে ব্যাপারেও এই আয়াতে একটি রূপরেখা দেওয়া হয়েছে। প্রথমে বলা হয়েছে, আল্লাহর দুশমন ও মুসলমানদের দুশমনের কথা। অর্থাৎ যারা আল্লাহর হুকুমের অবাধ্য, সত্য ও ন্যায়ের পথ থেকে বিচ্যুত এবং মুসলমানদের উত্থান ঠেকাতে তৎপর, তাদের মোকাবিলা করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে সেসব দুশমনের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে, যারা তখনো পর্যন্ত প্রকাশ্যে আসেনি। অর্থাৎ রোমান সাম্রাজ্য, পারস্য সাম্রাজ্যসহ অন্যান্য অত্যাচারী শাসকবর্গ যারা ইসলামের বিজয় ঠেকাতে তৎপর হয়ে উঠেছিল, তাদের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। মহানবী (সা.)-এর শেষ জীবনে এবং খোলাফায়ে রাশেদিনের আমলে এসব শক্তির সঙ্গে মুসলমানদের মোকাবিলা হয়েছিল। ৬১ নম্বর আয়াতে মুসলমানদের শত্রুর সঙ্গে সন্ধি স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এমনকি উৎসাহীও করা হয়েছে, যদি সে রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ যদি তারা সন্ধি স্থাপনে এগিয়ে আসে। বোদ্ধা ঐতিহাসিকদের অভিমত, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে বিচক্ষণতার সঙ্গে সন্ধি বা শান্তিচুক্তি স্থাপনের মধ্য দিয়েই ইসলাম অতি দ্রুত বিশ্ববিজয়ী শক্তিতে পরিণত হয়েছে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
No comments