টাকা ছাপিয়ে খরচ মেটানো যাবে না

র্থনীতির স্বার্থে সরকারকে প্রয়োজনে অজনপ্রিয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলেছেন, টাকা ছাপিয়ে খরচ মেটানো যাবে না। কারণ, এতে মূল্যস্ফীতি বাড়ে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এখনই দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিতে হবে জানিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, নির্বাচন আসছে। আর ছয় মাস পার হয়ে গেলে সরকারের পক্ষে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ নেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। তাঁরা আরও বলেন, চাহিদা যেহেতু কমানোর সুযোগ নেই, তাই শিগগির


অপ্রয়োজনীয় খাতে সরকারের ব্যয় কমাতে হবে। জাতীয় সংসদে গতকাল সোমবার অনুষ্ঠিত অর্থ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ৪৩তম বৈঠকে এসব পরামর্শ দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কাছে অর্থনীতির খারাপ অবস্থার কথা স্বীকার করে স্থায়ী কমিটির সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘খারাপ অবস্থার কথা স্বীকার করতে হবে। স্বীকার না করে কোনো উপায় নেই। বরং এ অবস্থা থেকে কীভাবে বের হওয়া যায়, সেটাই হলো বিষয়।’
বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমানসহ কমিটির অন্য সদস্য ছাড়াও বিশেষ আমন্ত্রণে সাবেক দুজন অর্থ উপদেষ্টা আকবর আলি খান, এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক মুস্তফা কে মুজেরী, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান, বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবুল বারকাত প্রমুখ বৈঠকে অংশ নেন। তবে বৈঠক শেষ না হওয়ার আগেই চলে যান অর্থমন্ত্রী।
বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকও একটি প্রতিবেদন দিয়েছে। প্রতিবেদনে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারকে ঋণ নিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বৈঠকের পর যোগাযোগ করা হলে আকবর আলি খান প্রথম আলোকে বলেন, অর্থনীতির স্বার্থে সরকারকে বেশ কিছু অজনপ্রিয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, ‘এখনই দৃঢ় কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া হলে সরকারের পক্ষে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়বে। নির্বাচন যেহেতু চলে আসছে, সুতরাং যা করার আগামী ছয় মাসের মধ্যেই করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘এখনো সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন, তবে ছয় মাস পার হয়ে গেলে সরকার আর পারবে না।’
বৈদেশিক সহায়তা প্রাপ্তির জন্য প্রকল্প ঋণের চেয়ে কর্মসূচি ঋণে জোর দেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আইএমএফের সঙ্গে ঋণ চুক্তিটা সবার আগে জরুরি।’
মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বৈঠকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং সরকারের ব্যাংকঋণ কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, ‘চাহিদা যেহেতু কমানোর কোনো সুযোগ নেই, সুতরাং ব্যয়ের জন্য সরকারকে অগ্রাধিকার খাত চিহ্নিত করতে হবে। অন্তত অনুৎপাদনশীল খাতে যেন ব্যয়সংকোচন করা হয়।’
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, টাকার অবমূল্যায়নই যে মূল্যস্ফীতির কারণ, তা তিনি বৈঠকে উপস্থাপন করেছেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘মুদ্রাবাজারে বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপ করার সক্ষমতাও এখন কমে গেছে। বৈদেশিক সহায়তার প্রকল্পগুলো দ্রুত ছাড় করতে পারলে অন্তত মুদ্রার অবমূল্যায়ন ঠেকানো যাবে।’
আ হ ম মুস্তফা কামাল বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ‘দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি রয়েছে। বৈদেশিক সহায়তা একেবারেই মিলছে না। বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ গেছে কমে। টাকার মানও কমছে। সব মিলিয়ে বেশ চাপেই রয়েছে অর্থনীতি।’ তিনি আরও বলেন, ‘যে খরচ এখনই করার দরকার নেই, তা যেন পরেই করা হয়। আর টাকা ছাপানো যাবে না।’
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘সবকিছু যদি কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হয়, তাহলে তো মুশকিল। আর সরকার যেভাবে ধার করা শুরু করেছিল...’ বাক্য শেষ না করেই তিনি বলেন, ‘যাক, এটা এখন কমে গেছে, ভালো দিক।’

No comments

Powered by Blogger.