ছাত্রলীগ নেতা আহত হওয়ার জের-এক মাস ধরে ক্লাস হচ্ছে না কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে by গাজীউল হক

শিক্ষকেরা নিয়মিত উপস্থিত থাকেন। দরজা-জানালা খোলা থাকে। চেয়ার-টেবিলও সাজানো আছে। কিন্তু যাঁদের জন্য এই আয়োজন, সেই শিক্ষার্থীরাই অনুপস্থিত। তাঁরা নিজ বিশ্ববিদ্যালয়েই নিরাপত্তাহীন। এ অবস্থার মধ্য দিয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক মাস ধরে কোনো ক্লাস হচ্ছে না। গত ২৭ নভেম্বর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং শেষ বর্ষের ছাত্র ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মঈনউদ্দিন সফিকুর রহমান চিশতিকে ছুরিকাঘাত করার ঘটনায়


বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, ২৭ নভেম্বরের পর থেকে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় খোলা থাকলেও কোনো ধরনের ক্লাস ও পরীক্ষা হয়নি। ১৯ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত শীতকালীন ছুটির কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ছিল। ১ জানুয়ারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হলেও কোনো ক্লাস শুরু হয়নি। তবে গত রোববার থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ক্লাস চালুর উদ্যোগ নেয়। কিন্তু প্রতিটি বিভাগে হলকেন্দ্রিক কিছু শিক্ষার্থী এবং ছাত্রলীগের একটি অংশের কিছু নেতা-কর্মী অংশ নেন। শিক্ষার্থীদের বৃহত্তর অংশ নিরাপত্তার অভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ছাত্ররাজনীতিমুক্ত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের একটি পক্ষের সভাপতি দাবিদার মাহমুদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আল আমিনের অনুসারী ছাত্রলীগের কর্মী লোকপ্রশাসন বিভাগের দ্বিতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী মনির হোসেন ও ইংরেজি বিভাগের ফাহিম হোসেন ছুরিকাঘাত করেন মঈনউদ্দিন চিশতিকে। এ ঘটনায় পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আবু তাহেরকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি ৩০ নভেম্বর প্রতিবেদন জমা দিলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ ক্ষেত্রে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
অভিযোগের ব্যাপারে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মঈনউদ্দিন সফিকুর রহমান চিশতি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করছে। তারা ছাত্রলীগ নামধারী একটি পক্ষকে বাঁচানোর জন্য কোনো ধরনের তদন্ত প্রতিবেদনই বাস্তবায়ন করছে না। ওই ঘটনার বিচার না হওয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীসহ আমরা কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছি না।’
জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির প্রধান মো. আবু তাহের গতকাল সোমবার রাতে বলেন, ‘আমরা যথাসময়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। প্রতিবেদন বাস্তবায়ন করবেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ ক্ষেত্রে আমাদের বলার কিছু নেই। কয়েক দিন আগে ক্লাস শুরু হলেও উপস্থিতি কম। ঝামেলার কারণে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে আসতে পারছে না।’ প্রতিবেদনে কী সুপারিশ করা হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ঘটনার সঙ্গে যাঁরা জড়িত ছিলেন, তাঁদের বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মোহাম্মদ আইনুল হক জানান, শহরের কিছু শিক্ষার্থী যেতে পারছেন না। তবে গতকাল সোমবার উপস্থিতির হার ছিল ৬০ শতাংশ। শীতকালীন ছুটির আগে কোনো ধরনের ক্লাস হয়নি বলে নিশ্চিত করেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আমির হোসেন খান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার তুলনামূলকভাবে কম। ছাত্রলীগ নামধারীদের দুটি পক্ষের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস চললে বিভিন্ন স্থানে একটি পক্ষ বাধা দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে পুলিশ কতক্ষণ পাহারা দেবে? তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন শিগগির বাস্তবায়ন করা হবে।’
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আ ফ ম আহসান উদ্দিন বলেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ। সেখানে ছাত্রলীগের কোনো কমিটি নেই। ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে যাঁরা দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছেন, তাঁদের গ্রেপ্তার করার জন্য পুলিশকে জানানো হবে বলে জানান তিনি।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) কুমিল্লার সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর বলেন, দক্ষ প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে না ওঠায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে বারবার এ ধরনের ঝামেলা হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.