সবকিছু ছাপিয়ে মেসি-আতিথ্য by মাসুদ আলম

ঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের সবুজ ঘাসে জাদুকরি পায়ের ছোঁয়া পড়েছে লিওনেল মেসির। ২০১১ সালে ঘরোয়া ফুটবলে এটিই সবচেয়ে আলোচিত। আর্জেন্টিনা-নাইজেরিয়া প্রীতি ম্যাচও লাল-সবুজের ফুটবল মানচিত্রে রঙিন দাগ রেখেছে। বছরের খেরোখাতায় মেসি-আতিথ্য, আর্জেন্টিনা...! বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলে এর চেয়ে স্মরণীয় বছর আর হয় না! ভূমিকম্পও এসেছিল—পাতানো খেলা। এক-দুবার পাতানো খেলার টুকটাক শাস্তি দেওয়া হয়েছিল আগে। কিন্তু


স্মরণকালে উটপাখির মতোই বালুতে মুখ গুঁজে ছিলেন কর্তারা। অবশেষে এই ২০১১ সালেই বাংলাদেশ লিগে শেখ জামাল-রহমতগঞ্জ ম্যাচটিকে পাতানো বলে রায় দেওয়া হয়েছে। লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েও তাই কালির দাগ শেখ জামালের গায়ে। পাতানো খেলার দায়ে দলটির জরিমানা ২০ লাখ টাকা! বাংলাদেশের বাস্তবতায় এটা ব্যতিক্রমী উদাহরণ বলেই বিস্ময়সূচক চিহ্নটার ব্যবহার।
এই ইতিবাচক পরিবর্তনের পথে জাতীয় দল স্বপ্ন দেখিয়েছে। বছরের শুরুতে মিয়ানমারে এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপে সুবিধা করা যায়নি, তবে মাঝমাঝি বিশ্বকাপ প্রাক-বাছাইয়ে হোম ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩-০ ও লেবাননের বিপক্ষে ২-০ জয়। তবু বিশ্বকাপ বাছাইয়ের দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার সুযোগ হয়নি। সেটি হলে এশিয়ার বড় বড় দলের সঙ্গে কিছু ম্যাচ খেলার সুযোগ মিলত!
তা না হোক, বছর শেষান্তে একটা অপেক্ষার অবসানও কিন্তু কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। ফুটবল একাডেমি করার জন্য সিলেট বিকেএসপি বুঝে পেয়েছে বাফুফে। পাশাপাশি অনেক দৌড়ঝাপের পর সারা দেশে প্রায় পাঁচ হাজার স্কুল নিয়ে জাতীয় স্কুল টুর্নামেন্ট মাঠে গড়াচ্ছে। এটিও বিদায়ী বছরের অর্জন। ফুটবলার তৈরির এই টুর্নামেন্টে পাঁচ কোটি টাকার স্পনসর আনার সাফল্য আলাদা করে বলার মতো।
কিন্তু বছরের সব প্রাপ্তি এক ঝটকায় ম্লান। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের গ্রুপ থেকেই জাতীয় দলের বিদায় বড়ই চোখে লেগেছে। এই সাফে নেপাল ও মালদ্বীপের কাছে হার ১-০ ও ৩-১ গোলে। বাংলাদেশ দলের বেহাল দশায় বিদেশিরা পর্যন্ত অবাক! অন্যরা এগিয়েছে, আর বাংলাদেশ জাতীয় দল বছরের শেষে এসে হাঁটল পেছনের দিকে!
যথারীতি বিদেশি কোচ আসা-যাওয়ার খেলাও থাকল এ বছর। রাতের অন্ধকারে কাউকে না জানিয়ে ক্রোয়েশিয়ান কোচ রবার্ট রুবচিচের ঢাকা ছাড়া রহস্যময় এক ঘটনাই। কদিন আগে তাঁর উত্তরসূরি নিকোলা ইলিয়েভস্কির ‘সমঝোতার’ বিদায়ও চমক-জাগানিয়া। মাত্র ছয় মাস টিকে মেসিডোনিয়ান ভদ্রলোক বুঝিয়ে গেছেন, এ দেশে বিদেশি কোচদের কাজ করা কত সত্যিই কঠিন!
এ বছর বিদেশি ফুটবলারের আগ্রাসন সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। গোলরক্ষকসহ পাঁচ বিদেশিকে সুযোগ দেওয়ায় বিদায়ী ঘরোয়া মৌসুমে জাতীয় দলের অনেক তারকাই বেঞ্চে কাটাতে বাধ্য হন। নতুন মৌসুমে প্রতি দল আনতে পারছে সাতজন করে বিদেশি। খেলতে পারবেন চারজন করে। বিদেশি ফুটবলার কমানোর দাবি ছিল, উল্টো বাড়ানোয় দেশের সত্যিকারের ফুটবল উন্নয়নকামীরা বিচলিত।
এই যখন অবস্থা, মাঠের পারফরম্যান্স দিয়ে আলোচিত খেলোয়াড় বের করা কঠিন। তবে মাঠের বাইরের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে তিরস্কৃত হয়েছেন জাতীয় দলের তিন খেলোয়াড় এমিলি, মিঠুন ও জাহিদ। প্রথম দুজন খেপ খেলার দায়ে অলিখিতভাবে নিষিদ্ধ হয়েও পরে সাফে সুযোগ পেয়েছেন। অসদাচরণের জন্য নিষিদ্ধই রইলেন জাহিদ। পাতানো খেলার শাস্তি পাওয়া রহমতগঞ্জ গোলরক্ষক ইরান শেখের দোষ স্বীকার করে বোমা ফাটানো, জাতীয় দল থেকে গোলরক্ষক আমিনুলের অবসর—কয়েকটা দিন খবরের কাগজে তাঁরা ভালোই জায়গা করে নিয়েছিলেন।
আরেকজনের কথা বলতেই হয়। বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আল মুসাব্বির সাদি চলে গেলেন ক্যানসারের কাছে হার মেনে। সেই থেকে সাধারণ সম্পাদকবিহীন বাফুফে। পেশাদারির কথা বহুবার বলা হলেও বাফুফে কার্যত এখনো সেই অপেশাদারের শৃঙ্খলেই আটক।
বাফুফের অর্থসংকট তীব্র। কর্তাদের মধ্যে বিভেদ প্রকাশ্যে চলে এসেছে। তৃণমূল ফুটবল উন্নয়ন বরাবরের মতোই উপেক্ষিত। মাঠ সমস্যার সমাধান করার উদ্যোগ নেই। বাফুফে যেন নির্বিকার। এভাবে চলতে চলতেই এপ্রিলে ফরাশগঞ্জের স্বাধীনতা কাপ জয় হয়ে এল বড় এক চমক। আগস্টে বিবর্ণ মোহামেডানের সুপার কাপ ফাইনাল খেলাও সে তালিকায় পড়ছে।
সব ছাপিয়ে মেসি-বরণের বছরটা প্রাপ্তি-ব্যর্থতার মধ্যেই কাটল। ২০১২ হোক আশা-জাগানিয়া—এই প্রত্যাশা সবার।

No comments

Powered by Blogger.