চট্টগ্রাম বন্দর হবে দ. এশিয়ার গেটওয়ে :প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ম্যানুয়াল পদ্ধতির অপারেশন থেকে চট্টগ্রাম বন্দরকে উন্নীত করা হচ্ছে ডিজিটাল বন্দরে। বিশ্বে নিরাপদ বন্দর হিসেবে যাত্রা শুরু করছে চট্টগ্রাম বন্দর। এ বন্দরকে দক্ষিণ এশিয়ার বাণিজ্যিক কার্যক্রমের গেটওয়ে হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে। গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার টার্মিনাল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিটিএমএস) এবং রেডিয়েশন ডিটেকশন সিস্টেম উদ্বোধন করতে গিয়ে তিনি এসব


কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বন্দর মিলনায়তনে ল্যাপটপের বোতাম টিপে কনটেইনার টার্মিনাল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম এবং রেডিয়েশন ডিটেকশন সিস্টেমের উদ্বোধন করেন। এ সময় তিনি বলেন, বাংলাদেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের ৯০ শতাংশেরও বেশি চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে সম্পন্ন হওয়ায় এ বন্দরের উন্নয়নে বর্তমান সরকার সবসময়ই আন্তরিক।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি নুর-ই-আলম চৌধুরী লিটন, নৌ সচিব
আবদুল মান্নান হাওলাদার, বন্দর চেয়ারম্যান কমডোর আনওয়ারুল ইসলাম, মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মোজিনা, সাবেক সিটি মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, বন্দর-পতেঙ্গা আসনের সাংসদ এমএ লতিফ প্রমুখ।
শেখ হাসিনা বলেন, বন্দর ব্যবহারকারীরা যাতে কোনো রকম ঝক্কি-ঝামেলার শিকার না হন এবং তারা যাতে স্বচ্ছতার সঙ্গে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারেন সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দর দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংযোগস্থলে অবস্থিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ ভৌগোলিক সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে আঞ্চলিক বাণিজ্য আরও বাড়াতে কক্সবাজার জেলার সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপনের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। এটি স্থাপিত হলে ভারত, চীন ও মিয়ানমারসহ এ অঞ্চলের জনগণের ভাগ্যোন্নয়ন হবে। আর চট্টগ্রাম বন্দরের সেবা আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হওয়ায় আমাদের বৈদেশিক বিনিয়োগ, শিল্প এবং ব্যবসা ব্যাপক প্রসার লাভ করবে।
মেরিটাইম সেক্টরের উন্নয়নে তার সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, শিপিং করপোরেশন, নৌ বাণিজ্য সেক্টরের সমন্বয়ে আমরা একটি আদর্শ ও শক্তিশালী মেরিটাইম পাওয়ার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে চাই। বর্তমান সরকার মেরিন একাডেমী প্রাঙ্গণে 'শেখ মুজিব মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়' প্রতিষ্ঠা করে মেরিটাইম সেক্টরের প্রতি আন্তরিকতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তিনি বলেন, তার সরকারের সময়োচিত পদক্ষেপের ফলে গত অর্থবছরে বন্দরের বাল্ক কার্গো হ্যান্ডলিং ১২ শতাংশ বেড়েছে এবং জাহাজ আগমনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৮ শতাংশ। এ ছাড়া বন্দরে পণ্যের ওঠানামা আরও দক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন করার জন্য জাহাজের গড় অবস্থানকাল আগের তুলনায় ৮০ শতাংশ কমিয়ে আনা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক সহায়তায় বিকিরণধর্মী (রেডিয়েশন প্রোনানসিয়েশন) পণ্যের অবৈধ পরিবহন প্রতিরোধে বাস্তবায়িত মেগা পোর্ট ইনিশিয়েটিভ প্রকল্পের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকার যে কোনো মূল্যে সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসীদের উৎখাত করতে চায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিসরে সন্ত্রাস দমনের মডেল হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছি। তার সরকারের অন্যতম অঙ্গীকার ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির আওতায় চট্টগ্রাম বন্দর ম্যানুয়াল পদ্ধতি থেকে ডিজিটাল বন্দরে উন্নীত হতে যাচ্ছে। তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রকল্পে আর্থিক সহায়তার জন্য এশীয় উন্নয়ন ব্যাংককে (এডিবি) ধন্যবাদ জানান। বন্দরে রেডিয়েশন ডিটেক্টর স্থাপনে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা প্রদানের জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারকেও তিনি ধন্যবাদ জানান এবং বলেন, রেডিয়েশন ডিটেক্টর স্থাপনের মাধ্যমে বিশ্বের দরবারে নিরাপদ বন্দর হিসেবে আমাদের যাত্রা শুরু হলো।

No comments

Powered by Blogger.