সংলাপে বিএনপি-ইতিবাচক অগ্রগতি
নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন বিষয়ে বিভিন্ন দলের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমানের চলমান সংলাপে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি অংশগ্রহণ করবে_ এমন খবর উৎসাহব্যঞ্জক। সোমবার রাষ্ট্রপতির দফতর থেকে প্রধান দুটি দল আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধী দল বিএনপির কাছে আমন্ত্রণ পেঁৗছানোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বিএনপি এ বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের শরিকরাও সংলাপে অংশগ্রহণ করবে। মঙ্গলবার বিএনপির
ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনর্বহালের দাবি তুলে ধরতেই তারা সংলাপে যাবেন। তিনি এটাও জানিয়েছেন, এ ধরনের ব্যবস্থা ছাড়া তার দল নির্বাচনে অংশ নেবে না। বিএনপির এ ধরনের অবস্থান প্রত্যাশিত। ২২ ডিসেম্বর সংলাপ শুরুর দিনে সমকালে 'রাষ্ট্রপতির সংলাপ : সবার অংশগ্রহণে সফল হোক' শিরোনামের সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছিল, 'এ দলটি (বিএনপি) সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা তুলে দেওয়ার তীব্র বিরোধিতা করছে এবং তার পুনর্বহাল না হলে নির্বাচন বর্জন করতে সংকল্পবদ্ধ। কমিশন কীভাবে গঠিত হবে এবং তার স্বাধীনতা কতটা এসব বিষয় তাদের কাছে অর্থহীন। কিন্তু তারপরও আশা করব যে, তাদের এ সংক্রান্ত বক্তব্য রাষ্ট্রপতির সংলাপের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে তুলে ধরবে। সরকার এবং ক্ষমতাসীন দলকেও এ বাস্তবতা স্বীকার করে নিতে হবে যে, প্রধান দলগুলো নির্বাচনে অংশ না নিলে তার ফল দেশ-বিদেশে গ্রহণযোগ্য হবে না।' বলা যায়, সংলাপের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করে বিএনপি এক কদম এগিয়েছে। এখন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকেও এ বাস্তবতায় তাদের করণীয় নির্ধারণ করতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে এখন আর নেই। কিন্তু এ পরিবর্তন আওয়ামী লীগ ও তার মিত্ররাই এনেছে এবং বিএনপি নির্বাচনে না এলে এর দায়দায়িত্ব তাদের ওপরই বর্তাবে। রাষ্ট্রপতি সংলাপ আহ্বান করেছেন ঐকমত্যের ভিত্তিতে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন বিষয়ে আলোচনার জন্য। এ পর্যন্ত যেসব দল সংলাপে অংশ নিয়েছে তিনি তাদের প্রতিনিধিদের কাছে কমিশনের সম্ভাব্য সদস্যদের নামও চেয়েছেন। সংলাপে অংশ নিয়ে বিএনপি জোটের ঘনিষ্ঠ দল এলডিপি এবং বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি বা সিপিবি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে পুনর্বহালের দাবি তুলেছে। সিপিবি অবশ্য এর মেয়াদ পরবর্তী দুটি মেয়াদের জন্য সীমিত রাখার পক্ষে। রাষ্ট্রপতি তাদের অভিমত শুনেছেন। ধরে নেওয়া যায়, বিএনপিও তাদের সব বক্তব্য সেখানে উপস্থাপন করার সুযোগ পাবে। তবে সরকার ও বিরোধী পক্ষ পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজনের বিষয়ে নিজ নিজ অবস্থানে অনমনীয় থাকলে সংলাপ থেকে কার্যকর কিছু আশা করা যায় না। অতীতে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ একাধিক ইস্যুতে এ ধরনের অচলাবস্থা সৃষ্টির নজির রয়েছে। তার পুনরাবৃত্তি কোনোভাবেই কাঙ্ক্ষিত হতে পারে না। তাতে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়ে এবং বিশেষভাবে ক্ষতি হয় অর্থনীতির। রাষ্ট্রপতির সংলাপে সাড়া দিয়ে সব পক্ষ আলোচনার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ইস্যুগুলো সমাধানে সদিচ্ছার মনোভাব প্রদর্শন করেছে। আমরা এর সাফল্য কামনা করি। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের নিশ্চয় এ উপলব্ধিও রয়েছে যে, দেশবাসীর মনোভাবও অভিন্ন।
No comments