ডারবান সম্মেলনে অর্থনীতির কাছে বিজ্ঞান পরাভূত by কানন পুরকায়স্থ
জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত 'ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন'-এর আওতায় 'কনফারেন্স অ্যান্ড দ্য পার্টিস' (কপ)-এর সপ্তদশ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় গত ২৮ নভেম্বর থেকে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবান শহরে। বাংলাদেশসহ শতাধিক দেশ এতে অংশ নেয়। সম্মেলনে যোগদানকারী বাংলাদেশের পরিবেশমন্ত্রী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আমার অনুজপ্রতিম ড. হাসান মাহমুদ তাঁর সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে আশা ব্যক্ত করেন যে ডারবান সম্মেলনে
আইজিসিসির চরম ঘটনা (extreme event) সংক্রান্ত বিশেষ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব হ্রাস করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। অভিযোজনকে একটি বৈশ্বিক দায়িত্ব হিসেবে চিহ্নিত করা, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব হ্রাসসহ অভিযোজনের জন্য জলবায়ু অর্থায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করা তাঁর বিবৃতির উল্লেখযোগ্য বিষয়। ২০১২ সাল থেকে 'সবুজ জলবায়ু তহবিল'কে (Green climate fund) সক্রিয় ও কার্যকর করার বিষয়টি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে উত্থাপন করা হয়। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে উত্থাপিত এসব দাবি অবশ্যই প্রাসঙ্গিক। তবে ডারবান সম্মেলন থেকে আমরা কী পেলাম এবং কী হারালাম, তা নিয়ে একটু বিশ্লেষণ করা যাক।
ডারবান সম্মেলনের একটি ভালো দিক হলো, অংশগ্রহণকারী দেশগুলো প্রথমবারের মতো সম্মত হয়েছে যে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণকে কমিয়ে আনতে হবে এবং ২০১৫ সালের মধ্যে প্রতিটি দেশ এই নিঃসরণ কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করবে এবং ২০২০ সাল থেকে তা কার্যকর হবে। উন্নত ও উন্নয়নশীল সব অংশগ্রহণকারী দেশ এ বিষয়ে একমত। 'ডারবান প্ল্যাটফর্ম ফর এনহানস্ অ্যাকশন' (Durban platform for enhanced action)-এর ওপর একটি কার্যকরী দল বিষয়টি নিয়ে কাজ করবে। বিভিন্ন দেশকে পাঁচ বছর সময় দেওয়া হবে, যাতে তারা নিজ নিজ দেশে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের বিষয়টি বলবৎ করতে পারে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত থেকে মনে হবে, যেন জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত চিন্তাভাবনা আবার নতুন করে শুরু হলো। ১৯৯৭ সালে কিয়োটো প্রটোকলের মাধ্যমে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানোর উদ্যোগ প্রথম নেওয়া হয়। তবে এই চুক্তি শুধু উন্নত দেশগুলোর জন্য প্রযোজ্য ছিল এবং যুক্তরাষ্ট্র তাতে স্বাক্ষর করেনি। এই চুক্তির মেয়াদ ২০১২ সালে শেষ হয়ে যাবে। একমাত্র ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো কিয়োটো প্রটোকল সক্রিয় রাখার পক্ষপাতী। কিন্তু জাপান, রাশিয়া ও কানাডা কিয়োটো প্রটোকল বাস্তবায়নে আর রাজি নয়। ২০০৯ ও ২০১০ সালে কোপেনহেগেনের কানকুন সম্মেলনে পৃথিবীর বৃহৎ অর্থনীতির দেশগুলো স্বেচ্ছায় কার্বন ডাই-অক্সাইডের নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ এবং তা বাস্তবায়নে সম্মত হয়েছিল; কিন্তু কোনো আইনগত বাধ্যবাধকতা না থাকার কারণে এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি লক্ষ করা যায়নি। আইনগত বাধ্যবাধকতার আওতায় কার্বন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করার বিষয়ে ডারবান সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী সব উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর এই প্রথম। তবে ডারবানে যা হলো তার মূলকথা হচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সমঝোতার মূলনীতিগুলো কী হবে তা নির্ধারিত হয়েছে। এই 'ডারবান প্ল্যাটফর্ম' থেকে এখন বিভিন্ন দেশ তাদের কাজ শুরু করবে। তবে অংশগ্রহণকারী দেশগুলো কত দ্রুত এবং কী পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ হ্রাস করবে, সে বিষয়ে কোনো আলোচনা বা সিদ্ধান্ত ডারবান সম্মেলনে নেওয়া হয়নি। ২০২০ সালেই বা কী লক্ষ্যমাত্রা কার্যকর হবে, তাও সুস্পষ্ট নয়। সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়েছে যে দরিদ্র দেশগুলোকে তাদের গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাসের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে না। তবে তাদের 'কার্বন তীব্রতা' হ্রাস করতে হবে অর্থাৎ প্রতি একক জিডিপিতে কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের পরিমাণ কমাতে হবে। কার্বনের তীব্রতার পরিমাণ থেকে জানা যাবে দরিদ্র দেশগুলোর শিল্প-কারখানা কী পরিমাণ দূষণ ছড়াচ্ছে। ২০০৭ সালে ইন্দোনেশিয়ার বালি সম্মেলনে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিকে দুই ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। অনেক বৈজ্ঞানিক অঙ্ক কষে দেখানো হয়েছিল যে দুই ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে তাপমাত্রার বৃদ্ধি রাখতে হলে প্রতিবছর কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের পরিমাণ রাখতে হবে ৪৪ গাইগাটনের মধ্যে। বর্তমানে এই নিঃসরণের পরিমাণ প্রতিবছর ৫৫ গাইগাটন। এই হিসাব ২০২০ সালের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী করা হয়েছে। অর্থাৎ এ অবস্থায় ভূপৃষ্ঠতলের গড় তাপমাত্রার বৃদ্ধি দুই ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে সীমিত রাখা সম্ভব নয়। সম্প্রতি বার্কলের ভূপৃষ্ঠতলে তাপমাত্রা গবেষণা প্রকল্পের বিজ্ঞানী রিচার্ড মুলার জানিয়েছেন, ১৯৫০ সালের মাঝামাঝি থেকে এ পর্যন্ত ভূপৃষ্ঠতলের গড় তাপমাত্রা বেড়েছে এক ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। এ প্রকল্পের বিজ্ঞানীরা ন্যাশনাল ওসেনিক অ্যান্ড অ্যাটমসফেয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (NOAA), নাসা এবং ইংল্যান্ডের হেডলি সেন্টারের সমস্ত উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন। ৩৭৬০০ গ্লোবাল স্টেশন থেকে ১৪ দশমিক ৫ মিলিয়ন উপাত্ত বিশ্লেষণ করে রিচার্ড মিলার এবং তাঁর দল সম্প্রতি নেচার পত্রিকায় জানিয়েছেন যে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাপমাত্রা কেন বৃদ্ধি পাচ্ছে সে বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেনি। বর্তমানে এই দল সমুদ্রপৃষ্ঠতলের তাপমাত্রার উপাত্ত নিয়ে কাজ করছে। মিলার ও তাঁর দলের গবেষণা থেকে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেল, তবে এই উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণ কিছুটা 'মানবসৃষ্ঠ' এবং কিছুটা প্রাকৃতিক ব্যাপার বলে তাঁদের ধারণা। সবচেয়ে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি হচ্ছে এই যে গত ২০ বছরে কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের পরিমাণ বেড়েছে ৫০ শতাংশ। এভাবে চলতে থাকলে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি দুই ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে সীমিত রাখা সম্ভব নয়।
কার্যত স্বেচ্ছাকৃতভাবে কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের পরিমাণ কমানোর লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা এবং তা বাস্তবায়ন করার নীতি বর্তমানে বিভিন্ন দেশে বলবৎ আছে। এতে বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিই প্রাধান্য পায়, বিমান নয়। চীন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে যে আগামী ২০২০ সালের মধ্যে প্রতি একক জিপিজিতে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ ৪৫ শতাংশ কমাবে। কার্বনের তীব্রতা কমানোর এই হিসাব চীন প্রদান করলেও ওই সময়ে তার অর্থনীতি কী পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে এবং তা থেকে কী পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসৃত হবে, তার কোনো হিসাব পাওয়া যায় না! ব্রাজিলের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৬ শতাংশ নিঃসরণ কমবে। কিন্তু বনাঞ্চল ধ্বংসের কারণে দেখা যায় যে কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের পরিমাণ বেড়েছে ১৮ শতাংশ। ডারবান সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের আলোচনার মধ্য দিয়ে নিজেদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির বিষয়টিই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তাতে বৈশ্বিক উষ্ণতা কত ডিগ্রি বাড়ল বা কমল তা মুখ্য নয়। অথচ তাপমাত্রা সীমিত রাখার এই বৈজ্ঞানিক বিষয়টিই ছিল মুখ্য। এর সঙ্গে সম্পৃক্ত বাংলাদেশের মতো জলবায়ুর চরম অবস্থার শিকার দেশগুলোর অভিযোজনের বিষয়। তাই মনে হয়, ডারবান সম্মেলনে অর্থনীতির কাছে বিমান সাময়িকভাবে হলেও পরাজিত হয়েছে।
লেখক : যুক্তরাজ্যের দ্য ইনস্টিটিউটশন অব এনভায়রনমেন্টাল
সম্মেলনের একজন ফেলো
ডারবান সম্মেলনের একটি ভালো দিক হলো, অংশগ্রহণকারী দেশগুলো প্রথমবারের মতো সম্মত হয়েছে যে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণকে কমিয়ে আনতে হবে এবং ২০১৫ সালের মধ্যে প্রতিটি দেশ এই নিঃসরণ কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করবে এবং ২০২০ সাল থেকে তা কার্যকর হবে। উন্নত ও উন্নয়নশীল সব অংশগ্রহণকারী দেশ এ বিষয়ে একমত। 'ডারবান প্ল্যাটফর্ম ফর এনহানস্ অ্যাকশন' (Durban platform for enhanced action)-এর ওপর একটি কার্যকরী দল বিষয়টি নিয়ে কাজ করবে। বিভিন্ন দেশকে পাঁচ বছর সময় দেওয়া হবে, যাতে তারা নিজ নিজ দেশে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের বিষয়টি বলবৎ করতে পারে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত থেকে মনে হবে, যেন জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত চিন্তাভাবনা আবার নতুন করে শুরু হলো। ১৯৯৭ সালে কিয়োটো প্রটোকলের মাধ্যমে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানোর উদ্যোগ প্রথম নেওয়া হয়। তবে এই চুক্তি শুধু উন্নত দেশগুলোর জন্য প্রযোজ্য ছিল এবং যুক্তরাষ্ট্র তাতে স্বাক্ষর করেনি। এই চুক্তির মেয়াদ ২০১২ সালে শেষ হয়ে যাবে। একমাত্র ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো কিয়োটো প্রটোকল সক্রিয় রাখার পক্ষপাতী। কিন্তু জাপান, রাশিয়া ও কানাডা কিয়োটো প্রটোকল বাস্তবায়নে আর রাজি নয়। ২০০৯ ও ২০১০ সালে কোপেনহেগেনের কানকুন সম্মেলনে পৃথিবীর বৃহৎ অর্থনীতির দেশগুলো স্বেচ্ছায় কার্বন ডাই-অক্সাইডের নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ এবং তা বাস্তবায়নে সম্মত হয়েছিল; কিন্তু কোনো আইনগত বাধ্যবাধকতা না থাকার কারণে এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি লক্ষ করা যায়নি। আইনগত বাধ্যবাধকতার আওতায় কার্বন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করার বিষয়ে ডারবান সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী সব উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর এই প্রথম। তবে ডারবানে যা হলো তার মূলকথা হচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সমঝোতার মূলনীতিগুলো কী হবে তা নির্ধারিত হয়েছে। এই 'ডারবান প্ল্যাটফর্ম' থেকে এখন বিভিন্ন দেশ তাদের কাজ শুরু করবে। তবে অংশগ্রহণকারী দেশগুলো কত দ্রুত এবং কী পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ হ্রাস করবে, সে বিষয়ে কোনো আলোচনা বা সিদ্ধান্ত ডারবান সম্মেলনে নেওয়া হয়নি। ২০২০ সালেই বা কী লক্ষ্যমাত্রা কার্যকর হবে, তাও সুস্পষ্ট নয়। সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়েছে যে দরিদ্র দেশগুলোকে তাদের গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাসের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে না। তবে তাদের 'কার্বন তীব্রতা' হ্রাস করতে হবে অর্থাৎ প্রতি একক জিডিপিতে কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের পরিমাণ কমাতে হবে। কার্বনের তীব্রতার পরিমাণ থেকে জানা যাবে দরিদ্র দেশগুলোর শিল্প-কারখানা কী পরিমাণ দূষণ ছড়াচ্ছে। ২০০৭ সালে ইন্দোনেশিয়ার বালি সম্মেলনে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিকে দুই ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। অনেক বৈজ্ঞানিক অঙ্ক কষে দেখানো হয়েছিল যে দুই ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে তাপমাত্রার বৃদ্ধি রাখতে হলে প্রতিবছর কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের পরিমাণ রাখতে হবে ৪৪ গাইগাটনের মধ্যে। বর্তমানে এই নিঃসরণের পরিমাণ প্রতিবছর ৫৫ গাইগাটন। এই হিসাব ২০২০ সালের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী করা হয়েছে। অর্থাৎ এ অবস্থায় ভূপৃষ্ঠতলের গড় তাপমাত্রার বৃদ্ধি দুই ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে সীমিত রাখা সম্ভব নয়। সম্প্রতি বার্কলের ভূপৃষ্ঠতলে তাপমাত্রা গবেষণা প্রকল্পের বিজ্ঞানী রিচার্ড মুলার জানিয়েছেন, ১৯৫০ সালের মাঝামাঝি থেকে এ পর্যন্ত ভূপৃষ্ঠতলের গড় তাপমাত্রা বেড়েছে এক ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। এ প্রকল্পের বিজ্ঞানীরা ন্যাশনাল ওসেনিক অ্যান্ড অ্যাটমসফেয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (NOAA), নাসা এবং ইংল্যান্ডের হেডলি সেন্টারের সমস্ত উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন। ৩৭৬০০ গ্লোবাল স্টেশন থেকে ১৪ দশমিক ৫ মিলিয়ন উপাত্ত বিশ্লেষণ করে রিচার্ড মিলার এবং তাঁর দল সম্প্রতি নেচার পত্রিকায় জানিয়েছেন যে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাপমাত্রা কেন বৃদ্ধি পাচ্ছে সে বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেনি। বর্তমানে এই দল সমুদ্রপৃষ্ঠতলের তাপমাত্রার উপাত্ত নিয়ে কাজ করছে। মিলার ও তাঁর দলের গবেষণা থেকে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেল, তবে এই উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণ কিছুটা 'মানবসৃষ্ঠ' এবং কিছুটা প্রাকৃতিক ব্যাপার বলে তাঁদের ধারণা। সবচেয়ে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি হচ্ছে এই যে গত ২০ বছরে কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের পরিমাণ বেড়েছে ৫০ শতাংশ। এভাবে চলতে থাকলে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি দুই ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে সীমিত রাখা সম্ভব নয়।
কার্যত স্বেচ্ছাকৃতভাবে কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের পরিমাণ কমানোর লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা এবং তা বাস্তবায়ন করার নীতি বর্তমানে বিভিন্ন দেশে বলবৎ আছে। এতে বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিই প্রাধান্য পায়, বিমান নয়। চীন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে যে আগামী ২০২০ সালের মধ্যে প্রতি একক জিপিজিতে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ ৪৫ শতাংশ কমাবে। কার্বনের তীব্রতা কমানোর এই হিসাব চীন প্রদান করলেও ওই সময়ে তার অর্থনীতি কী পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে এবং তা থেকে কী পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসৃত হবে, তার কোনো হিসাব পাওয়া যায় না! ব্রাজিলের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৬ শতাংশ নিঃসরণ কমবে। কিন্তু বনাঞ্চল ধ্বংসের কারণে দেখা যায় যে কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের পরিমাণ বেড়েছে ১৮ শতাংশ। ডারবান সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের আলোচনার মধ্য দিয়ে নিজেদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির বিষয়টিই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তাতে বৈশ্বিক উষ্ণতা কত ডিগ্রি বাড়ল বা কমল তা মুখ্য নয়। অথচ তাপমাত্রা সীমিত রাখার এই বৈজ্ঞানিক বিষয়টিই ছিল মুখ্য। এর সঙ্গে সম্পৃক্ত বাংলাদেশের মতো জলবায়ুর চরম অবস্থার শিকার দেশগুলোর অভিযোজনের বিষয়। তাই মনে হয়, ডারবান সম্মেলনে অর্থনীতির কাছে বিমান সাময়িকভাবে হলেও পরাজিত হয়েছে।
লেখক : যুক্তরাজ্যের দ্য ইনস্টিটিউটশন অব এনভায়রনমেন্টাল
সম্মেলনের একজন ফেলো
No comments