এই তবে বঙ্গবিদ্যা! by আসিফ আহমদ

সংবাদপত্রে জাপানি অধ্যাপকের আকুল আবেদন দেখে লজ্জা, ক্ষোভ, অপমান_ এমনই নানা ধরনের অনুভূতি হয়েছে। তিনি এসেছিলেন আন্তর্জাতিক বঙ্গবিদ্যা সম্মেলনে। আয়োজন হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ে তার আগ্রহ অপার। সঙ্গত কারণেই এ দেশের মানুষও তার প্রিয়। কিন্তু টিএসসি ক্যাফেটেরিয়ায় দুপুরের খাবারের বিরতির সময় খোয়া গেল তার ল্যাপটপ, ডিজিটাল ক্যামেরা, মডেম, মূল্যবান কাগজপত্র এবং আকর্ষণীয়


অঙ্কের ডলার, ইয়েন ও বাংলাদেশি মুদ্রা। অধ্যাপক মহোদয় ভাবতে পারেননি, বিদ্বজ্জনদের সমাবেশ থেকেই তার 'সবকিছু খোয়া' যাবে। এখানে প্রবেশাধিকার নিশ্চিতভাবেই সংরক্ষিত ছিল। কিন্তু জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তি যে তিনি। অসৎ মানুষ সব সমাজেই কমবেশি থাকে, সেটা তিনি বিলক্ষণ জানেন। যে তার মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি করেছে, সে যে তা ফেরত দেওয়ার পাত্র নয়, সেটা বুঝতে বেশি সময় লাগার কথা নয়। তার আকুতি কেবল ল্যাপটপের হার্ডডিস্কে থাকা কিছু তথ্য ফেরত পাওয়ার। তার কাছে 'এটুকুই মহামূল্যবান' এবং তা ফেরত পেতে চান। চোরের এমন সুমতি হবে কি-না, কে জানে। সেটা হলে হয়তো বলতে পারব, 'জুতা দিয়ে মেরেছে বটে, কান ধরে উঠবোসও করিয়েছে_ তবে অপমান তো করতে পারেনি।' বস্তু-অর্থসম্পদ নয়, জ্ঞানের উপকরণ ফিরে পেলে তিনি হয়তো ভাবতেও পারেন যে, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে বিদ্যাচর্চার মূল্য দেয় এমন চোরও রয়েছে।
সংবাদপত্রে মাঝে মধ্যে খবর দেখি_ ট্যাক্সিচালক বা রিকশাচালক যাত্রীর ফেলে যাওয়া বড় অঙ্কের অর্থসহ ব্যাগ ফেরত দিয়েছে। এমনকি খোদ যুক্তরাষ্ট্রেও এক বাংলাদেশি ট্যাক্সিচালক এমন সততার নজির স্থাপন করে নন্দিত হয়েছেন। এ খবর গুরুত্ব দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ছাপাও হয়েছে। টিএসসি থেকে জাপানি অধ্যাপকের ব্যাগটি যে নিয়েছে সে ওই রকম সততার নজির স্থাপন করবে, এমন সম্ভাবনা আদৌ নেই। চোর অধ্যাপকের হার্ডডিস্কটি ফেরত দেবে কি-না জানি না। তার হয়তো ধারণা হতে পারে_ যদি কোনোভাবে পুলিশ বা ডিজিটাল গোয়েন্দারা আঙুলের ছাপটাপ দেখে তাকে খুঁজে বের করে ফেলেন! এমন দক্ষতা তারা দেখালে এর চেয়ে ভালো আর কিছু হতে পারে না। কিন্তু সবকিছু তো আর প্রত্যাশামতো হয় না।
বঙ্গবিদ্যা সম্মলনে কয়েকটি দেশ থেকে সম্মানিত অতিথিরা এসেছিলেন। আয়োজকরা যে যথেষ্ট নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা রাখেননি, সেটা বুঝতে সমস্যা হয় না। এ ধরনের ঘটনা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আরও ঘটেছে। কিন্তু তা উদ্ধারে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে ভাবা উচিত। জাপানি ভদ্রলোকের কাছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যেমন কাঠগড়ায়, তেমনি বাংলাদেশও। তিনি হয়তো সৌজন্যবোধ থেকে বলবেন_ এমনটি হতেই পারে। আমাদের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ হয়তো তাতেই সন্তুষ্ট হয়ে বলবেন_ যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, জার্মানি, জাপান সর্বত্র এমনটি হয়ে থাকে। তাদের এমন মনোভাবে অপরাধীরা আশকারা পাবে। তাদের কাছে এমন বার্তা যাবে যে, এখানে কোনো অপরাধেরই কূলকিনারা হয় না। আশা করব, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সবাই ব্যাগটি উদ্ধারে সম্ভাব্য সবকিছু করবেন। আর তা সম্ভব হলে অন্তত দেশে এবং বাইরে এ বার্তা যাবে যে, বাংলাদেশে চোর যেমন পাকা অতিশয়, তেমনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরও দক্ষতা যথেষ্ট। বাংলায় প্রবাদ আছে_ চোরের দশ দিন, গৃহস্থের একদিন। চোর বারবার সফল হতে পারে, কিন্তু একদিন না একদিন গৃহস্থ তাকে পাকড়াও করবেনই। পুলিশ-র‌্যাব সেটা করে দেখাক, এটাই কাম্য। র‌্যাবের গোয়েন্দা তৎপরতা নিয়ে কিছু ভালো কথা শোনা যায়। এ ক্ষেত্রে তার স্বাক্ষর রাখা গেলে বঙ্গবিদ্যার আরেকটি ভালো অধ্যায় উন্মোচিত হতেই পারে।

No comments

Powered by Blogger.