চরাচর-একজন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীর দাবি by দীপংকর ভট্টাচার্য লিটন

স্বাধীনতার ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এবারের বিজয় দিবসে আমরা মহাসমারোহে পালন করেছি বিজয় উৎসব। এ উপলক্ষে দেশব্যাপী পুরো ডিসেম্বর মাসই বিভিন্ন অনুষ্ঠান পালিত হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আনুষ্ঠানমালায় প্রতিদিনই লক্ষ করা যাচ্ছে উপচে পড়া ভিড়। কিন্তু যাঁদের জন্য আমাদের এই স্বাধীনতা, এত আনন্দ-উৎসব, তাঁদের পরিবার-পরিজনের খোঁজ নিচ্ছেন কজন? এমনই একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী সুবাসিনী


দাস। বাড়ি মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার মাস্টারপাড়া আবাসিক এলাকায়। একাত্তরে ভারতের শরণার্থীশিবির থেকে দেশের পথে বিদায় দিয়েছিলেন স্বামী অর্জুন দাসকে। 'আমি আসি'_এই ছিল স্বামীর সঙ্গে সুবাসিনীর শেষ কথা। ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর দেশ স্বাধীন হলো। সন্তানদের নিয়ে দেশে এসে সুবাসিনী একটি স্বাধীন দেশ পেলেন, কিন্তু পেলেন না প্রিয়তম স্বামীকে। এমনকি পাকিস্তানি বাহিনী কোন জায়গায় তাঁর স্বামীকে হত্যা করেছিল, তারও সঠিক কোনো ঠিকানা পাননি। আজও বধ্যভূমি ও গণকবরগুলোতে গিয়ে স্বামীর গন্ধ খোঁজেন তিনি। দীর্ঘ ৪০ বছরে অনেক চেষ্টা করেছেন, স্বামীর নামটিও তুলতে পারেননি মুক্তিযোদ্ধা তালিকায়। আজ জীবনের শেষ প্রান্তে এসে রাষ্ট্রের কাছে তাঁর একটাই দাবি_সম্মানী ভাতা নয়, মরার আগে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় স্বামীর নাম দেখে যেতে চান। তাঁর সন্তানরা যেন শুধু এটুকুই বলতে পারে, তারা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। তাঁর আর কিছুই চাওয়া-পাওয়ার নেই। ৭১ বছর বয়সী সুবাসিনী দাস একাত্তরের স্মৃতিচারণা করে বলেন, সেদিন শহরে পাকিস্তানি বাহিনী প্রবেশ করে বোম্বিং শুরু করে। তাদের বোম্বিংয়ে প্রতিবেশী সত্যেন্দ্র চন্দ্র দাসের বাড়িতে আগুন লেগে গেলে অর্জুন দাস পরিবার-পরিজন নিয়ে সরে যান। এক দিন পরই স্ত্রী-সন্তানদের ভারতে কমলপুরের ফুলছড়ি স্কুলে রেখে তিনি দেশে চলে আসেন। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ শেষে দেশে এসে পত্রপত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারেন, যুদ্ধের সময় তাঁর স্বামীকে পাকিস্তানি বাহিনী হত্যা করেছে। এর ছয় মাস পরই আসে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাক্ষরিত একটি শোকবার্তা। প্রত্রাক/৬-৪-৭২/সিডি/৮১৫ নম্বর স্মারকে শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে অর্জুন দাসের পরিবারের সাহায্যার্থে সংশ্লিষ্ট মহকুমা প্রশাসকের কাছে দুই হাজার টাকার চেক পাঠানো হয়েছিল (চেক নম্বর-সিএ ০৩৫৪৪৪)। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, 'আজ স্বাধীনতার ৪০ বছর পূর্তি হয়েছে। এই দীর্ঘ সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক সরকারের আমলে অনেক অমুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম লিখিয়েছেন। কিন্তু আমার স্বামীর নাম আজও ওঠেনি মুক্তিযোদ্ধা তালিকায়।' স্বামীর নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় লেখানোর জন্য তিনি ১৯৯৭ ও ২০১০ সালে স্থানীয় উপজেলা সমাজসেবা অফিসে আবেদন করেছিলেন. কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। সর্বশেষ তিনি স্বামীর নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করানোর জন্য প্রধানন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
দীপংকর ভট্টাচার্য লিটন

No comments

Powered by Blogger.