আবার সক্রিয় উত্তরা ষড়যন্ত্রের নায়করা by শরীফুল ইসলাম

হুল আলোচিত উত্তরা ষড়যন্ত্রের সেই নায়করা আবারও ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন। বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার লক্ষ্যে প্রশাসনে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন তারা। ইতিমধ্যে বিএনপি সমর্থিত সাবেক কয়েক আমলার নেতৃত্বে প্রশাসনে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বিএনপি-জামায়াত সরকারের আস্থাভাজন কর্মকর্তাদের নিয়ে অলিখিত একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ কমিটির সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করছেন বিএনপির আস্থাভাজন


সাবেক এক মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তাকে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করছেন বিরোধীদলীয় নেতার তৎকালীন এক উপদেষ্টা। প্রশাসনে কীভাবে অস্থিরতা সৃষ্টি করা যায় তা নির্ধারণে তারা এরই মধ্যে কয়েক দফা গোপন বৈঠকও করেছেন। নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, সরকার আগামীতে প্রশাসনে কয়েক স্তরে পদোন্নতি দেবে। এতে যাদের বঞ্চিত করা হবে এবং দীর্ঘদিন যারা ওএসডি রয়েছেন এমন কর্মকর্তাদের ঐক্যবদ্ধ করা হচ্ছে। পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন জারির পর এসব কর্মকর্তা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন জায়গায় এক ধরনের হট্টগোল সৃষ্টির চেষ্টা করবেন। এর পাশাপাশি সচিবালয়ে কর্মচারী সমিতির মধ্যে চরম বিরোধ সৃষ্টি করে প্রশাসনে
অস্থিরতা সৃষ্টির চূড়ান্ত রূপ দেওয়ারও পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এক্ষেত্রে প্রশাসনের দীর্ঘদিনের দাবি-দাওয়া পূরণে সরকারকে চাপের মধ্যে রাখারও কৌশল নিচ্ছেন তারা। এ জন্য সরকারের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত একটি গ্রুপকে ইন্ধন দিয়ে তাদের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করা হবে বলে তাদের পরিকল্পনায় রয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে যুক্ত 'স' আদ্যাক্ষরের এক কর্মকর্তা বলেন, বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত পরিচিত কর্মকর্তারা ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে কি-না তা তার জানা নেই। তবে তারা নিজেদের মধ্যে কয়েকটি বৈঠক করেছেন বলে তিনি স্বীকার করেন। বিরোধীদলীয় নেতার উপদেষ্টা ও সাবেক এক মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে কি-না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, যেহেতু তিনি এখন বিরোধীদলীয় নেতার উপদেষ্টা সেহেতু চেষ্টা করবেনই তৎকালীন সরকার সমর্থিত কর্মকর্তাদের ঐক্যবদ্ধ করতে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিরোধীদলীয় নেতার সাবেক সহকারী একান্ত সচিব এবং উত্তরা ষড়যন্ত্রে অভিযুক্ত 'জ' আদ্যাক্ষরের কর্মকর্তা জানান, তিনি এসব বিষয়ের সঙ্গে জড়িত নন। তবে তিনি শুনেছেন।
সূত্র জানায়, অলিখিত এ কমিটি রাজধানী মতিঝিলের একটি হোটেলসহ বিভিন্ন স্থানে ইতিমধ্যে কয়েকটি গোপন বৈঠক করেছেন। পাশাপাশি সচিবালয়ের মধ্যেও পৃথকভাবে তারা একাধিক বৈঠক করেছেন। প্রশাসনে দলীয়করণ করা হচ্ছে, আগামীতে ব্যাপক সংখ্যক কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হবে_ এমন আতঙ্ক সৃষ্টি করে তারা কর্মকর্তাদের দলে টানছেন। আগামীতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট ক্ষমতায় আসছে_ এমন সংবাদ নিশ্চিত করেই বিএনপি, জামায়াত ও সমমনা আমলাদের আগাম সতর্ক অবস্থান নিতে বলা হচ্ছে। অলিখিত ওই সমন্বয় কমিটির পক্ষ থেকে কর্মকর্তাদের বলা হচ্ছে, বিএনপি ক্ষমতায় এলে সবার প্রাপ্য পদোন্নতি দেওয়া হবে। অবসরে গেলেও ভূতাপেক্ষভাবে পদোন্নতি প্রদানসহ আর্থিক সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। অধিকতর যোগ্যদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হবে। এর বিপরীতে যেসব কর্মকর্তা এখন ক্ষমতার অপব্যবহার করে যা ইচ্ছা তাই করছেন এবং বিরোধী দলকে দমন করার কাজে লিপ্ত তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে। এ জন্য এসব কর্মকর্তার একটি তালিকাও তৈরি করা হচ্ছে বলে তারা জানান।
জানা গেছে, প্রথমত, গত বিএনপি সরকারের সময় যেসব কর্মকর্তাকে নিয়ে জনপ্রশাসনে চার স্তরের বিকল্প সেট গঠন করা হয়েছিল_ তাদের কাছে এ বার্তা পেঁৗছানো হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা রাজপথে বিরোধী দলের আন্দোলনের গতি, সরকারের প্রতি মানুষের জনসমর্থন এবং সর্বোপরি বর্তমান সরকারের সময় নিজেদের চাওয়া-পাওয়ার হিসাব-নিকাশ করছেন। তবে বাস্তবতা হলো, তিন বছরে প্রশাসনে দলীয়করণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় পদোন্নতি বঞ্চনাসহ বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার কর্মকর্তারা ভেতরে ভেতরে সরকারের বিরদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছেন।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি সরকারি চাকরির মেয়াদ ২ বছর বাড়ানোর সিদ্ধান্তে তারা বড় ধরনের ইস্যু তৈরির চেষ্টা করেছিল। যদিও সরকারের ত্বরিত সিদ্ধান্ত ও দক্ষতার কারণে ওই পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে। তারা মন্ত্রিসভার অনুমোদনের আগেই এর বিপক্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে বিভিন্ন লিফলেট বিতরণ করেন। অবশ্য সরকারের আস্থাভাজন কর্মকর্তাদের দিয়ে এটি করা হয়েছে। তারা চেয়েছিলেন, এটি নিয়ে প্রশাসনের ভেতরে বড় ধরনের অসন্তোষ সৃষ্টি হোক। পরে তাদের এ পরিকল্পনা কাজে আসেনি।
এ ব্যাপারে জনপ্রশাসন সচিব আবদুস সোবহান শিকদারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে জানান, তারা তো অপচেষ্টা করবেনই। তবে কোনো শক্তিকেই প্রশাসনে অস্থিরতা সৃষ্টির সুযোগ দেওয়া হবে না। নিয়ম-নীতি অনুসরণ করেই পদোন্নতি দেওয়া হবে। যদি কেউ কোনো ইস্যুতে সরকারি আচরণ বিধিমালা ভঙ্গ করেন তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

No comments

Powered by Blogger.