মেসির অনুপ্রেরণা সোফিয়ান

বিশ্বের লাখো-কোটি কিশোর-তরুণের অন্তহীন অনুপ্রেরণার উৎস তিনি। কিন্তু তিনি, লিওনেল মেসি, কোথা থেকে খুঁজে নেন অনুপ্রেরণার রসদ? আমাদের চারপাশের জগৎ থেকেই; যে জগতে লুকিয়ে আছে হাসিকান্নার অনেক গল্প, আছে লড়াইয়ে, প্রতিনিয়ত বিরূপ ভাগ্যকে চ্যালেঞ্জ জানানোর গল্প। সোফিয়ান বউয়িঞ্জার গল্পটা তেমনই। ‘আমি তোমাকে অনেক শ্রদ্ধা করি। কারণ, তুমি তোমার লক্ষ্যের জন্য প্রতিদিন লড়াই করে যাও’—নিজের সেই মুগ্ধতার কথা এভাবেই


মেসি বলেছেন সোফিয়ানের উদ্দেশে। এ নিয়ে বানানো হয়েছে একটি প্রামাণ্যচিত্র, যেটি ২ জানুয়ারি দেখানো হবে কাতালান টিভি চ্যানেল টিভি-থ্রিতে। কিন্তু কে এই সোফিয়ান? কী তার গল্প, যে গল্পে মেসিও খুঁজে পান অনুপ্রেরণা?
সেই গল্পটি জানতে ফিরে যেতে হবে ১১ বছর আগে। বার্সেলোনায় মরক্কান বংশোদ্ভূত এক দম্পতির ঘর আলো করে জন্ম নিল ফুটফুটে এক ছেলে। কী অদ্ভুত ঘোরলাগা তার চাহনি, কী অদ্ভুত মায়াকাড়া তার হাসি। কিন্তু বাবা-মায়ের চোখ ফেটে এল জল। এই ছেলে যে জন্ম থেকেই বিকলাঙ্গ। লরিন-স্যান্ড্রো সিনড্রোম নামের ভয়াবহ রোগের কারণে জন্ম থেকেই পা দুটো তার অকেজো। হাতের আঙুলগুলোও সব জোড়া লাগানো। বিরল জিনঘটিত এ রোগের কারণে এই অবস্থা।
যখন আট বছর বয়স, নিজে থেকেই বাবা-মা অকেজো পা দুটো কেটে ফেলতে বলেন। তখন থেকে নকল পা-ই ভরসা। কিন্তু আসল পা না থাকলে কী হবে, সোফিয়ান নকল পা দিয়েও বেশ ভালো খেলে। তারও স্বপ্ন, একদিন মেসির মতো খেলবে। সোফিয়ানের এই মানবিক গল্পটি নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র বানানো হয়েছে—দ্য বয় হু ওয়ানটেড টু ফ্লাই।
এই প্রামাণ্যচিত্র দেখে চোখের জল আটকে রাখতে পারেননি মেসি। এর পর থেকেই সোফিয়ানের সঙ্গে নিয়মিত বিরতিতে দেখা-সাক্ষাৎ হয় মেসির। দুজন একসঙ্গে খেলেছেনও। দুজনের মধ্যে বেশ দোস্তি।
সোফিয়ান মেসিকে দিয়ে প্রতিশ্রুতি আদায় করে নেয়, একটা গোল তাকেই উৎসর্গ করতে হবে। সাধারণত প্রতিটা গোল মেসি তাঁর স্বর্গত নানিকে উৎসর্গ করেন আকাশের দিকে দুই তর্জনী উঁচিয়ে। কিন্তু ১৭ সেপ্টেম্বর ওসাসুনার বিপক্ষে গোল করার পর আকাশের দিকে না তাকিয়ে মেসি এক হাত দিয়ে স্পর্শ করেন তাঁর পা। এভাবেই সোফিয়ানকে দেওয়া কথাটা রেখেছেন মেসি।
মেসির এই মহানুভবতায় ছোট্ট সোফিয়ান রীতিমতো বিগলিত। এরপর যখন মেসি টিভি সাক্ষাৎকারে বলছেন, সোফিয়ানের লড়াইটাকে তিনি শ্রদ্ধা করেন, ছোট্ট ছেলেটি যেন ভাষা খুঁজে পায়নি, ‘আমি কী বলব। আমি নিজেই তো মেসিকে অনেক শ্রদ্ধা করি!’ ওয়েবসাইট।

No comments

Powered by Blogger.