রাগবি কিন্তু ক্রিকেটের চেয়ে অনেক এগিয়ে! by সামীউর রহমান
তুচ্ছ অনেক ঘটনাও মিডিয়ার কল্যাণে আমরা ঘরে বসে জেনে যাই। আবার উল্টোটাও হয়, পৃথিবীর এক প্রান্তে একটা বিশ্বকাপ হয় অথচ তার খবর আমরা রাখিই না! আসলে ফুটবল, ক্রিকেট, টেনিস, অ্যাথলেটিকস_এমন হাতে গোনা কয়েকটি খেলার মধ্যেই ঘুরপাক খায় এ অঞ্চলের অধিকাংশ ক্রীড়ামোদীর আগ্রহ। এসবের চলই তো এ অঞ্চলে বেশি! তাই বলে রাগবি বিশ্বকাপ শুরু হয়ে শেষও হয়ে যাবে নীরবে? ক্রিকেট বিশ্বকাপে অংশ নেয় এমন অনেক দেশেও তো রাগবির জনপ্রিয়তা ক্রিকেটের চেয়ে অনেক বেশি! ব্যাপারটা হয়তো সত্য, হয়তো অন্যান্য জনশ্রুতির মতো সত্য-মিথ্যার মিশেল। সেটা হতে পারে ঐতিহাসিকদের গবেষণার বিষয়।
তবে প্রতিষ্ঠিত সত্য হচ্ছে, উইলিয়াম ওয়েব এলিস নামের এক ভদ্রলোক (তখনো ঠিক 'ভদ্রলোক' হয়ে ওঠেননি) কিশোর বয়সে একটা অদ্ভুত কাণ্ডই ঘটিয়েছিলেন! ১৮২৩ সালের কথা, ফুটবলের নিয়ম-কানুন তখনো পুরোদস্তুর চালু হয়নি। ওয়ারউইকশায়ারের রাগবি স্কুলের মাঠে ফুটবল খেলার সময় ওয়েব বলটা হাত দিয়ে ধরে বগলদাবা করে প্রতিপক্ষের গোলবারের দিকে দিলেন ভোঁ দৌড়। পরবর্তীতে ওভাবে বল বগলদাবা করে দৌড়ানোর খেলাও বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। রাগবি নামের স্কুলে ওয়েব ওই কাণ্ডটি ঘটিয়েছিলেন বলে খেলাটির নামও হয়ে যায় রাগবি।
এভাবে খেয়ালের বশে যে খেলার শুরু, অনেক পথ পাড়ি দিয়ে তা রীতিমতো এখন দক্ষযজ্ঞ। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর অনেক জায়গায় ছড়িয়ে যায় রাগবি। ১৯৮৭ সাল থেকে চার বছর পরপর নিয়মিতভাবেই হচ্ছে রাগবির বিশ্বকাপ, আর সব কিছুর সঙ্গে মিশে আছে ওয়েব সাহেবের নামটাও। উদ্ভাবনের ঘটনাটি সত্যি বা মিথ্যা যা-ই হোক, রাগবি বিশ্বকাপের নামটা হচ্ছে 'উইলিয়াম ওয়েব এলিস কাপ' এবং এই কাপটা জেতার জন্যই এবার নিউজিল্যান্ডে এসেছে ২০টি দেশের জাতীয় দল। বাছাই পর্বে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে ৯১টি দেশ!
বল বলতেই সাধারণত আমরা ধারণা করে নিই গোলাকার কিছু। সেটা হতে পারে চামড়া, রাবার, কাঠ কিংবা অন্য যেকোনো কিছু দিয়ে বানানো। অনেকটা 'পটোল' আকৃতির একটা লাউয়ের সমান বস্তুকে 'বল' হিসেবে মেনে নিতে অনেকেরই কষ্ট হতে পারে। তবে সত্যি কথাটা হচ্ছে, প্রমাণ সাইজের পটোল আকৃতির একটি 'বস্তু'কেই বলা হয় রাগবি বল! তবে এখানেও শ্রেণীবিন্যাস আছে। অস্ট্রেলিয়ান রুলস ফুটবল, আমেরিকান ফুটবল ও ইউনিয়ন রাগবি (প্রচলিত অর্থে রাগবি)_এই তিন খেলাতেই প্রায় একই রকম বল ব্যবহার করা হয়। তফাতটা হচ্ছে, মার্কিনি কায়দায় বলের দুই প্রান্ত একটু বেশি চোখা বা সুচালো। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ান রুলস ফুটবল বা রাগবি বলের প্রান্ত দুটো খানিকটা মসৃণভাবে চোখা, বলা যায় অনেকটা ডিমের মতো। খেলার নিয়মও প্রায় কাছাকাছি, তবে দেশভেদে অল্প কিছু ভিন্নতাও আছে। সাদামাটাভাবে বলা যায়, নিজেদের প্রান্ত থেকে 'পাস' দিয়ে বা দৌড়ে পাশ কাটিয়ে বল প্রতিপক্ষের সীমানায় নির্দিষ্ট দাগের ভেতরে নিয়ে মাটিতে ছোঁয়ানোতেই পয়েন্ট। এ ছাড়া আছে 'ট্রাই' বা বলে কিক মেরে গোলপোস্ট হিসেবে বানানো দুটি উঁচু দণ্ডের মাঝখান দিয়ে বল পাঠানো। এভাবেই বিভিন্ন হিসেবে অর্জন করতে হয় পয়েন্ট, দুই অর্ধে বিভক্ত ৮০ মিনিটের ম্যাচে সর্বোচ্চ পয়েন্ট পাওয়া দল জয়লাভ করে।
ক্রিকেট বা ফুটবলের সর্বোচ্চ পর্যায়ে অংশ নেওয়া অনেক দেশে জনপ্রিয়তার পাল্লায় রাগবি ক্রিকেটকেও ছাড়িয়ে। নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইংল্যান্ডেও রাগবি তুমুল জনপ্রিয়। ডিয়েগো ম্যারাডোনা, লিওনেল মেসির দেশ আর্জেন্টিনাও পিছিয়ে নেই রাগবিতে। ইউরোপে মূলত যুক্তরাজ্যে (ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়েলস) ও আয়ারল্যান্ডে, সোজা কথায় বললে ইংরেজিভাষী অংশে রাগবির চলটা বেশি। ফ্রান্স, ইতালিতেও রাগবির জনপ্রিয়তা বেশ। প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলেই যেন খেলাটার জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি। নিউজিল্যান্ডের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা তো বটেই, তাদের রাগবি দল 'অলব্ল্যাকস'ও দারুণ জনপ্রিয় সে দেশের ঐতিহ্যবাহী 'হাকা' বা মাওরি আদিবাসী রীতিতে শত্রুর সামনে তর্জন-গর্জনের ভঙ্গিমার জন্য। রাগবির প্রথম বিশ্বচ্যাম্পিয়নও তারা। এ ছাড়া সামোয়া, টোঙ্গার মতো ছোট ছোট দ্বীপদেশও অংশ নিচ্ছে রাগবি বিশ্বকাপে।
এ বছর রাগবি বিশ্বকাপের ১১তম আসর বসেছে নিউজিল্যান্ডে। দেশটির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ক্রীড়া আসরটি শুরু হয়েছে সেপ্টেম্বরের ৯ তারিখে, চলবে ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত। সাত সপ্তাহের বিশ্বকাপে প্রতি ম্যাচে মাঠে দর্শক হচ্ছে গড়ে প্রায় ত্রিশ হাজার। অকল্যান্ডে ১৬ অক্টোবরের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে দর্শক সংখ্যাটা হয়তো আরো বেশি হবে; কারণ, এদিন যে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড! তাসমান সাগর পারের এই দুই প্রতিবেশীর দ্বৈরথ যেকোনো পর্যায়েই ছড়ায় তুমুল উত্তেজনা।
ওই ম্যাচের আগেই অবশ্য ঠিক হয়ে যাবে ফাইনালে কে হবে দুই প্রতিবেশীর দ্বৈরথের জয়ী দলের প্রতিপক্ষ। ১৫ তারিখে প্রথম সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে ওয়েলস ও ফ্রান্স। এই দুই ইউরোপিয়ান প্রতিপক্ষের লড়াইয়ে উত্তাপের ঝাঁজটাও কম নয়। দুই সেমিফাইনালের পর ২৩ অক্টোবরের ফাইনালও হবে অকল্যান্ডের ইডেন পার্কে, যেখানে শীতে হয় রাগবি আর গরমের দিনে ক্রিকেট। সেই সূত্রে প্রায় অচেনা খেলাটার এই মাঠও আমাদের কাছে কত চেনা!
এভাবে খেয়ালের বশে যে খেলার শুরু, অনেক পথ পাড়ি দিয়ে তা রীতিমতো এখন দক্ষযজ্ঞ। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর অনেক জায়গায় ছড়িয়ে যায় রাগবি। ১৯৮৭ সাল থেকে চার বছর পরপর নিয়মিতভাবেই হচ্ছে রাগবির বিশ্বকাপ, আর সব কিছুর সঙ্গে মিশে আছে ওয়েব সাহেবের নামটাও। উদ্ভাবনের ঘটনাটি সত্যি বা মিথ্যা যা-ই হোক, রাগবি বিশ্বকাপের নামটা হচ্ছে 'উইলিয়াম ওয়েব এলিস কাপ' এবং এই কাপটা জেতার জন্যই এবার নিউজিল্যান্ডে এসেছে ২০টি দেশের জাতীয় দল। বাছাই পর্বে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে ৯১টি দেশ!
বল বলতেই সাধারণত আমরা ধারণা করে নিই গোলাকার কিছু। সেটা হতে পারে চামড়া, রাবার, কাঠ কিংবা অন্য যেকোনো কিছু দিয়ে বানানো। অনেকটা 'পটোল' আকৃতির একটা লাউয়ের সমান বস্তুকে 'বল' হিসেবে মেনে নিতে অনেকেরই কষ্ট হতে পারে। তবে সত্যি কথাটা হচ্ছে, প্রমাণ সাইজের পটোল আকৃতির একটি 'বস্তু'কেই বলা হয় রাগবি বল! তবে এখানেও শ্রেণীবিন্যাস আছে। অস্ট্রেলিয়ান রুলস ফুটবল, আমেরিকান ফুটবল ও ইউনিয়ন রাগবি (প্রচলিত অর্থে রাগবি)_এই তিন খেলাতেই প্রায় একই রকম বল ব্যবহার করা হয়। তফাতটা হচ্ছে, মার্কিনি কায়দায় বলের দুই প্রান্ত একটু বেশি চোখা বা সুচালো। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ান রুলস ফুটবল বা রাগবি বলের প্রান্ত দুটো খানিকটা মসৃণভাবে চোখা, বলা যায় অনেকটা ডিমের মতো। খেলার নিয়মও প্রায় কাছাকাছি, তবে দেশভেদে অল্প কিছু ভিন্নতাও আছে। সাদামাটাভাবে বলা যায়, নিজেদের প্রান্ত থেকে 'পাস' দিয়ে বা দৌড়ে পাশ কাটিয়ে বল প্রতিপক্ষের সীমানায় নির্দিষ্ট দাগের ভেতরে নিয়ে মাটিতে ছোঁয়ানোতেই পয়েন্ট। এ ছাড়া আছে 'ট্রাই' বা বলে কিক মেরে গোলপোস্ট হিসেবে বানানো দুটি উঁচু দণ্ডের মাঝখান দিয়ে বল পাঠানো। এভাবেই বিভিন্ন হিসেবে অর্জন করতে হয় পয়েন্ট, দুই অর্ধে বিভক্ত ৮০ মিনিটের ম্যাচে সর্বোচ্চ পয়েন্ট পাওয়া দল জয়লাভ করে।
ক্রিকেট বা ফুটবলের সর্বোচ্চ পর্যায়ে অংশ নেওয়া অনেক দেশে জনপ্রিয়তার পাল্লায় রাগবি ক্রিকেটকেও ছাড়িয়ে। নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইংল্যান্ডেও রাগবি তুমুল জনপ্রিয়। ডিয়েগো ম্যারাডোনা, লিওনেল মেসির দেশ আর্জেন্টিনাও পিছিয়ে নেই রাগবিতে। ইউরোপে মূলত যুক্তরাজ্যে (ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়েলস) ও আয়ারল্যান্ডে, সোজা কথায় বললে ইংরেজিভাষী অংশে রাগবির চলটা বেশি। ফ্রান্স, ইতালিতেও রাগবির জনপ্রিয়তা বেশ। প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলেই যেন খেলাটার জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি। নিউজিল্যান্ডের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা তো বটেই, তাদের রাগবি দল 'অলব্ল্যাকস'ও দারুণ জনপ্রিয় সে দেশের ঐতিহ্যবাহী 'হাকা' বা মাওরি আদিবাসী রীতিতে শত্রুর সামনে তর্জন-গর্জনের ভঙ্গিমার জন্য। রাগবির প্রথম বিশ্বচ্যাম্পিয়নও তারা। এ ছাড়া সামোয়া, টোঙ্গার মতো ছোট ছোট দ্বীপদেশও অংশ নিচ্ছে রাগবি বিশ্বকাপে।
এ বছর রাগবি বিশ্বকাপের ১১তম আসর বসেছে নিউজিল্যান্ডে। দেশটির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ক্রীড়া আসরটি শুরু হয়েছে সেপ্টেম্বরের ৯ তারিখে, চলবে ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত। সাত সপ্তাহের বিশ্বকাপে প্রতি ম্যাচে মাঠে দর্শক হচ্ছে গড়ে প্রায় ত্রিশ হাজার। অকল্যান্ডে ১৬ অক্টোবরের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে দর্শক সংখ্যাটা হয়তো আরো বেশি হবে; কারণ, এদিন যে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড! তাসমান সাগর পারের এই দুই প্রতিবেশীর দ্বৈরথ যেকোনো পর্যায়েই ছড়ায় তুমুল উত্তেজনা।
ওই ম্যাচের আগেই অবশ্য ঠিক হয়ে যাবে ফাইনালে কে হবে দুই প্রতিবেশীর দ্বৈরথের জয়ী দলের প্রতিপক্ষ। ১৫ তারিখে প্রথম সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে ওয়েলস ও ফ্রান্স। এই দুই ইউরোপিয়ান প্রতিপক্ষের লড়াইয়ে উত্তাপের ঝাঁজটাও কম নয়। দুই সেমিফাইনালের পর ২৩ অক্টোবরের ফাইনালও হবে অকল্যান্ডের ইডেন পার্কে, যেখানে শীতে হয় রাগবি আর গরমের দিনে ক্রিকেট। সেই সূত্রে প্রায় অচেনা খেলাটার এই মাঠও আমাদের কাছে কত চেনা!
No comments