২০২১ সালে সোনার বাংলা হবে - হাসিনা : খালেদা জিয়া পাগল হয়ে গেছেন : সব ধর্মের অধিকার নিশ্চিত করেছি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০২১ সালে দেশ সোনার বাংলা হবে। গত আড়াই বছরে ন্যাশনাল সার্ভিস প্রোগ্রামের অধীনে ৪ লাখ তরুণের চাকরি হয়েছে। দেশের প্রতিটি উপজেলাকে এই কর্মসূচির আওতায় আনা হবে। তিনি বলেন, সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে সব ধর্মের নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করেছে বর্তমান সরকার। তার অভিযোগ, গত নির্বাচনের অন্তর্জ্বালা মেটাতে দেশে অশান্তি সৃষ্টি করছে বিএনপি। গতকাল নীলফামারী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।


সিলেটে বিরোধীদলীয় নেতা ও চারদলীয় জোটনেত্রী খালেদা জিয়ার বক্তব্যের জবাবে তিনি মন্তব্য করেন— মহাজোটের কর্মকাণ্ড দেখে খালেদা জিয়া পাগল হয়ে গেছেন।প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিরোধীদলীয় নেতা প্রশ্ন রেখেছেন আমি মুসলমান কি-না। তাকে আমি বলতে চাই, ভোর পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ পড়ে কোরআন তেলাওয়াত করি।
আবদুর রাজ্জাক নীলফামারী থেকে জানান, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে তখন উত্তরবঙ্গ থেকে মঙ্গা দূর হয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক বিশাল জনসভায় প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, আগামী ২০১৪ সালের মধ্যে দেশ থেকে নিরক্ষরতা দূর করা হবে। তার সরকার সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে সব ধর্মের নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করেছে। বর্তমান সরকার বেশি দামে খাদ্য কিনে অসহায় দুস্থদের মাঝে বিতরণ করছে। তিনি বলেন, বিনামূল্যে গরিবদের মাঝে বর্তমানে খাদ্য দেয়া হচ্ছে এবং আগামীতে নদী ভাঙনের শিকার সব মানুষকে বিনামূল্যে ঘরবাড়ি বানিয়ে দেয়া হবে। বেকারত্ব দূরীকরণে তার সরকার আড়াই বছরে চার লাখ বেকারকে চাকরি দিয়েছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের রেখে যাওয়া ১০ টাকার চাল বিএনপি সরকার মানুষকে ৪০ টাকায় খাইয়েছে। ২০০৯ সালের নির্বাচনের অন্তর্জ্বালা মেটাতে বিএনপি দেশে অশান্তি সৃষ্টি করছে এবং দেশে অশান্তি সৃষ্টি করে তারা শান্তিতে ঘুমায়। তিনি বলেন, বিএনপি সরকার তাদের শাসনামলে দেশে কোনো শিল্পকারখানা স্থাপন না করে আদমজীসহ সব শিল্পকারখানা বন্ধ করে দেয়।
ভারতের সঙ্গে বর্তমান সরকারের মধুর সম্পর্কের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা যেমন আদায় করেছি আগামীতে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যাও আদায় করব। তিনি ভারতের কাছ থেকে ৪৫ বিঘা জমি বাংলাদেশের দখলে আনা হয়েছে এবং দু’দেশের সীমানা নির্ধারণের কাজ এগিয়ে চলছে বলে উল্লেখ করেন। নীলফামারী পৌরসভার উন্নয়ন, সরকারি কলেজে মাস্টার্স ও মহিলা কলেজে অনার্স কোর্স চালু এবং ইপিজেডে গ্যাস সরবরাহসহ বন্ধ হওয়া সব আন্তঃনগর ট্রেন চিলাহাটি পর্যন্ত চালু হবে বলে তিনি জেলাবাসীর দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। জনসভায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ কেয়ারটেকার সরকারের সমালোচনা করে বলেন, গণতান্ত্রিক দেশে কখনও এমন দুটি সরকার চলতে পারে না। কেয়ারটেকার সরকার কখনও নিরপেক্ষ ছিল না বলে তিনি মন্তব্য করেন। আওয়ামী লীগের জেলা সভাপতি দেওয়ান কামাল আহমেদের সভাপতিত্বে জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী তাজুল ইসলাম, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, ভূমি প্রতিমন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান, আসাদুজ্জামান নূর, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রমুখ। এর আগে সকালে প্রধানমন্ত্রী সৈয়দপুর সেনানিবাসে ইএমই সেন্টারকে ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
খালেদা জিয়া পাগল হয়ে গেছেন : প্রধানমন্ত্রী
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম জানায়, বর্তমান মহাজোট সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দেখে বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া পাগল হয়ে গেছেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নীলফামারীর জনসভায় তিনি বলেন, বিরোধীদলীয় নেত্রীর আসল চেহারা বেরিয়ে এসেছে। তিনি স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন না বলেই যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, জঙ্গিবাদকে আশ্রয় দিয়ে তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমান বিরোধীদলীয় নেত্রী দেশকে জঙ্গিবাদের আখড়ায় পরিণত করেছিলেন। আমরা তা উত্খাত করেছি।
চারদলীয় জোট ক্ষমতায় থাকার সময় দেশ দুর্নীতিতে ভেসে গিয়েছিল দাবি করে তিনি আরও বলেন, ‘তার ছেলেরা বিদেশে মানি লন্ডারিং করেছে। সার চাইতে গেলে কৃষককে গুলি করে মেরেছে। আমি দৃঢ়কণ্ঠে বিরোধীদলীয় নেত্রীকে বলতে চাই, লুটপাট করা এতিমদের টাকা ফেরত দিন নইলে মামলা মোকাবিলা করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিরোধীদলীয় নেত্রী প্রশ্ন রেখেছেন আমি মুসলমান কি না? আমি বলতে চাই বিরোধীদলীয় নেত্রীকে আমি ভোর ৫টায় ঘুম থেকে উঠে ফজরের নাম পড়ে কোরআন শরীফ তেলাওয়াত করি। কিন্তু আপনি কয়টায় ঘুম থেকে ওঠেন। আপনি তো দুপুর ১২টায় ঘুম থেকে ওঠেন। এখন কে মুসলমান বুঝে নিন।
বর্তমান সরকারের আমলেই সেনাবাহিনীর আধুনিকায়ন সম্পন্ন হবে : প্রধানমন্ত্রী
বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, চারটি ধাপে পাঁচ বছর মেয়াদি পরিকল্পনার আওতায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামো বিন্যাস, উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন প্রক্রিয়া বর্তমান সরকারের সময়েই শেষ হবে। তিনি গতকাল সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্টে ইএমই সেন্টার অ্যান্ড স্কুলকে জাতীয় পতাকা প্রদান উপলক্ষে আয়োজিত প্যারেড ও ইএমই কোরের চতুর্থ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীকে বিশ্বের একটি অন্যতম আধুনিক বাহিনী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে এ বাহিনীর সব সদস্যকে উন্নত প্রশিক্ষণ, আন্তরিক প্রচেষ্টা ও কঠোর অধ্যবসায়ের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত হওয়ার আহ্বান জানান। সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য, সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী প্রধান, ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা এবং ইএমই সেন্টার অ্যান্ড স্কুলের কমান্ড্যান্ট ও অন্য সদস্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
শেখ হাসিনা সশস্ত্র বাহিনীর জন্য ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ গ্রহণের কথা উল্লেখ করে বলেন, এ লক্ষ্য সার্বিকভাবে বাস্তবায়ন সম্পন্ন হলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী একটি আধুনিক, কার্যকর ও যুগোপযোগী বাহিনীতে পরিণত হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুসংহত করতে প্রয়োজন একটি বলিষ্ঠ দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনী। সেনাবাহিনীকে আধুনিক ও শক্তিশালী করতে সরকার নতুন নতুন সরঞ্জামাদি প্রবর্তন করছে। এর পাশাপাশি একটি উন্নত ও আধুনিক বাহিনীর জন্য প্রয়োজন এর সদস্যদের উন্নত প্রশিক্ষণ, আন্তরিক প্রচেষ্টা এবং কঠোর অধ্যবসায়। তিনি এ সময় আশা প্রকাশ করে বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করবেন, বাংলাদেশের পতাকাকে সমুন্নত রাখবেন এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে সরকারের প্রচেষ্টায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করবেন।
কোর অব ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার্সকে (ইএমই) বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অন্যতম অঙ্গ সংগঠন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান যুগ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর, তাই বিশ্বের সেনাবাহিনীতে এখন ব্যবহৃত হচ্ছে সর্বাধুনিক যুদ্ধাস্ত্র ও সরঞ্জামাদি। এসব বিবেচনায় সেনাবাহিনীর উন্নয়নে ইএমই’র ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
স্বাধীনতা যুদ্ধে ইএমই কোরের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে ইএমই কোরের এক হাজার ৪শ’ বাঙালি সদস্য মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ১৬২ জন বীর সৈনিক শাহাদাত বরণ করেন। বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য এই কোরের ৭ জন সৈনিক বিভিন্ন খেতাবে ভূষিত হন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর পরই দেশের চরম অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যেও একটি স্বাধীন দেশের উপযোগী প্রয়োজনীয় সামরিক অবকাঠামো গড়ে তোলার জন্য বঙ্গবন্ধু উদ্যোগ নেন। কিন্তু সে কাজ তিনি সম্পন্ন করে যেতে পারেননি। তার সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আজ বিশ্বের দরবারে একটি সুশৃঙ্খল ও আধুনিক সেনাবাহিনী হিসেবে সুনাম অর্জন করেছে।
শেখ হাসিনা দেশের প্রতিটি বাহিনীকে শক্তিশালী করতে তার সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে বলেন, তার সরকারের ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদকালে ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়। নন-কমিশন্ড অফিসার্স একাডেমি ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশন অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন করা হয়। সেনাবাহিনীর জন্য আধুনিক অস্ত্র সংগ্রহের পাশাপাশি এর দু’টি নতুন ব্রিগেড প্রতিষ্ঠা করা হয়, একটি রিভারাইন ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাটালিয়ন, অপরটি সাপোর্ট ব্যাটালিয়ন। এছাড়া একটি অর্ডন্যান্স কোম্পানি ও একটি ফিল্ড অ্যাম্বুলেন্সসহ ৩৬টি ইউনিট প্রতিষ্ঠা করা হয়। এতে প্রায় ১১ হাজার জনবল বৃদ্ধি পায়।
পরে ইএমই সেন্টার অ্যান্ড স্কুল-এর চতুর্থ পুনর্মিলনী ও বাত্সরিক অধিনায়ক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা, জঙ্গি দমন, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, বিদ্যুত্ ও জ্বালানি সঙ্কট নিরসনের মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। এসব চ্যালেঞ্জের মধ্যেও সরকার ক্ষুধা ও দারিদ্র্য দূর করে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি ‘মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কাজ করছে।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাবিহনীর ডিজিটাল সক্ষমতা বৃদ্ধিতে এর কমান্ডারদের কর্মদক্ষতা, কর্তব্যবোধ এবং ঐকান্তিক প্রচেষ্টা সফলতা এনে দিতে পারে।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌঁছলে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবদুুল মুবীন প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান।
বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের জানান, প্রধানমন্ত্রী ইএমই কমান্ডারদের এ বাহিনীর উন্নয়নের পাশাপাশি জাতি গঠনমূলক বিভিন্ন নতুন ধারণা ও প্রযুক্তির উদ্ভাবন এবং চর্চায় আত্মনিয়োগ করার আহ্বান জানান।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রী পতাকা প্রদান অনুষ্ঠানের পর সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্টে মহান মুক্তিযুদ্ধে শাহাদতবরণকারী মুক্তিযোদ্ধা ইএমই কোরের সদস্যদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভ ‘বিজয় গৌরব’-এ পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
এ সময় ইএমই কোরের সুসজ্জিত একটি চৌকস দল প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করে।

   

No comments

Powered by Blogger.