তারেকের নেতৃত্ব নিয়ে সিলেটে কিছু বলেননি খালেদা জিয়া by মোশাররফ বাবলু

জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া গত মঙ্গলবার সিলেটের জনসভায় ঘোষণা দিয়েছেন, ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গেলে তরুণদের হাতে দেশের নেতৃত্ব তুলে দেওয়া হবে। তিনিসহ দলের সিনিয়র নেতারা নতুন সরকারকে সহযোগিতা করবেন। নতুনরাই দেশকে এগিয়ে নিতে পারবে। খালেদা জিয়ার এ বক্তব্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে।নতুন প্রজন্মের নেতা হিসেবে খালেদা জিয়া তাঁর বড় ছেলে তারেক রহমানকে ইঙ্গিত করেছেন কি না, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে চলছে আলোচনা। তবে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়ার বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে।


তিনি তারেক রহমান সম্পর্কে কোনো কথা বলেননি। ভবিষ্যতে তরুণরাই এ দেশের নেতৃত্ব দেবে। খালেদা জিয়া সামগ্রিকভাবে তরুণ সমাজকে উৎসাহী করতেই ঘোষণাটি দিয়েছেন।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে চারদলীয় জোট ও সমমনা দলের নেতা-কর্মীরা সোমবার ঢাকা থেকে সিলেট অভিমুখে রোডমার্চ করেন। পরদিন সিলেটের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে জনসভা হয়। সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে খালেদা জিয়া নতুন প্রজন্মকে দেশ রক্ষার দায়িত্ব নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, 'নতুন প্রজন্মের কাছে দেশ নিরাপদ। তারাই পারবে দেশ পরিচালনা করতে। তাই ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গেলে একটি নীতিমালা তৈরি করে নতুন প্রজন্মের হাতে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দিতে চাই। আমরা তোমাদের পাশে থাকব। পরামর্শ দেব।'
খালেদা জিয়ার এ বক্তব্য সম্পর্কে গতকাল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'তরুণ প্রজন্ম বলতে আমাদের চেয়ে যাদের বয়স কম, তাদেরই বোঝায়। চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তরুণ প্রজন্মকে উৎসাহী করার জন্যই সার্বিকভাবে বক্তব্য দিয়েছেন। তারেক রহমান হন আর যে ব্যক্তিই হন না কেন, তরুণরাই দেশের ভবিষ্যৎ। দেশ পরিচালনা করবে তরুণরা_এটাই স্বাভাবিক।'
ড. মোশাররফ বলেন, 'তরুণরা থাকবে, প্রবীণরা সরে যাবেন_এটাই স্বাভাবিক। বর্তমান সরকার নির্বাচনের আগে বলেছিল, শিক্ষিত তরুণদের চাকরি দেওয়া হবে। ক্ষমতায় এসেও তারা বলেছে, ঘরে ঘরে চাকরি দেবে। কিন্তু সরকার কাউকেই কিছু দিতে পারেনি। প্রসঙ্গক্রমে খালেদা জিয়া তাঁর বক্তব্যে তরুণ সমাজকে ভবিষ্যতে দেশ পরিচালনার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছেন।'
ড. মোশাররফ আরো বলেন, 'সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেই বলেছিলেন বিরোধী দল বিশৃঙ্খলা করতে রোডমার্চ কর্মসূচি দিয়েছে, কিন্তু তাঁর মন্তব্য সঠিক হয়নি। ঢাকা থেকে সিলেট অভিমুখে হাজার হাজার গাড়ির বহর নিয়ে শান্তিপূর্ণ রোডমার্চ প্রমাণ করেছে বিএনপি কখনো কোনো কর্মসূচিতে বিশৃঙ্খলা করে না। জনগণের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কর্মসূচিতে বিশ্বাসী তারা। রোডমার্চ ও সিলেট জনসভায় লাখো মানুষ বিএনপির আন্দোলনের প্রতি সমর্থন দিয়েছে। এ সরকারের ওপর থেকে তারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এ অবস্থায় সরকারের উচিত যত দ্রুত সম্ভব পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দেওয়া।'
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমাদের দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান এখন আর তরুণ নেই। তাঁর বয়স হয়েছে। তারেক দেশ পরিচালনার যোগ্যতা রাখেন। আমাদের দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সারা দেশের তরুণ সমাজ ও যুব সমাজকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি তো তারেকের নাম উল্লেখ করে কিছু বলেননি।' প্রবীণদের কী হবে_জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'শুধু তরুণ নয়, দেশের সব শ্রেণী-পেশার মানুষ তারেককে পছন্দ করে। এ জন্যই তারেককে ভয় পায় আওয়ামী লীগ। তরুণদের সঙ্গে প্রবীণরাও থাকবেন।'
হান্নান শাহ বলেন, 'ঢাকা থেকে সিলেট অভিমুখে চারদলীয় জোটের রোডমার্চ শতভাগ সফল হয়েছে। সরকার বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করলেও বাধা দেওয়ার সাহস ছিল না। বাধা দিলে জনসমুদ্রের গর্জনে হয়তো পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতো। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। দাবি মেনে না নিলে সরকারের বিরুদ্ধে আরো কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।'
দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, 'তরুণ সমাজকে দেশ রক্ষার কাজে এগিয়ে আসতে হবে_এটাই স্বাভাবিক। ভবিষ্যতে তরুণরাই হবে দেশের কর্ণধার। গণতন্ত্র রক্ষার দায়িত্বও তরুণদের নিতে হবে। সিলেটের জনসভায় চেয়ারপারসন তো কারো নাম উল্লেখ করেননি, সার্বিকভাবে সারা দেশের তরুণ সমাজের প্রতি দেশ রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা কেন দেওয়া হবে?'
ঢাকা থেকে সিলেট রুটে ভৈরব, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বহু জায়গায় রোডমার্চের গাড়ি আটকে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'বিএনপিতে কোনো বিভেদ নেই। অতীতের তুলনায় বিএনপি এখন সাংগঠনিকভাবে অনেক শক্তিশালী। শান্তিপূর্ণ রোডমার্চ কর্মসূচি সফল করার মধ্য দিয়ে বিএনপি প্রমাণ করেছে দলটি কোনো বিশৃঙ্খলায় বিশ্বাস করে না। ভবিষ্যতেও সব কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবেই পালন করা হবে।'

No comments

Powered by Blogger.