অল্পের জন্য ধরা পড়ল না প্রতারক ফারুক

নশ্রীর মহাপ্রতারক ফারুককে গ্রেফতারে রাজধানীর কয়েকটি আস্তানায় অভিযান চালানো হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, যে কোনো উপায়ে ফারুককে গ্রেফতার করা হবে। ইতিমধ্যে ফারুককে গ্রেফতারে বেশ কিছু ফাঁদ পাতা হয়েছে। সূত্র জানায়, ফারুককে গ্রেফতারে গোয়েন্দা জাল পাতা হয়। ওই জালে পা দিয়েছিলেন ফারুক। শেষ মুহূর্তে টের পেয়ে সটকে পড়েন তিনি। ভেস্তে যায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান। ফারুকের প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগীরা বলছেন, সদিচ্ছা থাকলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে ফারুককে
গ্রেফতার করা সময়ের ব্যাপার মাত্র।


এদিকে ফারুকের বিরুদ্ধে গতকাল ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে লিখিত আবেদন করতে যান প্রতারণার শিকার ব্যবসায়ী জুলফিকার ও তার বন্ধুরা। এ সময় ডিবি কর্মকর্তারা তাদের থানায় মামলা করতে পরামর্শ দেন। প্রতারকের বিরুদ্ধে আরও মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু সমকালকে বলেন, ফারুকের মতো প্রতারককে ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ইতিমধ্যে তাকে গ্রেফতারে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর অনেক প্রতারককে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। ফারুকের শেষ রক্ষা হবে না।
এ ব্যাপারে র‌্যাবের মহাপরিচালক মোখলেছুর রহমান সমকালকে বলেন, প্রতারক ফারুককে গ্রেফতারে র‌্যাব-৩-এর একটি টিমকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা ফারুককে গ্রেফতারে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
র‌্যাব-৩-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল রফিকুল ইসলাম সমকালকে বলেন, 'যে কোনো উপায়ে ফারুককে গ্রেফতার করা হবে। সম্ভাব্য কয়েকটি জায়গায় অভিযানও চালানো হয়েছে। '
সূত্র জানায়, প্রতারক ফারুক গত কয়েকদিন রাজধানীতে পালিয়ে ছিলেন। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তার একাধিক বাড়ি রয়েছে। সমকালে প্রতারণা নিয়ে খবর প্রকাশের পর থেকে প্রকাশ্যে নেই ফারুক। গত বুধবার রাজধানীর উত্তরখানের বিলাসবহুল একটি বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন তিনি। ভোরে ওই এলাকা ত্যাগ করেন। ফারুক দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন।
তার প্রতারণার শিকার ব্যবসায়ী জুলফিকার সমকালকে বলেন, ফারুকের মোবাইল নম্বর বন্ধ রয়েছে। তার প্রতারণার ফাঁদে পড়ে আমরা নিস্ব। তাকে দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা উচিত।
ফারুকের প্রতারণার শিকার ব্যবসায়ী দুলাল সমকালকে বলেন, মানুষকে ফাঁদে ফেলতে ফারুক নিত্যনতুন কৌশল গ্রহণ করত। ২০০৫ সালের দিকে ফারুক তাদের নিয়ে গুলশানের একটি অভিজাত দোকানে যায়। সেখান থেকে ৭-৮টি দামি পোশাক কেনেন। এত দামি পোশাক কাকে দেবেন, এমন প্রশ্নের জবাবে ফারুক বলেন, মন্ত্রীর (তৎকালীন গণপূর্তমন্ত্রী) স্ত্রীকে গিফট করব। আরেকদিন ফারুক উপ-সচিবের পরিচয়পত্র গলায় ঝুলিয়ে সচিবালয়ে ঢোকেন। গেটের নিরাপত্তারক্ষীরা তার পরিচয় জানার সাহস পাননি। আরেকদিন গুলশানে খন্দকার ভিলা নামে একটি বাড়ি দেখিয়ে ফারুক জানান, সেটি তার বাড়ি। পরে দুলাল জানতে পারেন বাড়িটি তার নয়। ফারুকের নামের আগে খন্দকার থাকায় গুলশানের ওই বাড়িটি তার বলে দাবি করেন। ফারুকের বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করলে মামলা করে হয়রানির ভয় দেখানো হতো। তার নিজস্ব আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। ফারুকের একাধিক স্ত্রী। তাদের নামে রয়েছে বাড়ি-গাড়ি।
ভুক্তভোগী ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, ফারুক অত্যন্ত ধূর্ত প্রকৃতির। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তার পেটোয়া বাহিনী রয়েছে। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী দিয়ে তিনি আগাম তথ্য সংগ্রহ করেন। এমনকি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে মোটা অঙ্কের টাকায় 'ম্যানেজ' করে গ্রেফতারের আগাম তথ্য পেয়ে যান ফারুক।

No comments

Powered by Blogger.