একক প্রার্থী দিতে ব্যর্থ আওয়ামী লীগ by পার্থ প্রতীম ভট্টাচার্য্য

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে একক প্রার্থী দিতে ব্যর্থ হলো আওয়ামী লীগ। শেষ পর্যন্ত শামীম ওসমান ও সেলিনা হায়াত আইভী দুজনই প্রার্থী থেকে গেলেন।দফায় দফায় বৈঠক, দুই প্রার্থীকে দলীয় পদ দেওয়া, প্রতিমন্ত্রী কিংবা সংসদ সদস্য বানানোর মতো নানা টোপ ও ফর্মুলায় গিয়েও শেষ পর্যন্ত দুই প্রার্থীর মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সমঝোতায় পেঁৗছাতে পারেনি আওয়ামী লীগ।গতকাল বুধবার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে শামীম ওসমান ও সেলিনা হায়াত আইভী কেউই তা প্রত্যাহার করেননি। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় শেষ হওয়ার পর গতকাল বিকেলে দুজনই তাঁদের গণসংযোগ চালিয়েছেন।


অন্যদিকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে বিকেল ৫টা পর্যন্ত আইভী ফোন বন্ধ করে নিজ বাসভবনে অবস্থান করেন। তাঁর পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, দলের শীর্ষ মহল থেকে কোনো নির্দেশ আসতে পারে_এমন আশঙ্কায় আইভী এ কৌশল নিয়েছিলেন।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, নির্বাচনের মাঠে আওয়ামী লীগের এই দুই নেতা অনড় অবস্থান নিলেও আবারও আওয়ামী লীগের তরফ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে তাঁদের মধ্যে সমঝোতা প্রতিষ্ঠায়।
তবে দলীয় শীর্ষ নেতাদের বেশির ভাগই শামীম ওসমানের পক্ষাবলম্বন করায় এবং সেলিনা হায়াত আইভীর অনড় অবস্থান, নারায়ণগঞ্জে তাঁর জনপ্রিয়তা ও পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির কারণে শেষ পর্যন্ত সমঝোতা সম্ভব নয় বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ নির্বাচন কমিশনের আইনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কাউকে দলীয় মনোনয়নপত্র প্রদান বিদ্যমান আইনের পরিপন্থী।
কালের কণ্ঠকে হানিফ বলেন, যেহেতু দুজনের কেউই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি, তাই এই মুহূর্তে দলের পক্ষ থেকে কাউকে সমর্থন দেওয়া সম্ভব নয়। তবে দলীয় ফোরামে বসে এ ব্যাপারে দলের অবস্থান ও করণীয় নির্ধারণ করা হবে বলে জানান তিনি।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের মতে, দলের সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত করতে নারায়ণগঞ্জে শামীম ওসমানকে প্রয়োজন। অন্যদিকে নির্বাচনে বিজয়ের কৌশলগত সুবিধার জন্য ডা. সেলিনা হায়াত আইভীর নাম বিবেচনায় আসছে। এ নিয়ে বিপাকে পড়েছে আওয়ামী লীগ।
আবার এই দুই নেতার একজনকে নির্বাচনের মাঠ থেকে সরিয়ে আনতে না পারলে ফলাফল দলের বিপক্ষে চলে যেতে পারে এমন আশঙ্কাও আছে।
সূত্র জানায়, শেষ পর্যন্ত প্রার্থীদের মধ্যে সমঝোতা না হলে আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগের তরফ থেকে কাউকেই সমর্থন দেওয়া হবে না। তবে বিভিন্ন সময়ে দলটির শীর্ষ মহলের একবার শামীম ওসমানের, আরেকবার আইভীর পক্ষাবলম্বন তাঁদের দুজনকেই অনড় অবস্থান নিতে প্রভাবিত করেছে বলেও মনে করেন আওয়ামী লীগের অনেক নেতা।
দলীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে, শেষ পর্যন্ত যদি দুই প্রার্থীর মধ্যে সমঝোতা না হয়, তা হলে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের শামীম ওসমানের পক্ষে কাজ করার জন্য কেন্দ্র থেকে গোপন নির্দেশ দেওয়া হতে পারে। সে ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিক না হলেও সমর্থন থাকবে শামীম ওসমানের পক্ষে।
এর আগে বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগের তরফ থেকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়ার জন্য প্রার্থীদের একজনকে প্রতিমন্ত্রী ও দলের জেলা সভাপতি এবং অন্যজনকে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য করার প্রস্তাব দেওয়া হলেও দুই প্রার্থীকে অনড় অবস্থান থেকে সরানো যায়নি। তাঁরা দুজনই জয়লাভের আশা জানিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নিজ নিজ প্রার্থিতার ব্যাপারে অনড় অবস্থান নেন এবং সোমবার আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দোয়া নিয়ে যান। তাঁরা দুজনেই দলীয় প্রধানকে জয়ের ব্যাপারে নিশ্চয়তা দেন। তবে শেখ হাসিনা দুজনকে নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করার পরামর্শ দেন এবং সমঝোতায় ব্যর্থ হলে জয়লাভ কঠিন হবে বলে মন্তব্য করেন।
এর আগে গত ২ অক্টোবর শেখ হাসিনা দুই প্রার্থীকে নিয়ে প্রথম বৈঠকে বসেন। সেই বৈঠকও সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়। বৈঠকে শামীম ওসমানের পক্ষে দলীয় সমর্থনের ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করা হয় এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে আইভী বৈঠক থেকে রাগ করে বেরিয়ে যান।
৯ অক্টোবর দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল দুই প্রার্থীর সঙ্গে বৈঠক করেন। সেটিও কোনো রকম সমঝোতা ছাড়াই শেষ হয়।
পরে একই দিনে গণভবনে অনুষ্ঠিত সম্পাদকমণ্ডলীর সঙ্গে বৈঠকে শেখ হাসিনা সেলিনা হায়াত আইভীর পক্ষে ইতিবাচক মনোভাব দেখান। ওই বৈঠকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে একজনকে দলীয় সমর্থন দিয়ে মেয়র নির্বাচিত করা এবং অন্যজনকে প্রতিমন্ত্রী ও দলের জেলা সভাপতি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে সে ফর্মুলা একজন মেনে নিলেও আরেকজন মেনে নেননি। ফলে কোনো উদ্যোগই সফল হয়নি।
মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় শেষ, প্রচার শুরু

No comments

Powered by Blogger.