যুদ্ধাপরাধের বিচার ঠেকাতে বিরোধী নেত্রীর রোডমার্চ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে রোডমার্চ শুরু করেছেন। বিএনপি নেত্রী কিভাবে দুর্নীতি দূর করবেন_প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থেকে জিয়া অরফানেজের টাকা মেরে খেয়েছেন। তাঁর ছেলে মানি লন্ডারিং করে ধরা পড়েছেন। সারের জন্য কৃষককে গুলি করে হত্যা করে দুর্নীতির টাকা তাঁরা বিদেশে পাচার করেছেন। গতকাল বুধবার বিকেলে নীলফামারীতে এক জনসভায় তিনি এসব কথা বলেছেন।জেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে সরকারি হাই স্কুল মাঠে আয়োজিত জনসভায় শেখ হাসিনা বলেন, 'বিরোধীদলীয় নেতা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চান না।


এই বিচার ঠেকাতে তিনি দেশে সন্ত্রাস সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। তিনি কিভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হবেন।' তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দেশের মাটিতে এ সরকারের আমলেই হবে। তিনি বলেন, 'বিরোধীদলীয় নেত্রী আমার ধর্ম নিয়ে কথা তুলেছেন। আমি তো নিয়মিত ফজরের নামাজ পড়ে কোরআন তেলাওয়াত করে দৈনন্দিন কাজে যাই। ওনার সকাল হয় দুপুর ১২টায়।'
জনগণকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আপনাদের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় এসেছি। ক্ষমতায় এসে সংবিধান সংশোধন করে আপনাদের অধিকার নিশ্চিত করেছি।' আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের কথা মাথায় রেখে কাজ করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে জনগণকে কম দামে খাদ্য সরবরাহ করেছে। ২০০১ সালে ১০ টাকা কেজি চালের দাম রেখে গেছে। বিরোধীদলীয় নেত্রী ক্ষমতায় এসে সে চালের দাম করেছেন ৪০ টাকা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সার্বিক উন্নয়নে শিক্ষা নীতিতে কারিগরি ও ভোকেশনাল যুক্ত করা হয়েছে। গত আড়াই বছরে চার লাখ বেকারকে চাকরি দেওয়া হয়েছে। উত্তরাঞ্চলে ইপিজেড স্থাপন করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হয়েছে। এ অঞ্চলে মঙ্গা দূর করেছে সরকার।
শেখ হাসিনা আরো বলেন, এই সরকারের আমলেই ভারতের কাছ থেকে ৪৫ বিঘা জমি আদায় করা হয়েছে। তিনবিঘা করিডর উন্মুক্ত করা হয়েছে। ভারতের সঙ্গে সীমান্ত চিহ্নিত ও ছিটমহলবাসীর সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের পর এবার তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে সরকার কাজ করছে। ২০২১ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর এ সফরের দিকে আশা নিয়ে তাকিয়ে ছিল জেলাবাসী। জেলার সার্বিক উন্নয়নে উত্তরা ইপিজেডের উন্নয়ন ও রেলপথ নির্মাণ, বিসিক শিল্পনগরী প্রতিষ্ঠা, বন্ধ থাকা দারোয়ানি টেঙ্টাইল মিল চালু, ১০০ শয্যার আধুনিক হাসপাতালটিকে ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ, সৈয়দপুর রেল কারখানা আধুনিকায়ন, চিলাহাটি স্থলবন্দর বাস্তবায়ন, সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীতকরণ, সরকারি কলেজে মাস্টার্স ও মহিলা কলেজে অনার্স চালু, পলিটেকনিক্যাল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, নার্সিং ইনস্টিটিউটের সম্প্রসারণসহ ২৮টি দাবি ছিল জেলাবাসীর। প্রধানমন্ত্রী এসব দাবির প্রতি ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দেওয়ান কামাল আহমেদের সভাপতিত্বে জনসভায় আরো বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সতীশ চন্দ্র রায়, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি, কেন্দ্রীয় সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান নূর এমপি, মুক্তিযোদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী তাজুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য টিপু মুন্সী, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মমতাজুল হকসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা।

'এ সরকারের আমলেই সেনাবাহিনীর আধুনিকায়ন সম্পন্ন হবে'
সৈয়দপুর প্রতিনিধি জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমান সরকারের আমলেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আধুনিকায়ন সম্পন্ন হবে। জাতিসংঘ মিশনে অংশ নিয়ে সেনাবাহিনী যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছে। বিশ্বে একটি আধুনিক সুশৃঙ্খল বাহিনী হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নাম উঠে এসেছে। এ জন্য তিনি সেনা সদস্যদের আন্তরিক অভিনন্দন জানান। গতকাল সকালে সৈয়দপুর সেনানিবাসের প্যারেড গ্রাউন্ডে সেনা সদস্যদের উদ্দেশে বক্তব্যকালে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী সকালে সৈয়দপুর সেনানিবাসের ইএমই সেন্টার অ্যান্ড স্কুলের চতুর্থ পুনর্মিলনীতে আয়োজিত কালার প্যারেডে সালাম গ্রহণ করেন। তিনি কোর অব ইএমইকে জাতীয় পতাকা প্রদান করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পরিবারের সদস্য ও সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহকারী একটি বিশেষ বিমান সৈয়দপুর বিমানবন্দরে অবতরণ করে। তিন বাহিনীর প্রধান টারমাকে তাঁকে অভ্যর্থনা জানান। পরে প্রধানমন্ত্রীকে সেনানিবাসে নিয়ে যাওয়া হয়।

No comments

Powered by Blogger.