অত্যাধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে মলদ্বার না কেটে পাইলস অপারেশন by অধ্যাপক ডা: রকিবুল মোহাম্মদ আনোয়ার
পাইলস
সমস্যা সর্বজনীন, বাংলাদেশে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে কমবেশি প্রায় সবাই
পাইলস সমস্যায় ভোগান্তির সম্মুখীন হন। পাইলসের রোগীরা পায়ুপথ দিয়ে
রক্তক্ষরণ, পায়ুপথ ফুলে যাওয়া, ব্যথা অনুভব করা, পায়ুপথ দিয়ে পাইলস বেরিয়ে
আসা, মলদ্বারের চারপাশে চুলকানোসহ বিভিন্ন উপসর্গে পীড়িত হন। উপসর্গগুলো
দীর্ঘস্থায়ী হলে অথবা অনেক সময় উপসর্গগুলো ত্বরিতভাবে মারাত্মক আকার ধারণ
করলে জটিলতা রোগীর জীবনে হুমকির সৃষ্টি করতে পারে। সে কারণে এবং যেহেতু
পাইলসের উপসর্গ কোলন অথবা রেক্টাল ক্যান্সারের উপসর্গ, অনেক সময় একই রকম
হতে পারে, পাইলস উপসর্গ সম্পর্কে জনসাধারণের সক্রিয় সচেনতা অবশ্য
প্রয়োজনীয়।
পাইলস পায়ুপথ দিয়ে বেরিয়ে আসে কিনা তার ওপর ভিত্তি করে পাইলসকে চার মাত্রায় বিভক্ত করা হয়ে থাকে এবং পাইলস চিকিৎসা বহুলাংশে এই মাত্রা বিভেদের ওপর নির্ভরশীল। পায়ুপথে শুধু রক্তক্ষরণ প্রথম ডিগ্রি/মাত্রা পাইলসের বৈশিষ্ট্য, এই মাত্রার পাইলস কখনই পায়ুপথ দিয়ে বেরিয়ে আসে না। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় মাত্রা পাইলস পায়ুপথ দিয়ে বেরিয়ে আসে মল ত্যাগ করার সময়ে কিন্তু মল ত্যাগ সম্পন্নের পর দ্বিতীয় মাত্রার ক্ষেত্রে নিজ হতেই মলদ্বারের ভেতরে চলে যায় এবং তৃতীয় মাত্রা পাইলসের ক্ষেত্রে রোগীকে অঙ্গুলির চাপ দিয়ে পুনরায় মলদ্বারের ভেতরে প্রতিস্থাপন করতে হয়। চতুর্থ মাত্রার পাইলস সবসময়ই পায়ুপথের বাইরে অবস্থান করে।
প্রথম মাত্রা এবং প্রথমাবস্থায় দ্বিতীয় মাত্রা পাইলস চিকিৎসা : ইনজেকশান ও ব্যান্ড লাইগেশানের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। সেই সাথে খাদ্য অভ্যাস এবং জীবনধারা পদ্ধতি পরিবর্তন করে নরম কিন্তু শক্ত অথবা পাতলা নয় এমন মল ত্যাগ করার অভ্যাস করা।
উপরিউক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে প্রথম মাত্রা এবং প্রথমাবস্থায় দ্বিতীয় মাত্রা পাইলসের চিকিৎসা সম্ভব হতে পারে।
অগ্রবর্তী দ্বিতীয় মাত্রা এবং তৃতীয় ও চতুর্থ মাত্রা পাইলস চিকিৎসা : এই মাত্রার পাইলস শুধু শল্যচিকিৎসায় অপারেশনের মাধ্যমেই আরোগ্য করা সম্ভব হয়।
যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের শল্যচিকিৎসকদ্বয় মিলিগান এবং মরগান ১৯৩৭ সালে এ ধরনের পাইলসের জন্য পায়ুপথের তিন অবস্থানে চর্মসহ অভ্যন্তরীণ অংশ কেটে ফেলে রোগীর আরোগ্য করার পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। দুর্ভাগ্যক্রমে এ অপারেশনের পর প্রচণ্ড ব্যথা হয়, বিশেষভাবে মলত্যাগের পর, ঘা শুকাতে দেড় থেকে দুই মাস সময় লাগে, ঘন ঘন মলত্যাগ এবং অনেক ক্ষেত্রে মলত্যাগের অনুভূতি এলেই দ্রুতভাবে টয়লেটের দিকে ধাবিত হতে হয়। মলত্যাগের পর মনে হয় যে মলাশয় মলমুক্ত হয়নি এবং আবারো মলত্যাগের অনুভূতি অনুভব করা যায়। অনেক সময় অপারেশনের পর দেড় থেকে দুই মাসের আগে কাজে ফিরে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে এবং পরিবার আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়। অপারেশনের জটিলতায় মলদ্বার সঙ্কুচিত হয়ে যেতে পারে অথবা মল আটকে রাখার ক্ষমতা হারিয়ে জীবনযাত্রা দুর্বিষহ পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে।
১৯৯৩ সালে ইতালির প্যালেরমো বিশ্ববিদ্যালয়ের শল্যবিভাগের অধ্যাপক ডা: এন্টোনিও লংগো নতুন পদ্ধতির মাধ্যমে মলদ্বারে ক্ষত না করে, চর্ম অথবা মাংস না কেটে পাইলসের অত্যাধুনিক অপারেশন আবিষ্কার করেন। এই অত্যাধুনিক পদ্ধতি ‘স্ট্যাপলেড হেমোরহাইডেক্টটমি’ অথবা ‘স্ট্যাপলেড হেমোরহাইডোপেক্সি’ নামকরণে ভূষিত। এটি একটি অস্ত্রোপচার পদ্ধতি, যা অস্বাভাবিকভাবে বর্ধিত হিমোরোডিয়াল (পাইলস) টিস্যু অপসারণ করে, তারপর অবশিষ্ট হেমোরোডিয়াল (পাইলস) টিস্যুকে তার স্বাভাবিক শারীরিক অবস্থানে ফিরিয়ে আনে। এতে করে পাইলসের স্বাভাবিক কার্যক্রম ফিরে আসে এবং রোগী উপসর্গমুক্ত হয়। অধ্যাপক ডা: এন্টোনিও লংগো বিশ্বাস করেন যে, পায়ুপথ থেকে বেরিয়ে আসা পাইলসকে ঝুলেপড়া মাংসপিণ্ডের সাথে তুলনা চলে। কোষ্টকাঠিন্য, গর্ভাবস্থা এবং অন্যান্য কারণে উপর্যুপরি আঘাতে পাইলসের পরিপোষক বন্ধনীগুলো দুর্বল হতে শুরু করে সাথে সাথে পাইলসগুলোও ঝুলে পড়তে থাকে। তখন সামান্য ঘর্ষণে পাইলসের মধ্যকার শিরা থেকে রক্ত ঝরা শুরু হয়, যে রক্তের পরিমাণ অল্প থেকে প্রচুর হওয়া অস্বাভাবিক নয়। প্রফেসর লংগো যে পদ্ধতি ব্যবহারে সাফল্য অর্জন করেছেন সে পদ্ধতির বৈজ্ঞানিক ভিত্তি ঝুলেপড়া পাইলসকে পূর্বের স্বাভাবিক অবস্থানে ফিরিয়ে নেয়া এবং পাইলসের রক্ত সঞ্চালনকে বাধাগ্রস্ত করে ফুলে যাওয়া রক্ত নালীগুলোকে শুকিয়ে দেয়া হয়। পাইলসের স্বাভাবিক কার্যকলাপ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয় এবং রোগী উপসর্গমুক্ত হয়।
যে অত্যাধুনিক যন্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে অপারেশন করা হয় সে যন্ত্র মলদ্বারের বাইরে কোনো কাটাছেঁড়া করে না কিন্তু মলদ্বারের ভেতরে পায়ুপথ থেকে প্রায় দেড় ইঞ্চি উপরে একটা অংশ চক্রাকারে কেটে নিয়ে আসে এবং একই সাথে কাটা জায়গার প্রান্ত টাইটেনিয়াম দিয়ে তৈরি সূক্ষ্ম স্টেপল দিয়ে জোড়া দেয়া হয়। যে স্থানে কাটা ও জোড়া দেয়া হয় সেখানে ব্যথার স্নায়ু/পেইন ফাইবার থাকে না, যার ফলে অপারেশনের পর রোগী ব্যথাহীন থাকে অথবা যৎ সামান্য ব্যথা অনুভূত হয়, ঘা শুকানোর প্রশ্ন আসে না এবং রোগী দ্রুত কাজে ফিরে যেতে পারে। অপারেশনের পর রোগী পশ্চিমা দেশগুলোতে একই দিনে বাড়ি চলে যেতে পারে। আমি আমাদের রাহেটিড স্পেসালাইজড হাসপাতালে রোগীর সুবিধার্থে এক বা দুই দিন হাসপাতালে রাখার ব্যবস্থা করি।
লেখক : কলোরেক্টাল সার্জন, আরএ হাসপাতাল, প্লট-১৮/সি, রোড-১০৬, গুলশান-২, ঢাকা। ফোন : ০১৭৮৭৬৯৪৫০৮
পাইলস পায়ুপথ দিয়ে বেরিয়ে আসে কিনা তার ওপর ভিত্তি করে পাইলসকে চার মাত্রায় বিভক্ত করা হয়ে থাকে এবং পাইলস চিকিৎসা বহুলাংশে এই মাত্রা বিভেদের ওপর নির্ভরশীল। পায়ুপথে শুধু রক্তক্ষরণ প্রথম ডিগ্রি/মাত্রা পাইলসের বৈশিষ্ট্য, এই মাত্রার পাইলস কখনই পায়ুপথ দিয়ে বেরিয়ে আসে না। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় মাত্রা পাইলস পায়ুপথ দিয়ে বেরিয়ে আসে মল ত্যাগ করার সময়ে কিন্তু মল ত্যাগ সম্পন্নের পর দ্বিতীয় মাত্রার ক্ষেত্রে নিজ হতেই মলদ্বারের ভেতরে চলে যায় এবং তৃতীয় মাত্রা পাইলসের ক্ষেত্রে রোগীকে অঙ্গুলির চাপ দিয়ে পুনরায় মলদ্বারের ভেতরে প্রতিস্থাপন করতে হয়। চতুর্থ মাত্রার পাইলস সবসময়ই পায়ুপথের বাইরে অবস্থান করে।
প্রথম মাত্রা এবং প্রথমাবস্থায় দ্বিতীয় মাত্রা পাইলস চিকিৎসা : ইনজেকশান ও ব্যান্ড লাইগেশানের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। সেই সাথে খাদ্য অভ্যাস এবং জীবনধারা পদ্ধতি পরিবর্তন করে নরম কিন্তু শক্ত অথবা পাতলা নয় এমন মল ত্যাগ করার অভ্যাস করা।
উপরিউক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে প্রথম মাত্রা এবং প্রথমাবস্থায় দ্বিতীয় মাত্রা পাইলসের চিকিৎসা সম্ভব হতে পারে।
অগ্রবর্তী দ্বিতীয় মাত্রা এবং তৃতীয় ও চতুর্থ মাত্রা পাইলস চিকিৎসা : এই মাত্রার পাইলস শুধু শল্যচিকিৎসায় অপারেশনের মাধ্যমেই আরোগ্য করা সম্ভব হয়।
যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের শল্যচিকিৎসকদ্বয় মিলিগান এবং মরগান ১৯৩৭ সালে এ ধরনের পাইলসের জন্য পায়ুপথের তিন অবস্থানে চর্মসহ অভ্যন্তরীণ অংশ কেটে ফেলে রোগীর আরোগ্য করার পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। দুর্ভাগ্যক্রমে এ অপারেশনের পর প্রচণ্ড ব্যথা হয়, বিশেষভাবে মলত্যাগের পর, ঘা শুকাতে দেড় থেকে দুই মাস সময় লাগে, ঘন ঘন মলত্যাগ এবং অনেক ক্ষেত্রে মলত্যাগের অনুভূতি এলেই দ্রুতভাবে টয়লেটের দিকে ধাবিত হতে হয়। মলত্যাগের পর মনে হয় যে মলাশয় মলমুক্ত হয়নি এবং আবারো মলত্যাগের অনুভূতি অনুভব করা যায়। অনেক সময় অপারেশনের পর দেড় থেকে দুই মাসের আগে কাজে ফিরে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে এবং পরিবার আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়। অপারেশনের জটিলতায় মলদ্বার সঙ্কুচিত হয়ে যেতে পারে অথবা মল আটকে রাখার ক্ষমতা হারিয়ে জীবনযাত্রা দুর্বিষহ পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে।
১৯৯৩ সালে ইতালির প্যালেরমো বিশ্ববিদ্যালয়ের শল্যবিভাগের অধ্যাপক ডা: এন্টোনিও লংগো নতুন পদ্ধতির মাধ্যমে মলদ্বারে ক্ষত না করে, চর্ম অথবা মাংস না কেটে পাইলসের অত্যাধুনিক অপারেশন আবিষ্কার করেন। এই অত্যাধুনিক পদ্ধতি ‘স্ট্যাপলেড হেমোরহাইডেক্টটমি’ অথবা ‘স্ট্যাপলেড হেমোরহাইডোপেক্সি’ নামকরণে ভূষিত। এটি একটি অস্ত্রোপচার পদ্ধতি, যা অস্বাভাবিকভাবে বর্ধিত হিমোরোডিয়াল (পাইলস) টিস্যু অপসারণ করে, তারপর অবশিষ্ট হেমোরোডিয়াল (পাইলস) টিস্যুকে তার স্বাভাবিক শারীরিক অবস্থানে ফিরিয়ে আনে। এতে করে পাইলসের স্বাভাবিক কার্যক্রম ফিরে আসে এবং রোগী উপসর্গমুক্ত হয়। অধ্যাপক ডা: এন্টোনিও লংগো বিশ্বাস করেন যে, পায়ুপথ থেকে বেরিয়ে আসা পাইলসকে ঝুলেপড়া মাংসপিণ্ডের সাথে তুলনা চলে। কোষ্টকাঠিন্য, গর্ভাবস্থা এবং অন্যান্য কারণে উপর্যুপরি আঘাতে পাইলসের পরিপোষক বন্ধনীগুলো দুর্বল হতে শুরু করে সাথে সাথে পাইলসগুলোও ঝুলে পড়তে থাকে। তখন সামান্য ঘর্ষণে পাইলসের মধ্যকার শিরা থেকে রক্ত ঝরা শুরু হয়, যে রক্তের পরিমাণ অল্প থেকে প্রচুর হওয়া অস্বাভাবিক নয়। প্রফেসর লংগো যে পদ্ধতি ব্যবহারে সাফল্য অর্জন করেছেন সে পদ্ধতির বৈজ্ঞানিক ভিত্তি ঝুলেপড়া পাইলসকে পূর্বের স্বাভাবিক অবস্থানে ফিরিয়ে নেয়া এবং পাইলসের রক্ত সঞ্চালনকে বাধাগ্রস্ত করে ফুলে যাওয়া রক্ত নালীগুলোকে শুকিয়ে দেয়া হয়। পাইলসের স্বাভাবিক কার্যকলাপ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয় এবং রোগী উপসর্গমুক্ত হয়।
যে অত্যাধুনিক যন্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে অপারেশন করা হয় সে যন্ত্র মলদ্বারের বাইরে কোনো কাটাছেঁড়া করে না কিন্তু মলদ্বারের ভেতরে পায়ুপথ থেকে প্রায় দেড় ইঞ্চি উপরে একটা অংশ চক্রাকারে কেটে নিয়ে আসে এবং একই সাথে কাটা জায়গার প্রান্ত টাইটেনিয়াম দিয়ে তৈরি সূক্ষ্ম স্টেপল দিয়ে জোড়া দেয়া হয়। যে স্থানে কাটা ও জোড়া দেয়া হয় সেখানে ব্যথার স্নায়ু/পেইন ফাইবার থাকে না, যার ফলে অপারেশনের পর রোগী ব্যথাহীন থাকে অথবা যৎ সামান্য ব্যথা অনুভূত হয়, ঘা শুকানোর প্রশ্ন আসে না এবং রোগী দ্রুত কাজে ফিরে যেতে পারে। অপারেশনের পর রোগী পশ্চিমা দেশগুলোতে একই দিনে বাড়ি চলে যেতে পারে। আমি আমাদের রাহেটিড স্পেসালাইজড হাসপাতালে রোগীর সুবিধার্থে এক বা দুই দিন হাসপাতালে রাখার ব্যবস্থা করি।
লেখক : কলোরেক্টাল সার্জন, আরএ হাসপাতাল, প্লট-১৮/সি, রোড-১০৬, গুলশান-২, ঢাকা। ফোন : ০১৭৮৭৬৯৪৫০৮
No comments