৪৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ের পরও ২১ প্রকল্পে অগ্রগতি শূন্য!
অর্থ
ব্যয় হলেও বাস্তব অগ্রগতি শূন্য ২১ প্রকল্পে। গত অর্থবছরে (২০১৬-১৭) এসব
প্রকল্পের অনুকূলে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৪৬৫ কোটি টাকা। কিন্তু বাস্তব কাজ
কিছুই হয়নি বলে দাবি করেছে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ
(আইএমইডি)। তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের দাবি কোথাও ভুল হয়েছে। তাদের প্রকল্পে
বাস্তব অগ্রগতি রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে গাড়ি চালানো, স্টাফদের বেতন-ভাতা,
চা-পান ও নাশতা খাওয়াসহ নানা কারণেই এ বিপুল অংকের অর্থ ব্যয় হয়ে থাকতে
পারে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তাছাড়া এক্ষেত্রে দুর্নীতির বিষয়টিকেও
এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। ‘২০১৬-১৭ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি
বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা’ প্রতিবেদনটি ২০ ফেব্র“য়ারি চূড়ান্ত করেছে
আইএমইডি। আজ মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনার সামনে উপস্থাপন করা হবে এ প্রতিবেদন। ঢাকায় নিযুক্ত
বিশ্বব্যাংকের লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন সোমবার যুগান্তরকে বলেন,
প্রকল্প অফিস স্থাপন, প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ, কর্মকর্তা নিয়োগ, দরপত্র
প্রক্রিয়াকরণ ইত্যাদি করতেই অনেক বেশি সময় লেগে গেলে এরকম হয়। তাছাড়া
অতিরিক্ত সময়ে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের বেতন-ভাতা, গাড়ি, চা-পানি ও নাশতা
খেতেই অনেক টাকা চলে যায়। কাজের কাজ কিছুই হয় না। এর বাইরেও অনেক সময়
দুর্নীতির কারণে পছন্দের লোক কাজ না পেলে রিটেন্ডারিং করা হয়। এতে
সময়ক্ষেপণ হয়। তাই বলা যায় এটা অবশ্যই অপচয় ও সরকারের গচ্চা। আইএমইডির
প্রতিবেদনে শূন্য বাস্তব অগ্রগতি সম্পন্ন প্রকল্পের একটি তালিকা যুক্ত করা
হয়েছে। এ তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বাংলাদেশ রেলওয়ের মিটারগেজ ও
ব্রডগেজ যাত্রীবাহী বগি সংগ্রহ প্রকল্পটিতে বরাদ্দ ছিল ২৩৯ কোটি ৬০ লাখ
টাকা। এর মধ্যে ব্যয় হয়েছে ৯৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। কিন্তু বাস্তব অগ্রগতি
শূন্য। বাংলাদেশ রেলওয়ের লোকোমোটিভ রিলিফ ক্রেন ও লোকোমোটিভ সিমুলেটর
সংগ্রহ প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দ ছিল ১৪০ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ব্যয়
হয়েছে ৬৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। কিন্তু বাস্তব অগ্রগতি শূন্য। আইএমইডি
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনেক সময় পেমেন্ট দেয়া হলেও মালামাল বুঝে না পাওয়া
পর্যন্ত সেটিকে বাস্তব অগ্রগতি ধরা হয় না। এসব প্রকল্পের ক্ষেত্রে সেরকম
কিছু হতে পারে।
এ প্রসঙ্গে রেল সচিব মো. মোফাজ্জেল হোসেন সোমবার যুগান্তরকে
বলেন, এমনটা হতেও পারে। যেমন মেট্রোরেল প্রকল্পের শুরুতেই আমরা
অ্যাডভান্সড পেমেন্ট হিসেবে হাজার হাজার কোটি টাকা দিয়েছি। কিন্তু তখন
বাস্তব অগ্রগতি শূন্যই ছিল। তবে সাধারণত সব প্রকল্পের ক্ষেত্রে এরকম হয় না।
একেক দাতা সংস্থার একেক রকম নিয়ম থাকে বলে কাজের ক্ষেত্রেও ভিন্নতা হয়।
কিন্তু আমাদের মাসিক সমন্বয় সভায় এরকম কোনো বিষয় আলোচনায় আসেনি। বিদ্যুতের
‘কনস্ট্রাকশন অব নিউ ১৩২/৩৩ কেভি অ্যান্ড ৩৩/১১ কেভি সাব-স্টেশন আন্ডার
ডিপিডিসি’ প্রকল্পটির অনুকূলে গত অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ২৫১ কোটি
টাকা। পুরো অর্থবছরে খরচ হয়েছে বরাদ্দের চেয়ে বেশি ২৫৫ কোটি ৮২ লাখ টাকা।
কিন্তু বাস্তব অগ্রগতি দেখানো হয়েছে শূন্য। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইএমইডির
দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা সঠিক কোনো জবাব দিতে পারেননি। তবে প্রকল্পটির
দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিপিডিসির চিফ ইঞ্জিনিয়ার মাহমুদুল হক সোমবার যুগান্তরের
কাছে দাবি করেন, প্রতিবেদনটিতে ভুল হয়েছে। কেননা তার প্রকল্পে ৪৮ শতাংশ
বাস্তব অগ্রগতি রয়েছে। একই অবস্থা চট্টগ্রাম ওয়াসার বান্ডাল জুড়ি ওয়াটার
সাপ্লাই প্রকল্পে। এ প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দ ছিল ১২ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। এর
মধ্যে ব্যয় হয়েছে ৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। কিন্তু আইএমইডি দাবি করেছে বাস্তব
অগ্রগতি শূন্য। জানতে চাইলে আইএমইডির দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, জমি
অধিগ্রহণের জটিলতায় প্রকল্পটির অগ্রগতি শূন্য। কিন্তু এ প্রকল্পের পরিচালক
মাহবুবুর রহমান বলেন, আইএমইডির প্রতিবেদন ঠিক নয়। কেননা আমি মনে করি এ
প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ৫ শতাংশ। পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা
কামাল সোমবার যুগান্তরকে বলেন, প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের হিসাবের সঙ্গে
আইএমইডির হিসাবের কিছুটা গরমিল হতেও পারে। এটা স্বাভাবিক, কেননা তারা
আমাদের কাছে যে সময় তথ্য পাঠিয়েছিল, তারপরে হয়তো অগ্রগতি হয়েছে। তবে বিষয়টি
ভবিষ্যতে খেয়াল রাখা হবে। টাকা খরচ হলেও বাস্তব অগ্রগতি শূন্য এমন অন্য
প্রকল্পগুলো হচ্ছে, এডিবির অর্থায়নে রেলওয়ের দর্শনা-ঈশ্বরদী-সিরাজগঞ্জ
সেকশনের লুপ ও স্টেশন সম্প্রসারণ প্রকল্প, রেলওয়ের প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তার
জন্য কারিগরি প্রকল্প, রেলওয়ের ৭০টি ডিজেল ইলেকট্রিক ইঞ্জিন সংগ্রহ,
লাকসাম-চিনকি-আস্তানা পর্যন্ত ট্র্যাক উন্নয়ন, রেলওয়ের টঙ্গী-ভৈরব ডাবল
লাইন ট্র্যাক নির্মাণ, ইন্টিগ্রেটেড মেরিটাইম নেভিগেশন সিস্টেম, বাংলাদেশ
আঞ্চলিক অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন উন্নয়ন, মতিঝিলে বিআইডব্লিউটিসির সুউচ্চ ভবন
নির্মাণ, সদরঘাট ও তৃতীয় কর্ণফুলী সেতুর কাছে ক্যাপিটাল ড্রেজিং, কুমার নদ
খনন, মধুমতি নদীর ড্রেজিং, জাতীয় উৎপাদন সংস্থার নিজস্ব ভবন নির্মাণ ও
মিরপুরে বহুতল ভবন নির্মাণ (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্প।
No comments