রোহিঙ্গাদের তাড়াতে ভারতের জম্মুতে আন্দোলন
ভারত
অধিকৃত কাশ্মীরের জম্মুতে বসবাসকারী বেশ কয়েক হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীকে
তাড়াতে সেখানে নতুন করে আন্দোলন শুরু হয়েছে। গত কয়েকদিনে জম্মুর
প্যান্থার্স পার্টির মতো রাজনৈতিক দল, বজরং দলের মতো উগ্র হিন্দু সংগঠন বা
সাবেক সেনা-কর্মীদের সংগঠন এই দাবিতে আলাদাভাবে বিক্ষোভ করেছে। একই দিন
জম্মুর চেম্বার অব কমার্সও রোহিঙ্গাদের তাড়ানোর জন্য খবরের কাগজে
পাতাজোড়া বিজ্ঞাপন দিয়েছে। গত মাসে জম্মুর কাছে একটি সেনা-শিবিরে জঙ্গী
হামলার পর থেকেই রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নতুন করে এই অভিযান শুরু হয়েছে,
যদিও রোহিঙ্গারা বলছেন জম্মুতে তারা আসলে রাজনৈতিক চক্রান্ত আর অপপ্রচারের
শিকার। হোলির পরদিন রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর দাবিতে জম্মুর
প্রাণকেন্দ্রে বিক্ষোভ দেখিয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালী দল প্যান্থার্স
পার্টি। দলের নেতা বলওয়ন্ত সিং মানকোটিয়া বলছিলেন, ‘জম্মুর সব সংগঠন ও
সুশীল সমাজ এখন একমত যে রোহিঙ্গাদের যত দ্রুত সম্ভব ডিপোর্ট করতে হবে। তারা
শুধু নিরাপত্তার জন্যই হুমকি নয়, আমাদের তরুণ সমাজকে মাদক সরবরাহ করছে -
মানব পাচার ও আরও নানা অপরাধেও জড়িয়ে পড়ছে।’ আর শুধু রোহিঙ্গারাই নন,
জম্মুতে আক্রমণের নিশানায় এখন কথিত বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীরাও। বজরং দলের
নেতা রাকেশ শর্মার কথায়, ‘কেন্দ্রীয় সরকারও এটা সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা
দিয়ে মেনে নিয়েছে যে রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশীরা দেশের জন্য বিপজ্জনক। আমাদের
বিশ্বাস, গত মাসের ১০ তারিখে সানজুয়ান সেনা ছাউনিতে হামলার ঘটনাতেও
রোহিঙ্গাদের হাত ছিল।’
ওই হামলার পর ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা
সীতারামনও বলেছিলেন, জইস-ই-মুহাম্মদের জঙ্গীরা ওই আক্রমণ চালানোর সময়
‘সম্ভবত স্থানীয় কিছু মানুষের সাহায্য পেয়েছিল। এর পরই জম্মুতে অনেকে ধরে
নিয়েছেন, এই 'স্থানীয়'রা রোহিঙ্গা শরণার্থী ছাড়া কেউ নয়। জম্মুতে
সাবেক সেনা সদস্যদের মিছিল থেকেও দাবি উঠেছে, সেনা ক্যাম্পের আশেপাশে
রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশীদের কিছুতেই রাখা চলবে না। সেনাবাহিনীর সাবেক
প্যারাট্রুপার বীরবাহাদুর সিংয়ের কথায়, ‘এরা বাহিনীর সুরক্ষার জন্য
বিপজ্জনক - কারণ তারা স্লিপার সেলের মতো কাজ করছে। এদের যত তাড়াতাড়ি
সম্ভব নিজের দেশে ফেরত পাঠানো ছাড়া উপায় নেই।’ এর মধ্যে জম্মু চেম্বার অব
কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজও কাগজে বিরাট বিজ্ঞাপন দিয়ে বলেছে, ওই
অঞ্চলের শান্তি ও সুস্থিরতার জন্যই জম্মুকে রোহিঙ্গামুক্ত করতে হবে। গোটা
শহর জুড়েও রোহিঙ্গা তাড়ানোর দাবিতে পোস্টার পড়েছে। আর নানা দিক থেকে এই
প্রবল চাপের মুখে আরও কোণঠাসা অবস্থায় পড়েছেন জম্মুর রোহিঙ্গারা।
দিল্লিতে তরুণ রোহিঙ্গা ছাত্র আলি জোহর বিবিসিকে বলছিলেন, ‘গত দুই বছর ধরেই
এ জিনিস চলছে, তবে এখন তার তীব্রতা আরও বেড়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো পর্যন্ত
কাগজে রোহিঙ্গা তাড়াতে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে।’ ‘জম্মুতে আমার সব বন্ধুবান্ধব
ভয়ে ফোন পর্যন্ত বন্ধ করে রেখেছে। সেখানে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খুলে আমাদের
বিরুদ্ধে যা-তা বলা হচ্ছে - এমন কী রোহিঙ্গারা মানুষখেকো, জম্মুর বাচ্চাদের
খেয়ে নেবে - এ সব বলাও বাকি থাকছে না!’ রোহিঙ্গাদের ভারত থেকে বিতাড়নের
বিষয়টি এখনও ভারতের সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। কিন্তু জম্মু যেন তার আগেই
ঠিক করে ফেলেছে, সেখানকার রোহিঙ্গাদের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলে অন্তত তাদের
জম্মু-ছাড়া করতেই হবে!
No comments