সড়ক নির্মাণে দুর্নীতি
সড়ক
ও জনপথ বিভাগের কাজে আর্থিক অনিয়মের উৎস খুঁজে বের করতে দুর্নীতি দমন
কমিশনের (দুদক) প্রাতিষ্ঠানিক দল যে প্রতিবেদন তৈরি করেছে, তাতে নিম্নমানের
নির্মাণসামগ্রী (ইট, বালু, বিটুমিন, সিমেন্ট) দিয়ে সড়ক নির্মাণ, কাজ শেষ
হওয়ার আগে বিল প্রদান, টেন্ডার নিয়ে কারসাজি, ঘুষ গ্রহণ ও নজরদারির
দুর্বলতা বিশেষভাবে শনাক্ত করা হয়েছে। তবে এতে আর্থিক অনিয়মের পুরো চিত্র
উঠে এসেছে বলা যাবে না। প্রতিবেদনে ঠিকাদার ও উন্নয়ন প্রকল্পের দায়িত্বে
নিয়োজিত ব্যক্তি তথা প্রকৌশলীদের যোগসাজশের কথা বললেও কারা ঠিকাদারি পায়,
সে কথা উল্লেখ করা হয়নি। ঠিকাদার ও উন্নয়ন প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত
ব্যক্তিদের অলিখিত আঁতাতের কথা সবার জানা। আর সেই ঠিকাদার রাজনৈতিক
ক্ষমতাবলয়ের লোক হলে তো তিনি আইনকানুন মানার প্রয়োজন বোধ করেন না। কেবল সড়ক
নয়, জল–স্থলের যেখানেই উন্নয়নকাজ হচ্ছে, সেসবের ঠিকাদারি পাচ্ছেন
ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। সব সরকারের আমলেই এটি হয়ে আসছে। কাজের অভিজ্ঞতা
থাকুক বা না-থাকুক, ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের কাজটি পাইয়ে দিতে হয়। এ
অবস্থায় উন্নয়নকাজে ন্যূনতম সততা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি আশা করা যায় না।
প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, দুদকের প্রাতিষ্ঠানিক টিম বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে
আলোচনা, অধিদপ্তরের নথি পর্যালোচনা, সরেজমিন বিভিন্ন কার্যক্রম পরিদর্শন,
গণমাধ্যম থেকে প্রাপ্ত তথ্য এবং কমিশনের গোয়েন্দা উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্যাদি
পর্যালোচনা করে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এতে দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী কাজ
বাস্তবায়ন না করা, প্রভাবশালীদের/ঠিকাদারের চাপে এবং পরস্পর যোগসাজশে
একশ্রেণির প্রকৌশলী/কর্মকর্তা সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, সিন্ডিকেট পদ্ধতিতে
ঠিকাদার নিয়োগ, কাজ পাওয়ার জন্য প্রভাবশালী ব্যক্তি, পরামর্শক সংস্থা,
সরকারি কর্মকর্তাদের উৎকোচ দেওয়ার মতো যে ভয়াবহ আর্থিক অনিয়মের পাশাপাশি
প্রতিকারে ২১ দফা সুপারিশও করা হয়েছে। কিন্তু দুদকের প্রতিবেদনের ঘাটতি হলো
তারা সড়ক বিভাগের অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরলেও এর কুশীলবদের
নাম-ঠিকানা ঊহ্য রেখেছে। দুদক যদি দুর্নীতিবাজদের শনাক্তই করতে না পারে,
তাহলে এসব প্রতিবেদন বা সুপারিশ কোনো কাজে আসবে না। আর পাঁচটি সরকারি
প্রতিষ্ঠানের মতো তারা প্রতিবেদন তৈরি কিংবা সুপারিশ পেশ করে দায়িত্ব শেষ
করতে পারে না। প্রতিবেদনের আলোকে সড়ক বিভাগে যেসব দুর্নীতি হয়েছে, সেসব
নিয়ে সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই হবে।
উন্নয়নের নামে সরকারি তথা জনগণের অর্থের অপচয় বন্ধ করতেই হবে। কেবল সড়ক নয়,
সরকারের প্রতিটি বিভাগের উন্নয়নকাজেই এ রকম আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতি
রয়েছে। অন্যান্য বিভাগ সম্পর্কেও প্রতিবেদন তৈরি এবং তা জনগণের সামনে
প্রকাশ করা হোক।
No comments