পাবলিক নুইসেন্স by রায়হান উদ্দিন
জনদুর্ভোগ
নিয়ে বিশ্বের উন্নত দেশে যে আইন অনুসৃত হচ্ছে, তা দেখলে আশ্চর্য হতে হয়।
যেমন : সুইজারল্যান্ডে রাত ১০টার পর এক বহুতল ভবনের গোসলখানায় পানির আওয়াজে
অন্য ফ্ল্যাটের মানুষের ঘুমের অসুবিধা হওয়ায় ফ্ল্যাটের মালিকের বিরুদ্ধে
মামলা হয়েছে। বিষয়টি আমাদের দেশে বললে অনেকে হেসে উড়িয়ে দেবেন। প্রতিনিয়ত
দেখি, ভেজাল খাবারের দোকানে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে কারাদণ্ড, জরিমানা করা
হচ্ছে। গাড়ির আওয়াজ, হর্ন, উচ্চমাত্রার শব্দযন্ত্র যা বিভিন্ন সভা সমিতিতে,
রাজনৈতিক মঞ্চে, রাস্তাঘাটে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে এবং সজোরে আওয়াজ করে
মানুষকে অসুস্থ করে তুলছে। পিক আওয়ারে রাস্তাঘাট বন্ধ করে গাড়ি-ঘোড়া চলতে
না দিয়ে, কয়েক কিলোমিটারজুড়ে মাইক লাগিয়ে মানুষের চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি করে
কিভাবে জনগণকে সেবা করার দাবি করতে পারে! হতে পারে একজন মৃত্যুপথযাত্রী
রোগী রাস্তায় প্রতিবন্ধকতার জন্য অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে হসপিটালে যেতে না
পারায় পথেই প্রাণ হারাচ্ছেন। আপনি ব্যাবসা করবেন। রাত ১০টায় দোকান বন্ধ করে
কোনো অনুষ্ঠানে যাবেন; কিন্তু এ জন্য বিকেল ৪টা থেকে চলাচলের রাস্তা বন্ধ
করবেন। এটা কী করে হয়? এতে কি মানুষের ক্ষতি হচ্ছে না! কিছু ওয়াজ মাহফিল
শুধু নয়; রাজনীতির মঞ্চের কথা বিশেষভাবে বলছি। তারা মানুষকে সুন্দর সুন্দর
কথা শোনান, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আগামী প্রজন্ম গড়ে তোলার কথা বলেন; কিন্তু
এভাবে রাস্তার পর রাস্তায় মাইক লাগিয়ে শব্দ যন্ত্রণা সৃষ্টি করে কি
মানুষকে সচেতন নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা যায়? হতে পারে, আপনার ছেলেও একজন
পরীক্ষার্থী। আপনার বৃদ্ধ মা-বাবা অসুস্থ। তাদের কানের কাছে এভাবে ‘শব্দ
বোমা’ লাগিয়ে কিভাবে কল্যাণ করা হয়। আমাদের কক্সবাজারে একটাই রাস্তা। কোনো
বিকল্প রাস্তা নেই। তদুপরি রাস্তার পাশে কোনো ভালো পার্কিং সাইট নেই। যে
রাস্তায় উন্নয়নের কাজ চলছে, জনসাধারণের ভোগান্তি হলেও মানুষ তা নীরবে মেনে
নিয়েছে।
রাস্তার দু’পাশে এলোমেলো স্ল্যাবগুলো তারা চাইলে সুন্দর করে বিছিয়ে
দিয়ে মানুষের হাঁটার ফুটপাথ তৈরি করে দিতে পারে অথচ তা নেই। গরু, মানুষ,
ছাগল, গাড়িÑ সব একসাথে একটি রাস্তার ওপর দিয়ে হাঁটা চলা করছে। রাস্তাঘাটে
এভাবে নিয়ন্ত্রণবিহীন শব্দবাণিজ্য জেলা প্রশাসক চাইলেই বন্ধ করতে পারেন।
যেমনটি, কয়েক বছর আগে পিকনিকে আসা গাড়ির মাইক বাজানো প্রশাসন বন্ধ করতে
নিয়ম বেঁধে দেয়ার পর তা যথারীতি অনুসৃত হয়েছিল; কিন্তু প্রশাসনের পালাবদলে
এসব কিছুই অব্যাহত থাকে না। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ কলকাতায় পূজার সময়
শব্দযন্ত্রে আওয়াজ কত ডেসিবেল, তা দেখার জন্য পুলিশ থাকে সচেতন। রাস্তায়
ভারী যানবাহন কতটা ভার নিয়ে চলাচল করবে সে বিষয়ে সরকারকে ওয়াকিবহাল হতে
হবে। রাস্তাঘাটে সিসি ক্যামেরা, ভারী ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য পরীক্ষণযন্ত্র,
বার কোড রিডারÑ সব কিছু এ দেশে আছে। শব্দযন্ত্র নিয়ন্ত্রক না থাকার কথা নয়।
গাড়ির হর্ন নিয়ে ট্রাফিক অনেক কিছু করেও কিছু করতে পেরেছে বলে মনে হয় না।
বিভিন্ন হাইওয়েতে ব্যবহারের কথা বলে শহরের ছোট সরু গলি থেকে যেকোনো সড়কে
অবাধে বাজানো হয় এই হর্ন। মূল কারণ হলো সচেতনতার অভাব। বিশ্বস্বাস্থ্য
সংস্থার মতে, ঢাকার কোনো কোনো ব্যস্ত সড়কে শব্দের মাত্রা ৬০ থেকে ৮০
ডেসিবেল, হাইড্রলিক হর্নে তা ৯৫ পর্যন্ত হতে পারে। সাধারণত, ৬০ ডিবি শব্দ
সাময়িকভাবে একজন মানুষকে বধির করতে পারে এবং ১০০ ডেসিবেল শব্দ একজন মানুষকে
সম্পূর্ণভাবে বধির করে দিতে সক্ষম।
No comments