যেভাবে ত্রিপুরায় উড়লো গেরুয়া পতাকা by মাহমুদ ফেরদৌস
ভারতের
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসেন দেশ থেকে ‘অবৈধ
বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’ খেদানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে। ২০১৬ সালে ঠিক এই
প্রচারণাতেই তার দল বিজেপি আসামে কিস্তিমাত করে দেয়। দুই বছর পর ফের এই
দাওয়াই কাজে লাগিয়ে ত্রিপুরার লাল দুর্গের পতন ঘটিয়েছে দলটি। অন্তত ভারতের
ইকোনমিস্ট টাইমস পত্রিকার এক বিশ্লেষণে এই কথাই বলা হয়েছে। কিন্তু,
ত্রিপুরার বেশিরভাগ ভোটারই বাইরে থেকে সেখানে বসতি গড়েছেন। একসময় এই
রাজ্যটি ছিল উপজাতি অধ্যুষিত। পরে পূর্ব বাংলার বাঙালিরা সেখানে গিয়ে
সংখ্যাগুরু বনে যান। তাহলে প্রশ্ন হলো, ত্রিপুরার ভোটারদের বেশিরভাগই যদি
হন বাঙালি, তাহলে সেখানে কীভাবে ‘বাঙাল-খেদাও’ প্রচারণা ব্যবহার করে সফল
হলো বিজেপি? উত্তরটা সোজা। কেন্দ্রীয় সরকার বেশ কিছুদিন আগে ধর্মের
ভিত্তিতে দেশের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করেছে। হিন্দু ধর্মীয় অভিবাসীদেরকে
নির্যাতিত আখ্যা দিয়ে তাদের নাগরিকত্ব দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অপরদিকে
মুসলিম অভিবাসীদেরকে অনুপ্রবেশকারী আখ্যা দেয়া হয়েছে। ত্রিপুরার
সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটার বাঙালি হলেও, তারা কিন্তু হিন্দু ধর্মাবলম্বী। ফলে
বিজেপির ধর্ম কার্ড ভালোই কাজে লেগেছে ত্রিপুরায়।
পত্রিকাটি আরো লিখেছে, দেশভাগের পরে ও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় হিন্দু বাঙালিরা ব্যাপক হারে ত্রিপুরায় প্রবেশ করেন। এ কারণে রাজ্যটিতে স্থানীয় উপজাতিরা হয়ে পড়েন সংখ্যালঘু। কিন্তু তারপরও উপজাতি অধ্যুষিত ২০টি সংরক্ষিত আসন ছাড়া এই রাজ্যে ক্ষমতায় আসা সম্ভব নয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু বাঙালিদেরকে না হয় মানিয়ে নিলো বিজেপি, উপজাতিদেরকে কীভাবে মানালো দলটি?
উপজাতি ভোটারদের আকৃষ্ট করতে বিজেপি জোট বাঁধে ইন্ডিজিনাস পিপল’স ফ্রন্ট অব ত্রিপুরার (আইপিএফটি) সঙ্গে। এই দলটি দীর্ঘদিন ধরে উপজাতিদের জন্য আলাদা রাজ্য সৃষ্টির দাবিতে আন্দোলন করছে। আবার এই দলটির সঙ্গে জোট বাঁধা নিয়ে বাঙালিরা ক্ষিপ্ত হতে পারে আশঙ্কায় বিজেপি আলাদা উপজাতি রাজ্য প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়নি। আবার আইপিএফটির নেতারা তাদের উপজাতি সমর্থকদেরকে বোঝান যে, আলাদা রাজ্য প্রতিষ্ঠার দাবি বিজেপি মানেনি বটে। কিন্তু প্রত্যাখ্যানও করেনি। এটিও তো এক ধরনের অগ্রগতি। আবার বাঙালি হিন্দু অভিবাসীদের নাগরিকত্ব দেয়ার জন্য আইন সংশোধনী নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিল উপজাতিরা। তারা হিন্দু বা মুসলমান কোনো বাঙালিকেই নাগরিকত্ব দেয়ার বিরোধী। এক্ষেত্রে ভিন্ন কৌশলের আশ্রয় নেয় বিজেপি। দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা উপজাতিদের বোঝান, ওই আইন সংশোধনের কারণে ত্রিপুরার খুব বেশি বাঙালি হিন্দু যে নাগরিকত্ব পাবেন, তা নয়।
একই বিশ্বাস ছিল শাসক বাম গোষ্ঠীরও। তাদের ধারণা ছিল, আইন সংশোধনের ফলে রাজ্যের জনমিতিতে তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না। তা সত্য। কিন্তু হিন্দু বাঙালিরা কিন্তু ওই সংশোধনী পছন্দ করেছিল।
এভাবেই রাজ্যের জটিল জনতাত্ত্বিক সমীকরণকে মাথায় রেখে খুব সতর্কতার সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রেখে চাল দিয়েছে বিজেপি। এখন এ রাজ্যে বিজেপি-আইপিএফটি জোট ক্ষমতায়। বাম দল গেল ছিঁটকে। কিন্তু সবচেয়ে বড় ক্ষতি হলো দেশের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের। গত নির্বাচনে ৩৭ শতাংশ ভোট পেয়ে দলটি হয়েছিল রাজ্যের বিরোধী দল। কিন্তু এবার যেন ত্রিপুরা থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে কংগ্রেস। মাত্র ১.৮ শতাংশ ভোট পেয়েছে দলটি। বলার অপেক্ষা রাখে না, একটি আসনও ভাগ্যে জোটেনি কংগ্রেসের।
নিজেদের নির্বাচনী প্রচারণায় শাসক বাম গোষ্ঠীর দাবি ছিল, উপজাতিদের জন্য অন্য যেকোনো দলের চেয়ে বেশি করেছে তারা। কিন্তু উপজাতি ভোটাররা এসব আমলে নেননি। তাদের কাছে বিজেপির আলঙ্কারিক কিছু পদক্ষেপকে বেশি মনে ধরেছিল। যেমন, ভারত মাতা হিসেবে বিজেপি একজন উপজাতি নারীকে উপস্থাপন করেছিল। পাশাপাশি, ত্রিপুরার সর্বশেষ সার্বভৌম রাজা বীর বিক্রমকে ভারতরত্ন খেতাবও দেয় বিজেপি সরকার। এসব পদক্ষেপ স্থানীয় উপজাতিরা খুবই ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করে। অথচ, বাম সরকার কিন্তু ত্রিপুরার সাবেক মাণিক্য রাজবংশকে বড় করে কখনই দেখায় নি।
নির্বাচনী প্রচারণায় বড় পরিবর্তন গড়ে দেয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির চারটি জনসভা। মাঠে ছিলেন বিজেপি প্রেসিডেন্ট অমিত শাহ। ছিলেন রাম মাধব ও সুনীল দেওধরের মতো নেতারা, যারা উত্তরপূর্বের রাজনীতি ভালো বোঝেন।
সব কিছু মিলিয়ে উপজাতি অধ্যুষিত ১০টি আসনেই জয়লাভ করে বিজেপি। ৯টিতে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন বিজেপির প্রার্থীরা। অবশিষ্ট আসনটির ফল স্থগিত আছে। সেটিও বিজেপির পক্ষে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এভাবে মোট ৪৩টি আসনে জয়লাভ করেছে বিজেপি। অথচ, গত নির্বাচনে একটি আসনও জোটেনি তাদের।
পত্রিকাটি আরো লিখেছে, দেশভাগের পরে ও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় হিন্দু বাঙালিরা ব্যাপক হারে ত্রিপুরায় প্রবেশ করেন। এ কারণে রাজ্যটিতে স্থানীয় উপজাতিরা হয়ে পড়েন সংখ্যালঘু। কিন্তু তারপরও উপজাতি অধ্যুষিত ২০টি সংরক্ষিত আসন ছাড়া এই রাজ্যে ক্ষমতায় আসা সম্ভব নয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু বাঙালিদেরকে না হয় মানিয়ে নিলো বিজেপি, উপজাতিদেরকে কীভাবে মানালো দলটি?
উপজাতি ভোটারদের আকৃষ্ট করতে বিজেপি জোট বাঁধে ইন্ডিজিনাস পিপল’স ফ্রন্ট অব ত্রিপুরার (আইপিএফটি) সঙ্গে। এই দলটি দীর্ঘদিন ধরে উপজাতিদের জন্য আলাদা রাজ্য সৃষ্টির দাবিতে আন্দোলন করছে। আবার এই দলটির সঙ্গে জোট বাঁধা নিয়ে বাঙালিরা ক্ষিপ্ত হতে পারে আশঙ্কায় বিজেপি আলাদা উপজাতি রাজ্য প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়নি। আবার আইপিএফটির নেতারা তাদের উপজাতি সমর্থকদেরকে বোঝান যে, আলাদা রাজ্য প্রতিষ্ঠার দাবি বিজেপি মানেনি বটে। কিন্তু প্রত্যাখ্যানও করেনি। এটিও তো এক ধরনের অগ্রগতি। আবার বাঙালি হিন্দু অভিবাসীদের নাগরিকত্ব দেয়ার জন্য আইন সংশোধনী নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিল উপজাতিরা। তারা হিন্দু বা মুসলমান কোনো বাঙালিকেই নাগরিকত্ব দেয়ার বিরোধী। এক্ষেত্রে ভিন্ন কৌশলের আশ্রয় নেয় বিজেপি। দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা উপজাতিদের বোঝান, ওই আইন সংশোধনের কারণে ত্রিপুরার খুব বেশি বাঙালি হিন্দু যে নাগরিকত্ব পাবেন, তা নয়।
একই বিশ্বাস ছিল শাসক বাম গোষ্ঠীরও। তাদের ধারণা ছিল, আইন সংশোধনের ফলে রাজ্যের জনমিতিতে তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না। তা সত্য। কিন্তু হিন্দু বাঙালিরা কিন্তু ওই সংশোধনী পছন্দ করেছিল।
এভাবেই রাজ্যের জটিল জনতাত্ত্বিক সমীকরণকে মাথায় রেখে খুব সতর্কতার সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রেখে চাল দিয়েছে বিজেপি। এখন এ রাজ্যে বিজেপি-আইপিএফটি জোট ক্ষমতায়। বাম দল গেল ছিঁটকে। কিন্তু সবচেয়ে বড় ক্ষতি হলো দেশের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের। গত নির্বাচনে ৩৭ শতাংশ ভোট পেয়ে দলটি হয়েছিল রাজ্যের বিরোধী দল। কিন্তু এবার যেন ত্রিপুরা থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে কংগ্রেস। মাত্র ১.৮ শতাংশ ভোট পেয়েছে দলটি। বলার অপেক্ষা রাখে না, একটি আসনও ভাগ্যে জোটেনি কংগ্রেসের।
নিজেদের নির্বাচনী প্রচারণায় শাসক বাম গোষ্ঠীর দাবি ছিল, উপজাতিদের জন্য অন্য যেকোনো দলের চেয়ে বেশি করেছে তারা। কিন্তু উপজাতি ভোটাররা এসব আমলে নেননি। তাদের কাছে বিজেপির আলঙ্কারিক কিছু পদক্ষেপকে বেশি মনে ধরেছিল। যেমন, ভারত মাতা হিসেবে বিজেপি একজন উপজাতি নারীকে উপস্থাপন করেছিল। পাশাপাশি, ত্রিপুরার সর্বশেষ সার্বভৌম রাজা বীর বিক্রমকে ভারতরত্ন খেতাবও দেয় বিজেপি সরকার। এসব পদক্ষেপ স্থানীয় উপজাতিরা খুবই ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করে। অথচ, বাম সরকার কিন্তু ত্রিপুরার সাবেক মাণিক্য রাজবংশকে বড় করে কখনই দেখায় নি।
নির্বাচনী প্রচারণায় বড় পরিবর্তন গড়ে দেয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির চারটি জনসভা। মাঠে ছিলেন বিজেপি প্রেসিডেন্ট অমিত শাহ। ছিলেন রাম মাধব ও সুনীল দেওধরের মতো নেতারা, যারা উত্তরপূর্বের রাজনীতি ভালো বোঝেন।
সব কিছু মিলিয়ে উপজাতি অধ্যুষিত ১০টি আসনেই জয়লাভ করে বিজেপি। ৯টিতে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন বিজেপির প্রার্থীরা। অবশিষ্ট আসনটির ফল স্থগিত আছে। সেটিও বিজেপির পক্ষে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এভাবে মোট ৪৩টি আসনে জয়লাভ করেছে বিজেপি। অথচ, গত নির্বাচনে একটি আসনও জোটেনি তাদের।
No comments