খোঁজা হচ্ছে ফয়জুরের নেটওয়ার্ক by ওয়েছ খছরু
অনুশোচনা
নেই ফয়জুরের। স্বাভাবিক তার কথাবার্তা। মুখ থেকে তথ্য বের করা যাচ্ছে না।
হাসপাতালের বেডে শুয়ে সে বার বার জেরার মুখে পড়লেও সহজেই মুখ খুলছে না।
গতকালও ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি ফয়জুরকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সিলেটের পুলিশ, গোয়েন্দা ছাড়াও ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের একটি দল তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। নানাভাবে তার কাছ থেকে তথ্য আদায়ের চেষ্টা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে পুলিশ ফয়জুরের সম্পর্কে সকল তথ্য এরই মধ্যে জোগাড় করেছে। সব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। পিতা-মাতাকে পুলিশি হেফাজতে রেখেও চলছে জিজ্ঞাসাবাদ। ফয়জুর বার বার বলছে- সে নিজ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে।
সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার গোলাম কিবরিয়া তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন ফয়জুর চিকিৎসাধীন থাকায় তাকে খুব বেশি জিজ্ঞাসাবাদ করা যাচ্ছে না। কোনো গোষ্ঠীর সঙ্গে তার যোগাযোগ আছে কিনা সেটি এখন খোঁজা হচ্ছে। সে সুস্থ হলে তাকে পুলিশি হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর হামলাকারী ফয়জুর রহমান ওসমানী হাসপাতালের ৩য় তলার ২৭ নম্বর কেবিনে চিকিৎসাধীন। রোববার বিকালে মহানগর পুলিশ তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে। এরপর থেকে ওই কেবিনে পুলিশ, র্যাবের পাহারায় চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তার পুরো মাথা ব্যান্ডেজ করা। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকলেও তার ভেতরে কোনো অনুশোচনার ভাব লক্ষ্য করা যায়নি। স্বাভাবিকভাবে রয়েছে সে। কথা বলছে না।
হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, গতকাল সকালের দিকে এক দফা সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়া সহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা হাসপাতালে যান। তারা গিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। এরপর ঢাকা থেকে আসা কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের টিমের সদস্যরাও তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। গোয়েন্দাদের মুখোমুখি হয় সে। কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদে সে নতুন কোনো তথ্য দেয়নি। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, একজন জঙ্গির আচরণ যেমন হয় সেভাবেই সে আচরণ করছে। জিজ্ঞাসাবাদে সে অনেক কিছুই সতর্কতার সঙ্গে এড়িয়ে যাচ্ছে। এ কারণে এখন ঘটনাকেন্দ্রিক অনেক কিছুরই খোঁজ নেয়া হচ্ছে। ফয়জুরের বাড়ি শেখপাড়া শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেশি দূরে নয়। পুলিশ জানিয়েছে, বিকালে ফয়জুর তার শেখপাড়াস্থ বাড়ি থেকে বের হয় বলে পুলিশকে তথ্য দিয়েছে। সকালের দিকে সে একবার গিয়েছিল। এরপর বিকালের দিকে যায়। গিয়ে মঞ্চের ঠিক পেছনে প্রফেসর ড. জাফর ইকবালের কাছাকাছি এলাকায় অবস্থান নেয়। ওই সময় তোলা প্রায় সব ছবিতেই ফয়জুরের চেহারা রয়েছে। হামলার আগে সে কয়েকবার ওই এলাকা রেকি করেছিল বলে জানায় পুলিশ সূত্র।
এদিকে ঘটনার দিন মুক্তমঞ্চে হামলাকারী ফয়জুরের সঙ্গে আরো কয়েকজন ছিল বলে ধারণা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্ররা। ওই দিনের ছবি পর্যালোচনা করে তারা জানিয়েছেন আরো একজন অজ্ঞাত যুবক মঞ্চে ছিল। ওই যুবক কে- সেটি তারা চিহ্নিত করতে পারেননি। ঘটনার পরপরই গোলচত্বরে দাঁড়িয়ে থাকা মোটরসাইকেলে এক যুবককে চলে যেতে দেখেছেন অনেকেই। ওই যুবকের কোনো সন্ধান মিলেনি। মহানগর পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়া জানিয়েছেন সব বিষয় মাথায় নিয়ে তদন্ত এগুচ্ছে। বিশেষ করে ফয়জুরের সঙ্গে কার কার যোগাযোগ রয়েছে সেটিও খোঁজা হচ্ছে। মোবাইল ফোনে কার কার সঙ্গে কথা বলেছে সেটিও দেখা হচ্ছে। তিনি জানান, ঘটনার পর থেকে ফয়জুর ছাড়াও আরো ৪ জনকে পুলিশি হেফাজতে নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ফয়জুরের পিতা হাফিজ আতিকুর রহমান ও মাতা আমিনা বেগমকে রোববার রাতে নগরীর মদিনা মার্কেট থেকে আটক করা হয়েছে। তাদের হেফাজতে রাখা হয়েছে। আটক কিংবা গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি। একজনকে আটক দেখানো হয়েছে। আটক ব্যক্তি কে- সেটি পরিষ্কার করে বলেননি পুলিশ কমিশনার। মা-বাবা ছাড়াও পুলিশ ইতিমধ্যে ফয়জুরের মামা ফজলুর রহমান, চাচা আবদুল কাহেরকেও আটক করে। এর বাইরে জিন্দাবাজারের কম্পিউটার দোকানের মালিককেও আটক করা হয়েছিল। তাদেরকেও পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে। তবে তাদের কাছ থেকে ফয়জুরের তথ্য খুব একটা পাওয়া যায়নি। পুলিশ এখন ফয়জুরের নেটওয়ার্কের সন্ধানে রয়েছে। তার সহযোগী কিংবা মদতদাতাদের খোঁজ নেয়া হচ্ছে। এদিকে গতকাল ঢাকা থেকে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের একটি দল সিলেটে এসে পৌঁছে। তারাও প্রাথমিকভাবে ফয়জুরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। পাশাপাশি তারা ঘটনার অনুসন্ধান করছেন। ঘটনার পর শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরাও কাজ শুরু করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শক্তি এ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে কিনা সেটি তারা খুঁজছেন। কারণ এর আগে শাবি’র ১১ ছাত্র জঙ্গি তৎপরতায় সম্পৃক্ত রয়েছে বলে জানা গিয়েছিল। বিভিন্ন সময় শাবি’র কয়েকজন শিক্ষার্থীকেও জঙ্গি তৎপরতায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ফরিদ উদ্দিন আহমদ জানিয়েছেন, জঙ্গিবাদ নির্মূলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। জঙ্গিবাদে কারও সংশ্লিষ্টতা থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
গতকালও উত্তাল শাবি: আমাদের শাবি প্রতিনিধি আরাফ আহমদ জানিয়েছেন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বিশিষ্ট লেখক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর হামলার প্রতিবাদে ও বিচারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ কর্মবিরতি পালন করেছে। শাবি শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে সোমবার সকাল ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত কালোব্যাজ ধারণ করে প্রশাসনিক ভবন-২ এর সামনে অবস্থান করে তারা এই কর্মবিরতি পালন করে। এসময় ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. ইলিয়াস উদ্দিন বিশ্বাস একাত্মতা পোষণ করে অবস্থান কর্মসূচিতে যোগদান করেন। অবস্থান কর্মসূচি শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ হাসানুজ্জামানের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক সহযোগী অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমেদের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. ইলিয়াস উদ্দিন বিশ্বাস, আইকিএসির পরিচালক অধ্যাপক আব্দুল আওয়াল বিশ্বাস, অধ্যাপক রাশেদ তালুকদার, অধ্যাপক ড. কবির হোসেন, অধ্যাপক সৈয়দ সামসুল ইসলাম, অধ্যাপক কামাল আহমেদ চৌধুরী, অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. রেজা সেলিম, অধ্যাপক ড. আশরাফ উদ্দীন, অধ্যাপক ড. আবদুল আউয়াল বিশ্বাস, অধ্যাপক ড. আতি উল্লাহ, অধ্যাপক ড. সৈয়দ আশরাফুর রহমান, অধ্যাপক ফারুক উদ্দীন প্রমুখ। শিক্ষকদের কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি শেষে আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় র্যালি করার ঘোষণা দেয়া হয়। ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সীমানা প্রাচীরের নির্মাণকাজ শুরু হবে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য কাজ করছি। এই ঘটনার কারণ এবং সামনে যাতে আর এমন ঘটনা না ঘটে সে জন্য তদন্ত কমিটি কাজ করছে।’ সমিতির সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ হাসানুজ্জামান বলেন, ‘মুক্তবুদ্ধি ও স্বাধীন চিন্তা- চেতনা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার এক প্রতীক হচ্ছেন ড. জাফর ইকবাল। তার কারণে বাংলাদেশের বাচ্চারা আজকে স্কুলের পাঠ্যসূচি থেকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বঙ্গবন্ধুর কথা জানতে পারছে। তাকে আঘাত করার মানে হচ্ছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার উপর আঘাত। আমাদের প্রধান দাবি হচ্ছে এই হামলার বিচার করতে হবে, মুক্ত বুদ্ধি ও চিন্তা চর্চার সুযোগ দিতে হবে, এর পথ রুদ্ধ করা যাবে না। এখানে কোনো অপশক্তির জায়গা নেই।’ তদন্ত কমিটির প্রধান অধ্যাপক ড. আব্দুল গনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে হামলার পরিবেশ নিয়ে আমরা তদন্ত করবো। এই হামলার পেছনে কোন পরিবেশটা সহায়তা করেছে সেগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করবো। কত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হবে সেটা এখনো বলা যাচ্ছে না। ফৌজদারি বিষয়টি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তদন্ত করবে।’ এদিকে সকাল সাড়ে ১০টায় কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ এবং সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে আইআইসিটি ভবনের সামনে থেকে কালোব্যাজ ধারণ করে একটি মৌন মিছিল বের হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থান প্রদক্ষিণ করে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবনের সামনে এসে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। পরবর্তীতে এই সমাবেশে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও অংশগ্রহণ করে। এদিকে ক্যাম্পাসের অর্জুনতলায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে দ্বিতীয় দিনের মতো চলছে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান। এছাড়া সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের উদ্যোগে গতকাল সন্ধ্যায় মোমবাতি প্রজ্জ্বালন করে আলোক মিছিল করা হয়।
গতকালও ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি ফয়জুরকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সিলেটের পুলিশ, গোয়েন্দা ছাড়াও ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের একটি দল তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। নানাভাবে তার কাছ থেকে তথ্য আদায়ের চেষ্টা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে পুলিশ ফয়জুরের সম্পর্কে সকল তথ্য এরই মধ্যে জোগাড় করেছে। সব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। পিতা-মাতাকে পুলিশি হেফাজতে রেখেও চলছে জিজ্ঞাসাবাদ। ফয়জুর বার বার বলছে- সে নিজ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে।
সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার গোলাম কিবরিয়া তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন ফয়জুর চিকিৎসাধীন থাকায় তাকে খুব বেশি জিজ্ঞাসাবাদ করা যাচ্ছে না। কোনো গোষ্ঠীর সঙ্গে তার যোগাযোগ আছে কিনা সেটি এখন খোঁজা হচ্ছে। সে সুস্থ হলে তাকে পুলিশি হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর হামলাকারী ফয়জুর রহমান ওসমানী হাসপাতালের ৩য় তলার ২৭ নম্বর কেবিনে চিকিৎসাধীন। রোববার বিকালে মহানগর পুলিশ তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে। এরপর থেকে ওই কেবিনে পুলিশ, র্যাবের পাহারায় চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তার পুরো মাথা ব্যান্ডেজ করা। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকলেও তার ভেতরে কোনো অনুশোচনার ভাব লক্ষ্য করা যায়নি। স্বাভাবিকভাবে রয়েছে সে। কথা বলছে না।
হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, গতকাল সকালের দিকে এক দফা সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়া সহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা হাসপাতালে যান। তারা গিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। এরপর ঢাকা থেকে আসা কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের টিমের সদস্যরাও তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। গোয়েন্দাদের মুখোমুখি হয় সে। কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদে সে নতুন কোনো তথ্য দেয়নি। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, একজন জঙ্গির আচরণ যেমন হয় সেভাবেই সে আচরণ করছে। জিজ্ঞাসাবাদে সে অনেক কিছুই সতর্কতার সঙ্গে এড়িয়ে যাচ্ছে। এ কারণে এখন ঘটনাকেন্দ্রিক অনেক কিছুরই খোঁজ নেয়া হচ্ছে। ফয়জুরের বাড়ি শেখপাড়া শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেশি দূরে নয়। পুলিশ জানিয়েছে, বিকালে ফয়জুর তার শেখপাড়াস্থ বাড়ি থেকে বের হয় বলে পুলিশকে তথ্য দিয়েছে। সকালের দিকে সে একবার গিয়েছিল। এরপর বিকালের দিকে যায়। গিয়ে মঞ্চের ঠিক পেছনে প্রফেসর ড. জাফর ইকবালের কাছাকাছি এলাকায় অবস্থান নেয়। ওই সময় তোলা প্রায় সব ছবিতেই ফয়জুরের চেহারা রয়েছে। হামলার আগে সে কয়েকবার ওই এলাকা রেকি করেছিল বলে জানায় পুলিশ সূত্র।
এদিকে ঘটনার দিন মুক্তমঞ্চে হামলাকারী ফয়জুরের সঙ্গে আরো কয়েকজন ছিল বলে ধারণা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্ররা। ওই দিনের ছবি পর্যালোচনা করে তারা জানিয়েছেন আরো একজন অজ্ঞাত যুবক মঞ্চে ছিল। ওই যুবক কে- সেটি তারা চিহ্নিত করতে পারেননি। ঘটনার পরপরই গোলচত্বরে দাঁড়িয়ে থাকা মোটরসাইকেলে এক যুবককে চলে যেতে দেখেছেন অনেকেই। ওই যুবকের কোনো সন্ধান মিলেনি। মহানগর পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়া জানিয়েছেন সব বিষয় মাথায় নিয়ে তদন্ত এগুচ্ছে। বিশেষ করে ফয়জুরের সঙ্গে কার কার যোগাযোগ রয়েছে সেটিও খোঁজা হচ্ছে। মোবাইল ফোনে কার কার সঙ্গে কথা বলেছে সেটিও দেখা হচ্ছে। তিনি জানান, ঘটনার পর থেকে ফয়জুর ছাড়াও আরো ৪ জনকে পুলিশি হেফাজতে নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ফয়জুরের পিতা হাফিজ আতিকুর রহমান ও মাতা আমিনা বেগমকে রোববার রাতে নগরীর মদিনা মার্কেট থেকে আটক করা হয়েছে। তাদের হেফাজতে রাখা হয়েছে। আটক কিংবা গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি। একজনকে আটক দেখানো হয়েছে। আটক ব্যক্তি কে- সেটি পরিষ্কার করে বলেননি পুলিশ কমিশনার। মা-বাবা ছাড়াও পুলিশ ইতিমধ্যে ফয়জুরের মামা ফজলুর রহমান, চাচা আবদুল কাহেরকেও আটক করে। এর বাইরে জিন্দাবাজারের কম্পিউটার দোকানের মালিককেও আটক করা হয়েছিল। তাদেরকেও পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে। তবে তাদের কাছ থেকে ফয়জুরের তথ্য খুব একটা পাওয়া যায়নি। পুলিশ এখন ফয়জুরের নেটওয়ার্কের সন্ধানে রয়েছে। তার সহযোগী কিংবা মদতদাতাদের খোঁজ নেয়া হচ্ছে। এদিকে গতকাল ঢাকা থেকে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের একটি দল সিলেটে এসে পৌঁছে। তারাও প্রাথমিকভাবে ফয়জুরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। পাশাপাশি তারা ঘটনার অনুসন্ধান করছেন। ঘটনার পর শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরাও কাজ শুরু করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শক্তি এ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে কিনা সেটি তারা খুঁজছেন। কারণ এর আগে শাবি’র ১১ ছাত্র জঙ্গি তৎপরতায় সম্পৃক্ত রয়েছে বলে জানা গিয়েছিল। বিভিন্ন সময় শাবি’র কয়েকজন শিক্ষার্থীকেও জঙ্গি তৎপরতায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ফরিদ উদ্দিন আহমদ জানিয়েছেন, জঙ্গিবাদ নির্মূলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। জঙ্গিবাদে কারও সংশ্লিষ্টতা থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
গতকালও উত্তাল শাবি: আমাদের শাবি প্রতিনিধি আরাফ আহমদ জানিয়েছেন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বিশিষ্ট লেখক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর হামলার প্রতিবাদে ও বিচারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ কর্মবিরতি পালন করেছে। শাবি শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে সোমবার সকাল ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত কালোব্যাজ ধারণ করে প্রশাসনিক ভবন-২ এর সামনে অবস্থান করে তারা এই কর্মবিরতি পালন করে। এসময় ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. ইলিয়াস উদ্দিন বিশ্বাস একাত্মতা পোষণ করে অবস্থান কর্মসূচিতে যোগদান করেন। অবস্থান কর্মসূচি শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ হাসানুজ্জামানের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক সহযোগী অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমেদের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. ইলিয়াস উদ্দিন বিশ্বাস, আইকিএসির পরিচালক অধ্যাপক আব্দুল আওয়াল বিশ্বাস, অধ্যাপক রাশেদ তালুকদার, অধ্যাপক ড. কবির হোসেন, অধ্যাপক সৈয়দ সামসুল ইসলাম, অধ্যাপক কামাল আহমেদ চৌধুরী, অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. রেজা সেলিম, অধ্যাপক ড. আশরাফ উদ্দীন, অধ্যাপক ড. আবদুল আউয়াল বিশ্বাস, অধ্যাপক ড. আতি উল্লাহ, অধ্যাপক ড. সৈয়দ আশরাফুর রহমান, অধ্যাপক ফারুক উদ্দীন প্রমুখ। শিক্ষকদের কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি শেষে আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় র্যালি করার ঘোষণা দেয়া হয়। ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সীমানা প্রাচীরের নির্মাণকাজ শুরু হবে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য কাজ করছি। এই ঘটনার কারণ এবং সামনে যাতে আর এমন ঘটনা না ঘটে সে জন্য তদন্ত কমিটি কাজ করছে।’ সমিতির সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ হাসানুজ্জামান বলেন, ‘মুক্তবুদ্ধি ও স্বাধীন চিন্তা- চেতনা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার এক প্রতীক হচ্ছেন ড. জাফর ইকবাল। তার কারণে বাংলাদেশের বাচ্চারা আজকে স্কুলের পাঠ্যসূচি থেকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বঙ্গবন্ধুর কথা জানতে পারছে। তাকে আঘাত করার মানে হচ্ছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার উপর আঘাত। আমাদের প্রধান দাবি হচ্ছে এই হামলার বিচার করতে হবে, মুক্ত বুদ্ধি ও চিন্তা চর্চার সুযোগ দিতে হবে, এর পথ রুদ্ধ করা যাবে না। এখানে কোনো অপশক্তির জায়গা নেই।’ তদন্ত কমিটির প্রধান অধ্যাপক ড. আব্দুল গনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে হামলার পরিবেশ নিয়ে আমরা তদন্ত করবো। এই হামলার পেছনে কোন পরিবেশটা সহায়তা করেছে সেগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করবো। কত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হবে সেটা এখনো বলা যাচ্ছে না। ফৌজদারি বিষয়টি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তদন্ত করবে।’ এদিকে সকাল সাড়ে ১০টায় কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ এবং সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে আইআইসিটি ভবনের সামনে থেকে কালোব্যাজ ধারণ করে একটি মৌন মিছিল বের হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থান প্রদক্ষিণ করে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবনের সামনে এসে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। পরবর্তীতে এই সমাবেশে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও অংশগ্রহণ করে। এদিকে ক্যাম্পাসের অর্জুনতলায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে দ্বিতীয় দিনের মতো চলছে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান। এছাড়া সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের উদ্যোগে গতকাল সন্ধ্যায় মোমবাতি প্রজ্জ্বালন করে আলোক মিছিল করা হয়।
No comments