তৎপর ‘টানা গ্যাং’ by মারুফ কিবরিয়া
যাত্রীবেশে
তারা শহরের সড়কগুলোতে ঘুরে বেড়ায়। প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল ও
সিএনজিচালিত অটোরিকশায়। বিশেষ করে নির্জন জায়গাগুলোতে। আর সুযোগ পেলেই
পথচারী কিংবা রিকশাযাত্রীর কাছ থেকে টান দিয়ে ছিনিয়ে নেয় ভ্যানিটি ব্যাগ
কিংবা মুঠোফোন। ওরাই শহরের কথিত ‘টানা পার্টি’ তথা ছিনতাইকারী। শহরে ইদানীং
এই টানা পার্টি তৎপর হয়ে উঠেছে। রাজধানীর ৪৯টি থানার ১৩৫টি স্পটে ছিনতাই
নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। পুলিশ স্থানগুলো চিহ্নিত করতে পারলেও ছিনতাই
ঠেকাতে পারছে না। মানুষের নির্বিঘ্নে পথচলার অধিকার কেড়ে নিচ্ছে
ছিনতাইকারীরা। বিশেষ করে ভোরে এবং সন্ধ্যার পর তাদের দৌরাত্ম্য বাড়ছে।
গত ২৭শে জানুয়ারি তিন ঘণ্টার ব্যবধানে রাজধানীর ধানমন্ডি ও গেণ্ডারিয়া এলাকায় ছিনতাইকারীদের হাতে নিহত হয়েছেন একজন হাসপাতাল কর্মী ও এক ব্যবসায়ী। এর আগে গত ১৮ই ডিসেম্বর ভোরে ওয়ারীর দয়াগঞ্জে ছিনতাইকারীদের ব্যাগ টানাটানির সময় মায়ের কোল থেকে পড়ে সাত মাসের শিশু আরাফাত মারা যায়। ৫ই ডিসেম্বর মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডে টানা পার্টির কবলে পড়ে মারা যান জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসক ফরহাদ আলম। ২৯শে নভেম্বর বিকালে তিনি কর্মস্থল থেকে রিকশায় মোহাম্মাদিয়া হাউজিং সোসাইটির বাসায় ফেরার পথে ছিনতাইকারীরা টান দিয়ে তার ব্যাগ নিয়ে যায়। এ সময় ছিটকে রাস্তায় পড়ে গুরুতর আহত হন তিনি। গত ৮ই অক্টোবর ওয়ারীর কেএম দাস লেনে বাসা থেকে বের হওয়ার পর একশ’ গজের মধ্যে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে নির্মমভাবে খুন হন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র খন্দকার আবু তালহা।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছ থেকে প্রতিটি ছিনতাইয়ের ঘটনার পর সুষ্ঠু তদন্ত ও ছিনতাইকারীদের ধরার তৎপরতার কথা শোনা গেলেও কার্যত তা হচ্ছে না বলেই অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। বিশেষ করে অনেকের ক্ষেত্রে মামলা নেয়া হয় না। জিডি করেই শেষ।
কয়েকজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে আলাপ করে এমনটাই তথ্য মিলেছে। গত ১৬ই ফেব্রুয়ারি ছিনতাইয়ের কবলে পড়ে মোবাইল খোয়াতে হয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রতনকে। রতন মানবজমিনকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শেষ করে বাসায় ফিরছিলাম। ধানমন্ডির ২৭ নং সড়কটিতে যানবাহন চলাচল করলেও মানুষের সংখ্যা তেমন একটা ছিল না। এসময় ফোনে কথা বলছিলাম মায়ের সঙ্গে। ওই অবস্থায় পেছন থেকে মোটরসাইকেলে করে দুজন এসেই কান থেকে মোবাইলটি টান দিয়ে নিয়ে যায়। ছিনতাইকারী বলে চিৎকার করতেই মুহূর্তে হারিয়ে যায় তারা। এ ব্যাপারে ধানমন্ডি থানায় জিডি করেছি। কিন্তু আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। তার কিছুদিন পরে ২২শে ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় ব্যাগ টানা পার্টির খপ্পরে পড়েন ব্যাংক কর্মকর্তা সেলিনা আফরোজ। বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি। এর মধ্যে এক কিশোর এসে তার হাতের ব্যাগটি টান দিয়ে নিয়ে যায়। তাতে বাসভাড়া আর কিছু কাগজপত্র ছিল। যে কারণে পুলিশি ঝামেলায় যাননি সেলিনা।
তিনি বলেন, ব্যাগ টেনে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা নতুন নয়। আমার পরিচিতজনদের অনেকেরই এই অভিজ্ঞতা রয়েছে। তবে সেদিন ছিনতাইকারীরা ব্যাগ টেনে নিয়ে যাওয়ার সময় খুব ভয় পেয়েছিলাম। এতটা ভয় আর কখনো পাইনি।
গত জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে চ্যানেল আই অনলাইনের নাহিয়ান ইমনের ব্যাগ টেনে নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। তার ব্যাগে ল্যাপটপ ও জরুরি কাগজপত্রের সঙ্গে টাকাও ছিল। ইমন বলেন, ধানমন্ডির কলাবাগান অতিক্রম করে ২৭ নম্বরের দিকে আসছিলাম। এ সময় মোটরসাইকেলে করে আসা দুজন পেছন থেকে আমার ব্যাগটি টান দিয়ে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যে তারা হাওয়া। এর আগেও একবার ফোনে কথা বলা অবস্থায় কান থেকে মোবাইল টান দিয়ে নিয়ে গেছে আমার কাছ থেকে।
এদিকে গত ২৮শে ফেব্রুয়ারি কাওরান বাজারে অফিসের সামনে চায়ের দোকানে বসে থাকা অবস্থায় কথা বলার সময় দৈনিক ইত্তেফাকের সাংবাদিক রাজীবের কান থেকে মোবাইল টান দিয়ে নিয়ে পালানোর সময় ধরা পড়ে এক ছিনতাইকারী। ঘটনাস্থলে তাকে সাধারণ জনতা মারধর করে। পরে পুলিশ এসে তাকে নিয়ে যায়।
শহরে টানা পার্টির তৎপরতা বেড়েই চলছে প্রতিনিয়ত। কাউকে পুলিশ শনাক্ত করে ধরছে। আবার কেউ কেউ ধরা ছোঁয়ার বাইরে। তবে অনেক ক্ষেত্রে নীরব ভূমিকা পালন করছে বলেই অভিযোগ কারো কারো।
বারবার ধরা পড়েও ছিনতাইয়ে ওরা: আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানিয়েছে, রাজধানীতে ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত চক্রে যারা আছে ঘুরে ফিরে তারাই বার বার ধরা পড়ছে। গ্রেপ্তারের পর তাদের আদালতে পাঠানো হয়। এরপর কেউ জামিনে আবার কেউ সাজা খেটে বেরিয়ে আবার ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়ে।
গত জানুয়ারি মাসে বাংলামোটর এলাকায় এক ব্যবসায়ীর মোবাইল ও ল্যাপটপ ছিনতাই করে পালায় ছিনতাইকারীরা। ঘটনার দিন রাজধানীর শাহবাগ থানায় অভিযোগ করলে তিনদিনের মধ্যেই ধরা পড়ে চার ছিনতাইকারীর একজন সোহেল মিয়া ওরফে সোহেল। মামলার আওতায় এনে তাকে আদালতে প্রেরণ করা হয়। তার কিছুদিনের মধ্যে জেল থেকে জামিনে মুক্তি পায় ওই ছিনতাইকারী। মুক্তির কিছুদিনের মধ্যেই তার বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ পায় শাহবাগ থানা পুলিশ। তবে সে এখন পলাতক বলেই জানিয়েছে পুলিশ। গত বছরের ডিসেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় চলন্ত রিকশায় এক নারীর কাছ থেকে ব্যাগ ছিনিয়ে নেয় কয়েকজন ছিনতাইকারী। সঙ্গে সঙ্গে শাহবাগ থানায় অভিযোগ করলে পাঁচদিন পর তাদের মধ্যে শিবলী ও ফারুক নামের দুজনকে নিউমার্কেট থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। আদালতে নেয়ার পর কারাগারে ছিল কিছুদিন। পরে জামিনে মুক্তি পেয়ে ফিরে আসে এই ছিনতাইকারী। গত বছর জুলাই মাসের দিকে ব্যাংকের কাজ শেষ করে বাসায় ফেরার পথে জুলফিকার নামের এক ব্যাংকার ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন। রাজধানীর বাড্ডার হোসেন মার্কেট এলাকায় একটি গলির মধ্যে নিয়ে তার কাছ থেকে ঘড়ি, ছয় হাজার নগদ টাকা ও মোবাইল ছিনিয়ে নেয় কয়েকজন। একপর্যায়ে তাকে ছুরি দিয়ে জখমও করে তারা। ঘটনার কয়েকদিন পর জুলফিকার বাড্ডা থানায় অভিযোগ করেন। এ সময় অভিযান চালিয়ে ওই এলাকার চিহ্নিত ছিনতাইকারী তুষারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে এর আগেও একাধিক ছিনতাইয়ের মামলা ছিল। নতুনভাবে তাকে আবারো মামলার আওতায় আনা হয়। গ্রেপ্তার তুষারকে আদালতে প্রেরণ করা হয়। তবে কিছুদিন পরই সে জামিনে ছাড়া পায়। তুষারের বাসা উত্তর বাড্ডায়। জানা গেছে, সে ওই এলাকায় বেশ প্রভাবশালী এক নেতার ভাগ্নে। গত নভেম্বর মাসের শেষদিকে রাজধানীর বাড্ডার সাঁতারকুল রোডে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া সোনিয়া ও আবিদ নামের এক প্রেমিকজুটিকে ফাঁদে ফেলে মোবাইল ও নগদ অর্থ ছিনিয়ে নেয় কয়েকজন ছিনতাইকারী। তাদের মধ্যে টুটুল নামের একজন ওই এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী। ছিনতাইয়ের শিকার দুইজন থানায় অভিযোগ নিয়ে যান। ঘটনার দিন কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পুলিশ গ্রেপ্তার করে টুটুলসহ আরো তিনজনকে। গ্রেপ্তারের পর আদালতের প্রক্রিয়ায় জামিন পেয়ে ফের ছিনতাইয়ে ফিরে তারা। শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল হাসান বলেন, আমার থানা এলাকায় বা তার আশেপাশের কেউ অভিযোগ নিয়ে এলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হয়। এবং অভিযোগের ভিত্তিতে আসামি ধরাও হয়। আমরা কোর্টে চালান করে দেই। কিন্তু জামিন পাওয়ার অধিকার তো সবারই রয়েছে। ছিনতাইকারীরা আদালত থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে যায়। আবার কোনো ঘটনার সঙ্গে পাওয়া গেলে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তবে আমার থানার অধীনে তুলনামূলক কম ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। শাহবাগ থানার বেশিরভাগ পয়েন্টে পুলিশ মোতায়েন থাকে।
গত ২৭শে জানুয়ারি তিন ঘণ্টার ব্যবধানে রাজধানীর ধানমন্ডি ও গেণ্ডারিয়া এলাকায় ছিনতাইকারীদের হাতে নিহত হয়েছেন একজন হাসপাতাল কর্মী ও এক ব্যবসায়ী। এর আগে গত ১৮ই ডিসেম্বর ভোরে ওয়ারীর দয়াগঞ্জে ছিনতাইকারীদের ব্যাগ টানাটানির সময় মায়ের কোল থেকে পড়ে সাত মাসের শিশু আরাফাত মারা যায়। ৫ই ডিসেম্বর মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডে টানা পার্টির কবলে পড়ে মারা যান জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসক ফরহাদ আলম। ২৯শে নভেম্বর বিকালে তিনি কর্মস্থল থেকে রিকশায় মোহাম্মাদিয়া হাউজিং সোসাইটির বাসায় ফেরার পথে ছিনতাইকারীরা টান দিয়ে তার ব্যাগ নিয়ে যায়। এ সময় ছিটকে রাস্তায় পড়ে গুরুতর আহত হন তিনি। গত ৮ই অক্টোবর ওয়ারীর কেএম দাস লেনে বাসা থেকে বের হওয়ার পর একশ’ গজের মধ্যে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে নির্মমভাবে খুন হন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র খন্দকার আবু তালহা।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছ থেকে প্রতিটি ছিনতাইয়ের ঘটনার পর সুষ্ঠু তদন্ত ও ছিনতাইকারীদের ধরার তৎপরতার কথা শোনা গেলেও কার্যত তা হচ্ছে না বলেই অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। বিশেষ করে অনেকের ক্ষেত্রে মামলা নেয়া হয় না। জিডি করেই শেষ।
কয়েকজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে আলাপ করে এমনটাই তথ্য মিলেছে। গত ১৬ই ফেব্রুয়ারি ছিনতাইয়ের কবলে পড়ে মোবাইল খোয়াতে হয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রতনকে। রতন মানবজমিনকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শেষ করে বাসায় ফিরছিলাম। ধানমন্ডির ২৭ নং সড়কটিতে যানবাহন চলাচল করলেও মানুষের সংখ্যা তেমন একটা ছিল না। এসময় ফোনে কথা বলছিলাম মায়ের সঙ্গে। ওই অবস্থায় পেছন থেকে মোটরসাইকেলে করে দুজন এসেই কান থেকে মোবাইলটি টান দিয়ে নিয়ে যায়। ছিনতাইকারী বলে চিৎকার করতেই মুহূর্তে হারিয়ে যায় তারা। এ ব্যাপারে ধানমন্ডি থানায় জিডি করেছি। কিন্তু আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। তার কিছুদিন পরে ২২শে ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় ব্যাগ টানা পার্টির খপ্পরে পড়েন ব্যাংক কর্মকর্তা সেলিনা আফরোজ। বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি। এর মধ্যে এক কিশোর এসে তার হাতের ব্যাগটি টান দিয়ে নিয়ে যায়। তাতে বাসভাড়া আর কিছু কাগজপত্র ছিল। যে কারণে পুলিশি ঝামেলায় যাননি সেলিনা।
তিনি বলেন, ব্যাগ টেনে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা নতুন নয়। আমার পরিচিতজনদের অনেকেরই এই অভিজ্ঞতা রয়েছে। তবে সেদিন ছিনতাইকারীরা ব্যাগ টেনে নিয়ে যাওয়ার সময় খুব ভয় পেয়েছিলাম। এতটা ভয় আর কখনো পাইনি।
গত জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে চ্যানেল আই অনলাইনের নাহিয়ান ইমনের ব্যাগ টেনে নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। তার ব্যাগে ল্যাপটপ ও জরুরি কাগজপত্রের সঙ্গে টাকাও ছিল। ইমন বলেন, ধানমন্ডির কলাবাগান অতিক্রম করে ২৭ নম্বরের দিকে আসছিলাম। এ সময় মোটরসাইকেলে করে আসা দুজন পেছন থেকে আমার ব্যাগটি টান দিয়ে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যে তারা হাওয়া। এর আগেও একবার ফোনে কথা বলা অবস্থায় কান থেকে মোবাইল টান দিয়ে নিয়ে গেছে আমার কাছ থেকে।
এদিকে গত ২৮শে ফেব্রুয়ারি কাওরান বাজারে অফিসের সামনে চায়ের দোকানে বসে থাকা অবস্থায় কথা বলার সময় দৈনিক ইত্তেফাকের সাংবাদিক রাজীবের কান থেকে মোবাইল টান দিয়ে নিয়ে পালানোর সময় ধরা পড়ে এক ছিনতাইকারী। ঘটনাস্থলে তাকে সাধারণ জনতা মারধর করে। পরে পুলিশ এসে তাকে নিয়ে যায়।
শহরে টানা পার্টির তৎপরতা বেড়েই চলছে প্রতিনিয়ত। কাউকে পুলিশ শনাক্ত করে ধরছে। আবার কেউ কেউ ধরা ছোঁয়ার বাইরে। তবে অনেক ক্ষেত্রে নীরব ভূমিকা পালন করছে বলেই অভিযোগ কারো কারো।
বারবার ধরা পড়েও ছিনতাইয়ে ওরা: আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানিয়েছে, রাজধানীতে ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত চক্রে যারা আছে ঘুরে ফিরে তারাই বার বার ধরা পড়ছে। গ্রেপ্তারের পর তাদের আদালতে পাঠানো হয়। এরপর কেউ জামিনে আবার কেউ সাজা খেটে বেরিয়ে আবার ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়ে।
গত জানুয়ারি মাসে বাংলামোটর এলাকায় এক ব্যবসায়ীর মোবাইল ও ল্যাপটপ ছিনতাই করে পালায় ছিনতাইকারীরা। ঘটনার দিন রাজধানীর শাহবাগ থানায় অভিযোগ করলে তিনদিনের মধ্যেই ধরা পড়ে চার ছিনতাইকারীর একজন সোহেল মিয়া ওরফে সোহেল। মামলার আওতায় এনে তাকে আদালতে প্রেরণ করা হয়। তার কিছুদিনের মধ্যে জেল থেকে জামিনে মুক্তি পায় ওই ছিনতাইকারী। মুক্তির কিছুদিনের মধ্যেই তার বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ পায় শাহবাগ থানা পুলিশ। তবে সে এখন পলাতক বলেই জানিয়েছে পুলিশ। গত বছরের ডিসেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় চলন্ত রিকশায় এক নারীর কাছ থেকে ব্যাগ ছিনিয়ে নেয় কয়েকজন ছিনতাইকারী। সঙ্গে সঙ্গে শাহবাগ থানায় অভিযোগ করলে পাঁচদিন পর তাদের মধ্যে শিবলী ও ফারুক নামের দুজনকে নিউমার্কেট থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। আদালতে নেয়ার পর কারাগারে ছিল কিছুদিন। পরে জামিনে মুক্তি পেয়ে ফিরে আসে এই ছিনতাইকারী। গত বছর জুলাই মাসের দিকে ব্যাংকের কাজ শেষ করে বাসায় ফেরার পথে জুলফিকার নামের এক ব্যাংকার ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন। রাজধানীর বাড্ডার হোসেন মার্কেট এলাকায় একটি গলির মধ্যে নিয়ে তার কাছ থেকে ঘড়ি, ছয় হাজার নগদ টাকা ও মোবাইল ছিনিয়ে নেয় কয়েকজন। একপর্যায়ে তাকে ছুরি দিয়ে জখমও করে তারা। ঘটনার কয়েকদিন পর জুলফিকার বাড্ডা থানায় অভিযোগ করেন। এ সময় অভিযান চালিয়ে ওই এলাকার চিহ্নিত ছিনতাইকারী তুষারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে এর আগেও একাধিক ছিনতাইয়ের মামলা ছিল। নতুনভাবে তাকে আবারো মামলার আওতায় আনা হয়। গ্রেপ্তার তুষারকে আদালতে প্রেরণ করা হয়। তবে কিছুদিন পরই সে জামিনে ছাড়া পায়। তুষারের বাসা উত্তর বাড্ডায়। জানা গেছে, সে ওই এলাকায় বেশ প্রভাবশালী এক নেতার ভাগ্নে। গত নভেম্বর মাসের শেষদিকে রাজধানীর বাড্ডার সাঁতারকুল রোডে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া সোনিয়া ও আবিদ নামের এক প্রেমিকজুটিকে ফাঁদে ফেলে মোবাইল ও নগদ অর্থ ছিনিয়ে নেয় কয়েকজন ছিনতাইকারী। তাদের মধ্যে টুটুল নামের একজন ওই এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী। ছিনতাইয়ের শিকার দুইজন থানায় অভিযোগ নিয়ে যান। ঘটনার দিন কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পুলিশ গ্রেপ্তার করে টুটুলসহ আরো তিনজনকে। গ্রেপ্তারের পর আদালতের প্রক্রিয়ায় জামিন পেয়ে ফের ছিনতাইয়ে ফিরে তারা। শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল হাসান বলেন, আমার থানা এলাকায় বা তার আশেপাশের কেউ অভিযোগ নিয়ে এলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হয়। এবং অভিযোগের ভিত্তিতে আসামি ধরাও হয়। আমরা কোর্টে চালান করে দেই। কিন্তু জামিন পাওয়ার অধিকার তো সবারই রয়েছে। ছিনতাইকারীরা আদালত থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে যায়। আবার কোনো ঘটনার সঙ্গে পাওয়া গেলে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তবে আমার থানার অধীনে তুলনামূলক কম ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। শাহবাগ থানার বেশিরভাগ পয়েন্টে পুলিশ মোতায়েন থাকে।
No comments