অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে
অংশগ্রহণমূলক
জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে।
যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেনসহ পশ্চিমা দেশগুলো এবং জাতিসঙ্ঘ সুষ্ঠু, অবাধ ও সব
দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে ক্রমান্বয়ে সোচ্চার হচ্ছে।
অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দলের অধীনেই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়তা
দেয়ার জন্য বিদেশীদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে সরকার। এ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে
বিদেশী রাষ্ট্রগুলোকে আমন্ত্রণও জানানো হচ্ছে। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের
জন্য আন্তর্জাতিক মহলের আহ্বান কতটা গুরুত্ব বহন করে- জানতে চাইলে
যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির গতকাল সোমবার নয়া
দিগন্তকে বলেন, এটা বিদেশীদের চেয়ে বাংলাদেশের জনগণের জন্য বেশি
গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন জনগণের সিদ্ধান্তের বিষয়। জনগণের বিভিন্ন অংশ নানা
রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে সংঘটিত হয়। তারা অংশগ্রহণের যথেষ্ট সুযোগ না পেলে
নির্বাচন জনভিত্তি পায় না। গণতান্ত্রিক কাঠামোকে সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড়
করাতে চাইলে নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ অপরিহার্য। এটা উপেক্ষা
করার কোনো সুযোগ নেই। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জাতিসঙ্ঘের তৎকালীন
রাজনীতিবিষয়ক সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোকে সামনে রেখে
পশ্চিমা দেশগুলো অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য একজোট হয়েছিল। কিন্তু সে সময়
মূলত ভারতের একচ্ছত্র প্রভাবে সরকার একতরফা নির্বাচন করেও আন্তর্জাতিক চাপ
সামাল দিতে পেরেছিল। এবার পরিস্থিতি কী হতে পারে- জানতে চাইলে হুমায়ুন
কবির বলেন, পরিস্থিতি কী হবে তা আগে থেকে বলা মুশকিল। তবে অংশগ্রহণমূলক
নির্বাচন সবাই প্রত্যাশা করে। আর তা না হলে শাসনব্যবস্থায় ঘাটতি দেখা দেয়। এ
ঘাটতি দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকলে শাসনব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে।
এ ধরনের
দুর্বল শাসনব্যবস্থা ক্ষমতাসীন দলসহ কারো জন্যই মঙ্গল বয়ে আনবে না।
গণতন্ত্রের জন্যই মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হয়েছিল মন্তব্য করে
তিনি বলেন, গণতন্ত্রের চর্চা করাটা আমাদের গর্ব ছিল। এটার ব্যত্যয় ঘটলে
আমাদের মৌলিক অবস্থানটাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এটা কখনোই বাঞ্ছনীয় নয়। মার্কিন
প্রেসিডেন্টের উপসহকারী ও জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের জ্যেষ্ঠ পরিচালক লিসা
কার্টিস গত রোববার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সাথে সাক্ষাতে
বাংলাদেশে সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ওপর গুরুত্বারোপ
করেছেন। জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, সরকারও সুষ্ঠু, অবাধ ও
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন
দেশ এ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে চাইলে স্বাগত জানানো হবে। এর আগে
বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট এবং ব্রিটিশ
হাইকমিশনার অ্যালিসন ব্ল্যাক রাজধানীতে পৃথক দুইটি অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের
সাথে আলাপকালে সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ওপর গুরুত্বারোপ
করেন। ধানমন্ডির ইএমকে সেন্টারে বার্নিকাট বলেছেন, কেবল নির্বাচনী দিনের
কর্মকাণ্ড সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের মাপকাঠি নয়। এ জন্য নির্বাচনের পুরো
প্রক্রিয়া বিবেচনায় নিতে হয়। সমাবেশ, প্রতিবাদ বা ভোটারদের কাছে নিজের
বার্তা পৌঁছে দেয়ার অধিকারটা মৌলিক। কোনো দল এ অধিকার থেকে বঞ্চিত হলে তা
সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের পরিবেশের ওপর প্রভাব ফেলে। কোনো ধরনের দমন-পীড়ন
ছাড়াই নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বীদের প্রচারণার সুযোগ পাওয়া উচিত। একই দিন
বারিধারা ব্রিটিশ হাইকমিশনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অ্যালিসন ব্ল্যাক বলেছেন,
সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বাংলাদেশের উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার
জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন সম্প্রতি ঢাকা
সফরকালে এ বার্তা পরিষ্কারভাবে সরকারের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। সম্প্রতি ইউএস
ট্রেড শো উদ্বোধনকালে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ মার্কিন রাষ্ট্রদূতের
সামনে বলেন, সরকারও চায় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। তবে তা হবে পশ্চিমা
দেশগুলোর মতো ক্ষমতাসীন দলের অধীনেই। এ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে
যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন সহায়তা করতে পারে। এ দিকে গত শুক্রবার ব্রাসেলসে
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ
আলীর সাথে আলোচনা করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা
নীতিবিষয়ক প্রধান ফেদারিকা মোঘারিনি। গত ফেব্রুয়ারি মাসে ইউরোপীয়
পার্লামেন্ট প্রতিনিধিদলের প্রধান জেইন ল্যাম্বার্ড ঢাকা সফর শেষে আয়োজিত
সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, বাংলাদেশে বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচন একতরফা হওয়ায়
ইইউ কোনো পর্যবেক্ষক দল পাঠায়নি। সব দলের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করার
ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা রয়েছে। স্বাধীন সত্তা হিসেবে কাজ করে
একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা নির্বাচন কমিশন করবে- এটাই আমরা দেখতে
চাই। তবে সার্বিকভাবে বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য এ মুহূর্তটি একটি
চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। সম্প্রতি গণমাধ্যমের সাথে আলাপকালে
ঢাকায় নিযুক্ত জাতিসঙ্ঘের আবাসিক সমন্বয়ক মিয়া সেপো বলেছেন, জাতিসঙ্ঘ
নিশ্চিতভাবেই আশা করে আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে। আগের
নির্বাচনগুলোতে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এটি উদ্বেগের বিষয়। তবে আগামীতে
নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতা এড়িয়ে চলা সম্ভব হবে বলে আমরা আশা করি।
No comments