মুসলিম বিশ্বে ক্ষোভের আগুন
ক্ষোভের
আগুনে জ্বলছে মুসলিম বিশ্ব। ফিলিস্তিন থেকে শুরু করে বাংলাদেশ,
ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, তুরস্ক, ভারত, ইরান, পাকিস্তান সর্বত্র যেন আগুন
জ্বলছে। ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা জানিয়েছে বৃটেন, জার্মানি,
ফ্রান্স, ইতালি ও সুইডেন। জাতিসংঘের কাছে এসব দেশের স্থায়ী প্রতিনিধিরা যৌথ
বিবৃতি দিয়েছেন শুক্রবার। তাতে তারা জানিয়েছেন, ‘ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে
জেরুজালেমকে স্বীকৃতি দেয়ার যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের সঙ্গে আমরা একমত
নই। যুক্তরাষ্ট্র তার দূতাবাস তেলআবিব থেকে জেরুজালেমে স্থানান্তরের যে
সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমরা তারও বিরোধী।
কারণ, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ এ বিষয়ে যে রেজুলেশন নিয়েছে এটা তা অনুসরণ করে করা হচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্ত ওই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়ক নয়। আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের রেজুলেশন অনুযায়ী আমরা পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনি ভূমি হিসেবে বিবেচনা করি। তা দখল করে নেয়া হয়েছে’। জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানীর স্বীকৃতি দেয়ায় শুক্রবার সারা মুসলিম জাহান ক্ষোভে ফেটে পড়ে। এদিন ফিলিস্তিনে দখলদার ইসরাইলি বাহিনী গুলি করে হত্যা করেছে কমপক্ষে দু’জনকে। আহত হয়েছে অনেক মানুষ। বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানীর স্বীকৃতি দেন। এর ফলে গাজা উপত্যকা, পশ্চিম তীর, জেরুজালেম যেন যুদ্ধক্ষেত্রে রূপ নেয়। মুখোমুখি সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে ফিলিস্তিনি মুসলিম ও ইসরাইলের সেনারা। এদিনটি ফিলিস্তিনের যোদ্ধাগোষ্ঠী হামাস ক্ষোভ দিবস পালনের আহ্বান জানায় মুসলিমদের প্রতি। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল কুদরা বলেছেন, প্রথমে ইসরাইলের সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছেন ৩০ বছর বয়সী এক ফিলিস্তিনি। এরপরে নিহত হয়েছেন ৫৪ বছর বয়সী মাহের আতাল্লাহ। প্রথম জন নিহত হন গাজায়। দ্বিতীয় জন গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলে। শুক্রবার সারাবিশ্বের মুসলিমরা প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘোষণায়। অনেক স্থানে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পতাকায়। কোথাও পোড়ানো হয়েছে ডনাল্ড ট্রাম্পের কুশপুত্তলিকা। প্রতিশোধ নিতে ইসরাইলের যুদ্ধবিমান থেকে গাজা উপত্যকায় হামলা করা হয়েছে। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, এতে কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছেন। ওদিকে জেরুজালেমে আল আকসা মসজিদের বাইরে বিপুল সংখ্যক মুসলিম জড়ো হন। তাদের ওপর ইসরাইলি সেনারা কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। ওদিকে পশ্চিম তীর ও গাজায় আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৭৬৭ জন। এর মধ্যে ৬১ জনের গায়ে গুলি লেগেছে। ২০০ জন আহত হয়েছেন রাবার বুলেটে। ৪৭৯ জন আহত হয়েছেন কাঁদানে গ্যাসে। এ ছাড়া আহত হয়েছেন ২৭ জন। এ তথ্য দিয়েছে রেড ক্রিসেন্ট। আগে থেকেই হাজার হাজার সেনা মোতায়েন করে ইসরাইল। রামাল্লাহর পশ্চিম তীরে অসংখ্য কাঁদানে গ্যাস সহ একটি জিপ মোতায়েন করে তারা। সেখান থেকে সেনারা মুহুর্মূহু কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে থাকে। এ সময় ওই এলাকা কাঁদানে গ্যাসে অন্ধকার হয়ে যায়। ইসরাইলি সেনাবাহিনী নিশ্চিত করে বলেছে, তারা সীমান্তের কাছে দু’জনকে গুলি করেছে। ওদিকে জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানতেন জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী স্বীকৃতি দেয়া হলে তা নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি হবে, দেখা দেবে উদ্বেগ। কিন্তু তিনি তা করেছেন ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি স্থাপনের জন্য একটি অগ্রাধিকার হিসেবে। তিনি আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আগের চেয়ে সেখানে শান্তি স্থাপনে অধিকতর প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অন্য সময়ের চেয়ে আমরা তার অনেক বেশি কাছাকাছি চলে এসেছি। অন্যদিকে জাতিসংঘে নিয়োজিত ইসরাইলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের শুক্রবারের জরুরি বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রকে অনুসরণের জন্য সব দেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেছেন, সবাই যেন জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী মেনে নেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছে জাতিসংঘ। ওদিকে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে শুক্রবার বিক্ষোভ করেছেন মুসলিমরা। তারা পুড়িয়েছেন ট্রাম্পের কুশপুত্তলিকা। এখানে ক্রীড়ামন্ত্রী খায়ের জামালুদ্দিনের নেতৃত্বে বিক্ষোভে অংশ নেন হাজারেরও বেশি মুসলিম। তারা বিক্ষোভ র্যালি নিয়ে এগিয়ে যান কুয়ালালামপুরে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের দিকে। এ সময় রাস্তায় ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়। স্লোগান দেয়া হয় ‘ইসলাম দীর্ঘজীবী হোক’, ‘খতম হোক ইহুদিবাদ’। অনেকের হাতে ছিল ব্যানার। তাতে লেখা ‘মুক্ত ফিলিস্তিন’। আবার কোনোটায় লেখা ‘জেরুজালেম হলো ফিলিস্তিনের রাজধানী’। বিক্ষোভ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের কর্মকর্তাদের কাছে প্রতিবাদলিপি দেয়ার পর জনতার উদ্দেশে ভাষণ দেন মন্ত্রী খায়ের। তিনি ডনাল্ড ট্রাম্পকে উদ্দেশ্য করে বলেন, প্রেসিডেন্ট আপনি একটি অবৈধ ঘোষণা দিয়েছেন। জেরুজালেমকে ইসরাইল দখল করে নিয়েছে। আপনার সেখানে পা পর্যন্তও রাখা উচিত নয়। দেখুন, যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছে বিশ্ব। উলিয়া আকামাহ বিন হুসামুদ্দিন বলেন, জেরুজালেমের মর্যাদা কি হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা উচিত নয়। এটা বুঝা উচিত ট্রাম্পের। এতে বক্তব্য রাখেন নুরুল হাদায়া মেসারি নামে একজন ছাত্র। তিনি বলেন, সৌদি আরবে মক্কা ও মদিনা যেমন মুসলিমদের কাছে পবিত্র, তেমনি জেরুজালেমও তাদের কাছে পবিত্র। ইরানের রাজধানী তেহরান ‘আমেরিকা নিপাত যাক’ স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে। ওদিকে তুরস্ক, আফগানিস্তান, জর্ডান, পাকিস্তান, সোমালিয়া, মিশর সহ দুনিয়ার প্রায় সব মুসলিম দেশের লাখ লাখ মুসলিম রাস্তায় নেমে পড়েন। তারা ফিলিস্তিনি ভূমির জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করার স্লোগান দেন। শুক্রবার রাতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে ইউরোপে। বড় বড় বিক্ষোভ হয়েছে লন্ডন, বার্লিন ও ব্রাসেলসে। ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করছেন অমুসলিম দেশগুলোর রাষ্ট্র প্রধানরাও। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন, জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কমন সেন্সের বিরুদ্ধে গিয়েছে। ভিয়েনায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রন মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি এক বৈঠকে বলেন, আমি দায়িত্বশীল সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। তুরস্কের ইস্তাম্বুলে শত শত মুসলিম বিক্ষোভ করেছেন। এ সময় তারা স্লোগান দিয়েছেন ‘জেরুজালেম আমাদের এবং তা আমাদেরই থাকবে’। আরো স্লোগান দিয়েছেন ‘আমেরিকা নিপাত যাক’। ‘ইসরাইল নিপাত যাক’। ইস্তাম্বুলের মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত অটোম্যান ফেইথ মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করে তারা বিক্ষোভে শরিক হন। ট্রাম্পের ঘোষণার বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান। তিনি আগামী ১৩ই ডিসেম্বর ইস্তাম্বুলে ইসলামিক দেশগুলোর সহযোগিতামূলক সংস্থা ওআইসি’র জরুরি বৈঠক আহ্বান জানিয়েছেন। ইন্দোনেশিয়ায় বিক্ষোভকারীরা রাজধানী জাকার্তায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের দিকে অগ্রসর হয়। এ সময় তাদের হাতে ছিল ফিলিস্তিন ও ইন্দোনেশিয়ার পতাকা। তারা দূতাবাসের সামনে গিয়ে টায়ারে, ট্রাম্পের ছবি, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের পতাকায় অগ্নিসংযোগ করে। কাশ্মীরের শ্রীনগরে ও ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে শত শত মুসলিম বিক্ষোভ করেছেন। এ সময় তারা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলবিরোধী স্লোগান দেন। অগ্নিসংযোগ করেন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের পতাকায়। তবে শ্রীনগরের পুরনো অংশে আগে থেকে কর্তৃপক্ষ কারফিউ জারি করে। বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় শহরের প্রধান মসজিদে শুক্রবারের নামাজ আদায় করতে দেয়া হয় নি। কাশ্মীরী নেতারা ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে মুসলিমবিরোধী বলে আখ্যায়িত করেছেন।
কারণ, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ এ বিষয়ে যে রেজুলেশন নিয়েছে এটা তা অনুসরণ করে করা হচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্ত ওই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়ক নয়। আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের রেজুলেশন অনুযায়ী আমরা পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনি ভূমি হিসেবে বিবেচনা করি। তা দখল করে নেয়া হয়েছে’। জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানীর স্বীকৃতি দেয়ায় শুক্রবার সারা মুসলিম জাহান ক্ষোভে ফেটে পড়ে। এদিন ফিলিস্তিনে দখলদার ইসরাইলি বাহিনী গুলি করে হত্যা করেছে কমপক্ষে দু’জনকে। আহত হয়েছে অনেক মানুষ। বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানীর স্বীকৃতি দেন। এর ফলে গাজা উপত্যকা, পশ্চিম তীর, জেরুজালেম যেন যুদ্ধক্ষেত্রে রূপ নেয়। মুখোমুখি সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে ফিলিস্তিনি মুসলিম ও ইসরাইলের সেনারা। এদিনটি ফিলিস্তিনের যোদ্ধাগোষ্ঠী হামাস ক্ষোভ দিবস পালনের আহ্বান জানায় মুসলিমদের প্রতি। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল কুদরা বলেছেন, প্রথমে ইসরাইলের সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছেন ৩০ বছর বয়সী এক ফিলিস্তিনি। এরপরে নিহত হয়েছেন ৫৪ বছর বয়সী মাহের আতাল্লাহ। প্রথম জন নিহত হন গাজায়। দ্বিতীয় জন গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলে। শুক্রবার সারাবিশ্বের মুসলিমরা প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘোষণায়। অনেক স্থানে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পতাকায়। কোথাও পোড়ানো হয়েছে ডনাল্ড ট্রাম্পের কুশপুত্তলিকা। প্রতিশোধ নিতে ইসরাইলের যুদ্ধবিমান থেকে গাজা উপত্যকায় হামলা করা হয়েছে। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, এতে কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছেন। ওদিকে জেরুজালেমে আল আকসা মসজিদের বাইরে বিপুল সংখ্যক মুসলিম জড়ো হন। তাদের ওপর ইসরাইলি সেনারা কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। ওদিকে পশ্চিম তীর ও গাজায় আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৭৬৭ জন। এর মধ্যে ৬১ জনের গায়ে গুলি লেগেছে। ২০০ জন আহত হয়েছেন রাবার বুলেটে। ৪৭৯ জন আহত হয়েছেন কাঁদানে গ্যাসে। এ ছাড়া আহত হয়েছেন ২৭ জন। এ তথ্য দিয়েছে রেড ক্রিসেন্ট। আগে থেকেই হাজার হাজার সেনা মোতায়েন করে ইসরাইল। রামাল্লাহর পশ্চিম তীরে অসংখ্য কাঁদানে গ্যাস সহ একটি জিপ মোতায়েন করে তারা। সেখান থেকে সেনারা মুহুর্মূহু কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে থাকে। এ সময় ওই এলাকা কাঁদানে গ্যাসে অন্ধকার হয়ে যায়। ইসরাইলি সেনাবাহিনী নিশ্চিত করে বলেছে, তারা সীমান্তের কাছে দু’জনকে গুলি করেছে। ওদিকে জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানতেন জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী স্বীকৃতি দেয়া হলে তা নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি হবে, দেখা দেবে উদ্বেগ। কিন্তু তিনি তা করেছেন ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি স্থাপনের জন্য একটি অগ্রাধিকার হিসেবে। তিনি আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আগের চেয়ে সেখানে শান্তি স্থাপনে অধিকতর প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অন্য সময়ের চেয়ে আমরা তার অনেক বেশি কাছাকাছি চলে এসেছি। অন্যদিকে জাতিসংঘে নিয়োজিত ইসরাইলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের শুক্রবারের জরুরি বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রকে অনুসরণের জন্য সব দেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেছেন, সবাই যেন জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী মেনে নেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছে জাতিসংঘ। ওদিকে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে শুক্রবার বিক্ষোভ করেছেন মুসলিমরা। তারা পুড়িয়েছেন ট্রাম্পের কুশপুত্তলিকা। এখানে ক্রীড়ামন্ত্রী খায়ের জামালুদ্দিনের নেতৃত্বে বিক্ষোভে অংশ নেন হাজারেরও বেশি মুসলিম। তারা বিক্ষোভ র্যালি নিয়ে এগিয়ে যান কুয়ালালামপুরে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের দিকে। এ সময় রাস্তায় ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়। স্লোগান দেয়া হয় ‘ইসলাম দীর্ঘজীবী হোক’, ‘খতম হোক ইহুদিবাদ’। অনেকের হাতে ছিল ব্যানার। তাতে লেখা ‘মুক্ত ফিলিস্তিন’। আবার কোনোটায় লেখা ‘জেরুজালেম হলো ফিলিস্তিনের রাজধানী’। বিক্ষোভ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের কর্মকর্তাদের কাছে প্রতিবাদলিপি দেয়ার পর জনতার উদ্দেশে ভাষণ দেন মন্ত্রী খায়ের। তিনি ডনাল্ড ট্রাম্পকে উদ্দেশ্য করে বলেন, প্রেসিডেন্ট আপনি একটি অবৈধ ঘোষণা দিয়েছেন। জেরুজালেমকে ইসরাইল দখল করে নিয়েছে। আপনার সেখানে পা পর্যন্তও রাখা উচিত নয়। দেখুন, যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছে বিশ্ব। উলিয়া আকামাহ বিন হুসামুদ্দিন বলেন, জেরুজালেমের মর্যাদা কি হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা উচিত নয়। এটা বুঝা উচিত ট্রাম্পের। এতে বক্তব্য রাখেন নুরুল হাদায়া মেসারি নামে একজন ছাত্র। তিনি বলেন, সৌদি আরবে মক্কা ও মদিনা যেমন মুসলিমদের কাছে পবিত্র, তেমনি জেরুজালেমও তাদের কাছে পবিত্র। ইরানের রাজধানী তেহরান ‘আমেরিকা নিপাত যাক’ স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে। ওদিকে তুরস্ক, আফগানিস্তান, জর্ডান, পাকিস্তান, সোমালিয়া, মিশর সহ দুনিয়ার প্রায় সব মুসলিম দেশের লাখ লাখ মুসলিম রাস্তায় নেমে পড়েন। তারা ফিলিস্তিনি ভূমির জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করার স্লোগান দেন। শুক্রবার রাতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে ইউরোপে। বড় বড় বিক্ষোভ হয়েছে লন্ডন, বার্লিন ও ব্রাসেলসে। ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করছেন অমুসলিম দেশগুলোর রাষ্ট্র প্রধানরাও। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন, জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কমন সেন্সের বিরুদ্ধে গিয়েছে। ভিয়েনায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রন মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি এক বৈঠকে বলেন, আমি দায়িত্বশীল সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। তুরস্কের ইস্তাম্বুলে শত শত মুসলিম বিক্ষোভ করেছেন। এ সময় তারা স্লোগান দিয়েছেন ‘জেরুজালেম আমাদের এবং তা আমাদেরই থাকবে’। আরো স্লোগান দিয়েছেন ‘আমেরিকা নিপাত যাক’। ‘ইসরাইল নিপাত যাক’। ইস্তাম্বুলের মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত অটোম্যান ফেইথ মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করে তারা বিক্ষোভে শরিক হন। ট্রাম্পের ঘোষণার বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান। তিনি আগামী ১৩ই ডিসেম্বর ইস্তাম্বুলে ইসলামিক দেশগুলোর সহযোগিতামূলক সংস্থা ওআইসি’র জরুরি বৈঠক আহ্বান জানিয়েছেন। ইন্দোনেশিয়ায় বিক্ষোভকারীরা রাজধানী জাকার্তায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের দিকে অগ্রসর হয়। এ সময় তাদের হাতে ছিল ফিলিস্তিন ও ইন্দোনেশিয়ার পতাকা। তারা দূতাবাসের সামনে গিয়ে টায়ারে, ট্রাম্পের ছবি, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের পতাকায় অগ্নিসংযোগ করে। কাশ্মীরের শ্রীনগরে ও ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে শত শত মুসলিম বিক্ষোভ করেছেন। এ সময় তারা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলবিরোধী স্লোগান দেন। অগ্নিসংযোগ করেন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের পতাকায়। তবে শ্রীনগরের পুরনো অংশে আগে থেকে কর্তৃপক্ষ কারফিউ জারি করে। বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় শহরের প্রধান মসজিদে শুক্রবারের নামাজ আদায় করতে দেয়া হয় নি। কাশ্মীরী নেতারা ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে মুসলিমবিরোধী বলে আখ্যায়িত করেছেন।
No comments