তুঘলকি প্রকল্পে তোলপাড় by নূর মোহাম্মদ
সরকারি
মাধ্যমিক স্কুলে এসকেলেটর (চলন্ত সিঁড়ি) স্থাপনে এক তুঘলকি প্রকল্প হাতে
নিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। এটি বাস্তবায়ন করবে
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর (ইইডি)। প্রকল্পের জন্য ১১১৬ কোটি টাকা সংস্থান
রাখা হয়েছে। এই অবস্থায় প্রকল্পের বাস্তবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে খোদ
পরিকল্পনা কমিশন। উদ্যোগী সংস্থার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, দেশের
আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে এই প্রকল্প কতটা বাস্তবায়ন যোগ্য? অন্যদিকে পুরো
প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ১৬৩টি সরকারি মাধ্যমিক স্কুলে এসকেলেটর স্থাপনের জন্য ১১১৬ কোটি টাকার বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
২০১৭-২০২১ সালে এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে। তার আগে গত ২১শে মার্চ একনেকে এ প্রকল্প পাস হয়। সেখানে প্রকল্পের আর্থিক সংশ্লিষ্টরা, নিরাপত্তাসহ অনেক বিষয় গোপন রাখা। এরপর ৬ই নভেম্বর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভায় এ প্রকল্পের বাস্তবতা নিয়ে এক ডজনের বেশি প্রশ্ন তুলে এর জবাব চাওয়া হয়েছে উদ্যোগী সংস্থার কাছে।
গত ২১শে মার্চ একনেকে এ প্রকল্প পাস হওয়ার পর এর আনুষ্ঠানিকতা ও অর্থ ছাড়ের তোড়জোড় শুরু করে মাউশি। কিন্তু এরমধ্যেই ব্যতিত্রুম ঘটনা ঘটিয়ে প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন তুলে পরিকল্পনা কমিশন। সাধারণত একনেকে পাস হওয়ার পর প্রকল্পে যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয় না। কিন্তু এ প্রকল্পের প্রশ্ন তোলার কারণ ব্যাখ্যা করে পরিকল্পনা কমিশনের শিক্ষা উইং-এর কর্মকর্তারা বলছেন, প্রকল্প পাস করানোর সময় নানা বিষয় গোপন করা হয়। যা পরবর্তীকালে আমাদের চোখে ধরা পড়ে। একাধিক বৈঠকে বাস্তবায়নকারী সংস্থা সদুত্তর দিতে না পারায় প্রকল্পের বাস্তবায়ন কতটা যৌক্তিক তাদের কাছে তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে মাউশির পরিকল্পনা শাখার পরিচালক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন মানবজমিনকে বলেন, প্রকল্পের কিছু বিষয় নিয়ে পরিকল্পনা কমিশন জানতে চেয়েছে আমরা জবাব দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। তিনি বলেন, একনেকে পাস হওয়ার পর প্রকল্পের যৌক্তিকতা নিয়ে এ ধরনের প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবে আসে না। তার পরও আমরা জবাব তৈরি করছি।
মাউশি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল (ডিপিপি) বলেছে, সারা দেশে ৩৩৫টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৩২৩টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য প্রকল্প নেয়া আছে। যার ব্যয় চার হাজার ৬৪০ কোটি টাকা অনুমোদন দেয়া হয়। ছয় মাসের ব্যবধানে এই ব্যয় ১ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা বা ৩২ দশমিক ৮৭ শতাংশ বাড়িয়ে ছয় হাজার ১৬৫ কোটি টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। নতুন করে ১৬৩টি বিদ্যালয়ের ভবনে এসকেলেটর (চলন্ত সিঁড়ি) স্থাপনের জন্য ১১১৬ কোটি টাকার বিশাল ব্যয়ে প্রস্তাব দেয়া হয়। প্রতি স্কুলে এসকেলেটর স্থাপনের ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।
এসকেলেটরের যৌক্তিকতা তুলে ধরে বলা হয়, এর মাধ্যমে এক সঙ্গে অনেক শিক্ষার্থী ওঠানামা করতে পারবে। বহুতল ভবনে তাদের ওঠানামার পরিশ্রম কমে যাবে। এ যুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে পিইসির সভায় বলা হয়, শিক্ষার্থীদের শারীরিক বৃদ্ধিসহ শারীরিকভাবে সুস্থ থাকার জন্য এসকেলেটর বা লিফটের পরিবর্তে সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা খুবই কার্যকর। এ ব্যাপারে পিইসি সভায় বলা হয়, মাধ্যমিক পর্যায়ে কোনো বিদ্যালয়ে ১০তলা ভবন নেই। সাধারণত ৪-৬ তলা ভবন আছে। এ ধরনের ভবনে খুব সহজেই লিফট বা এসলেকটর ছাড়াই উঠানামা করা যায়। হঠাৎ করে বিদ্যুৎ চলে গেলে এসকেলেটর বা লিফটের মধ্যে শিক্ষার্থীরা আটকে থাকার মাধ্যমে তাদের মধ্যে আতঙ্ক ও মানসিক বিপর্যয়ের মতো নেতিবাচক মানসিক ঘটনা সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া পার্শ্ববর্তী কোনো দেশে মাধ্যমিক পর্যায়ের বিদ্যালয়ে এসকেলেটরসহ বহুতল ভবন নেই। এর পরিপ্রেক্ষিতে পিইসি সভায় বলা হয়, দেশের সরকারি মাধ্যমিক স্কুলে অভ্যন্তরে অতিরিক্ত খালি জায়গা থাকে। এ বিবেচনা ১০তলা ভবনের পরিবর্তে সমআয়তনের ৫ থেকে ৬তলা ভবন করলে একদিকে শিক্ষার্থীদের সুস্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব। অন্যদিকে এসকেলেটর স্থাপনের জন্য অনেক জায়গা প্রয়োজন। এসকেলেটর স্থাপন করতে গেলে প্রতিটি ভবনের মাঝের ও নিচের ফ্লোর ভাঙতে হবে, যা অনেক ব্যয়সাপেক্ষ। এগুলো করতে গেলে একটি বড় সময়ের জন্য স্কুল বন্ধ দিতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ক্ষতি হবে। তা ছাড়া স্কুল শুরু ও ছুটির সময় শ’ শ’ শিক্ষার্থী একসঙ্গে ওঠানামা করতে গেলে তা সময়সাপেক্ষ হবে। এসকেলেটর বা লিফট স্থাপনের পর রক্ষণাবেক্ষণে যে অর্থের প্রয়োজন হবে তা স্কুল যথাসময়ে সংকুলান করতে পারবে কি না, এগুলো সচল রাখার জন্য সার্বক্ষণিক নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত কি না, এগুলো চালু হওয়ার পর কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে তা গণপূর্ত অধিদপ্তর বা সরকারি সংস্থার মাধ্যমে দ্রুত মেরামতের ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হবে কি না? এ ছাড়া আর্থিক সংশ্লেষ ও মফস্বল শহরে এর ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য পেশাদার দক্ষ জনশক্তির প্রয়োজন।
পিইসি সভায় বলা হয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের চলাফেরার জন্য এসকেলেটর ব্যবহার কারিগরি দিক দিয়ে উপযোগ্য কি না তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। কেননা শিক্ষার্থীদের চলাফেরার জন্য এসকেলেটর ব্যবহার ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এসকেলেটর ব্যবহারের সুবিধা থাকলেও শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রাথমিকভাবে কিছুটা উত্তেজনা কাজ করতে পারে। ফলে তারা যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে এসকেলেটরে ওঠানামা করার বিষয়টি মেনে চলতে না পারলে বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হবে। এ ছাড়াও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী পিইসিকে জানান, বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা হয়নি। এসকেলেটর স্থাপনের সঙ্গে জড়িত নিরাপত্তা পদক্ষেপ ও কারিগরি ঝুঁকিসহ বিভিন্ন নেতিবাচক দিক সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা প্রয়োজন ছিল বলে পিইসি মতামত দিয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী মানবজমিনকে বলেন, মাধ্যমিক স্কুলে এসকেলটর চালুর বিষয়টি হাস্যকর ছাড়া কিছু না। আর এগুলো স্কুলে চলবে না। কারণ, ঢাকার রাস্তায় যেগুলো দেয়া হয়েছিল, তা অকেজো হয়ে গেছে। আমি মনে করি এ প্রকল্পের পুরোটাই হবে অপচয় ও লুটপাট। এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো স্কুলগুলোয় ভবন নির্মাণ, খেলার মাঠ তৈরি, পাঠাগার তৈরি করা।
এ ব্যাপারে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান মানবজমিনকে বলেন, যেহেতু পরিকল্পনা কমিশনই এটা নিয়ে আপত্তি তুলেছে এটা পরিষ্কার এর কোনো যৌক্তিকতা নেই। কারণ, আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সার্বিক অবকাঠামোর দিক বিবেচনা করলে এই প্রকল্প অসাঞ্জস্যপূর্ণ এবং বিলাসিতা ছাড়া কিছু না। তিনি বলেন, এর পেছনে কোনো বিশেষ মহল লাভবান হবে কি না দেখা প্রয়োজন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবকাঠামোর আরও অনেক দিক আছে, সেখানে অর্থ ব্যয় করা সম্ভব। এ প্রকল্পের অর্থ দিয়ে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উন্নত শৌচাগার তৈরি করা যায়। এসব বিষয়কে প্রাধান্য দেয়া উচিত বলে মত দেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ১৬৩টি সরকারি মাধ্যমিক স্কুলে এসকেলেটর স্থাপনের জন্য ১১১৬ কোটি টাকার বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
২০১৭-২০২১ সালে এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে। তার আগে গত ২১শে মার্চ একনেকে এ প্রকল্প পাস হয়। সেখানে প্রকল্পের আর্থিক সংশ্লিষ্টরা, নিরাপত্তাসহ অনেক বিষয় গোপন রাখা। এরপর ৬ই নভেম্বর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভায় এ প্রকল্পের বাস্তবতা নিয়ে এক ডজনের বেশি প্রশ্ন তুলে এর জবাব চাওয়া হয়েছে উদ্যোগী সংস্থার কাছে।
গত ২১শে মার্চ একনেকে এ প্রকল্প পাস হওয়ার পর এর আনুষ্ঠানিকতা ও অর্থ ছাড়ের তোড়জোড় শুরু করে মাউশি। কিন্তু এরমধ্যেই ব্যতিত্রুম ঘটনা ঘটিয়ে প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন তুলে পরিকল্পনা কমিশন। সাধারণত একনেকে পাস হওয়ার পর প্রকল্পে যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয় না। কিন্তু এ প্রকল্পের প্রশ্ন তোলার কারণ ব্যাখ্যা করে পরিকল্পনা কমিশনের শিক্ষা উইং-এর কর্মকর্তারা বলছেন, প্রকল্প পাস করানোর সময় নানা বিষয় গোপন করা হয়। যা পরবর্তীকালে আমাদের চোখে ধরা পড়ে। একাধিক বৈঠকে বাস্তবায়নকারী সংস্থা সদুত্তর দিতে না পারায় প্রকল্পের বাস্তবায়ন কতটা যৌক্তিক তাদের কাছে তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে মাউশির পরিকল্পনা শাখার পরিচালক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন মানবজমিনকে বলেন, প্রকল্পের কিছু বিষয় নিয়ে পরিকল্পনা কমিশন জানতে চেয়েছে আমরা জবাব দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। তিনি বলেন, একনেকে পাস হওয়ার পর প্রকল্পের যৌক্তিকতা নিয়ে এ ধরনের প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবে আসে না। তার পরও আমরা জবাব তৈরি করছি।
মাউশি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল (ডিপিপি) বলেছে, সারা দেশে ৩৩৫টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৩২৩টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য প্রকল্প নেয়া আছে। যার ব্যয় চার হাজার ৬৪০ কোটি টাকা অনুমোদন দেয়া হয়। ছয় মাসের ব্যবধানে এই ব্যয় ১ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা বা ৩২ দশমিক ৮৭ শতাংশ বাড়িয়ে ছয় হাজার ১৬৫ কোটি টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। নতুন করে ১৬৩টি বিদ্যালয়ের ভবনে এসকেলেটর (চলন্ত সিঁড়ি) স্থাপনের জন্য ১১১৬ কোটি টাকার বিশাল ব্যয়ে প্রস্তাব দেয়া হয়। প্রতি স্কুলে এসকেলেটর স্থাপনের ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।
এসকেলেটরের যৌক্তিকতা তুলে ধরে বলা হয়, এর মাধ্যমে এক সঙ্গে অনেক শিক্ষার্থী ওঠানামা করতে পারবে। বহুতল ভবনে তাদের ওঠানামার পরিশ্রম কমে যাবে। এ যুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে পিইসির সভায় বলা হয়, শিক্ষার্থীদের শারীরিক বৃদ্ধিসহ শারীরিকভাবে সুস্থ থাকার জন্য এসকেলেটর বা লিফটের পরিবর্তে সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা খুবই কার্যকর। এ ব্যাপারে পিইসি সভায় বলা হয়, মাধ্যমিক পর্যায়ে কোনো বিদ্যালয়ে ১০তলা ভবন নেই। সাধারণত ৪-৬ তলা ভবন আছে। এ ধরনের ভবনে খুব সহজেই লিফট বা এসলেকটর ছাড়াই উঠানামা করা যায়। হঠাৎ করে বিদ্যুৎ চলে গেলে এসকেলেটর বা লিফটের মধ্যে শিক্ষার্থীরা আটকে থাকার মাধ্যমে তাদের মধ্যে আতঙ্ক ও মানসিক বিপর্যয়ের মতো নেতিবাচক মানসিক ঘটনা সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া পার্শ্ববর্তী কোনো দেশে মাধ্যমিক পর্যায়ের বিদ্যালয়ে এসকেলেটরসহ বহুতল ভবন নেই। এর পরিপ্রেক্ষিতে পিইসি সভায় বলা হয়, দেশের সরকারি মাধ্যমিক স্কুলে অভ্যন্তরে অতিরিক্ত খালি জায়গা থাকে। এ বিবেচনা ১০তলা ভবনের পরিবর্তে সমআয়তনের ৫ থেকে ৬তলা ভবন করলে একদিকে শিক্ষার্থীদের সুস্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব। অন্যদিকে এসকেলেটর স্থাপনের জন্য অনেক জায়গা প্রয়োজন। এসকেলেটর স্থাপন করতে গেলে প্রতিটি ভবনের মাঝের ও নিচের ফ্লোর ভাঙতে হবে, যা অনেক ব্যয়সাপেক্ষ। এগুলো করতে গেলে একটি বড় সময়ের জন্য স্কুল বন্ধ দিতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ক্ষতি হবে। তা ছাড়া স্কুল শুরু ও ছুটির সময় শ’ শ’ শিক্ষার্থী একসঙ্গে ওঠানামা করতে গেলে তা সময়সাপেক্ষ হবে। এসকেলেটর বা লিফট স্থাপনের পর রক্ষণাবেক্ষণে যে অর্থের প্রয়োজন হবে তা স্কুল যথাসময়ে সংকুলান করতে পারবে কি না, এগুলো সচল রাখার জন্য সার্বক্ষণিক নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত কি না, এগুলো চালু হওয়ার পর কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে তা গণপূর্ত অধিদপ্তর বা সরকারি সংস্থার মাধ্যমে দ্রুত মেরামতের ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হবে কি না? এ ছাড়া আর্থিক সংশ্লেষ ও মফস্বল শহরে এর ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য পেশাদার দক্ষ জনশক্তির প্রয়োজন।
পিইসি সভায় বলা হয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের চলাফেরার জন্য এসকেলেটর ব্যবহার কারিগরি দিক দিয়ে উপযোগ্য কি না তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। কেননা শিক্ষার্থীদের চলাফেরার জন্য এসকেলেটর ব্যবহার ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এসকেলেটর ব্যবহারের সুবিধা থাকলেও শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রাথমিকভাবে কিছুটা উত্তেজনা কাজ করতে পারে। ফলে তারা যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে এসকেলেটরে ওঠানামা করার বিষয়টি মেনে চলতে না পারলে বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হবে। এ ছাড়াও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী পিইসিকে জানান, বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা হয়নি। এসকেলেটর স্থাপনের সঙ্গে জড়িত নিরাপত্তা পদক্ষেপ ও কারিগরি ঝুঁকিসহ বিভিন্ন নেতিবাচক দিক সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা প্রয়োজন ছিল বলে পিইসি মতামত দিয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী মানবজমিনকে বলেন, মাধ্যমিক স্কুলে এসকেলটর চালুর বিষয়টি হাস্যকর ছাড়া কিছু না। আর এগুলো স্কুলে চলবে না। কারণ, ঢাকার রাস্তায় যেগুলো দেয়া হয়েছিল, তা অকেজো হয়ে গেছে। আমি মনে করি এ প্রকল্পের পুরোটাই হবে অপচয় ও লুটপাট। এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো স্কুলগুলোয় ভবন নির্মাণ, খেলার মাঠ তৈরি, পাঠাগার তৈরি করা।
এ ব্যাপারে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান মানবজমিনকে বলেন, যেহেতু পরিকল্পনা কমিশনই এটা নিয়ে আপত্তি তুলেছে এটা পরিষ্কার এর কোনো যৌক্তিকতা নেই। কারণ, আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সার্বিক অবকাঠামোর দিক বিবেচনা করলে এই প্রকল্প অসাঞ্জস্যপূর্ণ এবং বিলাসিতা ছাড়া কিছু না। তিনি বলেন, এর পেছনে কোনো বিশেষ মহল লাভবান হবে কি না দেখা প্রয়োজন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবকাঠামোর আরও অনেক দিক আছে, সেখানে অর্থ ব্যয় করা সম্ভব। এ প্রকল্পের অর্থ দিয়ে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উন্নত শৌচাগার তৈরি করা যায়। এসব বিষয়কে প্রাধান্য দেয়া উচিত বলে মত দেন তিনি।
No comments