প্রধান বিচারপতি নিয়োগে ধীরে চলো নীতি
দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো: আবদুল ওয়াহহাব মিঞা |
প্রধান
বিচারপতি নিয়োগে ধীরে চলোনীতি অবলম্বন করছে সরকার। আপাতত দায়িত্বপ্রাপ্ত
প্রধান বিচারপতি দিয়েই চলতে আগ্রহী। এ মুহূর্তে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে
নতুন করে কোনো বিতর্কে যেতে চায় না সরকার। তাই ধীরে চলো নীতি অবলম্বন
করছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার
সিনহার পদত্যাগের পর নতুন প্রধান বিচারপতি হিসেবে কে নিয়োগ পাচ্ছেন, তা
নিয়ে সব মহলেই আলোচনার ঝড় ওঠে। দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো: আবদুল
ওয়াহহাব মিঞাকে দেশের ২২তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হবে, না আপিল
বিভাগের অন্য কোনো বিচারপতিকে এই ছিল আলোচনার মূল বিষয়। প্রধান বিচারপতি
পদে নিয়োগের জন্য জ্যেষ্ঠতা অনুসারে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো:
আবদুল ওয়াহহাব মিঞা এবং আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নাম
আসে। তবে ঝোঁক বেশি দ্বিতীয় জ্যেষ্ঠ বিচারপতির দিকে। আইন মন্ত্রণালয়ের
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগে সময় নিয়ে
এগোচ্ছে সরকার। কারণ আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো: আবদুল ওয়াহহার
মিঞাকে ডিঙ্গিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে নিয়োগ
দিয়ে এ মুহূর্তে বিতর্ক বাড়াতে চায় না। সরকারের নীতিনির্ধারকেরা আপাতত
দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি দিয়েই কার্যক্রম চালাতে চান। সংবিধান
অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি আপিল বিভাগের যেকোনো বিচারপতিকেই প্রধান বিচারপতি পদে
নিয়োগ দিতে পারেন। তবে এ ক্ষেত্রে সরকারের নীতিনির্ধারকদের সিদ্ধান্তের
ওপরই নির্ভর করছে কে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পাবেন। নতুন প্রধান
বিচারপতি নিয়োগ প্রসঙ্গে গত ১৫ নভেম্বর রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী
আনিসুল হক এক প্রশ্নের জবাবে সাংবাদিকদের বলেছেন, প্রধান বিচারপতি নিয়োগ
সম্পূর্ণ রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার। রাষ্ট্রপতি তার সময় অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি
নিয়োগ দেবেন। তবে কত দিনের মধ্যে নিয়োগ দিতে হবে, এর কোনো বাধ্যবাধকতা
নেই। তিনি (রাষ্ট্রপতি) যখন চাইবেন, তখনই প্রধান বিচারপতি পদে নিয়োগ দিতে
পারেন। প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিষয়টি যেহেতু একেবারেই রাষ্ট্রপতির
এখতিয়ার, তাই এ ব্যাপারে আইন মন্ত্রণালয়ের বলার কিছু নেই। বর্তমানে প্রধান
বিচারপতি নেই, এটা কোনো সঙ্কট কি না এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন,
এটি কোনো সমস্যা না। সংবিধানে প্রধান বিচারপতি অনুপস্থিতিতে বা পদত্যাগ
করলে কী হবে বা কে দায়িত্ব পালন করবেন, তা বলা আছে।
এ কারণে সাবেক প্রধান
বিচারপতি (সুরেন্দ্র কুমার সিনহা) ছুটিতে যাওয়ার পরপরই বিচারপতি মো: আবদুল
ওয়াহহাব মিঞাকে (দায়িত্বপ্রাপ্ত) প্রধান বিচারপতি করেন রাষ্ট্রপতি। সূত্র
জানিয়েছে, সংবিধানের ৯৫(১) অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল
হামিদ প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগপ্রক্রিয়া চূড়ান্ত করবেন। এ বিষয়ে
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গণমাধ্যমকে বলেছেন, সংবিধান অনুসারে রাষ্ট্রপতি
প্রধান বিচারপতি হিসেবে যাকে নিয়োগ দেবেন, তার নাম উল্লেখ করে আইন
মন্ত্রণালয় থেকে গেজেট প্রকাশ করা হবে। এ দিকে আপিল বিভাগে বর্তমানে পাঁচজন
বিচারপতি রয়েছেন। তাদের অবসরের বয়সসীমা ৬৭ বছর। জ্যেষ্ঠতানুসারে আপিল
বিভাগের বিচারপতি মো: আবদুল ওয়াহহাব মিঞা ২০১৮ সালের ১১ নভেম্বর অবসরে
যাবেন। এরপর বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর এবং
বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ২০২৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর অবসরে যাবেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগে জ্যেষ্ঠতা অনুসরণ
রাষ্ট্রপতির জন্য বাধ্যবাধকতা নয়। সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি আপিল বিভাগের
যে কাউকে নিয়োগ দিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। তার পরও জ্যেষ্ঠতা
লঙ্ঘন প্রত্যাশিত নয় বলে মনে করেন তিনি। প্রসঙ্গত, জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন
(সুপারসিড) করে উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগের ঘটনা একাধিকবার হয়েছে। সর্বশেষ,
২০১১ সালে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে প্রধান
বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হলে এতে আপিল বিভাগের বিচারপতি আবদুল মতিন ও বিচারপতি
শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান ছুটিতে চলে যান।
No comments