ব্ল্যাকমেইল অতঃপর ‘গ্যাংরেপ’
‘এভাবে লায়েস আমাকে ব্ল্যাকমেইল করবে ভাবতে পারিনি। তাকে আমি অন্ধ বিশ্বাস করতাম। ভালোবাসতাম। কিন্তু লায়েস বিয়ের কথা বলে হোটেল কক্ষে নিয়ে একা ভোগ করেনি, ভোগের পণ্য বানিয়েছে অপর চার বন্ধুরও।’-কথাগুলো বলে কাঁদছিলেন সিলেটের ‘গ্যাংরেপ’র শিকার হওয়া তরুণী। গ্যাংরেপের পর অজ্ঞান অবস্থায় ওই তরুণীকে হোটেল কক্ষে রেখেই পালিয়ে যায় প্রেমিক লায়েস ও তার বন্ধুরা। জ্ঞান ফিরে স্বজনদের ফোন দিলে তারা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। জকিগঞ্জের মেয়ে ওই তরুণী। আর কানাইঘাটের ছেলে লায়েস উদ্দিন। দুজনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। গত ১১ই অক্টোবরের এ ঘটনায় ২০শে অক্টোবর এয়ারপোর্ট থানায় মামলা হয়েছে। মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, জকিগঞ্জ উপজেলার ওই তরুণীর সঙ্গে কানাইঘাট উপজেলার রাজাগঞ্জ গ্রামের রফিক উদ্দিন চৌধুরীর ছেলে লায়েস উদ্দিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। দীর্ঘ প্রেমের একপর্যায়ে লায়েস ও তার সহযোগী ফুজায়েলকে নিয়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তরুণীকে গত ১১ই অক্টোবর একটি সিএনজি যোগে সিলেট নগরীর এয়ারপোর্টস্থ হিল সাইড হলিডে হোম হোটেলে নিয়ে যায়। সেখানে লায়েসের আরও সহযোগী মঈন উদ্দিন, শরীফ ও ফখরুল ইসলাম ওরফে কায়েদে আজম উপস্থিত ছিল। তারা সামিয়া আক্তারকে নিয়ে প্রথমে শুরু করে বিয়ের ব্যাপারে আলোচনা ও নানা রসিকতা। লায়েস ও সামিয়ার বিয়েতে কে উকিল পিতা আর কে কে সাক্ষী হবেন সেটিও আলোচনা হয়। এভাবে সময় ক্ষেপণের পর এক পর্যায়ে তরুণীকে নিয়ে যাওয়া হয় হোটেলের একটি কক্ষে। আর ওই কক্ষে তাকে বন্দি করে একে একে চালায় নির্যাতন। লম্পটদের গণধর্ষণে অজ্ঞান হয়ে পড়েন তরুণী। এ সময় লম্পটরা হোটেল কক্ষে রেখেই পালিয়ে যায়। এদিকে, জ্ঞান ফেরার পর মোবাইল ফোনে স্বজনদের কাছে বিষয়টি জানান তরুণী। পরে তারা এসে হোটেলের কক্ষ থেকে তাকে উদ্ধার করে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। তিন দিন চিকিৎসার পর পুলিশ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় তার খালায় বাসায় আশ্রয় নেন। পরিবারের সম্মানের কথা চিন্তা করে জকিগঞ্জস্থ বাড়িতে যেতে পারছেন না। এ ব্যাপারে নির্যাতিতা বাদী হয়ে এসএমপির বিমানবন্দর থানায় একটি নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেছেন। মামলা ১৬। তারিখ- ২০-১০-১৫। মামলার আসামিরা হলো, কানাইঘাট উপজেলার রাজাগঞ্জ গ্রামের রফিক উদ্দিন চৌধুরীর ছেলে লায়েস উদ্দিন (৩২), একই উপজেলার বড়বন্দ দালান বাড়ি এলাকার মৃত আবদুল হকের ছেলে ফখরুল আহমদ ওরফে কায়েদে আযম, ওসমানী নগর থানার কুরুয়া বাজার এলাকার দৌলতপুর গ্রামের মঈন উদ্দিন (৩০), জকিগঞ্জ উপজেলার বিয়াবাইল নিয়াগুল গ্রামের মৃত আবদুস সুবহানের ছেলে ফুজায়েল আহমদ (২৯), একই উপজেলার খলাদাফনিয়া গ্রামের মতিউর রহমানের ছেলে শরিফ উদ্দিন (২৭)। এদিকে, ঘটনার প্রায় ১২ দিন ও মামলার তিন দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই জহিরুল হক জানিয়েছেন, আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। দুর্গাপূজার ডিউটি থাকার কারণে মাঝখানে অভিযান স্তিমিত ছিল। এদিকে, নির্যাতিতা তরুণী জানায়, মামলা করার পর তার প্রেমিক মোবাইল ফোনে তার সঙ্গে যোগাযোগ করছে এবং মামলা তুলে নেয়ার হুমকি দিচ্ছে। উল্টো তারা বলছে, যদি মামলা না তোলা হয় তাহলে তাদের কাছে ধর্ষণের ভিডিও এবং ছবি রয়েছে। সেগুলোও বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হচ্ছে।
No comments