শেয়ারবাজারে তারল্য প্রবাহ কমছে
শেয়ারবাজারে লেনদেন কমছেই। গত সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গড় লেনদেন প্রায় ১৩ শতাংশ কমেছে। আর মোট লেনদেন কমেছে ৩০ শতাংশ। একইভাবে আগের সপ্তাহের তুলনায় কমেছে মূল্যসূচক ও বাজার মূলধন। বিশ্লেষকরা বলছেন, বড় কোম্পানিগুলোর দরপতন বাজারে প্রভাব ফেলছে। বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা এসব কোম্পানির শেয়ার ছেড়ে দিচ্ছে। এছাড়া ব্যাংকের বিনিয়োগ সমন্বয়ের কারণে বাজারে বিক্রির চাপ রয়েছে। সব মিলিয়ে অস্বস্তিতে রয়েছে শেয়ারবাজার। জানা গেছে, গত সপ্তাহে ৪ দিনে ডিএসইতে ১ হাজার ৩৪২ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৩৩৫ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। আগের সপ্তাহে ৫ দিনে ১ হাজার ৯১৮ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল। প্রতিদিন গড়ে ৩৮৩ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল। এ হিসাবে গত সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেন কমেছে ৫৭৫ কোটি টাকা। শতকরা হিসাবে যা ৩০ শতাংশ। আর প্রতিদিনের গড় লেনদেন কমেছে ৪৮ কোটি টাকা। শতকরা হিসেবে যা ১২ দশমিক ৫৩ শতাংশ। কয়েক সপ্তাহ আগেও ডিএসইতে গড়ে ৫০০ কোটি টাকা লেনদেন হতো। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহে লেনদেনের পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে কমছে। এর ফলে গড় লেনদেন নেমে এসেছে ৩৫০ কোটি টাকারও নিচে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ কমে যাওয়ায় লেনদেন কমছে। এছাড়া ধারাবাহিক পতনের কারণে ব্যক্তি শ্রেণীর বিনিয়োগকারীরাও বাজারে তেমনভাবে সক্রিয় নন।
এদিকে গত মূল্যসূচকও কমেছে। সপ্তাহের শুরুতে ডিএসইর ব্রড সূচক ছিল ৪ হাজার ৬৭৬ পয়েন্ট। সপ্তাহ শেষে তা কমে ৪ হাজার ৬৪৭ পয়েন্টে নেমে এসেছে। এ হিসেবে আলোচ্য সময়ে সূচক কমেছে ২৮ পয়েন্ট। শতকরা হিসেবে যা দশমিক ৬২ শতাংশ। লেনদেনকৃত ৩২৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ১০৭টির, কমেছে ২০১টি ও অপরিবর্তিত রয়েছে ১৮টির দাম। তবে নতুন কোম্পানি কেডিএস এক্সেসরিজ তালিকাভুক্ত হওয়ায় ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে। সপ্তাহের শুরুতে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৩ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকা। সপ্তাহ শেষে তা বেড়ে ৩ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। এ হিসেবে বাজার মূলধন ১ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, পতনের কারণটি স্পষ্ট নয়। হঠাৎ করে দরপতনের মতো পারিপার্শ্বিক কোনো অবস্থা সৃষ্টি হয়নি। তবে দেশের বিনিয়োগকারীরা এখনও হুজুগে শেয়ার বেচাকেনা করে। এছাড়া বাজারে কারসাজির জন্য একটি চক্র সক্রিয় রয়েছে। বিষয়টি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে খতিয়ে দেখতে হবে। অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ের দরপতন অপ্রত্যাশিত। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি এখানে অনেক বেশি। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে জাপানি ও ইতালির নাগরিকের হত্যার কারণে বাজারে প্রভাব পড়তে পারে। এছাড়া বিদেশী ক্রেতারাও পোশাক খাতের অর্ডার বাতিল করছে। বিষয়টি নেতিবাচক। তবে তিনি মনে করেন আইসিবিসহ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সাপোর্ট দিলে বাজার এ অবস্থায় টিকে থাকতে পারে। সপ্তাহজুড়ে লেনদেনের শীর্ষে রয়েছে লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট। কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১২৩ কোটি টাকা। সপ্তাহের মোট লেনদেনের ৯ দশমিক ১৯ শতাংশই লেনদেন হয়েছে এ কোম্পানির। তবে আগের সপ্তাহের তুলনায় কোম্পানিটির লেনদেন কমেছে দশমিক ৫৬ শতাংশ। আগের সপ্তাহের তুলনায় ১ দশমিক ৯০ শতাংশ লেনদেন কমার পরও দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বেক্সিমকো ফার্মা। ৫২ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে এ কোম্পানির, যা সপ্তাহের মোট লেনদেনের ৩ দশমিক ৯২ শতাংশ। লেনদেনের তৃতীয় স্থানে থাকা কেডিএস এক্সেসরিজের সপ্তাহজুড়ে ৪৭ কোটি ৪৭ লাখ ৬৭ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ দশে থাকা অন্য কোম্পানিগুলো হচ্ছে- বিএসআরএম স্টিল, গ্রামীণফোন, এমারল্ড অয়েল, মোজাফ্ফর হোসাইন স্পিনিং মিলস, আমান ফিড, সাইফ পাওয়ারটেক, ইফাদ অটো।
No comments