ঢাকার ৫১ খাদ্য গুদামে তালা by মুজিব মাসুদ
টেন্ডার
প্রক্রিয়া বন্ধ করতে ঘোষণা ছাড়াই তেজগাঁওয়ের ৫১টি খাদ্য গুদামে (সিএসডি)
তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে সিএসডি শ্রমিক ইউনিয়ন সিবিএ। শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে
১৯ অক্টোবর থেকে এসব খাদ্য গুদামে ধান-গম ও ত্রাণসামগ্রী লোড-আনলোড বন্ধ
আছে। এতে সিএসডির সামনের রাস্তায় শতাধিক ট্রাকের জট লেগে গেছে। রাতের
অন্ধকারে স্থানীয় অসাধু লোকজন এসব ট্রাক থেকে খাদ্যশস্য চুরি করছে বলে
অভিযোগ উঠেছে।
৪ অক্টোবর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অফিস থেকে তেজগাঁও সিএসডি গোডাউনের মালামাল লোড-আনলোডের জন্য শ্রম ও হ্যান্ডেলিং ঠিকাদার নিয়োগের লক্ষ্যে উন্মুক্ত দরপত্র আহবান করা হয়। মূলত এই দরপত্র আহবানকে কেন্দ্র করে সিবিএর কিছু অসাধু নেতা সোমবার থেকে গোডাউনগুলোতে তালা ঝুলিয়ে দেয়। গুদামগুলো থেকে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার রেশন সরবরাহ করা হয়। এছাড়া দেশের বিভিন্ন গুদামে টিআর-কাবিখার চাল-গম সরবরাহ করা হয়ে থাকে।
ঢাকা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. জাহাঙ্গীর আলম যুগান্তরকে বলেন, সরকারি টেন্ডার প্রক্রিয়া বন্ধ করতেই মূলত সিবিএ সংগঠনগুলো গুদাম থেকে মালামাল লোড-আনলোড বন্ধ রেখেছে। তিনি বলেন, এদের কারণে দীর্ঘদিন ধরে তেজগাঁও সিএসডিতে শ্রম হ্যান্ডেলিং এজেন্ট নিয়োগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে প্রতি বছর সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ গচ্চা যাচ্ছে। জবাবদিহিমূলক জনবল না থাকায় অনেক খাদ্যশস্য চুরিও হচ্ছে। এ কারণে এ বছর তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন টেন্ডারের মাধ্যমে শ্রম হ্যান্ডেলিং এজেন্ট নিয়োগ দিয়ে মালামাল লোড-আনলোড কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
সিবিএ নেতা আলমগীর সৈকত বলেন, শ্রম হ্যান্ডেলিং ঠিকাদার নিয়োগের টেন্ডার বাতিলসহ শ্রমিকদের ৭ দফা দাবি মানতে হবে। অন্যথায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ঢাকা সিএসডির ৫১ খাদ্য গুদাম থেকে মালামাল লোড-আনলোড বন্ধ থাকবে।
খাদ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালেও তেজগাঁও সিএসডির জন্য শ্রম হ্যান্ডেলিং এজেন্ট নিয়োগের দরপত্র আহবান করা হয়েছিল। ২০টির অধিক এজেন্ট এতে অংশ নিয়েছিল। যাচাই-বাছাই শেষে সর্বনিু দরদাতা হিসেবে চিহ্নিত হয় একটি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু সিবিএ সিন্ডিকেটের কারণে সেই কার্যক্রম ভেস্তে যায়। জানা গেছে, সর্বনিু দরদাতা এ ঘটনায় আদালতে মামলা করে তার পক্ষে রায় নিয়ে আসেন। কিন্তু খাদ্য গুদাম কর্তৃপক্ষ ওই টেন্ডার বাতিল করে দেয়।
শুক্রবার সরকারি ছুটির দিনেও সিএসডি চত্বর ছিল সরগরম। এ এলাকায় সিবিএর নেতৃত্বে ৭ দফা দাবি আদায়ে মিছিল সমাবেশ হয়েছে। স্থানীয় কর্মকর্তা-কর্মচারী যারা স্টাফ কোয়ার্টারে বসবাস করছেন তাদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে পুরো সিএসডিজুড়ে। খাদ্যশস্য লোড-আনলোড না হওয়ার খবরে বৃহস্পতিবার জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জাহাঙ্গীর আলম সিএসডি পরিদর্শনে এসে সিবিএর তোপের মুখে পড়েন। এক ঘণ্টা শ্রমিকরা তাকে অবরুদ্ধ করে রাখে। অভিযোগ রয়েছে সিবিএর অসাধু নেতাদের হাতে সারা দেশের ৪শ’র বেশি খাদ্য গুদাম জিম্মি হয়ে আছে। শ্রমিক সংগঠনের নামে সিবিএর এ ধরনের নেতারা সারা দেশের সংশ্লিষ্ট খাদ্য গুদামে শ্রম হ্যান্ডেলিং এজেন্ট নিয়োগ করতে দিচ্ছে না। এজেন্ট নিয়োগ করতে না দিয়ে তাদের ভাড়া করা জনবল দিয়ে গুদামে মালামাল লোড-আনলোড করাচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জানান, শ্রম হ্যান্ডেলিং এজেন্ট নিয়োগ দিতে না পারায় বছরে সরকারের ৫০ কোটি টাকার বেশি অর্থ গচ্চা যাচ্ছে। এজেন্টের মাধ্যমে লোড আনলোড হলে গড়ে লেবারপ্রতি দৈনিক ৮ থেকে ১০ টাকা খরচ পড়ে। অপরদিকে যেসব সিএসডি ও এলএসডিতে হ্যান্ডেলিং এজেন্ট নেই সেখানে লেবারপ্রতি সরকারের খরচ হচ্ছে দৈনিক ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। এ কারণে এজেন্ট নিয়োগ দেয়ার জন্যই দরপত্র দেয়া হয়। শ্রম হ্যান্ডেলিং এজেন্ট নিয়োগ দিতে না পারায় একদিকে সরকারের অর্থ বেশি অপচয় হচ্ছে। অপরদিকে জবাবদিহিমূলক জনবল না থাকায় প্রতিদিন গুদামগুলো থেকে কোটি টাকার বেশি খাদ্যশস্য চুরি হচ্ছে। অসাধু শ্রমিক নেতারা এভাবে জিম্মি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি সরকারি খাদ্য গুদাম থেকে মালামাল লোড-আনলোডের জন্য লেবার নিয়োগে নীতিমালা রয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় দরপত্র আহবান করে শ্রম হ্যান্ডেলিং এজেন্ট নিয়োগ করতে হয়। এসব হ্যান্ডেলিং এজেন্ট নিয়োগে দুই খাম পদ্ধতিতে উন্মুক্ত দরপত্র আহবান করতে হয়। নিয়োগকৃত হ্যান্ডেলিং এজেন্টকে ২ বছরের কাজের অভিজ্ঞ হতে হয়। হ্যান্ডেলিং এজেন্ট কর্তৃক নিয়োগকৃত লেবারদের সব ধরনের কার্যক্রমের জন্য এজেন্টকে জবাবদিহি করে থাকে। ১০ লাখ টাকার ব্যাংক সিকিউরিটি ও ২০ লাখ টাকার সম্পদ থাকতে হয় নিয়োগকৃত ঠিকাদারের।
ঢাকা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জাহাঙ্গীর আলম জানান, হ্যান্ডেলিং এজেন্ট থাকলে কাজের মধ্যে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকে। মালামাল চুরিসহ সব ধরনের অপকর্মের জন্য এজেন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যায়। তিনি বলেন, খাদ্যশস্যভর্তি প্রতিটি গুদামে কোটি কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষিত থাকে। জবাবদিহিমূলক ঠিকাদার না থাকলে এসব গুদামের নিয়ন্ত্রণ রাখাও কষ্টকর।
বৃহস্পতিবার সরেজমিন তেজগাঁও সিএসডি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ৫১টি খাদ্য গুদামে সবগুলোতে তালা ঝুলানো। প্রতিটি গুদামের সামনে সিবিএর অসৎ নেতাদের নেতৃত্বে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা পাহারা দিচ্ছে। খাদ্যশস্য নিয়ে কোনো ট্রাক সিএসডির ভেতরে প্রবেশ করতে পারছে না। একইভাবে গুদাম থেকে খাদ্যশস্যও বের করতে পারছে না।
জানা গেছে, শুধু ঢাকা জেলার তেজগাঁও সিএসডি নয়, সারা দেশের কমপক্ষে ৪শ’ সিএসডি ও এলএসডিতে সরকার মনোনীত কোনো ধরনের শ্রম হ্যান্ডেলিং এজেন্ট নেই। এসব গুদাম সিবিএ নেতারা দখল করে তাদের নিজস্ব জনবল দিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছে।
তবে তেজগাঁও সিএসডি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়, মন্ত্রণালয় ও সিএডসির (কেন্দ্রীয় খাদ্য সংরক্ষণাগার) কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে স্থানীয় সিবিএ নেতাদের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট বছরের পর বছর ৫১টি খাদ্য গুদাম জিম্মি করে রেখেছে। এই সিন্ডিকেটের হস্তক্ষেপ ছাড়া এখানে কোনো ধরনের প্রশাসনিক কার্যক্রম করতে পারে না খাদ্য গুমাম কর্তৃপক্ষ। লেবার নিয়োগ, মালামাল লোড-আনলোড, ট্রাক ভাড়া থেকে শুরু করে সব ধরনের প্রশাসনিক কার্যক্রম সিন্ডিকেটের গ্রিন সিগন্যাল ছাড়া হয় না।
অভিযোগ আছে, সিএসডির বেশ কয়েকটি ভবন ও কোয়ার্টার দখল করে এসব সিবিএ নেতা বছরের পর বছর বসবাস করছে। কোনো ধরনের সরকারি হস্তক্ষেপ না থাকায় কোয়ার্টারগুলোতে চলে নানা অসামাজিক কার্যক্রম। সন্ধ্যার পর সিএসডির অভ্যন্তরেও চলে সিবিএ নেতা ও স্থানীয় সন্ত্রাসীদের অসামাজিক কার্যক্রম ও মদ-গাঁজার আসর। সিএসডির অভ্যন্তরে প্রবেশের জন্য একটি কেন্দ্রীয় গেট থাকলেও এর নিয়ন্ত্রণও সিবিএ সিন্ডিকেটের হাতে। এ কারণে সন্ধ্যার পর পুরো সিএসডির নিয়ন্ত্রণ চলে যায় স্থানীয় সন্ত্রাসীদের দখলে। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, সিবিএর কারণে অরক্ষিত হয়ে পড়েছে পুরো সিএসডি এলাকা।
এ প্রসঙ্গে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার অফিসার ইনচার্জ মিজানুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার কারণে এ এলাকায় মোবাইল টিম নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এছাড়া ওই এলাকায় পুলিশ ফাঁড়ি আছে। তারাও সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছে।
৭ দফার দাবিতে ইউনিয়নের বিক্ষোভ সভা : তেজগাঁও সিএসডি গুদাম লেবার ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ বলেছেন, ৭ দফা বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত গুদাম থেকে সরকারি খাদ্যশস্য ও ত্রাণসামগ্রী বোঝাই ও খালাস কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। শুক্রবার ইউনিয়নের পক্ষ থেকে সিএসডি ব্যবস্থাপকের কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সভা থেকে এ ঘোষণা দেয়া হয়। সংগঠনের পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় পূর্বঘোষিত অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের চতুর্থ দিন শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে। চার দিন শ্রমিকরা গুদাম থেকে খাদ্যশস্য লোড-আনলোড থেকে বিরত ছিল। সরকার তাদের দাবি না মানলে এই ধর্মঘট অনির্দিষ্টকালের জন্য অব্যাহত থাকবে। ইউনিয়নের সভাপতি দুদু মিয়ার সভাপতিত্বে শুক্রবারের বিক্ষোভ-সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াসিন শেখ, শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক কাজল মৃধা প্রমুখ। বক্তারা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, তেজগাঁও সিএসডি খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। ৪ দিন ধরে সরকারি খাদ্যশস্য ও ত্রাণসামগ্রী বোঝাই-খালাস হচ্ছে না। অথচ সরকার এই সমস্যা সমাধানে কোনো ভূমিকা রাখছে না। আজ সকাল ১০টায় সিএসডির অভ্যন্তরে ৫ম দিনের মতো সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
৪ অক্টোবর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অফিস থেকে তেজগাঁও সিএসডি গোডাউনের মালামাল লোড-আনলোডের জন্য শ্রম ও হ্যান্ডেলিং ঠিকাদার নিয়োগের লক্ষ্যে উন্মুক্ত দরপত্র আহবান করা হয়। মূলত এই দরপত্র আহবানকে কেন্দ্র করে সিবিএর কিছু অসাধু নেতা সোমবার থেকে গোডাউনগুলোতে তালা ঝুলিয়ে দেয়। গুদামগুলো থেকে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার রেশন সরবরাহ করা হয়। এছাড়া দেশের বিভিন্ন গুদামে টিআর-কাবিখার চাল-গম সরবরাহ করা হয়ে থাকে।
ঢাকা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. জাহাঙ্গীর আলম যুগান্তরকে বলেন, সরকারি টেন্ডার প্রক্রিয়া বন্ধ করতেই মূলত সিবিএ সংগঠনগুলো গুদাম থেকে মালামাল লোড-আনলোড বন্ধ রেখেছে। তিনি বলেন, এদের কারণে দীর্ঘদিন ধরে তেজগাঁও সিএসডিতে শ্রম হ্যান্ডেলিং এজেন্ট নিয়োগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে প্রতি বছর সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ গচ্চা যাচ্ছে। জবাবদিহিমূলক জনবল না থাকায় অনেক খাদ্যশস্য চুরিও হচ্ছে। এ কারণে এ বছর তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন টেন্ডারের মাধ্যমে শ্রম হ্যান্ডেলিং এজেন্ট নিয়োগ দিয়ে মালামাল লোড-আনলোড কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
সিবিএ নেতা আলমগীর সৈকত বলেন, শ্রম হ্যান্ডেলিং ঠিকাদার নিয়োগের টেন্ডার বাতিলসহ শ্রমিকদের ৭ দফা দাবি মানতে হবে। অন্যথায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ঢাকা সিএসডির ৫১ খাদ্য গুদাম থেকে মালামাল লোড-আনলোড বন্ধ থাকবে।
খাদ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালেও তেজগাঁও সিএসডির জন্য শ্রম হ্যান্ডেলিং এজেন্ট নিয়োগের দরপত্র আহবান করা হয়েছিল। ২০টির অধিক এজেন্ট এতে অংশ নিয়েছিল। যাচাই-বাছাই শেষে সর্বনিু দরদাতা হিসেবে চিহ্নিত হয় একটি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু সিবিএ সিন্ডিকেটের কারণে সেই কার্যক্রম ভেস্তে যায়। জানা গেছে, সর্বনিু দরদাতা এ ঘটনায় আদালতে মামলা করে তার পক্ষে রায় নিয়ে আসেন। কিন্তু খাদ্য গুদাম কর্তৃপক্ষ ওই টেন্ডার বাতিল করে দেয়।
শুক্রবার সরকারি ছুটির দিনেও সিএসডি চত্বর ছিল সরগরম। এ এলাকায় সিবিএর নেতৃত্বে ৭ দফা দাবি আদায়ে মিছিল সমাবেশ হয়েছে। স্থানীয় কর্মকর্তা-কর্মচারী যারা স্টাফ কোয়ার্টারে বসবাস করছেন তাদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে পুরো সিএসডিজুড়ে। খাদ্যশস্য লোড-আনলোড না হওয়ার খবরে বৃহস্পতিবার জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জাহাঙ্গীর আলম সিএসডি পরিদর্শনে এসে সিবিএর তোপের মুখে পড়েন। এক ঘণ্টা শ্রমিকরা তাকে অবরুদ্ধ করে রাখে। অভিযোগ রয়েছে সিবিএর অসাধু নেতাদের হাতে সারা দেশের ৪শ’র বেশি খাদ্য গুদাম জিম্মি হয়ে আছে। শ্রমিক সংগঠনের নামে সিবিএর এ ধরনের নেতারা সারা দেশের সংশ্লিষ্ট খাদ্য গুদামে শ্রম হ্যান্ডেলিং এজেন্ট নিয়োগ করতে দিচ্ছে না। এজেন্ট নিয়োগ করতে না দিয়ে তাদের ভাড়া করা জনবল দিয়ে গুদামে মালামাল লোড-আনলোড করাচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জানান, শ্রম হ্যান্ডেলিং এজেন্ট নিয়োগ দিতে না পারায় বছরে সরকারের ৫০ কোটি টাকার বেশি অর্থ গচ্চা যাচ্ছে। এজেন্টের মাধ্যমে লোড আনলোড হলে গড়ে লেবারপ্রতি দৈনিক ৮ থেকে ১০ টাকা খরচ পড়ে। অপরদিকে যেসব সিএসডি ও এলএসডিতে হ্যান্ডেলিং এজেন্ট নেই সেখানে লেবারপ্রতি সরকারের খরচ হচ্ছে দৈনিক ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। এ কারণে এজেন্ট নিয়োগ দেয়ার জন্যই দরপত্র দেয়া হয়। শ্রম হ্যান্ডেলিং এজেন্ট নিয়োগ দিতে না পারায় একদিকে সরকারের অর্থ বেশি অপচয় হচ্ছে। অপরদিকে জবাবদিহিমূলক জনবল না থাকায় প্রতিদিন গুদামগুলো থেকে কোটি টাকার বেশি খাদ্যশস্য চুরি হচ্ছে। অসাধু শ্রমিক নেতারা এভাবে জিম্মি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি সরকারি খাদ্য গুদাম থেকে মালামাল লোড-আনলোডের জন্য লেবার নিয়োগে নীতিমালা রয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় দরপত্র আহবান করে শ্রম হ্যান্ডেলিং এজেন্ট নিয়োগ করতে হয়। এসব হ্যান্ডেলিং এজেন্ট নিয়োগে দুই খাম পদ্ধতিতে উন্মুক্ত দরপত্র আহবান করতে হয়। নিয়োগকৃত হ্যান্ডেলিং এজেন্টকে ২ বছরের কাজের অভিজ্ঞ হতে হয়। হ্যান্ডেলিং এজেন্ট কর্তৃক নিয়োগকৃত লেবারদের সব ধরনের কার্যক্রমের জন্য এজেন্টকে জবাবদিহি করে থাকে। ১০ লাখ টাকার ব্যাংক সিকিউরিটি ও ২০ লাখ টাকার সম্পদ থাকতে হয় নিয়োগকৃত ঠিকাদারের।
ঢাকা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জাহাঙ্গীর আলম জানান, হ্যান্ডেলিং এজেন্ট থাকলে কাজের মধ্যে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকে। মালামাল চুরিসহ সব ধরনের অপকর্মের জন্য এজেন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যায়। তিনি বলেন, খাদ্যশস্যভর্তি প্রতিটি গুদামে কোটি কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষিত থাকে। জবাবদিহিমূলক ঠিকাদার না থাকলে এসব গুদামের নিয়ন্ত্রণ রাখাও কষ্টকর।
বৃহস্পতিবার সরেজমিন তেজগাঁও সিএসডি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ৫১টি খাদ্য গুদামে সবগুলোতে তালা ঝুলানো। প্রতিটি গুদামের সামনে সিবিএর অসৎ নেতাদের নেতৃত্বে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা পাহারা দিচ্ছে। খাদ্যশস্য নিয়ে কোনো ট্রাক সিএসডির ভেতরে প্রবেশ করতে পারছে না। একইভাবে গুদাম থেকে খাদ্যশস্যও বের করতে পারছে না।
জানা গেছে, শুধু ঢাকা জেলার তেজগাঁও সিএসডি নয়, সারা দেশের কমপক্ষে ৪শ’ সিএসডি ও এলএসডিতে সরকার মনোনীত কোনো ধরনের শ্রম হ্যান্ডেলিং এজেন্ট নেই। এসব গুদাম সিবিএ নেতারা দখল করে তাদের নিজস্ব জনবল দিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছে।
তবে তেজগাঁও সিএসডি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়, মন্ত্রণালয় ও সিএডসির (কেন্দ্রীয় খাদ্য সংরক্ষণাগার) কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে স্থানীয় সিবিএ নেতাদের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট বছরের পর বছর ৫১টি খাদ্য গুদাম জিম্মি করে রেখেছে। এই সিন্ডিকেটের হস্তক্ষেপ ছাড়া এখানে কোনো ধরনের প্রশাসনিক কার্যক্রম করতে পারে না খাদ্য গুমাম কর্তৃপক্ষ। লেবার নিয়োগ, মালামাল লোড-আনলোড, ট্রাক ভাড়া থেকে শুরু করে সব ধরনের প্রশাসনিক কার্যক্রম সিন্ডিকেটের গ্রিন সিগন্যাল ছাড়া হয় না।
অভিযোগ আছে, সিএসডির বেশ কয়েকটি ভবন ও কোয়ার্টার দখল করে এসব সিবিএ নেতা বছরের পর বছর বসবাস করছে। কোনো ধরনের সরকারি হস্তক্ষেপ না থাকায় কোয়ার্টারগুলোতে চলে নানা অসামাজিক কার্যক্রম। সন্ধ্যার পর সিএসডির অভ্যন্তরেও চলে সিবিএ নেতা ও স্থানীয় সন্ত্রাসীদের অসামাজিক কার্যক্রম ও মদ-গাঁজার আসর। সিএসডির অভ্যন্তরে প্রবেশের জন্য একটি কেন্দ্রীয় গেট থাকলেও এর নিয়ন্ত্রণও সিবিএ সিন্ডিকেটের হাতে। এ কারণে সন্ধ্যার পর পুরো সিএসডির নিয়ন্ত্রণ চলে যায় স্থানীয় সন্ত্রাসীদের দখলে। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, সিবিএর কারণে অরক্ষিত হয়ে পড়েছে পুরো সিএসডি এলাকা।
এ প্রসঙ্গে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার অফিসার ইনচার্জ মিজানুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার কারণে এ এলাকায় মোবাইল টিম নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এছাড়া ওই এলাকায় পুলিশ ফাঁড়ি আছে। তারাও সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছে।
৭ দফার দাবিতে ইউনিয়নের বিক্ষোভ সভা : তেজগাঁও সিএসডি গুদাম লেবার ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ বলেছেন, ৭ দফা বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত গুদাম থেকে সরকারি খাদ্যশস্য ও ত্রাণসামগ্রী বোঝাই ও খালাস কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। শুক্রবার ইউনিয়নের পক্ষ থেকে সিএসডি ব্যবস্থাপকের কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সভা থেকে এ ঘোষণা দেয়া হয়। সংগঠনের পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় পূর্বঘোষিত অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের চতুর্থ দিন শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে। চার দিন শ্রমিকরা গুদাম থেকে খাদ্যশস্য লোড-আনলোড থেকে বিরত ছিল। সরকার তাদের দাবি না মানলে এই ধর্মঘট অনির্দিষ্টকালের জন্য অব্যাহত থাকবে। ইউনিয়নের সভাপতি দুদু মিয়ার সভাপতিত্বে শুক্রবারের বিক্ষোভ-সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াসিন শেখ, শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক কাজল মৃধা প্রমুখ। বক্তারা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, তেজগাঁও সিএসডি খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। ৪ দিন ধরে সরকারি খাদ্যশস্য ও ত্রাণসামগ্রী বোঝাই-খালাস হচ্ছে না। অথচ সরকার এই সমস্যা সমাধানে কোনো ভূমিকা রাখছে না। আজ সকাল ১০টায় সিএসডির অভ্যন্তরে ৫ম দিনের মতো সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
No comments