নামাজ শেষে মোনাজাত কতটা জরুরি by আহমেদ জামাল
নামাজ
শেষে মোনাজাত নিয়ে আলোচনা পর্যালোচনা ক্রমশ বাড়ছে মুসলিম সমাজে। এ নিয়ে
বিভক্তি দেখা যায় আলেম সমাজে। এতে বিভ্রান্তিতে পড়ছেন নামাজিরা। মোনাজাত
নামাজের কোন অংশ নয় এটা একবাক্যে স্বীকার করেন দেশের আলেম সমাজ। তবে
মোনাজাত নিয়ে বাড়াবাড়ি, তর্ক-বিতর্ক, মোনাজাত কুসংস্কার, করলে গুনাহ হবেÑ
এমন আচরণ এবং ধারণাকে সমর্থন করেন না তারা। উৎসাহিত করতে চান না মোনাজাতের
বিরোধিতাকে। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের পেশ ইমাম মুফতি মহিব্বুল্লাহিল
বাকী বলেন, নবী মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, নামাজের পর দোয়া কবুল
হয়। তাই নামাজ শেষে অনেকেই দোয়া করেন। এর মধ্য দিয়ে আত্মতৃপ্তিও পাওয়ার
চেষ্টা করেন। এটা করলে দোষের কিছু নেই। আর না করলেও ক্ষতি নেই। কারণ,
মোনাজাত বা দোয়া নামাজের অংশ নয়। তিনি বলেন, আসসালামু আলাইকুম
ও-রাহমাতুল্লাহ বলে ডানে বামে সালাম ফেরানোর সঙ্গে সঙ্গে নামাজের কার্যক্রম
শেষ হয়ে যায়। এরপর দোয়া কবুল হবে এ আশায় কেউ যদি মনের আকুতি নিয়ে মহান
আল্লাহর দরবারে হাত তোলেন, মোনাজাত করেন তাতে দোষের কি আছে। তবে মোনাজাত
করতেই হবে, আবার মোনাজাত করলে গুনাহ হবে, কোনভাবেই মোনাজাত করা যাবে নাÑ
এমন কঠিন আবশ্যকীয় মনোভাব পোষণ উচিত নয়। তার মতে, এই দুই ধরনের ধারণাই
শরিয়ত পরিপন্থি। এরা দুই ভাগে বিভক্ত। আর আমরা মধ্যপন্থিরা মনে করি নামাজ
শেষে দোয়া কবুল হবে এ আশায় মোনাজাত করতে পারি। না করলে দোয়া কবুল হবে না,
নামাজ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে তা নয়। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মুফতি
মোহাম্মদ ইসহাক বলেন, মোনাজাত নিয়ে বিতর্ক করার কিছু নেই। নামাজ শেষে মহান
আল্লাহ কাছে বিনয়ের সঙ্গে কিছু আরাধনা করাই হলো মোনাজাত। এটা নামাজের কোন
অংশ নয় ঠিক, কিন্তু ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায় প্রচলিত দীর্ঘদিনের একটি রেওয়াজ
হিসেবে প্রবীণ আলেমরা এটা করেছেন। তিনি বলেন, নামাজের মধ্যে পাঠ করা
প্রতিটি সুরা কেরাতই প্রার্থনা এতে কোন সন্দেহ নেই। এ দৃষ্টিভঙ্গিতে কোন
কোন আলেম নামাজ শেষে মোনাজাত করাকে অপ্রয়োজনীয় প্রার্থনা মনে করেন। তবে কোন
প্রার্থনা মহান আল্লাহ কবুল করবেন তার কোন নিশ্চয়তা নেই। তাছাড়া নামাজের
মধ্যে পাঠ করা প্রতিটি সুরা কেরাত আরবি ভাষায়। প্রার্থনা হলেও বেশির ভাগ
মুসল্লি তার অর্থ বোঝেন না। মহান আল্লাহর কাছে কি চাওয়া হলো তা উপলব্ধি
করতে পারেন না মুসল্লিরা। তাই নামাজ শেষে নিজের ভাষায় আল্লাহর কাছে কিছু
চাওয়াতে অনেকেই প্রশান্তি লাভ করেন। সমস্বরে অনেকে আমিন আমিন বলাতে মনের
একাগ্রতা সৃষ্টি হয়। এসব কিছু বিবেচনায় বুজুর্গ আলেমরা নামাজ শেষে মোনাজাত
করেছেন। তাদের দেখাদেখি আমরাও করছি। এক্ষেত্রে বিদাত, অথবা গুনাহ হওয়ার কোন
কারণ নেই। এটা নিয়ে বিতর্ক করা বোকামি বলেও মনে করেন প্রবীণ এই আলেম।
নামাজ শেষে মোনাজাত নিয়ে প্রায় একই ধরনের কথা বলেছেন বাংলাদেশ খেলাফত
আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা জাফরুল্লাহ খান। তিনি বলেন, সালাম ফেরানোর সঙ্গে
সঙ্গে নামাজ শেষ। এরপর যা কিছুই পড়া হয় তা নফল এবাদত। এটা মোনাজাত বা দোয়া
দরুদ কিংবা জিকির আসকারও হতে পারে। তিনি বলেন, যে ফরজ নামাজের পরে সুন্নতে
মোয়াক্কাদা নেই সেই নামাজের পরে এক ঘণ্টা এমনকি যতক্ষণ ইচ্ছা ততক্ষণ
মোনাজাত করা যায়। তবে মোনাজাতকে নামাজের মতো আবশ্যকীয় জরুরি মনে করা যাবে
না। এটা করতে হবে আবার করা যাবে না এমন ধারণাও ঠিক নয় বলে মনে করেন মাওলানা
জাফরুল্লাহ খান। ইসলামের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ নামাজ। হাদিসের ভাষায় নামাজ
বেহেস্তের চাবি। তাফসিরকারকদের মতে, পবিত্র কোরআনে অন্তত ৮০ বার নামাজ
কায়েমের তাগিদ দেয়া হয়েছে। বিশ্বনবী মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু
আলাইহিসসালাম জীবদ্দশায় নামাজকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। ইহকাল ত্যাগের
সময় আখেরি নবীর জবানে উচ্চারিত হয়েছে সালাত বা নামাজ শব্দটি। পবিত্র কোরআন
এবং হাদিসের বর্ণনায় প্রমাণিত, মহান আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় এবাদত
নামাজ। ইসলামী শরিয়তের এই ফরজ এবাদত নিয়ে কোন সন্দেহ বা বিতর্ক নেই। কিয়ামত
পর্যন্ত থাকবে না। কিন্তু এই ফরজ এবাদতের পর মোনাজাত নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষের
যুক্তিতর্ক নামাজিদের বিভক্ত করছে। বিভ্রান্তিতে ফেলছে। দেশের হাক্কানি
আলেম সমাজ এ বিতর্কের বিরুদ্ধে। তারা মুসলিম সমাজের বৃহত্তর স্বার্থে এ
ধরনের বিতর্ক এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন।
No comments