বাছতে হবে চৌকস লক্ষ্য by ফিন কিডল্যান্ড, বিয়ন লোমবোর্গ, টম শেলিং ও ন্যানসি স্টোকি
আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিশ্বের ১৯৩টি দেশের সরকার নিউইয়র্কে এক বৈঠকে মিলিত হবে, তারা সেখানে ২০৩০ সালের জন্য একগুচ্ছ উচ্চাভিলাষী ও বৈশ্বিক লক্ষ্য নির্ধারণ করবে। আগামী ১৫ বছর এই লক্ষ্যের আলোকে উন্নয়ন সহায়তা হিসেবে ২ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে। আবার একই লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশের জাতীয় বাজেটের হিসাব ছাড়া ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে।
কোপেনহেগেন ঐকমত্যের ভিত্তিতে একত্র হওয়া বিশ্বের ৮২ জন শীর্ষ অর্থনীতিবিদ ও ৪৪টি খাতের বিশেষজ্ঞদের পুনর্নিরীক্ষণের ভিত্তিতে আমাদের মধ্যে তিনজন—ফিন, টম ও ন্যানসি অর্থমূল্যের নিরিখে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রস্তাবিত লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে শতাধিক বাছাই করেছে। সবগুলো নিঃসন্দেহে সমান নয়। প্রতি এক ডলার ব্যয়ের নিরিখে কিছু লক্ষ্যবস্তু থেকে প্রাপ্ত সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত সুবিধা অনেক বেশি।
রাজনীতির স্বাভাবিক প্রবণতা হচ্ছে, সবাইকে ভালো কিছুর প্রতিশ্রুতি দেওয়া। আর জাতিসংঘ বর্তমানে ১৬৯টি ভালো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত লক্ষ্যবস্তুকে বেছে নেওয়ার মতো জায়গায় আছে। কিন্তু প্রাপ্ত প্রমাণের ভিত্তিতে পরিষ্কারভাবে দেখা যায়, সংখ্যায় কম হলেও এর কিছু লক্ষ্যবস্তু অন্যগুলোর চেয়ে অনেক বেশি প্রতিশ্রুতিশীল। সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার আশা আছে, এমন ১৯টি লক্ষ্যবস্তু আমরা চিহ্নিত করেছি। জাতিসংঘ যদি এই ১৯টিতে মনোযোগী হয়, তাহলে সামাজিক সুবিধার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যয়িত প্রতি এক ডলার থেকে তারা ২০ থেকে ৪০ ডলার লাভ করতে পারে। আর ১৬৯টি দেশের মধ্যে সমভাবে তা বণ্টন করা হলে এই অঙ্ক কমে ১০ ডলারে নেমে যেতে পারে। সহায়তা বাজেট দ্বিগুণ বা চার গুণ বাড়ানোর চেয়ে খরচের ব্যাপারে চৌকস হওয়া ভালো। আমাদের সংক্ষিপ্ত তালিকায় অনেক বিষয় এসেছে। কিন্তু এর সঙ্গে ব্যক্তিগত লক্ষ্যবস্তু যুক্ত হওয়ার কারণ হচ্ছে, জনগণের স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এটা কিছু সুবিধা সৃষ্টি করবে। যে তিনটি শিরোনামকে জাতিসংঘ আখ্যা দিয়েছে ‘মানুষ, গ্রহ ও সমৃদ্ধি বা পিপল, প্ল্যানেট অ্যান্ড প্রসপারিটি’।
কিছু লক্ষ্যবস্তু স্বাস্থ্যগত সুবিধার মাধ্যমে জনগণকে সরাসরি সহায়তা করে। যক্ষ্মা একটি ‘গোপন’ রোগ। দুই বিলিয়নের বেশি মানুষের শরীরে যক্ষ্মার ব্যাকটেরিয়া আছে, ১০ শতাংশ মানুষ কোনো না-কোনো সময় এ রোগে আক্রান্ত হবে। আর প্রতিবছর ১৫ লাখ মানুষ যক্ষ্মায় মারা যায়। কিন্তু এর চিকিৎসা মোটেও ব্যয়বহুল নয়, আর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এর চিকিৎসা খুবই কার্যকর। রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে এক ডলার খরচ করা তো আর ব্যয়বহুল ব্যাপার নয়, এর বিনিময়ে অনেক মানুষ বহু বছরের জন্য উৎপাদনশীল জীবন লাভ করতে পারে। ইবোলা সংবাদপত্রের শিরোনাম হতে পারে, কিন্তু যক্ষ্মা আরও বড় সমস্যা।
শিশুদের অপুষ্টি হ্রাস লক্ষ্য হিসেবে চমৎকার। বিশেষ করে, শিশুদের জন্য পুষ্টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। ভালো খাবার খেলে তাদের মস্তিষ্ক ও পেশি সুগঠিত হয়, এর সুবিধাও পাওয়া যায় জীবনভর। সুপুষ্ট শিশুরা স্কুলে থাকে বেশি, তারা শেখে বেশি, আর সমাজের অন্যদের চেয়ে তারা অনেক বেশি উৎপাদনশীলও হয়। হাতের কাছে থাকা তথ্য–প্রমাণে দেখা যায়, প্রতিবছর ৬৮ মিলিয়ন শিশুকে উন্নত পুষ্টি দেওয়া হলে তা দীর্ঘ মেয়াদে প্রতি এক ডলারের বিপরীতে ৪০ ডলারের সামাজিক সুবিধা সৃষ্টি করবে।
প্রতিশ্রুতি দেওয়ামাত্র সরকার একরকম সুখভোগ করে, এই অভ্যাস তাকে ছাড়তে হবে। এর বদলে তাকে উন্নয়নের চৌকস লক্ষ্য বেছে নিতে হবে আমাদের গ্রহকে কেন্দ্র করে চমৎকার কিছু লক্ষ্য রয়েছে। দুনিয়ার বিভিন্ন দেশের সরকারই জীবাশ্ম জ্বালানিতে ভর্তুকি দেয়, যার পরিমাণ বছরে ৫০০ বিলিয়ন ডলার। এই ভর্তুকি বন্ধ করে দিলে একদিকে যেমন দূষণ কমবে, তেমনি এই টাকা স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিনিয়োগ করা যাবে। প্রবাল রক্ষা করাও লক্ষ্যবস্তু হিসেবে বিস্ময়করভাবে কার্যকর। জৈব-বৈচিত্রে্যর পরিপ্রেক্ষিতে এর সুবিধা আছে। কিন্তু স্বাস্থ্যকর প্রবালের আরও কিছু বাস্তব ও তাৎক্ষণিক সুবিধা রয়েছে। এতে মাছের উৎপাদন বাড়ে। ফলে জেলে থেকে শুরু করে ভোক্তা ও যে পর্যটকেরা এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে চায়, তারাও উপকৃত হয়। অর্থাৎ পর্যটনশিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ও পর্যটকেরাও এর ফলে উপকৃত হয়।
সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও সর্বব্যাপক সমস্যা হচ্ছে দারিদ্র্য। এর কশাঘাতে এখনো শত শত কোটি মানুষের জীবন জেরবার হয়ে যাচ্ছে। শেষ বিচারে, অন্য আরও অনেক সমস্যার উৎস হচ্ছে এই দারিদ্র্য। দরিদ্র পরিবারগুলোর সন্তানেরা পর্যাপ্ত খাবার, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা পায় না। এর তাৎক্ষণিক ফল হিসেবে বিপুল পরিমাণ শিশু মারা যায়। আর যারা বেঁচে থাকে, তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ হয় না, উৎপাদনশীলতা কমে যায়। চূড়ান্ত পরিণতি হিসেবে আমরা দারিদ্র্যের চক্র দেখতে পাই।
উন্নত পুষ্টিমান ও শিক্ষা দারিদ্র্য দূরীকরণে সহায়ক হবে, কিন্তু আরেকটি লক্ষ্য আরও কার্যকর হবে এমন প্রতিশ্রুতি আছে: আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রতিবন্ধকতা হ্রাস। এই বিষয়ক ঐতিহাসিক তথ্য-প্রমাণ দেখলে তা বিশ্বাস না করে পারা যায় না। চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, চিলিসহ আরও কিছু দেশ এই প্রতিবন্ধকতা দূর করে নিজেদের আয় বাড়িয়েছে, দারিদ্র্য কমিয়েছে। এর ফলে প্রতিবছরই তাদের আয় দ্রুতগতিতে বেড়ে চলেছে। দোহায় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সফলভাবে সম্পন্ন হলে বিশ্বের ১৬ কোটি মানুষকে চরম দারিদ্র্য থেকে বের করে আনা সম্ভব।
লক্ষ্যবস্তুর তালিকা করলেই বিশ্বের সব সমস্যার সমাধান হবে না। আর বাস্তবোচিত বাজেটের মধ্যে কোনো তালিকাই তা করতে পারবে না। সীমিত অর্থ নিয়ে বাজারি যেভাবে তার তালিকা তৈরি করে, জাতিসংঘকেও কেউ সেভাবে তালিকা তৈরি করতে সহায়তা করতে পারে। ভালো লক্ষ্যবস্তু বেছে নেওয়া হলে সারা দুনিয়ার মানুষেরই সুবিধা বাড়বে, এমনকি পরের প্রজন্মও এ থেকে লাভবান হবে।
সরকার সবাইকে সবকিছুর প্রতিশ্রুতি দেয়। এই প্রতিশ্রুতি দেওয়ামাত্র সরকার একরকম সুখভোগ করে, এই অভ্যাস তাকে ছাড়তে হবে। এর বদলে তাকে উন্নয়নের চৌকস লক্ষ্য বেছে নিতে হবে।
ইংরেজি থেকে অনূদিত
ফিন কিডল্যান্ড: নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক, ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া * বিয়ন লোমবোর্গ: কোপেনহেগেন কনসেনসাস সেন্টারের প্রেসিডেন্ট * টম শেলিং: নোবেল বিজয়ী ও অধ্যাপক, ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড * ন্যানসি স্টোকি: ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর অধ্যাপক।
কোপেনহেগেন ঐকমত্যের ভিত্তিতে একত্র হওয়া বিশ্বের ৮২ জন শীর্ষ অর্থনীতিবিদ ও ৪৪টি খাতের বিশেষজ্ঞদের পুনর্নিরীক্ষণের ভিত্তিতে আমাদের মধ্যে তিনজন—ফিন, টম ও ন্যানসি অর্থমূল্যের নিরিখে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রস্তাবিত লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে শতাধিক বাছাই করেছে। সবগুলো নিঃসন্দেহে সমান নয়। প্রতি এক ডলার ব্যয়ের নিরিখে কিছু লক্ষ্যবস্তু থেকে প্রাপ্ত সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত সুবিধা অনেক বেশি।
রাজনীতির স্বাভাবিক প্রবণতা হচ্ছে, সবাইকে ভালো কিছুর প্রতিশ্রুতি দেওয়া। আর জাতিসংঘ বর্তমানে ১৬৯টি ভালো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত লক্ষ্যবস্তুকে বেছে নেওয়ার মতো জায়গায় আছে। কিন্তু প্রাপ্ত প্রমাণের ভিত্তিতে পরিষ্কারভাবে দেখা যায়, সংখ্যায় কম হলেও এর কিছু লক্ষ্যবস্তু অন্যগুলোর চেয়ে অনেক বেশি প্রতিশ্রুতিশীল। সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার আশা আছে, এমন ১৯টি লক্ষ্যবস্তু আমরা চিহ্নিত করেছি। জাতিসংঘ যদি এই ১৯টিতে মনোযোগী হয়, তাহলে সামাজিক সুবিধার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যয়িত প্রতি এক ডলার থেকে তারা ২০ থেকে ৪০ ডলার লাভ করতে পারে। আর ১৬৯টি দেশের মধ্যে সমভাবে তা বণ্টন করা হলে এই অঙ্ক কমে ১০ ডলারে নেমে যেতে পারে। সহায়তা বাজেট দ্বিগুণ বা চার গুণ বাড়ানোর চেয়ে খরচের ব্যাপারে চৌকস হওয়া ভালো। আমাদের সংক্ষিপ্ত তালিকায় অনেক বিষয় এসেছে। কিন্তু এর সঙ্গে ব্যক্তিগত লক্ষ্যবস্তু যুক্ত হওয়ার কারণ হচ্ছে, জনগণের স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এটা কিছু সুবিধা সৃষ্টি করবে। যে তিনটি শিরোনামকে জাতিসংঘ আখ্যা দিয়েছে ‘মানুষ, গ্রহ ও সমৃদ্ধি বা পিপল, প্ল্যানেট অ্যান্ড প্রসপারিটি’।
কিছু লক্ষ্যবস্তু স্বাস্থ্যগত সুবিধার মাধ্যমে জনগণকে সরাসরি সহায়তা করে। যক্ষ্মা একটি ‘গোপন’ রোগ। দুই বিলিয়নের বেশি মানুষের শরীরে যক্ষ্মার ব্যাকটেরিয়া আছে, ১০ শতাংশ মানুষ কোনো না-কোনো সময় এ রোগে আক্রান্ত হবে। আর প্রতিবছর ১৫ লাখ মানুষ যক্ষ্মায় মারা যায়। কিন্তু এর চিকিৎসা মোটেও ব্যয়বহুল নয়, আর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এর চিকিৎসা খুবই কার্যকর। রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে এক ডলার খরচ করা তো আর ব্যয়বহুল ব্যাপার নয়, এর বিনিময়ে অনেক মানুষ বহু বছরের জন্য উৎপাদনশীল জীবন লাভ করতে পারে। ইবোলা সংবাদপত্রের শিরোনাম হতে পারে, কিন্তু যক্ষ্মা আরও বড় সমস্যা।
শিশুদের অপুষ্টি হ্রাস লক্ষ্য হিসেবে চমৎকার। বিশেষ করে, শিশুদের জন্য পুষ্টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। ভালো খাবার খেলে তাদের মস্তিষ্ক ও পেশি সুগঠিত হয়, এর সুবিধাও পাওয়া যায় জীবনভর। সুপুষ্ট শিশুরা স্কুলে থাকে বেশি, তারা শেখে বেশি, আর সমাজের অন্যদের চেয়ে তারা অনেক বেশি উৎপাদনশীলও হয়। হাতের কাছে থাকা তথ্য–প্রমাণে দেখা যায়, প্রতিবছর ৬৮ মিলিয়ন শিশুকে উন্নত পুষ্টি দেওয়া হলে তা দীর্ঘ মেয়াদে প্রতি এক ডলারের বিপরীতে ৪০ ডলারের সামাজিক সুবিধা সৃষ্টি করবে।
প্রতিশ্রুতি দেওয়ামাত্র সরকার একরকম সুখভোগ করে, এই অভ্যাস তাকে ছাড়তে হবে। এর বদলে তাকে উন্নয়নের চৌকস লক্ষ্য বেছে নিতে হবে আমাদের গ্রহকে কেন্দ্র করে চমৎকার কিছু লক্ষ্য রয়েছে। দুনিয়ার বিভিন্ন দেশের সরকারই জীবাশ্ম জ্বালানিতে ভর্তুকি দেয়, যার পরিমাণ বছরে ৫০০ বিলিয়ন ডলার। এই ভর্তুকি বন্ধ করে দিলে একদিকে যেমন দূষণ কমবে, তেমনি এই টাকা স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিনিয়োগ করা যাবে। প্রবাল রক্ষা করাও লক্ষ্যবস্তু হিসেবে বিস্ময়করভাবে কার্যকর। জৈব-বৈচিত্রে্যর পরিপ্রেক্ষিতে এর সুবিধা আছে। কিন্তু স্বাস্থ্যকর প্রবালের আরও কিছু বাস্তব ও তাৎক্ষণিক সুবিধা রয়েছে। এতে মাছের উৎপাদন বাড়ে। ফলে জেলে থেকে শুরু করে ভোক্তা ও যে পর্যটকেরা এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে চায়, তারাও উপকৃত হয়। অর্থাৎ পর্যটনশিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ও পর্যটকেরাও এর ফলে উপকৃত হয়।
সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও সর্বব্যাপক সমস্যা হচ্ছে দারিদ্র্য। এর কশাঘাতে এখনো শত শত কোটি মানুষের জীবন জেরবার হয়ে যাচ্ছে। শেষ বিচারে, অন্য আরও অনেক সমস্যার উৎস হচ্ছে এই দারিদ্র্য। দরিদ্র পরিবারগুলোর সন্তানেরা পর্যাপ্ত খাবার, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা পায় না। এর তাৎক্ষণিক ফল হিসেবে বিপুল পরিমাণ শিশু মারা যায়। আর যারা বেঁচে থাকে, তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ হয় না, উৎপাদনশীলতা কমে যায়। চূড়ান্ত পরিণতি হিসেবে আমরা দারিদ্র্যের চক্র দেখতে পাই।
উন্নত পুষ্টিমান ও শিক্ষা দারিদ্র্য দূরীকরণে সহায়ক হবে, কিন্তু আরেকটি লক্ষ্য আরও কার্যকর হবে এমন প্রতিশ্রুতি আছে: আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রতিবন্ধকতা হ্রাস। এই বিষয়ক ঐতিহাসিক তথ্য-প্রমাণ দেখলে তা বিশ্বাস না করে পারা যায় না। চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, চিলিসহ আরও কিছু দেশ এই প্রতিবন্ধকতা দূর করে নিজেদের আয় বাড়িয়েছে, দারিদ্র্য কমিয়েছে। এর ফলে প্রতিবছরই তাদের আয় দ্রুতগতিতে বেড়ে চলেছে। দোহায় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সফলভাবে সম্পন্ন হলে বিশ্বের ১৬ কোটি মানুষকে চরম দারিদ্র্য থেকে বের করে আনা সম্ভব।
লক্ষ্যবস্তুর তালিকা করলেই বিশ্বের সব সমস্যার সমাধান হবে না। আর বাস্তবোচিত বাজেটের মধ্যে কোনো তালিকাই তা করতে পারবে না। সীমিত অর্থ নিয়ে বাজারি যেভাবে তার তালিকা তৈরি করে, জাতিসংঘকেও কেউ সেভাবে তালিকা তৈরি করতে সহায়তা করতে পারে। ভালো লক্ষ্যবস্তু বেছে নেওয়া হলে সারা দুনিয়ার মানুষেরই সুবিধা বাড়বে, এমনকি পরের প্রজন্মও এ থেকে লাভবান হবে।
সরকার সবাইকে সবকিছুর প্রতিশ্রুতি দেয়। এই প্রতিশ্রুতি দেওয়ামাত্র সরকার একরকম সুখভোগ করে, এই অভ্যাস তাকে ছাড়তে হবে। এর বদলে তাকে উন্নয়নের চৌকস লক্ষ্য বেছে নিতে হবে।
ইংরেজি থেকে অনূদিত
ফিন কিডল্যান্ড: নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক, ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া * বিয়ন লোমবোর্গ: কোপেনহেগেন কনসেনসাস সেন্টারের প্রেসিডেন্ট * টম শেলিং: নোবেল বিজয়ী ও অধ্যাপক, ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড * ন্যানসি স্টোকি: ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর অধ্যাপক।
No comments