যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে আওয়াজ
লাতিন আমেরিকায় মেয়েদের রাস্তাঘাটে হরহামেশাই উত্ত্যক্ত করা হয়। তা আবার বহু ধরনের। কেউ অশ্লীল শব্দ ছোড়ে, কেউ চোখ মারে, কেউবা করে অশালীন ইঙ্গিত। এসব ঘটনা যৌন নিপীড়নের মতো। কাহাতক আর এ যন্ত্রণা সওয়া যায়। দেয়ালে ঠেকেছে পিঠ, তাই তারা এবার প্রতিবাদে সোচ্চার। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ও প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে সংগঠিত হচ্ছেন নারী অধিকার কর্মীরা। না, এ নিপীড়ন আর সহ্য করা হবে না।
কলম্বিয়ায় আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেন সারা ভেলেজ। প্রতিদিন যখন তিনি ক্লাসে যান, তখন তাঁকে শুনতে হয় পুরুষদের অশ্লীল কটাক্ষ। লাতিন আমেরিকায় এটা নতুন নয়। রাস্তায় নারী দেখলেই কিছু পুরুষ শিস দেবে, নয়তো অশ্লীল কটাক্ষ করবে। এত দিন কেউ এসব বিষয় নিয়ে মাথা ঘামায়নি। নারীরাও নীরবে সহ্য করে গেছেন। নতুন প্রজন্মের নারীরা এখন আড়ষ্টতার খোলস ভেঙে বেরিয়ে আসতে তৎপর।
বোগোতার বাসিন্দা সারা ভেলেজ বলেন, তিনি শান্তিতে রাস্তায় হাঁটতে পারেন না। পুরুষেরা চিৎকার করে মেয়েদের অশ্লীল কথা বলে। বাসে উঠেও পড়তে হয় এমন দুর্ভোগে। কেউ কেউ এত বেয়াড়া, মুখে বলেই ক্ষান্ত নয়, গায়ে পর্যন্ত হাত দেয়। সারার মতো অভিজ্ঞতা প্রায় সব নারীরই কমবেশি রয়েছে।
মেক্সিকো সিটিতে নারী ও শিশুদের জন্য গাড়ি চালান লরা রেয়েস। কিন্তু লরার শান্তি নেই। তাঁর ভাষ্য, গাড়িটি কেবলমাত্র নারীদের জন্য হলেও অনেক বিকৃত মানসিকতার লোক উঠে পড়ে। সমাজের সব শ্রেণি, সব পেশার নারীরাই এ রকম যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন।
ব্রাজিলের সাংবাদিক ক্যারোলিন অ্যাপল সম্প্রতি তাঁকে উত্ত্যক্ত করা এক ব্যক্তির ছবি প্রকাশ করে হইচই ফেলে দেন। রাস্তায় চলার সময় ওই উত্ত্যক্তকারী ইচ্ছে করে তাঁর দিকে নোংরা ও অশ্লীল ইঙ্গিত করেন। ক্যারোলিনের দাবি, একজন গাড়িচালক তাঁর সঙ্গে এই অশ্লীল আচরণ করেন। এভাবে প্রতিনিয়ত পথেঘাটে নারীর ওপর যৌন নিপীড়ন চলছে। ব্রাজিলের জনবহুল জায়গাগুলোতেও এ ধরনের যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে। অন্তঃসত্ত্বা নারীরও নিস্তার নেই। চিৎকার করে অশ্লীল ইঙ্গিত করে পুরুষেরা।
চিলিতে প্রতি ১০ জন নারীর মধ্যে নয়জনই জনবহুল জায়গাগুলোতে যৌন নিপীড়ন বা হয়রানির শিকার হয়ে থাকেন। ২০১৪ সালের অবজারভেটরি অ্যাগেইনস্ট স্ট্রিট হ্যারাসমেন্টের জরিপ অনুসারে, ৭০ শতাংশ নারী বলেছেন, তাঁরা এ ধরনের যৌন হয়রানির কারণে মানসিক চাপ, অবসাদ বা রোগে ভুগছেন।
আর্জেন্টিনায় পরিচালিত এক জরিপেও একই তথ্য পাওয়া গেছে। লাতিন আমেরিকায় পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা বেড়েছে। আর্জেন্টিনায় দিনে একজন নারী, মেক্সিকোতে দিনে পাঁচজনের বেশি নারী ও ব্রাজিলে দিনে ১৫ জন নারী পারিবারিক সহিংসতার শিকার হন।
কোস্টারিকা, মেক্সিকো ও পেরুতে রাস্তায় নারীর প্রতি এমন যৌন নিপীড়ন ও হেনস্তার প্রতিবাদে আইন পাস করা হয়েছে। পেরুতে যৌন হয়রানি বা উত্ত্যক্তকারীর শাস্তি হতে পারে ১২ বছরের কারাদণ্ড। আর্জেন্টিনা ও চিলির আইনপ্রণেতারাও এ রকম বিল পাস করার কথা ভাবছেন।
চিলিতে নারী অধিকার আন্দোলনের প্রেসিডেন্ট মারিয়া ফ্রান্সিসকা ভেলেনজুয়েলা এ ব্যাপারে সোচ্চার হয়েছেন। নারীর প্রতি এই অসদাচরণ বাড়তে থাকায় পর্যবেক্ষণ সংস্থাগুলো তাদের কর্মকাণ্ড চিলি থেকে আর্জেন্টিনা, কলম্বিয়া, নিকারাগুয়া, পেরু, এল সালভাদর ও উরুগুয়েতে ছড়িয়ে দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও তাঁরা যথেষ্ট সরব।
ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ কলম্বিয়ার নৃতত্ত্ববিদ ফ্যাবিয়ান সানাব্রিয়া বলেন, নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে নারীরা এখন অনেক বেশি সংঘবদ্ধ। আজকের নারীরা নির্যাতক পুরুষের বিরুদ্ধে তাঁদের মায়েদের তুলনায় অনেক বেশি সরব। তাঁরা নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই করে যাচ্ছেন। নারীদের উত্ত্যক্ত করার বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে জোরালো প্রচার চলছে। পেরুতে নারীদের যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদে এক জোট হয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
অলিম্পিকে মেডেলজয়ী ভলিবল খেলোয়াড় নাতালিয়া মালাগা বলেন, নারীর উত্ত্যক্তকারীদের তাঁদের মায়েদের মুখোমুখি করা উচিত। লাতিন আমেরিকায় এখন অনেক নারী কর্মজীবী। গত ২০ বছরে কর্মজীবী নারীর সংখ্যা বেড়ে সাত কোটিতে পৌঁছেছে। তাঁরা রাস্তায় পুরুষের যৌন হয়রানি থেকে রেহাই পেতে চান। উত্ত্যক্তকারীদের বিরুদ্ধে তাঁরা আন্দোলন করে যাচ্ছেন।
আর্জেন্টিনার রাজনীতিবিদ মৌরিসিও ম্যাকরি বর্তমানে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিনি বলেন, দেশটির রাস্তায় রাস্তায় এখনো নারীদের বস্তু হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ভেনেজুয়েলার ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জেন্ডার স্টাডিজের অধ্যাপক আলেজান্দ্রা ক্যাবেরা বলেন, আজকের নারীরা ভালো করেই জানেন যে তাঁদের প্রশংসা করে উত্ত্যক্তকারীরা যেসব স্তুতি ছোড়ে, এতে খুশি হওয়ার কিছু নেই। এভাবে তাঁদের একধরনের বস্তু হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
মেক্সিকোর ন্যাশনাল উইমেন্স ইনস্টিটিউটের আইনবিষয়ক সমন্বয়ক পাবলো নাভারেতে বলেন, রাস্তায় নারীরা রোজই যৌন সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। এর প্রতিকার দরকার। এএফপি অবলম্বনে
কলম্বিয়ায় আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেন সারা ভেলেজ। প্রতিদিন যখন তিনি ক্লাসে যান, তখন তাঁকে শুনতে হয় পুরুষদের অশ্লীল কটাক্ষ। লাতিন আমেরিকায় এটা নতুন নয়। রাস্তায় নারী দেখলেই কিছু পুরুষ শিস দেবে, নয়তো অশ্লীল কটাক্ষ করবে। এত দিন কেউ এসব বিষয় নিয়ে মাথা ঘামায়নি। নারীরাও নীরবে সহ্য করে গেছেন। নতুন প্রজন্মের নারীরা এখন আড়ষ্টতার খোলস ভেঙে বেরিয়ে আসতে তৎপর।
বোগোতার বাসিন্দা সারা ভেলেজ বলেন, তিনি শান্তিতে রাস্তায় হাঁটতে পারেন না। পুরুষেরা চিৎকার করে মেয়েদের অশ্লীল কথা বলে। বাসে উঠেও পড়তে হয় এমন দুর্ভোগে। কেউ কেউ এত বেয়াড়া, মুখে বলেই ক্ষান্ত নয়, গায়ে পর্যন্ত হাত দেয়। সারার মতো অভিজ্ঞতা প্রায় সব নারীরই কমবেশি রয়েছে।
মেক্সিকো সিটিতে নারী ও শিশুদের জন্য গাড়ি চালান লরা রেয়েস। কিন্তু লরার শান্তি নেই। তাঁর ভাষ্য, গাড়িটি কেবলমাত্র নারীদের জন্য হলেও অনেক বিকৃত মানসিকতার লোক উঠে পড়ে। সমাজের সব শ্রেণি, সব পেশার নারীরাই এ রকম যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন।
ব্রাজিলের সাংবাদিক ক্যারোলিন অ্যাপল সম্প্রতি তাঁকে উত্ত্যক্ত করা এক ব্যক্তির ছবি প্রকাশ করে হইচই ফেলে দেন। রাস্তায় চলার সময় ওই উত্ত্যক্তকারী ইচ্ছে করে তাঁর দিকে নোংরা ও অশ্লীল ইঙ্গিত করেন। ক্যারোলিনের দাবি, একজন গাড়িচালক তাঁর সঙ্গে এই অশ্লীল আচরণ করেন। এভাবে প্রতিনিয়ত পথেঘাটে নারীর ওপর যৌন নিপীড়ন চলছে। ব্রাজিলের জনবহুল জায়গাগুলোতেও এ ধরনের যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে। অন্তঃসত্ত্বা নারীরও নিস্তার নেই। চিৎকার করে অশ্লীল ইঙ্গিত করে পুরুষেরা।
চিলিতে প্রতি ১০ জন নারীর মধ্যে নয়জনই জনবহুল জায়গাগুলোতে যৌন নিপীড়ন বা হয়রানির শিকার হয়ে থাকেন। ২০১৪ সালের অবজারভেটরি অ্যাগেইনস্ট স্ট্রিট হ্যারাসমেন্টের জরিপ অনুসারে, ৭০ শতাংশ নারী বলেছেন, তাঁরা এ ধরনের যৌন হয়রানির কারণে মানসিক চাপ, অবসাদ বা রোগে ভুগছেন।
আর্জেন্টিনায় পরিচালিত এক জরিপেও একই তথ্য পাওয়া গেছে। লাতিন আমেরিকায় পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা বেড়েছে। আর্জেন্টিনায় দিনে একজন নারী, মেক্সিকোতে দিনে পাঁচজনের বেশি নারী ও ব্রাজিলে দিনে ১৫ জন নারী পারিবারিক সহিংসতার শিকার হন।
কোস্টারিকা, মেক্সিকো ও পেরুতে রাস্তায় নারীর প্রতি এমন যৌন নিপীড়ন ও হেনস্তার প্রতিবাদে আইন পাস করা হয়েছে। পেরুতে যৌন হয়রানি বা উত্ত্যক্তকারীর শাস্তি হতে পারে ১২ বছরের কারাদণ্ড। আর্জেন্টিনা ও চিলির আইনপ্রণেতারাও এ রকম বিল পাস করার কথা ভাবছেন।
চিলিতে নারী অধিকার আন্দোলনের প্রেসিডেন্ট মারিয়া ফ্রান্সিসকা ভেলেনজুয়েলা এ ব্যাপারে সোচ্চার হয়েছেন। নারীর প্রতি এই অসদাচরণ বাড়তে থাকায় পর্যবেক্ষণ সংস্থাগুলো তাদের কর্মকাণ্ড চিলি থেকে আর্জেন্টিনা, কলম্বিয়া, নিকারাগুয়া, পেরু, এল সালভাদর ও উরুগুয়েতে ছড়িয়ে দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও তাঁরা যথেষ্ট সরব।
ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ কলম্বিয়ার নৃতত্ত্ববিদ ফ্যাবিয়ান সানাব্রিয়া বলেন, নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে নারীরা এখন অনেক বেশি সংঘবদ্ধ। আজকের নারীরা নির্যাতক পুরুষের বিরুদ্ধে তাঁদের মায়েদের তুলনায় অনেক বেশি সরব। তাঁরা নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই করে যাচ্ছেন। নারীদের উত্ত্যক্ত করার বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে জোরালো প্রচার চলছে। পেরুতে নারীদের যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদে এক জোট হয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
অলিম্পিকে মেডেলজয়ী ভলিবল খেলোয়াড় নাতালিয়া মালাগা বলেন, নারীর উত্ত্যক্তকারীদের তাঁদের মায়েদের মুখোমুখি করা উচিত। লাতিন আমেরিকায় এখন অনেক নারী কর্মজীবী। গত ২০ বছরে কর্মজীবী নারীর সংখ্যা বেড়ে সাত কোটিতে পৌঁছেছে। তাঁরা রাস্তায় পুরুষের যৌন হয়রানি থেকে রেহাই পেতে চান। উত্ত্যক্তকারীদের বিরুদ্ধে তাঁরা আন্দোলন করে যাচ্ছেন।
আর্জেন্টিনার রাজনীতিবিদ মৌরিসিও ম্যাকরি বর্তমানে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিনি বলেন, দেশটির রাস্তায় রাস্তায় এখনো নারীদের বস্তু হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ভেনেজুয়েলার ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জেন্ডার স্টাডিজের অধ্যাপক আলেজান্দ্রা ক্যাবেরা বলেন, আজকের নারীরা ভালো করেই জানেন যে তাঁদের প্রশংসা করে উত্ত্যক্তকারীরা যেসব স্তুতি ছোড়ে, এতে খুশি হওয়ার কিছু নেই। এভাবে তাঁদের একধরনের বস্তু হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
মেক্সিকোর ন্যাশনাল উইমেন্স ইনস্টিটিউটের আইনবিষয়ক সমন্বয়ক পাবলো নাভারেতে বলেন, রাস্তায় নারীরা রোজই যৌন সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। এর প্রতিকার দরকার। এএফপি অবলম্বনে
No comments