নারী নেতৃত্বকে শো-পিস বলে তোপের মুখে এরশাদ
নারীর
ক্ষমতায়ন প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলের নেতা,
স্পিকার ও উপনেতাকে ‘শো-পিস’ বলায় জাতীয় সংসদে তীব্র ক্ষোভ-প্রতিবাদের মুখে
পড়তে হয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম
এরশাদকে। এ সময় কিছুটা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে অধিবেশন। বিষয়টি নিয়ে এরশাদ দুঃখ
প্রকাশ করলেও বক্তব্যের শেষে তার ওই অসংসদীয় বক্তব্য এক্সপাঞ্জ (বাতিল) করে
দেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। পরে এরশাদের এমন বক্তব্যের জন্য সবার
কাছে দুঃখ প্রকাশ করে বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ বলেন, হয়তো তার (এরশাদ)
ওই শব্দচয়নটি সঠিক ছিল না। এজন্য সবার কাছে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ
করছি। গতকাল সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনার সমাপনী দিনে এ ঘটনা ঘটে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে এরশাদ নারীর ক্ষমতায়ন প্রসঙ্গে বলেন, দেশের অনেকেই নারীর
ক্ষমতায়ন নিয়ে প্রশংসা করেন। কিন্তু বাস্তবে তা কি ঠিক? শহীদ মিনারে,
পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে নারীরা যেতে পারেন না, নিগৃহীত হন। আমরা কথায় কথায়
প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলের নেতা, স্পিকার ও সংসদের উপনেতা নারীর কথা
উদাহরণ দেই। কিন্তু আসলে তারাতো ‘শো-পিস’। দেশের বাস্তব অবস্থা ভিন্ন। এ
কথা বলার পরপরই সরকারি দলের নারী সংসদ সদস্যরা নিজ নিজ আসন থেকে দাঁড়িয়ে
ক্ষোভে ফেটে পড়েন। হইচই, উচ্চ স্বরে চিৎকার করে ‘শো-পিস’ শব্দটি ব্যবহারের
তীব্র নিন্দা জানাতে থাকেন। সংসদে উপস্থিত প্রধানমন্ত্রীও প্রতিবাদ জানিয়ে
মাথা নাড়াতে থাকেন। স্পিকার বারবার সবাইকে চুপ করার অনুরোধ করলেও প্রতিবাদ
বাড়তে থাকলে অধিবেশনে কিছুটা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। তীব্র প্রতিবাদের মুখে এরশাদ
বলেন, আমার কথায় কেউ আঘাত পেয়ে থাকলে আমি দুঃখিত। আমি ওই শব্দটি
প্রত্যাহার করে নিলাম। এরশাদের বক্তব্য শেষ হওয়ার পর স্পিকার ড. শিরীন
শারমিন চৌধুরী এইচ এম এরশাদের বক্তব্যের মধ্যে থাকা সকল অসংসদীয় শব্দগুলো
এক্সপাঞ্জ করে দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এরশাদ যখন বক্তব্যে রাখছিলেন তখন
তার পাশেই ছিলেন বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদ। প্রধানমন্ত্রীর
বক্তব্যের আগে তিনি বক্তব্য দিতে উঠে তিনি ওই বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ
করেন। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতির বক্তব্য
সংসদে প্রধানমন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রী ও অন্যান্য সদস্য বোনেরা মনে কষ্ট
পেয়েছেন। এজন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আমি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।
তার (এরশাদের) হয়তো শব্দ চয়ন ঠিক ছিল না। এ সময় তার পাশে বসা পার্টির
চেয়ারম্যান এরশাদ মুচকি হাসতে থাকেন এবং সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রীর দিকে
হাত উচিয়ে রওশনের বক্তব্যের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। উপস্থিত সংসদ
সদস্যরা টেবিল চাপড়ে এজন্য বিরোধীদলীয় নেতাকে অভিনন্দন জানান। এর আগে
সাধারণ আলোচনায় এইচ এম এরশাদ বলেন, বাজেট হচ্ছে একটি রাজনৈতিক দলের দর্শন।
বর্তমান সরকারের দর্শন দুটো- এক হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া আর দ্বিতীয়টি
হচ্ছে ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা। প্রধানমন্ত্রী
স্বপ্ন দেখেছেন, বাস্তবায়িত করবেন কিভাবে সেই চ্যালেঞ্জ আপনাকে নিতে হবে।
আপনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা, আপনাকে পারতেই হবে। পুঁজিবাজারে কেলেঙ্কারি ঘটেছে।
লাখ লাখ বিনিয়োগকারী নিঃস্ব হয়ে গেছে। দুর্নীতির প্রসার ঘটেছে। এসব নিয়ে
বিশ্বের নানা স্থানে আমাদের বিরুদ্ধে বিরুপ প্রচার হচ্ছে। ৫ ভাগ ঘাটতির
গর্ত থেকে উঠতে না পারলে সুফল পাওয়া যাবে না। বাজেটে ঘাটতি বেড়েই চলেছে,
কমছে না। ঘাটতি শুধু বাজেটেই নয়, শিক্ষা, আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা ও রাজনৈতিক
সংস্কৃতিতেও ঘাটতি। তিনি বলেন, প্রতিহিংসার রাজনীতি বন্ধ করে বন্ধুত্বের
রাজনীতি করলেই দেশ কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতির দিকে ধাবিত হবে। সাবেক প্রেসিডেন্ট
বলেন, ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট হয়ে গেল, কারোর বিচার হচ্ছে
না। বিদেশে অর্থ পাচারের কথা শুনছি। সদিচ্ছা থাকলে যারা পাচার করেছে তাদের
খুঁজে বের করে টাকা ফেরত আনা সম্ভব। এটা করতেই হবে এবং পাচারকারী শয়তানদের
দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। এখন দেশ থেকে মানুষ পাচার হচ্ছে, সমুদ্রে
ডুবে যাচ্ছে, গণকবরে স্থান হচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুনাম নষ্ট হয়ে
গেছে, বিশ্বের একশ’ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বাংলাদেশের একটিরও নাম নেই।
তিনি বলেন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ অপ্রতুল। শিক্ষিত জাতি গঠন না
করলে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া হবে কিভাবে? এরশাদ বলেন, মাদকের ছোবলে বাংলাদেশ
আজ জর্জরিত, রক্তাক্ত। যারা মাদকমুক্ত করবে তারাই মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনি মা, মা হয়ে দেশের সন্তানদের
মাদকের হাত থেকে রক্ষা করুন। দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ফুটপাত
দখলসহ নানা অপকর্ম চলছে। এসব শক্ত হাতে দমন করতে হবে। প্রাদেশিক সরকারের
দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, রাজধানী ঢাকা বিশ্বের দ্বিতীয় অকার্যকর শহর। যানজটে
লাখ লাখ লিটার জ্বালানি পুড়ে যাচ্ছে। অপরিকল্পিত নগরায়ন ঢাকাকে ধ্বংস করে
দিচ্ছে। ঢাকাকে বাইরে নিতে হলে প্রাদেশিক সরকার গঠন করতে হবে। সাত বিভাগে
সাতটি হাইকোর্টের বেঞ্চ গঠন করুন, দেশের মানুষ বিচার পাবে।
No comments