৬ নেতার মুঠোবন্দি সিলেট ‘ছাত্রলীগ’ by ওয়েছ খছরু
সিলেট
মহানগর ছাত্রলীগের সম্মেলনকে সামনে রেখে গ্রুপিং বাড়ছে। এই সব গ্রুপের
নেতৃত্বে রয়েছেন সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী ৬ নেতা। যারা
দীর্ঘ দিন ধরে সিলেট ছাত্রলীগে দাপটের সঙ্গে রাজনীতি করেছেন তাদের ছায়ায়
এখন সিলেটে ছাত্রলীগের অন্তত ৬টি গ্রুপ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রতিটি গ্রুপ
থেকেই আলাদা আলাদাভাবে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক সহ গুরুত্বপূর্ণ পদে
প্রার্থী ঘোষণার প্রস্তুতি চলছে। আর এ নিয়ে চলছে তোড়জোড়। একই সঙ্গে অছাত্র,
সন্ত্রাসী এবং চাঁদাবাজ নেতাদের নিয়ে দেখা দিয়েছে উত্তেজনাও। ইতিমধ্যে
নতুন গ্রুপ গঠন করতে গিয়ে বিতর্কের মুখে পড়েছেন কেউ কেউ। আগামী ৪ঠা জুলাই
মহানগর মহানগর ছাত্রলীগের সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সিলেটে
ছাত্রলীগের চারটি গ্রুপই বহুল ভাবে পরিচিত। আর দুটি নতুন গ্রুপের সৃষ্টি
হয়েছে। এই চারটি গ্রুপের মধ্যে রয়েছে ছাত্রলীগের দর্শন দেউরী গ্রুপ। সিলেট
মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলের ছায়ায় থাকা
ছাত্রলীগের গ্রুপটি দর্শন দেউরী গ্রুপ নামে পরিচিত। এবারের মহানগর কমিটিতে
নাদেল সমর্থিত দর্শন দেউরী গ্রুপের নেতারাও মহানগর কমিটিতে আধিপত্য
রাখবেন। দর্শন দেউরী গ্রুপ থেকে সভাপতি পদে বর্তমান কমিটির উপ-পরিবেশ বিষয়ক
সম্পাদক এমদাদুল হক জাহেদ, জেলার উপ-সম্পাদক আব্দুল বাছিত রুমন ও সাধারন
সম্পাদক পদে কিশওয়ার জাহান সৌরভ এবং বর্তমান কমিটির অর্থ সম্পাদক বদরুল
ইসলাম এগিয়ে রয়েছেন। সিলেট নগরীর তেলীহাওর এলাকায় রয়েছে ছাত্রলীগের
তেলিহাওর গ্রুপের অবস্থান। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক
নাসিরউদ্দিন খানের ছায়ায় রয়েছে ওই গ্রুপটি। এ কারণে সিলেটের রাজনীতিতে
তেলীহাওর গ্রুপের অবস্থান অন্যতম। জেলা ছাত্রলীগের রাজনীতিতে তেলীহাওর
গ্রুপের আধিপত্য এক তরফা। সিলেটের টিলাগড়ে রয়েছে ছাত্রলীগের আরেকটি
শক্তিশালী গ্রুপ। ওই গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের
প্রভাবশালী নেতা ও তিনবারের সিটি কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ। গ্রুপ
রক্ষায় দীর্ঘ দিন থেকে তাকে সঙ্গ দিচ্ছেন অপর রাজনীতিবিদ এডভোকেট রনজিত
সরকার। ঘনিষ্ঠবন্ধু হিসেবে দুই জন এখানে রাজনীতি করছে। সিলেট মহানগর
ছাত্রলীগের রাজনীতিতে অনেকটা এগিয়ে গেছে বিধান গ্রুপের নেতারা। সিলেটের
আওয়ামী লীগের নেতা বিধান চন্দ্র সাহার নেতৃত্বে রয়েছে কাশ্মীর গ্রুপ।
পূর্বে ওই গ্রুপের অবস্থান ছিল নগরীর দরগা গেট এলাকায়। রাজনৈতিক খুন, জমি
দখল, চাঁদাবাজিসহ নানা ঘটনায় অভিযুক্ত ওই গ্রুপের নিচপর্যায়ের নেতারা।
ইতিমধ্যে কাশ্মীর গ্রুপ থেকে টেকনিক্যাল ছাত্রলীগের সভাপতি সৈকত চন্দ্র
রিমি, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তম গ্রুপের কর্ণধার উত্তম ও
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতা হোসাইন মো. সাগরকে
গুরুত্বপূর্ণ পদে চাইছে। স্বেচ্ছাসেবকলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক
সুব্রত পুরকায়স্থ’র নেতৃত্বে নতুন একটি গ্রুপের জন্ম হয়েছে। সিলেটের
সুবিদবাজারের সোনারবাংলা গ্রুপের কর্তৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছে। তবে, এই
গ্রুপের নেতাদের ছায়া দিতে শুরু করেছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক
আসাদ উদ্দিন আহমদ। ইতিমধ্যে সাহেদের আমন্ত্রণে ইফতার পার্টিতে যোগ দিয়ে
বিতর্কের মুখে পড়েছেন স্বচ্ছধারার রাজনীতিবিদ আসাদউদ্দিন আহমদ। সিলেট
মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক পীযূষ কান্তি দে’র বলয় থেকে আসন্ন
সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনকে সামনে রেখে প্যানেল ঘোষণা
হয়েছে। মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি পদে ইমরান খানকে এবং সাধারণ সম্পাদক পদে
সজল দাস অনিককে দিয়ে প্যানেল ঘোষণা করা হয়। একই সঙ্গে রিকাবীবাজার
ছাত্রলীগের নেতা হিসেবে আবদুল জলিল পারভেজ মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি পদ
পেতে জোর লবিং চালাচ্ছেন। এদিকে, সিলেটে যে ১৮টি শাখা ইউনিট গঠন করা
হয়েছে সেই কমিটির বিরোধিতা করছে একাংশ। তারা বলছে, মহানগরের শীর্ষ পদ
ভাগিয়ে নিতে এটি করা হয়েছে। তবে, মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি রাহাত তরফদার
জানিয়েছেন, নিজের জন্য দলের স্বার্থে তিনি কাজ করছেন।
No comments