এই লেখাটি বিএনপির জন্য কোনো পরামর্শ নয় by বিভুরঞ্জন সরকার
এই
লেখাটি বিএনপির জন্য কোনো পরামর্শ নয় বিএনপিকে এখন অনেকেই পরামর্শ
দিচ্ছেন। যাদের দেয়া উচিত, তারাও দিচ্ছেন, আবার যাদের দেয়া উচিত নয় তারাও
দিচ্ছেন। আমরা যারা লেখালেখি করি, নিজস্ব রাজনৈতিক মতামত থাকলেও কোনো দলীয়
রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নই, আমাদের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সম্পর্কেই লিখতে হয়।
আমরা নিজস্ব বিবেচনা মতো বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নীতি ও কৌশল সম্পর্কে পক্ষে
কিংবা বিপক্ষে লিখতে হয়। ভালো কাজের প্রশংসা, খারাপ কাজের নিন্দা করতে হয়।
আমরা রাজনৈতিক দলগুলোকে কখনো কখনো কিছু পরামর্শও দিয়ে থাকি। এসব পরামর্শ
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক দলগুলো বিবেচনা করারও প্রয়োজনবোধ করে না।
তারপরও আমাদের এটা করতে হয়। বলতে গেলে এটাই আমাদের কাজ। কিন্তু একটি
রাজনৈতিক দল যদি আরেকটি রাজনৈতিক দলের ভুলভ্রান্তি নিয়ে কথা বলে, কী করা
উচিত বা অনুচিত সে ব্যাপারে পরামর্শ দেয়, তাহলে বিষয়টি খুব শোভন ও
স্বাভাবিক বলে মনে হয় কি? যেমন আওয়ামী লীগের কী করা উচিত বা উচিত নয়, সেটা
আওয়ামী লীগই ঠিক করবে। দলের ভালো-খারাপের দায়িত্ব দলের নেতাকর্মীদেরই। আবার
বিএনপির ক্ষেত্রেও তাই। বিএনপি কী করবে, কী করা উচিত সেটা দলের
নেতকর্মীরাই ঠিক করবেন। বাইরের কারো ফোকর দালালি করা ঠিক না।
একটা কথা প্রচলিত আছে যে, তোমার শত্রু বা প্রতিপক্ষ যদি তোমার প্রশংসা করে তাহলে মনে করবে, তুমি ভুল করছ। আর যদি সমালোচনা বা নিন্দা করে তাহলে বুঝবে তুমি ঠিক পথেই আছো। কিন্তু প্রচলিত এই কথাটিকে কি সব সময় সঠিক বলে মেনে নেয়া যায়? আমাদের দেশে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি পরস্পরের প্রতিপক্ষ শুধু নয়, আসলে একে অপরকে শত্রু বলেই মনে করে। তাই বিএনপি কখনোই আওয়ামী লীগের কোনো কিছুর প্রশংসা করে না, আবার আওয়ামী লীগও বিএনপির মধ্যে প্রশংসা করার মতো কিছু খুঁজে পায় না। তাহলে কি আমাদের ধরে নিতে হবে যে, বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ কেউ যখন কারো প্রশংসা করছে না, তার মানে তারা সঠিক পথেই আছে? না, বিষয়টি মোটেও সেরকম নয়। আমাদের বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলের সমস্যা হলো, তারা নিজেদের ভুলত্রুটি খুঁজে বের করার চেয়ে অন্যের ছিদ্র খোঁজায় বেশি পরাদর্শী। যেমন, আওয়ামী লীগের খুঁত বের করতে বিএনপির কোনো ক্লান্তি নেই। ভাবখানা এমন, ভুলত্রুটি করে আওয়ামী লীগ যদি বিপাকে পড়ে, জনপ্রিয়তা হারায় তাহলে বুঝি বিএনপির দুঃখের সীমা থাকবে না। আসলে কিন্তু তা নয়। বিএনপি মনেপ্রাণে চায়, আওয়ামী লীগ ক্রমাগত জনপ্রিয়তা হারাক, দুর্বল হোক। তাদের জনবিচ্ছিন্নতা যেন ক্রমাগত বাড়ে। আওয়ামী লীগকে শোধরানোর জন্য নয়, বিএনপি তাদের নিন্দা করে থাকে মানুষের কাছে নিজেদের ভালো প্রমাণ করার জন্য। আওয়ামী লীগের ভুল তো বিএনপির শুদ্ধ এই হচ্ছে সহজ হিসাব। আওয়ামী লীগের ব্যর্থতাই বিএনপির সাফল্য। আবার আওয়ামী লীগও নিজেদের ভুলত্রুটি শুধরে দক্ষতা ও সক্ষমতার পরিচয় না দিয়ে বিএনপির দুর্বলতাগুলোই প্রচার করে নিজেদের এগিয়ে রাখতে চায়।
দেশে গণতন্ত্র নেই বলে বিএনপি হাহাকার করে চলেছে। বিরোধী দলকে সভা-সমাবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। দেশে বাকস্বাধীনতা নেই। আওয়ামী লীগ একদলীয় শাসন কায়েম করতে চায়। এসব অভিযোগ একেবারে ভিত্তিহীন নয়। সভা-সমাবেশের নামে অশান্তি-অরাজকতা-নৈরাজ্য সৃষ্টি করার কারণে সরকার কিছুটা নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে বৈকি! বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেফতার-নির্যাতন সম্পর্কে যা বলা হয়, তাও অসত্য নয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, হামলা-মামলা কি কোনো কারণ ছাড়াই করা হচ্ছে? ৫ জানুয়ারি অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ এবং হরতাল ডেকে সারাদেশে জনজীবন বিপর্যস্ত করার আগে কি সরকার গণহারে গ্রেফতার-মামলা-হামলা হয়েছে? ৫ জানুয়ারির আগে বিএনপির কেন্দ্রীয় কয়জন শীর্ষনেতা কিংবা মাঠপর্যায়ের কতজন নেতার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে? কতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে? বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক ‘যুদ্ধ’ ঘোষণার পরই না সরকার আত্মরক্ষার পথ বেছে নিয়েছে। বিএনপি শক্তি পরীক্ষায় নেমে সরকারকে পরাজিত করতে চাইবে, আর সরকার তার শক্তি না দেখিয়ে পরাজয় মেনে নেবে, তাই কখনো হয়? এমন শান্তিপূর্ণ গণতন্ত্র কোথায় আছে? বিএনপি যদি গণতান্ত্রিক পথে চলে তাহলেই না সরকারকে গণতন্ত্রের পথে চলার জন্য চাপ দেয়া যায়। একপক্ষ অগণতান্ত্রিক ও শক্তি প্রয়োগের পথে চললে অন্য পক্ষের কাছে গণতান্ত্রিক আচরণ প্রত্যাশা করা যায় কি? দেশে মতপ্রকাশের কিংবা বাকস্বাধীনতা নেই বলে বিএনপি যে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে তা কোনোভাবেই তথ্য ও সত্যনির্ভর নয়।
এই লেখাটি বিএনপির জন্য কোনো পরামর্শ নয়৫ জানুয়ারি থেকে বিএনপি মিছিল-মিটিং করতে না পারলেও তাদের দলীয় বক্তব্য প্রচারে কোনো সমস্যা হয়েছে বলে মনে হয় না। দলের চেয়ারপার্সন একাধিক সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে দেয়া তার বক্তব্য একমাত্র বিটিভি ছাড়া সব চ্যানেলেই সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে। সরকার বেগম জিয়ার বক্তব্য প্রচারে কোনো বাধা দিয়েছে বলে শোনা যায়নি। একটি জনসভায় বক্তৃতা দিলে যত মানুষে শোনে, তার চেয়ে অনেক গুণ বেশি মানুষের কাছে টিভি মাধ্যমে প্রচারিত বক্তব্য পৌঁছে যাওয়ার পরও যদি বলা হয় দেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নেই, তা কি সত্য বলে মেনে নেয়া যায়? বিএনপির বেশ কয়েক নেতা এবং বিএনপি সমর্থিত পেশাজীবী নেতারা বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের টকশোতে অংশ নিয়ে তাদের বক্তব্য বিনা বাধাতেই প্রচার করার সুযোগ পাচ্ছেন। তারা টকশোতে তর্ক-বিতর্ক করছেন, সরকারের সমালোচনা করে বক্তব্য দিচ্ছেন আবার বলছেন যে, সরকার কথা বলার অধিকার কেড়ে নিয়েছে। কথা বলার স্বাধীনতা কেড়ে নিলে তারা টকশোতে কীভাবে কথা বলছেন? তারা যে অভিযোগ করার জন্যই অভিযোগ করছেন, সেটা কি মানুষ বুঝতে পারছেন না? বিএনপির কাছে গণতন্ত্র মানে শুধুই বিক্ষোভ মিছিল আর জনসভা অথচ আজকাল জনসভা আর মিছিল যে কত বড় জনদুর্ভোগের কারণ হয় সেটা বোঝার চেষ্টা রাজনৈতিক নেতারা করেন না। সাধারণ মানুষকে কষ্ট না দিয়ে গণতন্ত্র চর্চা করতে অসুবিধা কোথায়?
দেশে গণতন্ত্র নেই বলে বিএনপির প্রচারণা দেখে মনে হয়, তারা ক্ষমতায় গেলেই বুঝি দেশে আদর্শ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরে আসবে। বিএনপি তো এর আগে দেশে দুইবার পূর্ণ মেয়াদে, একবার স্বল্পকালের জন্য ক্ষমতায় ছিল। এ জন্য বেগম জিয়াকে তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলা হয়। তো, তিনবার প্রধানমন্ত্রী থেকে বেগম জিয়া এবং তার দল বিএনপি দেশে গণতন্ত্রের কী মহা উপকার করেছেন? বেগম জিয়া ক্ষমতায় থাকতে কি বিরোধী দলের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন হয়নি? ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার আগে পরে জামায়াতে ইসলামীর সহযোগিতা নিয়ে সারাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর চণ্ডনীতি চালানো হয়েছিল, তা কি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে শক্তপোক্ত করার নিমিত্তেই? ২০০১ থেকে ২০০৬ সময়কালে বিরোধী আওয়ামী লীগের কত নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছিল, কতজনকে চিরতরে পঙ্গু করে দেয়া হয়েছিল, সে হিসাব কি বেগম জিয়া এবং তার পারিষদবর্গের কাছে আছে? না, বিএনপি গণতন্ত্রবিরোধী কাজ করেছে বলেই আওয়ামী লীগও তাই করবে, সেটা হতে পারে না। সেটা সমর্থনযোগ্যও নয়। তারপরও বলার কথা এটাই যে, ভালোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করলেই না ভালো হওয়ার প্রশ্ন আসে। খারাপের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করলে তো খারাপই হবে। আওয়ামী লীগকে দোষারোপ করার আগে বিএনপিকে শোধরাতে হবে। তারা ক্ষমতায় থাকতে যেসব খারাপ কাজ করেছে ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গেলে আর কোনোভাবেই তার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না এই নিশ্চয়তা দিতে হবে। হাওয়া ভবনের মতো ক্ষমতার বিকল্পকেন্দ্র আর গড়ে উঠবে না। শাহএএমএস কিবরিয়া, আহসানউল্লাহ মাস্টারের মতো বিরোধী দলের জনপ্রিয় নেতাদের বুলেট-গ্রেনেডে প্রাণ দিতে হবে না। একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলার মতো পাশবিক ঘটনা ঘটবে না। শেখ হাসিনার প্রাণনাশের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে উঠেছে তাদের রক্ষা করার জন্য বেগম জিয়ার পক্ষ থেকে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করা হবে না। অতীতের বিষাক্ত বৃত্ত থেকে বিএনপি বেরিয়ে আসছে, সেটা যদি মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয় তাহলে তাদের জনসমর্থনের পাল্লা ভারী হবে। দেশে পুরো মাত্রা গণতন্ত্র নেই বলে বিএনপির আকুলিবিকুলির শেষ নেই অথচ বিএনপি দলটিই চলছে চরম স্বৈরাচারী ব্যবস্থায়। বিএনপির দলীয় গঠনতন্ত্র পুরো গণতন্ত্রসম্মত না হলেও দলীয় নীতিনির্ধারণে স্থায়ী কমিটিকে যে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, সেটাও বাস্তবে অনুসরণ করা হয় না। নিয়মমাফিক স্থায়ী কমিটির সভা হয় না। সভা হলেও নীতি-কৌশল নিয়ে কোনো আলোচনা হয় না। খালেদা জিয়ার ইচ্ছাপূর্ণ করা ছাড়া স্থায়ী কমিটির সদস্যদের আর কিছু করণীয় না থাকায় তারা এখন হয় নিষ্ক্রিয়, না হয় যেখানে সেখানে যা খুশি তাই বক্তৃতা দিয়ে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন এবং কোনো রকমে সময় কাটাচ্ছেন। অন্যান্য কমিটির ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটছে। কমিটি আছে নানা পর্যায়ে। কমিটিতে অসংখ্য নাম আছে। কিন্তু কারো কোনো সুনির্দিষ্ট কাজ নেই।
বিএনপির এই সাংগঠনিক দুর্দশা দেখে অনেকেই তামাশা করতেও ছাড়ছেন না। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের কয়েক নেতা তো ইদানীং অতিমাত্রায় বিএনপি দরদি হয়ে উঠেছেন। বিএনপিকে আন্দোলন-সংগ্রামে ব্যর্থ হতে দেখে আওয়ামী লীগের নেতাদের যেন চোখে ঘুম নেই। বিএনপির কী করা উচিত সে বিষয়ে তারা এখন পরামর্শ দিতে ব্যস্ত আছেন। আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা সুরঞ্জিৎ সেনগুপ্ত, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, ঢাকা মহানগর কমিটির নেতা ও খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বিভিন্ন সভায় বক্তৃতা করতে গিয়ে বিএনপির প্রতি উপযাচক হয়ে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। একেই বোধহয় বলে নাই কাজ তো খৈ ভাজ। নিজের চড়কায় তেল না দিয়ে অন্যের চড়কায় তেল দেয়ার এত গরজ কেন? আওয়ামী লীগের এই নেতাদের পরামর্শ মতো কাজ না করলে বিএনপি নাকি অস্তিত্ব সংকটে পড়বে, ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে। যদি সেটা হয় তাহলে তো আওয়ামী লীগ নেতাদের খুশি হওয়ার কথা। বিএনপি ভেঙে গেলে কিংবা অস্তিত্ব সংকটে পড়লে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিচলিত হওয়ার কী আছে? তারপরও তারা বিচলিত হচ্ছেন এবং বিএনপি ‘রক্ষা’র ব্রত নিয়ে মাঠে নেমেছেন। তাদের দেয়া পরামর্শগুলো হচ্ছে: ১. দলের চেয়ারপার্সনের পদ থেকে খালেদা জিয়াকে এবং সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদ থেকে তারেক রহমানকে স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়াতে হবে, ২. জামায়াতে ইসলামের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করতে হবে, ৩. স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি হিসেবে রাজনীতি করার ঘোষণা দিতে হবে, ৪. যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে সরাসরি সম্মতিজ্ঞাপন করতে হবে এবং ৫. ভবিষ্যতে আর সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড না করার অঙ্গীকার করতে হবে। এই পাঁচটি পরামর্শ গ্রহণ করলে বিএনপি জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারবে বলে আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছেন।
বিএনপি যদি এই কাজগুলো সত্যি সত্যি করে তাহলে বিএনপি কি আর বিএনপি থাকবে? তাছাড়া বিএনপির প্রতি মানুষের আস্থা কিসে বাড়বে তা নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের মাথা ঘামানোর প্রয়োজন কী? বিএনপির প্রতি জনগণের আস্থা বাড়লে যে আওয়ামী লীগের প্রতি জনগণের আস্থা কমবে এটা কি আওয়ামী লীগ নেতারা বুঝতে পারছেন না? আওয়ামী লীগ নেতারা বিএনপিকে যেচে পরামর্শ দিয়ে সময় নষ্ট না করে যদি নিজেদের দলের জন্য কী করা উচিত সে বিষয়ে ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নিয়ে সে অনুযায়ী কাজ শুরু করতেন তাহলেই না বেশি ভালো হতো। বিএনপি সাংগঠনিকভাবে খারাপ অবস্থায় আছে সেটা যেমন ঠিক, তেমনি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা খুব ভালো সে দাবি করার মতো পরিস্থিতি আছে কি? আওয়ামী লীগের মতো বিশাল দলের কোনো সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড কি কেউ দেখতে পাচ্ছেন? টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, দখলবাজি, মারামারি, প্রভাব বিস্তারের লড়াই এসব নেতিবাচক খবর গণমাধ্যমে ছাপা হওয়ায় আওয়ামী লীগ ও তার বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন সক্রিয় আছে বলে মানুষ জানতে পারছে। অন্যথায় কোথায় আওয়ামী লীগ? নিজেদের ঘরে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ জমা হয়ে উঠেছে অথচ আওয়ামী লীগ নেতারা বিএনপির ঘর পরিষ্কারে উতলা হয়ে উঠেছেন। এই রাজনীতি কি মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে পারছে?
পুনশ্চ: বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন মহাসচিব ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি, সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. একিএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গিয়ে বিএনপিকে জামায়াত ছাড়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, বিএনপি এখন জিয়াউর রহমানের আদর্শের মধ্যে নেই। দলটির রাজনীতি এখন সম্পূর্ণ জামায়াতনির্ভর। বিএনপির বাঁচতে হলে জামায়াতনির্ভরতা ছেড়ে আবারো জিয়ার আদর্শে ফিরে আসতে হবে। দেশে-বিদেশে যে চাপ তাতে এই রাজনীতি টিকবে না। এই রাজনীতি যদি না টেকে তাহলে তো বি. চৌধুরীর খুশি হওয়ার কথা। তিনি তো এখন বিএনপির কেউ নন। বিএনপি থেকে বের করে দেয়ায় তিনি ভিন্ন দল করেছেন। বিএনপির এখন গাড্ডায় পড়লে বি. চৌধুরীর দল বিকল্পধারার জন্য সুবিধা। জিয়ার প্রকৃত অনুসারীরা বি. চৌধুরীর সঙ্গে ভিড়লে বিকল্পধারাই তো বিএনপির ‘বিকল্প’ দল হয়ে উঠতে পারে। তেমন স্বপ্ন ডাক্তার সাহেব দেখছেন কি? গাছে কাঁঠাল দেখে গোঁফে তেল মেখে কোনো লাভ আছে কি?
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট
একটা কথা প্রচলিত আছে যে, তোমার শত্রু বা প্রতিপক্ষ যদি তোমার প্রশংসা করে তাহলে মনে করবে, তুমি ভুল করছ। আর যদি সমালোচনা বা নিন্দা করে তাহলে বুঝবে তুমি ঠিক পথেই আছো। কিন্তু প্রচলিত এই কথাটিকে কি সব সময় সঠিক বলে মেনে নেয়া যায়? আমাদের দেশে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি পরস্পরের প্রতিপক্ষ শুধু নয়, আসলে একে অপরকে শত্রু বলেই মনে করে। তাই বিএনপি কখনোই আওয়ামী লীগের কোনো কিছুর প্রশংসা করে না, আবার আওয়ামী লীগও বিএনপির মধ্যে প্রশংসা করার মতো কিছু খুঁজে পায় না। তাহলে কি আমাদের ধরে নিতে হবে যে, বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ কেউ যখন কারো প্রশংসা করছে না, তার মানে তারা সঠিক পথেই আছে? না, বিষয়টি মোটেও সেরকম নয়। আমাদের বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলের সমস্যা হলো, তারা নিজেদের ভুলত্রুটি খুঁজে বের করার চেয়ে অন্যের ছিদ্র খোঁজায় বেশি পরাদর্শী। যেমন, আওয়ামী লীগের খুঁত বের করতে বিএনপির কোনো ক্লান্তি নেই। ভাবখানা এমন, ভুলত্রুটি করে আওয়ামী লীগ যদি বিপাকে পড়ে, জনপ্রিয়তা হারায় তাহলে বুঝি বিএনপির দুঃখের সীমা থাকবে না। আসলে কিন্তু তা নয়। বিএনপি মনেপ্রাণে চায়, আওয়ামী লীগ ক্রমাগত জনপ্রিয়তা হারাক, দুর্বল হোক। তাদের জনবিচ্ছিন্নতা যেন ক্রমাগত বাড়ে। আওয়ামী লীগকে শোধরানোর জন্য নয়, বিএনপি তাদের নিন্দা করে থাকে মানুষের কাছে নিজেদের ভালো প্রমাণ করার জন্য। আওয়ামী লীগের ভুল তো বিএনপির শুদ্ধ এই হচ্ছে সহজ হিসাব। আওয়ামী লীগের ব্যর্থতাই বিএনপির সাফল্য। আবার আওয়ামী লীগও নিজেদের ভুলত্রুটি শুধরে দক্ষতা ও সক্ষমতার পরিচয় না দিয়ে বিএনপির দুর্বলতাগুলোই প্রচার করে নিজেদের এগিয়ে রাখতে চায়।
দেশে গণতন্ত্র নেই বলে বিএনপি হাহাকার করে চলেছে। বিরোধী দলকে সভা-সমাবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। দেশে বাকস্বাধীনতা নেই। আওয়ামী লীগ একদলীয় শাসন কায়েম করতে চায়। এসব অভিযোগ একেবারে ভিত্তিহীন নয়। সভা-সমাবেশের নামে অশান্তি-অরাজকতা-নৈরাজ্য সৃষ্টি করার কারণে সরকার কিছুটা নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে বৈকি! বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেফতার-নির্যাতন সম্পর্কে যা বলা হয়, তাও অসত্য নয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, হামলা-মামলা কি কোনো কারণ ছাড়াই করা হচ্ছে? ৫ জানুয়ারি অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ এবং হরতাল ডেকে সারাদেশে জনজীবন বিপর্যস্ত করার আগে কি সরকার গণহারে গ্রেফতার-মামলা-হামলা হয়েছে? ৫ জানুয়ারির আগে বিএনপির কেন্দ্রীয় কয়জন শীর্ষনেতা কিংবা মাঠপর্যায়ের কতজন নেতার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে? কতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে? বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক ‘যুদ্ধ’ ঘোষণার পরই না সরকার আত্মরক্ষার পথ বেছে নিয়েছে। বিএনপি শক্তি পরীক্ষায় নেমে সরকারকে পরাজিত করতে চাইবে, আর সরকার তার শক্তি না দেখিয়ে পরাজয় মেনে নেবে, তাই কখনো হয়? এমন শান্তিপূর্ণ গণতন্ত্র কোথায় আছে? বিএনপি যদি গণতান্ত্রিক পথে চলে তাহলেই না সরকারকে গণতন্ত্রের পথে চলার জন্য চাপ দেয়া যায়। একপক্ষ অগণতান্ত্রিক ও শক্তি প্রয়োগের পথে চললে অন্য পক্ষের কাছে গণতান্ত্রিক আচরণ প্রত্যাশা করা যায় কি? দেশে মতপ্রকাশের কিংবা বাকস্বাধীনতা নেই বলে বিএনপি যে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে তা কোনোভাবেই তথ্য ও সত্যনির্ভর নয়।
এই লেখাটি বিএনপির জন্য কোনো পরামর্শ নয়৫ জানুয়ারি থেকে বিএনপি মিছিল-মিটিং করতে না পারলেও তাদের দলীয় বক্তব্য প্রচারে কোনো সমস্যা হয়েছে বলে মনে হয় না। দলের চেয়ারপার্সন একাধিক সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে দেয়া তার বক্তব্য একমাত্র বিটিভি ছাড়া সব চ্যানেলেই সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে। সরকার বেগম জিয়ার বক্তব্য প্রচারে কোনো বাধা দিয়েছে বলে শোনা যায়নি। একটি জনসভায় বক্তৃতা দিলে যত মানুষে শোনে, তার চেয়ে অনেক গুণ বেশি মানুষের কাছে টিভি মাধ্যমে প্রচারিত বক্তব্য পৌঁছে যাওয়ার পরও যদি বলা হয় দেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নেই, তা কি সত্য বলে মেনে নেয়া যায়? বিএনপির বেশ কয়েক নেতা এবং বিএনপি সমর্থিত পেশাজীবী নেতারা বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের টকশোতে অংশ নিয়ে তাদের বক্তব্য বিনা বাধাতেই প্রচার করার সুযোগ পাচ্ছেন। তারা টকশোতে তর্ক-বিতর্ক করছেন, সরকারের সমালোচনা করে বক্তব্য দিচ্ছেন আবার বলছেন যে, সরকার কথা বলার অধিকার কেড়ে নিয়েছে। কথা বলার স্বাধীনতা কেড়ে নিলে তারা টকশোতে কীভাবে কথা বলছেন? তারা যে অভিযোগ করার জন্যই অভিযোগ করছেন, সেটা কি মানুষ বুঝতে পারছেন না? বিএনপির কাছে গণতন্ত্র মানে শুধুই বিক্ষোভ মিছিল আর জনসভা অথচ আজকাল জনসভা আর মিছিল যে কত বড় জনদুর্ভোগের কারণ হয় সেটা বোঝার চেষ্টা রাজনৈতিক নেতারা করেন না। সাধারণ মানুষকে কষ্ট না দিয়ে গণতন্ত্র চর্চা করতে অসুবিধা কোথায়?
দেশে গণতন্ত্র নেই বলে বিএনপির প্রচারণা দেখে মনে হয়, তারা ক্ষমতায় গেলেই বুঝি দেশে আদর্শ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরে আসবে। বিএনপি তো এর আগে দেশে দুইবার পূর্ণ মেয়াদে, একবার স্বল্পকালের জন্য ক্ষমতায় ছিল। এ জন্য বেগম জিয়াকে তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলা হয়। তো, তিনবার প্রধানমন্ত্রী থেকে বেগম জিয়া এবং তার দল বিএনপি দেশে গণতন্ত্রের কী মহা উপকার করেছেন? বেগম জিয়া ক্ষমতায় থাকতে কি বিরোধী দলের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন হয়নি? ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার আগে পরে জামায়াতে ইসলামীর সহযোগিতা নিয়ে সারাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর চণ্ডনীতি চালানো হয়েছিল, তা কি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে শক্তপোক্ত করার নিমিত্তেই? ২০০১ থেকে ২০০৬ সময়কালে বিরোধী আওয়ামী লীগের কত নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছিল, কতজনকে চিরতরে পঙ্গু করে দেয়া হয়েছিল, সে হিসাব কি বেগম জিয়া এবং তার পারিষদবর্গের কাছে আছে? না, বিএনপি গণতন্ত্রবিরোধী কাজ করেছে বলেই আওয়ামী লীগও তাই করবে, সেটা হতে পারে না। সেটা সমর্থনযোগ্যও নয়। তারপরও বলার কথা এটাই যে, ভালোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করলেই না ভালো হওয়ার প্রশ্ন আসে। খারাপের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করলে তো খারাপই হবে। আওয়ামী লীগকে দোষারোপ করার আগে বিএনপিকে শোধরাতে হবে। তারা ক্ষমতায় থাকতে যেসব খারাপ কাজ করেছে ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গেলে আর কোনোভাবেই তার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না এই নিশ্চয়তা দিতে হবে। হাওয়া ভবনের মতো ক্ষমতার বিকল্পকেন্দ্র আর গড়ে উঠবে না। শাহএএমএস কিবরিয়া, আহসানউল্লাহ মাস্টারের মতো বিরোধী দলের জনপ্রিয় নেতাদের বুলেট-গ্রেনেডে প্রাণ দিতে হবে না। একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলার মতো পাশবিক ঘটনা ঘটবে না। শেখ হাসিনার প্রাণনাশের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে উঠেছে তাদের রক্ষা করার জন্য বেগম জিয়ার পক্ষ থেকে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করা হবে না। অতীতের বিষাক্ত বৃত্ত থেকে বিএনপি বেরিয়ে আসছে, সেটা যদি মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয় তাহলে তাদের জনসমর্থনের পাল্লা ভারী হবে। দেশে পুরো মাত্রা গণতন্ত্র নেই বলে বিএনপির আকুলিবিকুলির শেষ নেই অথচ বিএনপি দলটিই চলছে চরম স্বৈরাচারী ব্যবস্থায়। বিএনপির দলীয় গঠনতন্ত্র পুরো গণতন্ত্রসম্মত না হলেও দলীয় নীতিনির্ধারণে স্থায়ী কমিটিকে যে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, সেটাও বাস্তবে অনুসরণ করা হয় না। নিয়মমাফিক স্থায়ী কমিটির সভা হয় না। সভা হলেও নীতি-কৌশল নিয়ে কোনো আলোচনা হয় না। খালেদা জিয়ার ইচ্ছাপূর্ণ করা ছাড়া স্থায়ী কমিটির সদস্যদের আর কিছু করণীয় না থাকায় তারা এখন হয় নিষ্ক্রিয়, না হয় যেখানে সেখানে যা খুশি তাই বক্তৃতা দিয়ে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন এবং কোনো রকমে সময় কাটাচ্ছেন। অন্যান্য কমিটির ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটছে। কমিটি আছে নানা পর্যায়ে। কমিটিতে অসংখ্য নাম আছে। কিন্তু কারো কোনো সুনির্দিষ্ট কাজ নেই।
বিএনপির এই সাংগঠনিক দুর্দশা দেখে অনেকেই তামাশা করতেও ছাড়ছেন না। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের কয়েক নেতা তো ইদানীং অতিমাত্রায় বিএনপি দরদি হয়ে উঠেছেন। বিএনপিকে আন্দোলন-সংগ্রামে ব্যর্থ হতে দেখে আওয়ামী লীগের নেতাদের যেন চোখে ঘুম নেই। বিএনপির কী করা উচিত সে বিষয়ে তারা এখন পরামর্শ দিতে ব্যস্ত আছেন। আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা সুরঞ্জিৎ সেনগুপ্ত, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, ঢাকা মহানগর কমিটির নেতা ও খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বিভিন্ন সভায় বক্তৃতা করতে গিয়ে বিএনপির প্রতি উপযাচক হয়ে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। একেই বোধহয় বলে নাই কাজ তো খৈ ভাজ। নিজের চড়কায় তেল না দিয়ে অন্যের চড়কায় তেল দেয়ার এত গরজ কেন? আওয়ামী লীগের এই নেতাদের পরামর্শ মতো কাজ না করলে বিএনপি নাকি অস্তিত্ব সংকটে পড়বে, ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে। যদি সেটা হয় তাহলে তো আওয়ামী লীগ নেতাদের খুশি হওয়ার কথা। বিএনপি ভেঙে গেলে কিংবা অস্তিত্ব সংকটে পড়লে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিচলিত হওয়ার কী আছে? তারপরও তারা বিচলিত হচ্ছেন এবং বিএনপি ‘রক্ষা’র ব্রত নিয়ে মাঠে নেমেছেন। তাদের দেয়া পরামর্শগুলো হচ্ছে: ১. দলের চেয়ারপার্সনের পদ থেকে খালেদা জিয়াকে এবং সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদ থেকে তারেক রহমানকে স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়াতে হবে, ২. জামায়াতে ইসলামের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করতে হবে, ৩. স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি হিসেবে রাজনীতি করার ঘোষণা দিতে হবে, ৪. যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে সরাসরি সম্মতিজ্ঞাপন করতে হবে এবং ৫. ভবিষ্যতে আর সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড না করার অঙ্গীকার করতে হবে। এই পাঁচটি পরামর্শ গ্রহণ করলে বিএনপি জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারবে বলে আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছেন।
বিএনপি যদি এই কাজগুলো সত্যি সত্যি করে তাহলে বিএনপি কি আর বিএনপি থাকবে? তাছাড়া বিএনপির প্রতি মানুষের আস্থা কিসে বাড়বে তা নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের মাথা ঘামানোর প্রয়োজন কী? বিএনপির প্রতি জনগণের আস্থা বাড়লে যে আওয়ামী লীগের প্রতি জনগণের আস্থা কমবে এটা কি আওয়ামী লীগ নেতারা বুঝতে পারছেন না? আওয়ামী লীগ নেতারা বিএনপিকে যেচে পরামর্শ দিয়ে সময় নষ্ট না করে যদি নিজেদের দলের জন্য কী করা উচিত সে বিষয়ে ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নিয়ে সে অনুযায়ী কাজ শুরু করতেন তাহলেই না বেশি ভালো হতো। বিএনপি সাংগঠনিকভাবে খারাপ অবস্থায় আছে সেটা যেমন ঠিক, তেমনি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা খুব ভালো সে দাবি করার মতো পরিস্থিতি আছে কি? আওয়ামী লীগের মতো বিশাল দলের কোনো সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড কি কেউ দেখতে পাচ্ছেন? টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, দখলবাজি, মারামারি, প্রভাব বিস্তারের লড়াই এসব নেতিবাচক খবর গণমাধ্যমে ছাপা হওয়ায় আওয়ামী লীগ ও তার বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন সক্রিয় আছে বলে মানুষ জানতে পারছে। অন্যথায় কোথায় আওয়ামী লীগ? নিজেদের ঘরে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ জমা হয়ে উঠেছে অথচ আওয়ামী লীগ নেতারা বিএনপির ঘর পরিষ্কারে উতলা হয়ে উঠেছেন। এই রাজনীতি কি মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে পারছে?
পুনশ্চ: বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন মহাসচিব ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি, সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. একিএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গিয়ে বিএনপিকে জামায়াত ছাড়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, বিএনপি এখন জিয়াউর রহমানের আদর্শের মধ্যে নেই। দলটির রাজনীতি এখন সম্পূর্ণ জামায়াতনির্ভর। বিএনপির বাঁচতে হলে জামায়াতনির্ভরতা ছেড়ে আবারো জিয়ার আদর্শে ফিরে আসতে হবে। দেশে-বিদেশে যে চাপ তাতে এই রাজনীতি টিকবে না। এই রাজনীতি যদি না টেকে তাহলে তো বি. চৌধুরীর খুশি হওয়ার কথা। তিনি তো এখন বিএনপির কেউ নন। বিএনপি থেকে বের করে দেয়ায় তিনি ভিন্ন দল করেছেন। বিএনপির এখন গাড্ডায় পড়লে বি. চৌধুরীর দল বিকল্পধারার জন্য সুবিধা। জিয়ার প্রকৃত অনুসারীরা বি. চৌধুরীর সঙ্গে ভিড়লে বিকল্পধারাই তো বিএনপির ‘বিকল্প’ দল হয়ে উঠতে পারে। তেমন স্বপ্ন ডাক্তার সাহেব দেখছেন কি? গাছে কাঁঠাল দেখে গোঁফে তেল মেখে কোনো লাভ আছে কি?
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট
No comments