ভারতের ‘সান্ত্বনা পুরস্কার’
মুস্তাফিজুর, এই সিরিজে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। ছবি: শামসুল হক |
‘হ্যাটট্রিকের
হাতছানি বনাম সান্ত্বনা পুরস্কার’। ভারতেরই এক দৈনিকের ম্যাচ প্রিভিউয়ের
শিরোনাম। এই সিরিজ থেকে ভারতের প্রাপ্তির আর কোনো সুযোগ ছিল না। সুযোগ
ছিল বাংলাদেশের—টানা তিনটি বাংলাওয়াশ করার কৃতিত্ব। শেষ পর্যন্ত হলো না।
প্রথম দুই ম্যাচেই সিরিজ হেরে বসা র্যাঙ্কিংয়ের দুই নম্বর দলের জন্য শেষ
ম্যাচ জেতাটা সান্ত্বনা পুরস্কারই বটে। ৭৭ রানে জিতে সেই ‘পুরস্কার’ পেল
ভারত।
এর আগে কোন দল টানা তিনটি সিরিজে প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করেছে, এ নিয়ে কাল দিনভর পরিসংখ্যান ঘাঁটাঘাঁটি করতে হলো সাংবাদিকদের। ভারত প্রথমে ৩১৭ রান তোলার অনেকেই দ্বিধান্বিত, এই পরিসংখ্যানের গাদায় সুচ খোঁচার শ্রমটা দেওয়া ঠিক হবে কিনা। ল্যাপটপের ডালা বন্ধ করে বসেছিলেন যাঁরা, ২ উইকেটে বাংলাদেশ ১১২ তোলার পর আবারও অনেককেই তৎপর হতে দেখা গেল।
কিন্তু না। হ্যাটট্রিক ধবল ধোলাইয়ের হদিস নেওয়ার আর কোনো প্রয়োজনই পড়ল না। ৩৬ রানের ব্যবধানে মধ্যে মুশফিকের রহিম, লিটন দাস আর সাকিব আল হাসান ফিরে আসার পর নিশ্চিত হলো, ওপেনিংয়ের ব্যর্থতা মিডল অর্ডার পুষিয়ে দিতে পারছে না। ১৪৮ রানে ৫ উইকেটের পতন। ফলাফল—ল্যাপটপের ডালা আবার বন্ধ!
কিন্তু সেটি আবারই দ্রুত খুলতে হলো। না, নাটকীয় কোনো পরিবর্তনের আভাসে নয়। সাব্বির-নাসিরের জুটিটা ইনিংস মেরামত করছিল বটে, কিন্তু কার্যত ম্যাচ তার আগেই শেষ। ৪৯ রানে সেই জুটিটা ভাঙার পর শেষ সংশয়টুকুও মুছে গেল। ৪৩ রানে শেষ ৫ উইকেট হারিয়ে ২৪০-এ অলআউট বাংলাদেশ।
দুই থেকে সাত—এই ছয় ব্যাটসম্যানই অবশ্যই নিজেকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেন। প্রত্যেকে উইকেটে সেট হয়েও ইনিংসটা বড় করতে পারেননি। সৌম্য-সাব্বির ৪০-এর ঘরে আউট হয়েছেন। লিটন-নাসির ৩০-এর ঘরে। এই ব্যাটিং লাইনআপে সবচেয়ে অভিজ্ঞ মুশফিক-সাকিবই ২০-এর ঘরে। দুজনের আউট হওয়ার ধরন নিয়ে চাইলে প্রশ্ন তোলাই যায়। কিন্তু থাক, কী দরকার! বরং আজ পিঠ চাপড়ে দিন। বলুন, ব্যাপার নাহ্।
তবে এও তো সত্যি, টানা তিনটি বাংলাওয়াশের সুযোগ, বিশেষ করে টানা দুই সিরিজে পাকিস্তান-ভারতকে ধবল ধোলাইয়ের সুযোগ কি আবারও মিলবে? দেশের মাটিতে টানা দশটি ম্যাচ জেতার পর থামল মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। ম্যাচ জিতেও ভারতীয় দলের মধ্যে আনন্দের ছিটেফোঁটা নেই।
পুরস্কার–বিতরণীতে পরাজিত অধিনায়কই আগে যান, এটাই অলিখিত কেতা। কিন্তু আজ জিতেও ধোনিকেই প্রতিক্রিয়া জানাতে যেতে হলো মাশরাফির আগে—সিরিজের প্রতীকী দৃশ্য! হেরেও মাশরাফি পরেই তো যাবেন, আসল লড়াইয়ে যে জিতেছেন। প্রতিক্রিয়া জানিয়েই নিতে হলো ট্রফিটা। ম্যাচ হেরেও ট্রফি নিয়ে ক্যামেরার সামনে বাংলাদেশ দলই। অবশ্য শেষ ম্যাচটা জিতলে উৎসব-উল্লাসটা আরও ভালো হতো।
এ তো কেবল যাত্রা পথের শুরু। সেই পথে বাংলাদেশের ক্রিকেটে যুক্ত হয়েছে অনেক অনেক ‘প্রথম’ অর্জন। আরও অনেক ‘প্রথম’ আছে অপেক্ষায়।
ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জয়ও যেমন প্রথম। ভারতের বিপক্ষে এই প্রথম বাংলাদেশ দলের ট্রফি নিয়ে উল্লাস করা। তবে রুপোলি আভা ছড়ানো গোলাকার ট্রফিটার চেয়ে এই সিরিজে বাংলাদেশের বহুগুণ বড় প্রাপ্তি মুস্তাফিজুর রহমান। আজ ২ উইকেট নিয়েছেন। তবে দর্শকদের যেন তার চেয়েও বেশি আনন্দ দিল তাঁর ব্যাটিং। যে রায়নাকে তিন ম্যাচেই আউট করেছেন, তাঁরই বলে ফাইন লেগ দিয়ে ঘুরিয়ে চার মারলেন। দর্শকদের সেই কী করতালি! তিন ম্যাচে ১৩ উইকেট নিয়ে রাশি রাশি রেকর্ডের পাশে নিজের নাম লিখিয়েই মুস্তাফিজ থেমেছেন।
থেমেছেন, কিন্তু আবার শুরু করতে হবে যাত্রা। বাংলাদেশ দলও সিরিজ জিতেছে, কিন্তু নতুন করে নিজেদের আবারও সাফল্যের জন্য ক্ষুধার্ত করে তুলতে হবে। কদিন পরই আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা দল। একদিক দিয়ে হেরে হয়তো ‘ভালো’ই হলো। পাকিস্তানের বিপক্ষে অনায়াসে জিততে জিততে শেষ ম্যাচটা হেরেছিল বলেই হয়তো গা-ঝাড়া দিয়েছে বাংলাদেশ। মিরপুরে সিরিজের শেষ ওয়ানডেটা হতে পারে সেই বাস্তবতার জমিনে নেমে আসা।
না, হয় না। সব গল্পের ‘হ্যাপি এন্ডিং’ হতেও নেই। এই অপূর্ণতার আক্ষেপটাই তো শিল্পীকে ধাবিত করে নতুন সৃষ্টির দিকে। আপাতত কয়েক দিনের ‘বিশ্রাম’ শেষে এবার বাংলাদেশের ক্রিকেটে আরও একটি সোনালি অধ্যায় সংযোজন হওয়ার অপেক্ষা।
ডেল স্টেইন, আসছেন তো?
এর আগে কোন দল টানা তিনটি সিরিজে প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করেছে, এ নিয়ে কাল দিনভর পরিসংখ্যান ঘাঁটাঘাঁটি করতে হলো সাংবাদিকদের। ভারত প্রথমে ৩১৭ রান তোলার অনেকেই দ্বিধান্বিত, এই পরিসংখ্যানের গাদায় সুচ খোঁচার শ্রমটা দেওয়া ঠিক হবে কিনা। ল্যাপটপের ডালা বন্ধ করে বসেছিলেন যাঁরা, ২ উইকেটে বাংলাদেশ ১১২ তোলার পর আবারও অনেককেই তৎপর হতে দেখা গেল।
কিন্তু না। হ্যাটট্রিক ধবল ধোলাইয়ের হদিস নেওয়ার আর কোনো প্রয়োজনই পড়ল না। ৩৬ রানের ব্যবধানে মধ্যে মুশফিকের রহিম, লিটন দাস আর সাকিব আল হাসান ফিরে আসার পর নিশ্চিত হলো, ওপেনিংয়ের ব্যর্থতা মিডল অর্ডার পুষিয়ে দিতে পারছে না। ১৪৮ রানে ৫ উইকেটের পতন। ফলাফল—ল্যাপটপের ডালা আবার বন্ধ!
কিন্তু সেটি আবারই দ্রুত খুলতে হলো। না, নাটকীয় কোনো পরিবর্তনের আভাসে নয়। সাব্বির-নাসিরের জুটিটা ইনিংস মেরামত করছিল বটে, কিন্তু কার্যত ম্যাচ তার আগেই শেষ। ৪৯ রানে সেই জুটিটা ভাঙার পর শেষ সংশয়টুকুও মুছে গেল। ৪৩ রানে শেষ ৫ উইকেট হারিয়ে ২৪০-এ অলআউট বাংলাদেশ।
দুই থেকে সাত—এই ছয় ব্যাটসম্যানই অবশ্যই নিজেকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেন। প্রত্যেকে উইকেটে সেট হয়েও ইনিংসটা বড় করতে পারেননি। সৌম্য-সাব্বির ৪০-এর ঘরে আউট হয়েছেন। লিটন-নাসির ৩০-এর ঘরে। এই ব্যাটিং লাইনআপে সবচেয়ে অভিজ্ঞ মুশফিক-সাকিবই ২০-এর ঘরে। দুজনের আউট হওয়ার ধরন নিয়ে চাইলে প্রশ্ন তোলাই যায়। কিন্তু থাক, কী দরকার! বরং আজ পিঠ চাপড়ে দিন। বলুন, ব্যাপার নাহ্।
তবে এও তো সত্যি, টানা তিনটি বাংলাওয়াশের সুযোগ, বিশেষ করে টানা দুই সিরিজে পাকিস্তান-ভারতকে ধবল ধোলাইয়ের সুযোগ কি আবারও মিলবে? দেশের মাটিতে টানা দশটি ম্যাচ জেতার পর থামল মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। ম্যাচ জিতেও ভারতীয় দলের মধ্যে আনন্দের ছিটেফোঁটা নেই।
পুরস্কার–বিতরণীতে পরাজিত অধিনায়কই আগে যান, এটাই অলিখিত কেতা। কিন্তু আজ জিতেও ধোনিকেই প্রতিক্রিয়া জানাতে যেতে হলো মাশরাফির আগে—সিরিজের প্রতীকী দৃশ্য! হেরেও মাশরাফি পরেই তো যাবেন, আসল লড়াইয়ে যে জিতেছেন। প্রতিক্রিয়া জানিয়েই নিতে হলো ট্রফিটা। ম্যাচ হেরেও ট্রফি নিয়ে ক্যামেরার সামনে বাংলাদেশ দলই। অবশ্য শেষ ম্যাচটা জিতলে উৎসব-উল্লাসটা আরও ভালো হতো।
এ তো কেবল যাত্রা পথের শুরু। সেই পথে বাংলাদেশের ক্রিকেটে যুক্ত হয়েছে অনেক অনেক ‘প্রথম’ অর্জন। আরও অনেক ‘প্রথম’ আছে অপেক্ষায়।
ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জয়ও যেমন প্রথম। ভারতের বিপক্ষে এই প্রথম বাংলাদেশ দলের ট্রফি নিয়ে উল্লাস করা। তবে রুপোলি আভা ছড়ানো গোলাকার ট্রফিটার চেয়ে এই সিরিজে বাংলাদেশের বহুগুণ বড় প্রাপ্তি মুস্তাফিজুর রহমান। আজ ২ উইকেট নিয়েছেন। তবে দর্শকদের যেন তার চেয়েও বেশি আনন্দ দিল তাঁর ব্যাটিং। যে রায়নাকে তিন ম্যাচেই আউট করেছেন, তাঁরই বলে ফাইন লেগ দিয়ে ঘুরিয়ে চার মারলেন। দর্শকদের সেই কী করতালি! তিন ম্যাচে ১৩ উইকেট নিয়ে রাশি রাশি রেকর্ডের পাশে নিজের নাম লিখিয়েই মুস্তাফিজ থেমেছেন।
থেমেছেন, কিন্তু আবার শুরু করতে হবে যাত্রা। বাংলাদেশ দলও সিরিজ জিতেছে, কিন্তু নতুন করে নিজেদের আবারও সাফল্যের জন্য ক্ষুধার্ত করে তুলতে হবে। কদিন পরই আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা দল। একদিক দিয়ে হেরে হয়তো ‘ভালো’ই হলো। পাকিস্তানের বিপক্ষে অনায়াসে জিততে জিততে শেষ ম্যাচটা হেরেছিল বলেই হয়তো গা-ঝাড়া দিয়েছে বাংলাদেশ। মিরপুরে সিরিজের শেষ ওয়ানডেটা হতে পারে সেই বাস্তবতার জমিনে নেমে আসা।
না, হয় না। সব গল্পের ‘হ্যাপি এন্ডিং’ হতেও নেই। এই অপূর্ণতার আক্ষেপটাই তো শিল্পীকে ধাবিত করে নতুন সৃষ্টির দিকে। আপাতত কয়েক দিনের ‘বিশ্রাম’ শেষে এবার বাংলাদেশের ক্রিকেটে আরও একটি সোনালি অধ্যায় সংযোজন হওয়ার অপেক্ষা।
ডেল স্টেইন, আসছেন তো?
No comments