উজান স্রোতে আওয়ামী নৌকা by জি. মুনীর
স্বীকার
না করে উপায় নেই, দেশ আজ চরম সঙ্কটে নিপতিত। এ সঙ্কট রাজনৈতিক। এ রাজনৈতিক
সঙ্কটের কারণে প্রতিদিন মানুষ শিকার হচ্ছে হত্যা, নির্যাতন ও নিপীড়নের। এর
শিকার যেমন রাজনৈতিক নেতাকর্মী, তেমনি রাজনৈতিক বলয়ের বাইরের সাধারণ
মানুষ। পথেঘাটে মানুষ পুড়ে মরছে। কেউ যাচ্ছে বার্ন ইউনিটে। অপর দিকে খুন,
গুম, অপহরণ, ক্রসফায়ার রাজনৈতিক নেতাকর্মী দমনপীড়ন চলছে সমান্তরালভাবে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বাড়ি থেকে ধরে নেয়া
হচ্ছে। কোনো কোনোটির দায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অস্বীকার করছে। ফলে কেউ ফিরছেন
কথিত বন্দুকযুদ্ধের শিকার হয়ে লাশ হিসেবে, কেউ থাকছেন নিখোঁজ। বর্তমানে
চলছে ২০ দলের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি। সাথে সাথে থেমে থেমে হরতাল কর্মসূচিও।
এর ফলে সারা দেশে চলছে চরম এক বিশৃঙ্খলা। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সব
শ্রেণীপেশার মানুষ এখন দিন কাটাচ্ছে চরম এক নিরাপত্তাহীনতার মাঝে।
ব্যবসায়-বাণিজ্য স্থবির। অর্থনীতির চাকা অচল। অস্থিরতার আগুনে পুড়ছে সারা
দেশ। চার দিকে হাহাকার! সবার এক কথা, এভাবে একটি দেশ চলতে পারে না। এর একটা
সুরাহা দরকার।
রাজনৈতিক স্বার্থান্ধ হয়ে আমরা স্বীকার করি বা না করি, এর বাস্তব একটা প্রেক্ষাপট আছে। আজকের চলমান উত্তপ্তাবস্থা সৃষ্টির কারণ আমাদের সবার জানা। এ দেশের প্রতিটি মানুষ জানে, আজকের এই সঙ্কটের মূলে রয়েছে বহুলালোচিত ও বহুল বিতর্কিত ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন, প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন অগণতান্ত্রিক একটি নির্বাচন। সেখানে দেশের দুই-তৃতীয়াংশ রাজনৈতিক দল অংশ নেয়নি। ৩০০ নির্বাচনী আসনের ১৫৩টিতে এমপি নির্বাচিত বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায়। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ছিল না বলে বলতে গেলে বিশ্বের প্রায় সব দেশই এ নির্বাচনে কোনো পর্যবেক্ষকদল পাঠায়নি। খুব সম্ভব ভারত ও ভুটান ছাড়া আর কোনো দেশই পর্যবেক্ষকদল পাঠায়নি। নির্বাচনের পর থেকে প্রতিটি দেশ বলে আসছে, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন কোনোমতেই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ছিল না। অতএব, যথাসম্ভব দ্রুত সবার অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে একটি নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। এমনকি ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষপর্যায়ের নেতানেত্রীরা ওই সময় বলেছিলেন, ওই নির্বাচন নিয়ম রক্ষার নির্বাচন এবং সংবিধান রক্ষার নির্বাচন। এ নির্বাচনের পর সবার অংশগ্রহণে একটি নির্বাচনের আয়োজন করা হবে। কিন্তু নির্বাচনের পরপরই সরকার গঠন করেই সরকার সুর পাল্টে দিলো। বলতে শুরু করল, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনসূত্রে ক্ষমতায় আসা বর্তমান সরকার ২০১৯ সাল পর্যন্ত পুরো ৫ বছর ক্ষমতায় থাকবে। বিএনপি ও এর নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট নির্বাচনী ট্রেন ফেল করেছে। অতএব, তাদেরকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত পরবর্তী সংসদ নির্বাচনের অপেক্ষায় থাকতে হবে। স্বাভাবিকভাবেই সরকারের এ অবস্থান কেউ মেনে নেয়নি। ২০ দলীয় জোট ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল অবিলম্বে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের দাবিই সরকারের কাছে জানাতে থাকে। দেশের বাইরে থেকেও শুধু ভারত ছাড়া সব দেশই একই কথা বারবার বলতে থাকে। সবার কথাÑ ৫ জানুয়ারির নির্বাচন গ্রহণযোগ্য ছিল না। অতএব, সরকারকে দ্রুত সবার অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। দেশের সরকারবিরোধী দল ও জোট গোটা ২০১৪ সাল কাটায় এই বলে, দ্রুত সবার অংশগ্রহণে নির্বাচনের ব্যবস্থা না করলে এরা আন্দোলনে নামবে। অপর দিকে ২০ দলীয় জোট যাতে এ ব্যাপারে কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারে, সে জন্য গোটা ২০১৪ সালে সরকার বিরোধী দল ও জোটের নেতানেত্রীদের ওপর হামলা-মামলা, দমনপীড়ন চালায় সীমাহীনভাবে। অপর দিকে বিরোধী জোটের সভা-সমাবেশ ও মিছিল-মিটিংয়ের ওপর অগণতান্ত্রিক নিষেধাজ্ঞার মাত্রাও পৌঁছে চরমে। বিরোধী দল ও জোটের অফিস বন্ধ করে দেয়া, অফিসে সাধারণ নেতাকর্মীদের যেতে বাধা দেয়া, যখন-তখন গ্রেফতার, মামলা-হামলা ইত্যাদি চলে অবাধে।
এমনই একটি প্রেক্ষাপটে বেগম জিয়াকে কী পরিস্থিতির মধ্যে আজকের চলমান অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করতে হয়েছে এবং এ কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকে তাকে কী ধরনের প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয়েছে ও হচ্ছে, তা দেশবাসী সবারই জানা। তা ছাড়া কোন দাবিতে তার এই অবরোধ কর্মসূচি ঘোষিত হয়েছে তাও আমাদের জানা। তার দাবি জনগণের ভোটের অধিকার। সবার অংশগ্রহণে সমসুযোগের ভিত্তিতে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য জনগণের ভোটে নির্বাচিত একটি সরকার প্রতিষ্ঠা। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বর্তমান সরকারের পতন হলো, আর ২০ দলীয় জোটনেত্রী বেগম জিয়া ক্ষমতায় বসে গেলেন, ব্যাপারটি তেমন নয়; বরং বর্তমান সরকারকে সবার অংশগ্রহণে সমসুযোগের ভিত্তিতে একটি নির্বাচনের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে, সেটাই আজকের ২০ দলীয় জোটসহ সরকারের বাইরে থাকা সব রাজনৈতিক দলের দাবি। আর তেমনটি করতে হলে প্রয়োজন রাজনৈতিক সংলাপের। সে সংলাপে বসতে বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কোনো আপত্তি নেই। সরকারের বাইরে থাকা অন্য রাজনৈতিক দলগুলোরও সংলাপ আপত্তি নেই, এমনকি ১৪ দলীয় সরকারি জোটের প্রায় অর্ধেকসংখ্যক দলও সংলাপে বসতে রাজি আছে বলে গণমাধ্যমসূত্রে আমরা জানতে পেরেছি। অতএব, এখন আওয়ামী লীগ নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংলাপে বসলেই একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ হয়তো জাতি খুঁজে পেতে পারে। কিন্তু তিনি সে পথে যেতে রাজি নন কেন, তা সাধারণ মানুষের বোধগম্য নয়।
সবার এক কথা, সংলাপেই বর্তমান সঙ্কটের একমাত্র পথ। এ সঙ্কটের শান্তিপূর্ণ সমাধান। গত পরশু জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার আয়োজনে রাজধানীতে বর্তমান জাতীয় সঙ্কট নিরসনে জাতীয় সংলাপ তথা গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেও সবাই একসুরে বলেছেন, বর্তমান সঙ্কট নিরসনে ‘সংলাপের কোনো বিকল্প নেই’। গোলটেবিল আলোচনায় দেশের চলমান সঙ্কটে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। সঙ্কট সমাধানে সংলাপের পক্ষে মত দিয়েছেন তারা। বলেছেন, একটি স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক দেশে সংলাপ ছাড়া সঙ্কট নিরসনের কোনো বিকল্প নেই। সংলাপ হতে হবে দেশের সব সক্রিয় রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের কার্যকর অংশগ্রহণের মাধ্যমে। তারা বলেছেন, বাংলাদেশে এক দল আরেক দলকে নির্মূল করতে চায়; কিন্তু তা কখনো হবে না। কেউ কাউকে নির্মূল করতে পারবে না। নাগরিক সমাজের কেউ কেউ বলেছেন, দেশের অভিবাবক হিসেবে প্রেসিডেন্ট এগিয়ে আসতে পারেন। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য তিন থেকে পাঁচজন নাগরিকের কমিটি করে দুই পক্ষের সাথে আলোচনা করে সংলাপ শুরু করার পক্ষেও মত আসে।
শুধু নাগরিক সমাজ নয়, দেশের ভেতরে-বাইরের সবাই চাইছেন সংলাপের মাধ্যমে বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কটের সমাধান। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, আমাদের সরকারপক্ষকে নিয়ে। সরকার বলছে, দেশে কোনো রাজনৈতিক সঙ্কট ও সমস্যা নেই। সব ঠিকঠাক আছে। ঠিকমতো দেশ চলছে। জ্ঞানীগুণীরা বলেন, কোথাও কোনো সঙ্কট বা সমস্যা থাকলে এর প্রথম কাজ হচ্ছে সঙ্কট বা সমস্যাটি কী, তা চিহ্নিত করা। কিন্তু সরকারপক্ষ যখন বলছে, বর্তমানে বাংলাদেশে কোনো রাজনৈতিক সঙ্কট বা সমস্যা নেই। অতএব তা চিহ্নিত করার কোনো প্রশ্নই আসে না। সমাধানের উদ্যোগ নেয়া তো পরের কথা। অতএব কোনো সংলাপ নয়। আরো ভয়াবহ দিক হলো, সরকারের যাবতীয় প্রচারণা হচ্ছে বিএনপি একটি সন্ত্রাসী দল। জঙ্গি দল। বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সন্ত্রাসের নেত্রী। তারা আরো বলেন, বিএনপি স্বাধীনতাবিরোধী দল। বিএনপি বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানাতে চায়। বিএনপি নেত্রী ক্ষমতায় গেলে বাংলাদেশ পাকিস্তান হয়ে যাবে। তার সাথে কোনো সংলাপ নয়। অতএব, সমস্যার সমাধান বিএনপিকে নির্মূল করার মধ্য দিয়ে। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমামসহ অন্যান্য নেতানেত্রী প্রকাশ্যেই বলছেন, বিএনপিকে নির্মূল করতে হবে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, বেগম খালেদা জিয়া এ দেশে তিন-তিনবার নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তার শাসনামলে বাংলাদেশ পাকিস্তান হয়নি, বাংলাদেশই ছিল। অতএব বেগম জিয়া বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানাতে চান, এসব বলে কোনো লাভ নেই। তা ছাড়া যারা বলেন, বিএনপিকে নির্মূল করতে হবে, তাদের জানা উচিত তাহলে এ দেশের কমপক্ষে ৪০ শতাংশ মানুষকে মেরে ফেলতে হবে। তবেই যদি বাংলাদেশ থেকে বিএনপি নির্মূল হয়। তবে আরেকটি রাজনৈতিক বাস্তবতা হচ্ছে, কোনো গণসংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলকে নির্মূল করা যায় না। বিএনপির বেলায় এটি যেমন সত্য, তেমনি তা আওয়ামী লীগের বেলায়ও সত্য। তবে বিএনপির কাউকে বলতে শোনা যায়নি, আওয়ামী লীগকে নির্মূল করার কথা। কিন্তু বিএনপিকে নির্মূল করার কথা আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগ জোটের নেতানেত্রীদের মুখে হর-হামেশাই শোনা যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকেদের মুখ থেকে একই ধরনের অনাকাক্সিত কথা উচ্চারিত হচ্ছে।
সম্প্রতি এইচটি ইমাম বলেছেন, বিএনপিকে নির্মূল করতে হবে। তিনি এটাও বলছেন, অবরোধ তুললেই সংলাপের গ্যারান্টি নেই। প্রধানমন্ত্রীতনয় ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা নয়, মোকাবেলা করা হবে অস্ত্র দিয়ে। জাসদের এমপি মাঈন্ুিদ্দন খান বাদল কুমিল্লায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলেছেন, প্রয়োজনে সরাসরি বুকে গুলি করতে হবে। তার মুখ থেকেই আমরা শুনেছিলাম ‘সংলাপে লাথি মারো’। ডিআইজি এসএম মাহফুজুল হক নূরুজ্জামান অবরোধকারীদের উদ্দেশে বলেছেন, আমি হুকুম দিয়ে গেলাম, নাশকতাকারীদের বংশধর পর্যন্ত ধ্বংস করে দিতে হবে। আর এর সব দায়দায়িত্ব তার। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও কয়দিন আগে আইনশৃংখলা বাহিনীকে একই ধরনের নির্দেশ দিয়েছিলেনÑ যে করেই হোক এদের দমন করতে হবে, এ জন্য সব দায়দায়িত্ব তার। আজকের বিরোধী আন্দোলন দমনে বিজিবি, পুলিশ ও র্যাব বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা যেভাবে রাজনৈতিক বক্তব্য দিচ্ছেন, তা সব মহলে সমালোচনার মুখে পড়ে।
আসলে দেশের অবস্থা ভালো নয়। চরম বিপর্যস্ত। এ কথা সরকারি দলের কেউ স্বীকার করতে চান না। তাদের কথা শুনলে মনে হয়, সব ঠিকঠাক। তবে গত শনিবার আমরা সরকারের দু’জন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির কাছ থেকে শুনলাম দেশের অবস্থা আসলে ভালো নেই। এদের একজন অর্থমন্ত্রী। অপরজন পুলিশের আইজি, যিনি রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে এরই মধ্যে বিভিন্ন মহলে সমালোচিত হয়েছেন।
আমাদের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, ‘হরতাল-অবরোধের ফলে ঢাকায় হয়তো কিছু বোঝা যায় না; কিন্তু রাজধানীর বাইরের জেলাগুলোতে পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।’ তবে এই পরিস্থিতির উত্তরণ কবে হবে তার উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘নোবডি নোউজ’। অপর দিকে গাইবান্ধায় শনিবার পরিবহন মালিকদের সাথে বৈঠকে পুলিশের আইজি শহিদুল হক তাদেরকে রাত নয়টার পর দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস না চালানোর অনুরোধ জানান।
সরকার এই-সেই বলে বিএনপিকে সন্ত্রাসী দল বলে পরিচিত করার অপপ্রচার চালিয়ে সংলাপ এড়িয়ে পার পেয়ে যাওয়ার যে ভুল সড়কপথে হাঁটছে, তা সঠিক পথ নয়। সজীব ওয়াজেদ জয়কে সম্প্রতি বলতে শুনলাম, এখন নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ জয় পাবে। সরকারপক্ষের আরেকজন নেতার মুখে বলতে শোনা গেছে, তারেক জিয়ার বক্তব্যের কারণে বিএনপির জনপ্রিয়তা শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। যদি তা-ই হয়, তবে আওয়ামী লীগের একটি নির্বাচন দিতে কেন এতটা অনীহা। একটা নির্বাচন দেয়ার কথা ঘোষণা দিলেই তো আন্দোলন থেমে যায়। সরকারবিরোধীদের দাবি তো একটাইÑ অবিলম্বে সবার অংশগ্রহণে সব দলের জন্য সমসুযোগের ভিত্তিতে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন করা। আর সেটি করার জন্য তো দরকার দেশে সক্রিয় সব রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনী ব্যবস্থা। একমাত্র রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের মাধ্যমেই সে সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভবÑ এ কথা বুঝতে কারো বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই। সাধারণ মানুষ তা বুঝতে সক্ষম। কিন্তু বুঝে আসে না আমাদের সরকারি দলের নেতানেত্রীদের। কারণ, তাদের মাথায় এখন ভিন্ন চিন্তাÑ কিভাবে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা যায় এবং কী করে বিএনপিকে নির্মূল করা যায়। সেই চিন্তা আওয়ামী লীগ নেতাদের মাথায় থেকে যত দ্রুত দূর হয়, ততই মঙ্গল। এ মঙ্গল সবার। নইলে দুর্ভোগ সবারÑ দেশ ও জাতির। সেই পথ ছেড়ে কেন যে আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব উজান স্রোতে নৌকা চালানোর ধনুকভাঙা পণ করে বসেছে, এর উত্তর নেই।
রাজনৈতিক স্বার্থান্ধ হয়ে আমরা স্বীকার করি বা না করি, এর বাস্তব একটা প্রেক্ষাপট আছে। আজকের চলমান উত্তপ্তাবস্থা সৃষ্টির কারণ আমাদের সবার জানা। এ দেশের প্রতিটি মানুষ জানে, আজকের এই সঙ্কটের মূলে রয়েছে বহুলালোচিত ও বহুল বিতর্কিত ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন, প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন অগণতান্ত্রিক একটি নির্বাচন। সেখানে দেশের দুই-তৃতীয়াংশ রাজনৈতিক দল অংশ নেয়নি। ৩০০ নির্বাচনী আসনের ১৫৩টিতে এমপি নির্বাচিত বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায়। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ছিল না বলে বলতে গেলে বিশ্বের প্রায় সব দেশই এ নির্বাচনে কোনো পর্যবেক্ষকদল পাঠায়নি। খুব সম্ভব ভারত ও ভুটান ছাড়া আর কোনো দেশই পর্যবেক্ষকদল পাঠায়নি। নির্বাচনের পর থেকে প্রতিটি দেশ বলে আসছে, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন কোনোমতেই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ছিল না। অতএব, যথাসম্ভব দ্রুত সবার অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে একটি নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। এমনকি ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষপর্যায়ের নেতানেত্রীরা ওই সময় বলেছিলেন, ওই নির্বাচন নিয়ম রক্ষার নির্বাচন এবং সংবিধান রক্ষার নির্বাচন। এ নির্বাচনের পর সবার অংশগ্রহণে একটি নির্বাচনের আয়োজন করা হবে। কিন্তু নির্বাচনের পরপরই সরকার গঠন করেই সরকার সুর পাল্টে দিলো। বলতে শুরু করল, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনসূত্রে ক্ষমতায় আসা বর্তমান সরকার ২০১৯ সাল পর্যন্ত পুরো ৫ বছর ক্ষমতায় থাকবে। বিএনপি ও এর নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট নির্বাচনী ট্রেন ফেল করেছে। অতএব, তাদেরকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত পরবর্তী সংসদ নির্বাচনের অপেক্ষায় থাকতে হবে। স্বাভাবিকভাবেই সরকারের এ অবস্থান কেউ মেনে নেয়নি। ২০ দলীয় জোট ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল অবিলম্বে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের দাবিই সরকারের কাছে জানাতে থাকে। দেশের বাইরে থেকেও শুধু ভারত ছাড়া সব দেশই একই কথা বারবার বলতে থাকে। সবার কথাÑ ৫ জানুয়ারির নির্বাচন গ্রহণযোগ্য ছিল না। অতএব, সরকারকে দ্রুত সবার অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। দেশের সরকারবিরোধী দল ও জোট গোটা ২০১৪ সাল কাটায় এই বলে, দ্রুত সবার অংশগ্রহণে নির্বাচনের ব্যবস্থা না করলে এরা আন্দোলনে নামবে। অপর দিকে ২০ দলীয় জোট যাতে এ ব্যাপারে কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারে, সে জন্য গোটা ২০১৪ সালে সরকার বিরোধী দল ও জোটের নেতানেত্রীদের ওপর হামলা-মামলা, দমনপীড়ন চালায় সীমাহীনভাবে। অপর দিকে বিরোধী জোটের সভা-সমাবেশ ও মিছিল-মিটিংয়ের ওপর অগণতান্ত্রিক নিষেধাজ্ঞার মাত্রাও পৌঁছে চরমে। বিরোধী দল ও জোটের অফিস বন্ধ করে দেয়া, অফিসে সাধারণ নেতাকর্মীদের যেতে বাধা দেয়া, যখন-তখন গ্রেফতার, মামলা-হামলা ইত্যাদি চলে অবাধে।
এমনই একটি প্রেক্ষাপটে বেগম জিয়াকে কী পরিস্থিতির মধ্যে আজকের চলমান অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করতে হয়েছে এবং এ কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকে তাকে কী ধরনের প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয়েছে ও হচ্ছে, তা দেশবাসী সবারই জানা। তা ছাড়া কোন দাবিতে তার এই অবরোধ কর্মসূচি ঘোষিত হয়েছে তাও আমাদের জানা। তার দাবি জনগণের ভোটের অধিকার। সবার অংশগ্রহণে সমসুযোগের ভিত্তিতে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য জনগণের ভোটে নির্বাচিত একটি সরকার প্রতিষ্ঠা। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বর্তমান সরকারের পতন হলো, আর ২০ দলীয় জোটনেত্রী বেগম জিয়া ক্ষমতায় বসে গেলেন, ব্যাপারটি তেমন নয়; বরং বর্তমান সরকারকে সবার অংশগ্রহণে সমসুযোগের ভিত্তিতে একটি নির্বাচনের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে, সেটাই আজকের ২০ দলীয় জোটসহ সরকারের বাইরে থাকা সব রাজনৈতিক দলের দাবি। আর তেমনটি করতে হলে প্রয়োজন রাজনৈতিক সংলাপের। সে সংলাপে বসতে বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কোনো আপত্তি নেই। সরকারের বাইরে থাকা অন্য রাজনৈতিক দলগুলোরও সংলাপ আপত্তি নেই, এমনকি ১৪ দলীয় সরকারি জোটের প্রায় অর্ধেকসংখ্যক দলও সংলাপে বসতে রাজি আছে বলে গণমাধ্যমসূত্রে আমরা জানতে পেরেছি। অতএব, এখন আওয়ামী লীগ নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংলাপে বসলেই একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ হয়তো জাতি খুঁজে পেতে পারে। কিন্তু তিনি সে পথে যেতে রাজি নন কেন, তা সাধারণ মানুষের বোধগম্য নয়।
সবার এক কথা, সংলাপেই বর্তমান সঙ্কটের একমাত্র পথ। এ সঙ্কটের শান্তিপূর্ণ সমাধান। গত পরশু জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার আয়োজনে রাজধানীতে বর্তমান জাতীয় সঙ্কট নিরসনে জাতীয় সংলাপ তথা গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেও সবাই একসুরে বলেছেন, বর্তমান সঙ্কট নিরসনে ‘সংলাপের কোনো বিকল্প নেই’। গোলটেবিল আলোচনায় দেশের চলমান সঙ্কটে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। সঙ্কট সমাধানে সংলাপের পক্ষে মত দিয়েছেন তারা। বলেছেন, একটি স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক দেশে সংলাপ ছাড়া সঙ্কট নিরসনের কোনো বিকল্প নেই। সংলাপ হতে হবে দেশের সব সক্রিয় রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের কার্যকর অংশগ্রহণের মাধ্যমে। তারা বলেছেন, বাংলাদেশে এক দল আরেক দলকে নির্মূল করতে চায়; কিন্তু তা কখনো হবে না। কেউ কাউকে নির্মূল করতে পারবে না। নাগরিক সমাজের কেউ কেউ বলেছেন, দেশের অভিবাবক হিসেবে প্রেসিডেন্ট এগিয়ে আসতে পারেন। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য তিন থেকে পাঁচজন নাগরিকের কমিটি করে দুই পক্ষের সাথে আলোচনা করে সংলাপ শুরু করার পক্ষেও মত আসে।
শুধু নাগরিক সমাজ নয়, দেশের ভেতরে-বাইরের সবাই চাইছেন সংলাপের মাধ্যমে বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কটের সমাধান। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, আমাদের সরকারপক্ষকে নিয়ে। সরকার বলছে, দেশে কোনো রাজনৈতিক সঙ্কট ও সমস্যা নেই। সব ঠিকঠাক আছে। ঠিকমতো দেশ চলছে। জ্ঞানীগুণীরা বলেন, কোথাও কোনো সঙ্কট বা সমস্যা থাকলে এর প্রথম কাজ হচ্ছে সঙ্কট বা সমস্যাটি কী, তা চিহ্নিত করা। কিন্তু সরকারপক্ষ যখন বলছে, বর্তমানে বাংলাদেশে কোনো রাজনৈতিক সঙ্কট বা সমস্যা নেই। অতএব তা চিহ্নিত করার কোনো প্রশ্নই আসে না। সমাধানের উদ্যোগ নেয়া তো পরের কথা। অতএব কোনো সংলাপ নয়। আরো ভয়াবহ দিক হলো, সরকারের যাবতীয় প্রচারণা হচ্ছে বিএনপি একটি সন্ত্রাসী দল। জঙ্গি দল। বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সন্ত্রাসের নেত্রী। তারা আরো বলেন, বিএনপি স্বাধীনতাবিরোধী দল। বিএনপি বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানাতে চায়। বিএনপি নেত্রী ক্ষমতায় গেলে বাংলাদেশ পাকিস্তান হয়ে যাবে। তার সাথে কোনো সংলাপ নয়। অতএব, সমস্যার সমাধান বিএনপিকে নির্মূল করার মধ্য দিয়ে। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমামসহ অন্যান্য নেতানেত্রী প্রকাশ্যেই বলছেন, বিএনপিকে নির্মূল করতে হবে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, বেগম খালেদা জিয়া এ দেশে তিন-তিনবার নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তার শাসনামলে বাংলাদেশ পাকিস্তান হয়নি, বাংলাদেশই ছিল। অতএব বেগম জিয়া বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানাতে চান, এসব বলে কোনো লাভ নেই। তা ছাড়া যারা বলেন, বিএনপিকে নির্মূল করতে হবে, তাদের জানা উচিত তাহলে এ দেশের কমপক্ষে ৪০ শতাংশ মানুষকে মেরে ফেলতে হবে। তবেই যদি বাংলাদেশ থেকে বিএনপি নির্মূল হয়। তবে আরেকটি রাজনৈতিক বাস্তবতা হচ্ছে, কোনো গণসংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলকে নির্মূল করা যায় না। বিএনপির বেলায় এটি যেমন সত্য, তেমনি তা আওয়ামী লীগের বেলায়ও সত্য। তবে বিএনপির কাউকে বলতে শোনা যায়নি, আওয়ামী লীগকে নির্মূল করার কথা। কিন্তু বিএনপিকে নির্মূল করার কথা আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগ জোটের নেতানেত্রীদের মুখে হর-হামেশাই শোনা যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকেদের মুখ থেকে একই ধরনের অনাকাক্সিত কথা উচ্চারিত হচ্ছে।
সম্প্রতি এইচটি ইমাম বলেছেন, বিএনপিকে নির্মূল করতে হবে। তিনি এটাও বলছেন, অবরোধ তুললেই সংলাপের গ্যারান্টি নেই। প্রধানমন্ত্রীতনয় ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা নয়, মোকাবেলা করা হবে অস্ত্র দিয়ে। জাসদের এমপি মাঈন্ুিদ্দন খান বাদল কুমিল্লায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলেছেন, প্রয়োজনে সরাসরি বুকে গুলি করতে হবে। তার মুখ থেকেই আমরা শুনেছিলাম ‘সংলাপে লাথি মারো’। ডিআইজি এসএম মাহফুজুল হক নূরুজ্জামান অবরোধকারীদের উদ্দেশে বলেছেন, আমি হুকুম দিয়ে গেলাম, নাশকতাকারীদের বংশধর পর্যন্ত ধ্বংস করে দিতে হবে। আর এর সব দায়দায়িত্ব তার। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও কয়দিন আগে আইনশৃংখলা বাহিনীকে একই ধরনের নির্দেশ দিয়েছিলেনÑ যে করেই হোক এদের দমন করতে হবে, এ জন্য সব দায়দায়িত্ব তার। আজকের বিরোধী আন্দোলন দমনে বিজিবি, পুলিশ ও র্যাব বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা যেভাবে রাজনৈতিক বক্তব্য দিচ্ছেন, তা সব মহলে সমালোচনার মুখে পড়ে।
আসলে দেশের অবস্থা ভালো নয়। চরম বিপর্যস্ত। এ কথা সরকারি দলের কেউ স্বীকার করতে চান না। তাদের কথা শুনলে মনে হয়, সব ঠিকঠাক। তবে গত শনিবার আমরা সরকারের দু’জন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির কাছ থেকে শুনলাম দেশের অবস্থা আসলে ভালো নেই। এদের একজন অর্থমন্ত্রী। অপরজন পুলিশের আইজি, যিনি রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে এরই মধ্যে বিভিন্ন মহলে সমালোচিত হয়েছেন।
আমাদের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, ‘হরতাল-অবরোধের ফলে ঢাকায় হয়তো কিছু বোঝা যায় না; কিন্তু রাজধানীর বাইরের জেলাগুলোতে পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।’ তবে এই পরিস্থিতির উত্তরণ কবে হবে তার উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘নোবডি নোউজ’। অপর দিকে গাইবান্ধায় শনিবার পরিবহন মালিকদের সাথে বৈঠকে পুলিশের আইজি শহিদুল হক তাদেরকে রাত নয়টার পর দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস না চালানোর অনুরোধ জানান।
সরকার এই-সেই বলে বিএনপিকে সন্ত্রাসী দল বলে পরিচিত করার অপপ্রচার চালিয়ে সংলাপ এড়িয়ে পার পেয়ে যাওয়ার যে ভুল সড়কপথে হাঁটছে, তা সঠিক পথ নয়। সজীব ওয়াজেদ জয়কে সম্প্রতি বলতে শুনলাম, এখন নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ জয় পাবে। সরকারপক্ষের আরেকজন নেতার মুখে বলতে শোনা গেছে, তারেক জিয়ার বক্তব্যের কারণে বিএনপির জনপ্রিয়তা শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। যদি তা-ই হয়, তবে আওয়ামী লীগের একটি নির্বাচন দিতে কেন এতটা অনীহা। একটা নির্বাচন দেয়ার কথা ঘোষণা দিলেই তো আন্দোলন থেমে যায়। সরকারবিরোধীদের দাবি তো একটাইÑ অবিলম্বে সবার অংশগ্রহণে সব দলের জন্য সমসুযোগের ভিত্তিতে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন করা। আর সেটি করার জন্য তো দরকার দেশে সক্রিয় সব রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনী ব্যবস্থা। একমাত্র রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের মাধ্যমেই সে সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভবÑ এ কথা বুঝতে কারো বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই। সাধারণ মানুষ তা বুঝতে সক্ষম। কিন্তু বুঝে আসে না আমাদের সরকারি দলের নেতানেত্রীদের। কারণ, তাদের মাথায় এখন ভিন্ন চিন্তাÑ কিভাবে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা যায় এবং কী করে বিএনপিকে নির্মূল করা যায়। সেই চিন্তা আওয়ামী লীগ নেতাদের মাথায় থেকে যত দ্রুত দূর হয়, ততই মঙ্গল। এ মঙ্গল সবার। নইলে দুর্ভোগ সবারÑ দেশ ও জাতির। সেই পথ ছেড়ে কেন যে আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব উজান স্রোতে নৌকা চালানোর ধনুকভাঙা পণ করে বসেছে, এর উত্তর নেই।
No comments