আটকের ২৪ ঘণ্টা পর শিবির নেতার গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার- কুমিল্লা ও যশোরে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আরো দুইজন নিহত
আটকের
২৪ ঘণ্টা পর উদ্ধার হলো গুলিবিদ্ধ লাশ। প্রাণভিক্ষা চেয়েও শেষ রক্ষা হলো
না শিবির নেতা জসিম উদ্দিনের। গতকাল সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর এলাকা
থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। গত রাতে পুলিশ জানায়, জসিমকে নিয়ে অভিযানে বের
হলে বন্দুকযুদ্ধে সে নিহত হয়। এ দিকে কুমিল্লা ও যশোরে শনিবার রাতে আরো
দুইজন ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে। কুমিল্লায় নিহত হয়েছে স্বপন মিয়া নামের
স্থানীয় এক বিএনপি নেতা এবং যশোরে নিহত হয়েছে রাজু নামের এক যুবক।
গতকাল ভোরে রাজধানীর আগারগাঁও তালতলা নতুন রাস্তার ডাম্পিং এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয় শিবির নেতা জসিম উদ্দিনের লাশ। তার বাবার নাম আব্দুর রাজ্জাক। মিরপুর কাজীপাড়া এলাকায় একটি মেসে থাকতেন তিনি। কাজীপাড়া ফাজিল মাদরাসার ফাজিলের ছাত্র ছিলেন জসিম। তার গ্রামের বাড়ি বরিশালের পূর্ব কুন্দলপাড়ায়। গতকাল দুপুরের দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জসিমের লাশ শনাক্ত করেন তার বড় ভাই আনিছুর রহমান। আনিছুর জানান, এক আত্মীয়ের মাধ্যমে তারা জানতে পারেন শনিবার সকালে জসিমকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। এরপর তারা মিরপুর এলাকার সব থানায় খোঁজ নেন। পরে জানতে পারেন তাকে শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ আটক করেছে। এ ব্যাপারে পুলিশের সাথে পরিবারের সদস্যরা যোগাযোগ করলে পুলিশের পক্ষ থেকে বিষয়টি অস্বীকার করা হয়। তিনি বলেন, রোববার সকালে জানতে পারেন তার ভাই বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। পরে হাসপাতালে গিয়ে লাশটি শনাক্ত করেন তিনি। তিনি বলেন, এর আগে মিরপুর থানা পুলিশ একটি মামলায় জসিমকে গ্রেফতার করেছিল। কিন্তু মামলায় কোনো সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ায় তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। তিনি বলেন, জসিম ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। তবে কোনো নেতা ছিলেন না। জসিম তিন ভাই ও চার বোনের মধ্যে তৃতীয় ছিল।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শেরেবাংলা নগর থানার এসআই আব্দুর রউফ এক যুবকের লাশ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে নিয়ে যান। হাসপাতালে ওই এসআই জানান, তালতলা নতুন রাস্তা থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় লাশটি উদ্ধার করা হয়েছে। তবে ওই সময় তিনি পরিচয় জানাতে পারেননি। কিভাবে নিহত হয়েছে সে সম্পর্কেও তখন তিনি কিছু বলেননি।
এ দিকে ইসলামী ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে জসিম উদ্দিনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। জানা গেছে, গত শনিবার সকালে শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ শ্যামলী এলাকা থেকে জসিম উদ্দিনসহ চারজনকে আটক করে পুলিশ। ওই দিনই শিবিরের পক্ষ থেকে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। সেখানে তারা শিবির নেতাকর্মীদের জীবন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে। ঘটনার আগে ওই এলাকায় পুলিশের এক সার্জেন্ট ককটেল হামলায় আহত হন।
ইসলামী ছাত্রশিবিরের চার নেতাকে আটকের পর পুলিশ বিষয়টি অস্বীকার করেছে। এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সংগঠনটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং নিখোঁজ ছাত্রনেতাদের অভিভাবকেরা।
জানা গেছে, জসিম উদ্দিন, ঢাকা পলিটেকনিকের প্রথম বর্ষের ছাত্র সজিব, ঢাকা সিটি কলেজের ছাত্র আব্দুল মান্নান ও আবদুল্লাহ শনিবার সকালে লেগুনায় বাসায় ফিরছিলেন। তাদের শ্যামলী এলাকা থেকে লেগুনা থেকে নামিয়ে নেয় পুলিশ। এর পর থেকেই তারা নিখোঁজ ছিলেন। ওই দিন পরিবার ও সংগঠনের পক্ষ থেকে শেরেবাংলা নগর থানায় যোগাযোগ করা হয়। সাংবাদিকেরাও থানায় যোগাযোগ করেন। কিন্তু থানা পুলিশের পক্ষ থেকে ওই চার শিবির নেতাকে গ্রেফতারের বিষয়টি অস্বীকার করা হয়। শিবিরের পক্ষ থেকে ওই দিন এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় এবং আটকৃতদের জীবন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়। হাসপাতাল সূত্র জানায়, জসিমের শরীরে ১৭টি গুলির ক্ষত রয়েছে। পুলিশের সুরতহালে উল্লেখ করা হয়েছে, লাশ পড়ে থাকার খবর পেয়ে আগারগাঁও এলাকার একটি গলি থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। গত রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রতিবেদনে থানার ওসি গণেশ গোপাল বিশ্বাস জানান, শনিবার রাতে জসিমকে নিয়ে অভিযানে বের হলে দুর্বৃত্তরা তাকে ছিনিয়ে নেয়। পরে সেখানে বন্দুকযুদ্ধ হলে জসিম নিহত হয়। এ দিকে লাশের ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল সন্ধ্যায় জসিমের ভাই লাশটি গ্রহণ করেন। রাতেই তার লাশ নিয়ে বরিশালের উদ্দেশে যাত্রা করেন।
আমাদের কুমিল্লা সংবাদদাতা জানিয়েছেন, কুমিল্লায় পুলিশের সাথে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ স্বপন মিয়া নামে এক বিএনপি নেতা নিহত হয়েছেন। শনিবার রাত দেড়টায় এ ঘটনা ঘটে। একই রাতে জেলার নাঙ্গলকোটে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কারা ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে স্থানীয় জামায়াত নেতা বেলায়েত ও বেলালকে।কুমিল্লা সদর দণি থানার ওসি প্রশান্ত পাল জানান, রাত দেড়টার দিকে সদর দণি উপজেলার ভাটপাড়া এলাকায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ স্বপন মিয়া (৪০) নিহত হয়েছেন। শনিবার সকালে সদর কোর্টবাড়ি এলাকা থেকে স্বপনকে গ্রেফতার করা হয়। রাত দেড়টার দিকে তাকে নিয়ে অস্ত্র উদ্ধারে বের হলে ভাটপাড়া এলাকায় পুলিশকে ল্য করে গুলি ছোড়ে স্বপনের সহযোগীরা। এ সময় আত্মরার্থে পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। উভয় পরে গোলাগুলিতে স্বপন গুলিবিদ্ধ হন। রাত ২টার দিকে সদর দণি থানার এসআই সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম আহত স্বপনকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এলাকাবাসী জানিয়েছেন, স্বপন বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত এবং স্থানীয় নেতা। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ কয়েক রাউন্ড গুলিসহ একটি পিস্তল উদ্ধার করেছে। রাত ৩টার দিকে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। নিহত স্বপন উপজেলার পদুয়ারবাজার বিশ্বরোড এলাকার উত্তর রামপুর গ্রামের বাসিন্দা। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে।
এ দিকে কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার দৌলখাঁ ইউনিয়নের দুই জামায়াত নেতাকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের একজন হচ্ছেন বাম গ্রামের মজুমদারবাড়ির আবদুল হালিম মজুমদারের ছেলে বেলায়েত হোসেন মজুমদার দুলাল (৪৮)। অপর জন হচ্ছেন একই গ্রামের পণ্ডিতবাড়ির আলী হায়দার পণ্ডিতের ছেলে বেলাল হোসেন পণ্ডিত (৪০)।
পুলিশ জানায়, তাদের লদুয়া এলাকা থেকে ১২টি ককটেল ও একটি পেট্রলবোমাসহ আটক করে পুলিশ। শনিবার রাত পৌনে ২টার দিকে তাদের আটক করা হয়। নাঙ্গলকোট থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) সালাউদ্দিন জানান, লদুয়া এলাকায় জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা নাশকতার চেষ্টা করছিলেন। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে অভিযানে গেলে তারা পুলিশকে ল্য করে গুলি করে। এ সময় পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। একপর্যায়ে নেতাকর্মীরা পালিয়ে যায়। পরে ঘটনাস্থল থেকে ককটেল ও পেট্রলবোমাসহ পায়ে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ওই দুইজনকে আটক করা হয়। অন্য দিকে আহতদের পরিবার জানায়, পুলিশ তাদেরকে ঘুমন্ত অবস্থায় বাড়ি থেকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। রোববার সকালে তারা জানতে পারেন বেলায়েত ও বেলালকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় কুমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কুমিল্লা দণি জেলা জামায়াতে ইসলামী এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত স্থানীয় জামায়াত নেতা বেলায়েত হোসেন দুলাল ও বেলাল হোসেনকে পুলিশ গভীর রাতে ঘুম থেকে জাগিয়ে নাঙ্গলকোট থানায় নিয়ে আসে। পরে তাদের পায়ে গুলি করে গুরুতর আহতাবস্থায় নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। বেলায়েত হোসেন দুলাল কুমিল্লা ইবনে তাইমিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক এবং বেলাল হোসেন ব্যবসায়ী। তারা দুইজনই স্থানীয় জামায়াতের নেতা বলে দাবি করা হয়েছে। কর্তব্যরত চিকিৎসকের পরামর্শে পরে তাদের রাত ৩টার দিকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বিজ্ঞপ্তিতে ঘটনার নিন্দা করেছেন কুমিল্লা দণি জেলা জামায়াতের আমির মোহাম্মদ আবদুস সাত্তার। আহত বেলায়েত ও বেলালকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কারা ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে।
যশোর অফিস জানায়, যশোরে র্যাবের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ রাজু ওরফে ভাইপো রাজু (২৮) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। নিহত রাজু যশোর শহরের গাড়িখানা রোড এলাকার আজিবর রহমানের ছেলে। র্যাব জানিয়েছে, রাতে রাজুকে নিয়ে অস্ত্র উদ্ধারে গেলে রাজুর সহযোগীরা র্যাব সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি করে। এ সময় র্যাবও গুলি চালায়। গুলিবিনিময়কালে নিজের সহযোগীদের গুলিতে মারা যায় রাজু।
র্যাব যশোর ক্যাম্পের অধিনায়ক মেজর আশরাফ উদ্দিন জানান, একাধিক হত্যা, ছিনতাই ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন মামলার আসামি রাজুকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সে তার কাছে আগ্নেয়াস্ত্র থাকার কথা স্বীকার করে। শনিবার শেষ রাতের দিকে র্যাব সদস্যরা তাকে নিয়ে অস্ত্র উদ্ধারে বের হয়। ভোর ৫টার দিকে শহরতলির মুড়লিতে যশোর-খুলনা মহাড়কের পাশে পেট্রলপাম্পের বিপরীতে ইটভাটার কাছে পৌঁছামাত্রই রাজুর সহযোগীরা র্যাব সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। গুলিবিনিময়কালে পালাতে গিয়ে নিজের সহযোগীদের গুলিতে জখম হয় রাজু। এ সময় তার সহযোগীরা পালিয়ে যায়। তাকে উদ্ধার করে যশোর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মেজর আশরাফ আরো জানান, ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশী রিভলবার ও একটি শাটারগান এবং দুইটি গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।
রাজুর বাবা আজিবর রহমান দাবি করেন, তার ছেলে নির্দোষ। তাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে র্যাব হত্যা করেছে। তার বিরুদ্ধে যশোরের সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর এ জেড এম ফিরোজের একমাত্র ছেলে অর্ণব হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।
গতকাল ভোরে রাজধানীর আগারগাঁও তালতলা নতুন রাস্তার ডাম্পিং এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয় শিবির নেতা জসিম উদ্দিনের লাশ। তার বাবার নাম আব্দুর রাজ্জাক। মিরপুর কাজীপাড়া এলাকায় একটি মেসে থাকতেন তিনি। কাজীপাড়া ফাজিল মাদরাসার ফাজিলের ছাত্র ছিলেন জসিম। তার গ্রামের বাড়ি বরিশালের পূর্ব কুন্দলপাড়ায়। গতকাল দুপুরের দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জসিমের লাশ শনাক্ত করেন তার বড় ভাই আনিছুর রহমান। আনিছুর জানান, এক আত্মীয়ের মাধ্যমে তারা জানতে পারেন শনিবার সকালে জসিমকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। এরপর তারা মিরপুর এলাকার সব থানায় খোঁজ নেন। পরে জানতে পারেন তাকে শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ আটক করেছে। এ ব্যাপারে পুলিশের সাথে পরিবারের সদস্যরা যোগাযোগ করলে পুলিশের পক্ষ থেকে বিষয়টি অস্বীকার করা হয়। তিনি বলেন, রোববার সকালে জানতে পারেন তার ভাই বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। পরে হাসপাতালে গিয়ে লাশটি শনাক্ত করেন তিনি। তিনি বলেন, এর আগে মিরপুর থানা পুলিশ একটি মামলায় জসিমকে গ্রেফতার করেছিল। কিন্তু মামলায় কোনো সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ায় তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। তিনি বলেন, জসিম ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। তবে কোনো নেতা ছিলেন না। জসিম তিন ভাই ও চার বোনের মধ্যে তৃতীয় ছিল।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শেরেবাংলা নগর থানার এসআই আব্দুর রউফ এক যুবকের লাশ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে নিয়ে যান। হাসপাতালে ওই এসআই জানান, তালতলা নতুন রাস্তা থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় লাশটি উদ্ধার করা হয়েছে। তবে ওই সময় তিনি পরিচয় জানাতে পারেননি। কিভাবে নিহত হয়েছে সে সম্পর্কেও তখন তিনি কিছু বলেননি।
এ দিকে ইসলামী ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে জসিম উদ্দিনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। জানা গেছে, গত শনিবার সকালে শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ শ্যামলী এলাকা থেকে জসিম উদ্দিনসহ চারজনকে আটক করে পুলিশ। ওই দিনই শিবিরের পক্ষ থেকে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। সেখানে তারা শিবির নেতাকর্মীদের জীবন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে। ঘটনার আগে ওই এলাকায় পুলিশের এক সার্জেন্ট ককটেল হামলায় আহত হন।
ইসলামী ছাত্রশিবিরের চার নেতাকে আটকের পর পুলিশ বিষয়টি অস্বীকার করেছে। এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সংগঠনটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং নিখোঁজ ছাত্রনেতাদের অভিভাবকেরা।
জানা গেছে, জসিম উদ্দিন, ঢাকা পলিটেকনিকের প্রথম বর্ষের ছাত্র সজিব, ঢাকা সিটি কলেজের ছাত্র আব্দুল মান্নান ও আবদুল্লাহ শনিবার সকালে লেগুনায় বাসায় ফিরছিলেন। তাদের শ্যামলী এলাকা থেকে লেগুনা থেকে নামিয়ে নেয় পুলিশ। এর পর থেকেই তারা নিখোঁজ ছিলেন। ওই দিন পরিবার ও সংগঠনের পক্ষ থেকে শেরেবাংলা নগর থানায় যোগাযোগ করা হয়। সাংবাদিকেরাও থানায় যোগাযোগ করেন। কিন্তু থানা পুলিশের পক্ষ থেকে ওই চার শিবির নেতাকে গ্রেফতারের বিষয়টি অস্বীকার করা হয়। শিবিরের পক্ষ থেকে ওই দিন এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় এবং আটকৃতদের জীবন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়। হাসপাতাল সূত্র জানায়, জসিমের শরীরে ১৭টি গুলির ক্ষত রয়েছে। পুলিশের সুরতহালে উল্লেখ করা হয়েছে, লাশ পড়ে থাকার খবর পেয়ে আগারগাঁও এলাকার একটি গলি থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। গত রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রতিবেদনে থানার ওসি গণেশ গোপাল বিশ্বাস জানান, শনিবার রাতে জসিমকে নিয়ে অভিযানে বের হলে দুর্বৃত্তরা তাকে ছিনিয়ে নেয়। পরে সেখানে বন্দুকযুদ্ধ হলে জসিম নিহত হয়। এ দিকে লাশের ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল সন্ধ্যায় জসিমের ভাই লাশটি গ্রহণ করেন। রাতেই তার লাশ নিয়ে বরিশালের উদ্দেশে যাত্রা করেন।
আমাদের কুমিল্লা সংবাদদাতা জানিয়েছেন, কুমিল্লায় পুলিশের সাথে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ স্বপন মিয়া নামে এক বিএনপি নেতা নিহত হয়েছেন। শনিবার রাত দেড়টায় এ ঘটনা ঘটে। একই রাতে জেলার নাঙ্গলকোটে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কারা ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে স্থানীয় জামায়াত নেতা বেলায়েত ও বেলালকে।কুমিল্লা সদর দণি থানার ওসি প্রশান্ত পাল জানান, রাত দেড়টার দিকে সদর দণি উপজেলার ভাটপাড়া এলাকায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ স্বপন মিয়া (৪০) নিহত হয়েছেন। শনিবার সকালে সদর কোর্টবাড়ি এলাকা থেকে স্বপনকে গ্রেফতার করা হয়। রাত দেড়টার দিকে তাকে নিয়ে অস্ত্র উদ্ধারে বের হলে ভাটপাড়া এলাকায় পুলিশকে ল্য করে গুলি ছোড়ে স্বপনের সহযোগীরা। এ সময় আত্মরার্থে পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। উভয় পরে গোলাগুলিতে স্বপন গুলিবিদ্ধ হন। রাত ২টার দিকে সদর দণি থানার এসআই সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম আহত স্বপনকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এলাকাবাসী জানিয়েছেন, স্বপন বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত এবং স্থানীয় নেতা। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ কয়েক রাউন্ড গুলিসহ একটি পিস্তল উদ্ধার করেছে। রাত ৩টার দিকে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। নিহত স্বপন উপজেলার পদুয়ারবাজার বিশ্বরোড এলাকার উত্তর রামপুর গ্রামের বাসিন্দা। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে।
এ দিকে কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার দৌলখাঁ ইউনিয়নের দুই জামায়াত নেতাকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের একজন হচ্ছেন বাম গ্রামের মজুমদারবাড়ির আবদুল হালিম মজুমদারের ছেলে বেলায়েত হোসেন মজুমদার দুলাল (৪৮)। অপর জন হচ্ছেন একই গ্রামের পণ্ডিতবাড়ির আলী হায়দার পণ্ডিতের ছেলে বেলাল হোসেন পণ্ডিত (৪০)।
পুলিশ জানায়, তাদের লদুয়া এলাকা থেকে ১২টি ককটেল ও একটি পেট্রলবোমাসহ আটক করে পুলিশ। শনিবার রাত পৌনে ২টার দিকে তাদের আটক করা হয়। নাঙ্গলকোট থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) সালাউদ্দিন জানান, লদুয়া এলাকায় জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা নাশকতার চেষ্টা করছিলেন। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে অভিযানে গেলে তারা পুলিশকে ল্য করে গুলি করে। এ সময় পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। একপর্যায়ে নেতাকর্মীরা পালিয়ে যায়। পরে ঘটনাস্থল থেকে ককটেল ও পেট্রলবোমাসহ পায়ে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ওই দুইজনকে আটক করা হয়। অন্য দিকে আহতদের পরিবার জানায়, পুলিশ তাদেরকে ঘুমন্ত অবস্থায় বাড়ি থেকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। রোববার সকালে তারা জানতে পারেন বেলায়েত ও বেলালকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় কুমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কুমিল্লা দণি জেলা জামায়াতে ইসলামী এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত স্থানীয় জামায়াত নেতা বেলায়েত হোসেন দুলাল ও বেলাল হোসেনকে পুলিশ গভীর রাতে ঘুম থেকে জাগিয়ে নাঙ্গলকোট থানায় নিয়ে আসে। পরে তাদের পায়ে গুলি করে গুরুতর আহতাবস্থায় নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। বেলায়েত হোসেন দুলাল কুমিল্লা ইবনে তাইমিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক এবং বেলাল হোসেন ব্যবসায়ী। তারা দুইজনই স্থানীয় জামায়াতের নেতা বলে দাবি করা হয়েছে। কর্তব্যরত চিকিৎসকের পরামর্শে পরে তাদের রাত ৩টার দিকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বিজ্ঞপ্তিতে ঘটনার নিন্দা করেছেন কুমিল্লা দণি জেলা জামায়াতের আমির মোহাম্মদ আবদুস সাত্তার। আহত বেলায়েত ও বেলালকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কারা ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে।
যশোর অফিস জানায়, যশোরে র্যাবের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ রাজু ওরফে ভাইপো রাজু (২৮) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। নিহত রাজু যশোর শহরের গাড়িখানা রোড এলাকার আজিবর রহমানের ছেলে। র্যাব জানিয়েছে, রাতে রাজুকে নিয়ে অস্ত্র উদ্ধারে গেলে রাজুর সহযোগীরা র্যাব সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি করে। এ সময় র্যাবও গুলি চালায়। গুলিবিনিময়কালে নিজের সহযোগীদের গুলিতে মারা যায় রাজু।
র্যাব যশোর ক্যাম্পের অধিনায়ক মেজর আশরাফ উদ্দিন জানান, একাধিক হত্যা, ছিনতাই ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন মামলার আসামি রাজুকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সে তার কাছে আগ্নেয়াস্ত্র থাকার কথা স্বীকার করে। শনিবার শেষ রাতের দিকে র্যাব সদস্যরা তাকে নিয়ে অস্ত্র উদ্ধারে বের হয়। ভোর ৫টার দিকে শহরতলির মুড়লিতে যশোর-খুলনা মহাড়কের পাশে পেট্রলপাম্পের বিপরীতে ইটভাটার কাছে পৌঁছামাত্রই রাজুর সহযোগীরা র্যাব সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। গুলিবিনিময়কালে পালাতে গিয়ে নিজের সহযোগীদের গুলিতে জখম হয় রাজু। এ সময় তার সহযোগীরা পালিয়ে যায়। তাকে উদ্ধার করে যশোর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মেজর আশরাফ আরো জানান, ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশী রিভলবার ও একটি শাটারগান এবং দুইটি গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।
রাজুর বাবা আজিবর রহমান দাবি করেন, তার ছেলে নির্দোষ। তাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে র্যাব হত্যা করেছে। তার বিরুদ্ধে যশোরের সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর এ জেড এম ফিরোজের একমাত্র ছেলে অর্ণব হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।
No comments